রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কোন পথে মিয়ানমার


মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনের পর যে প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে কোন পথে এখন মিয়ানমার? অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত সুচি সরকারের নেতৃত্ব দিতে পারবেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়। এই নির্বাচন নিয়ে অনেক ‘কিন্তু’ এবং অনেক ‘প্রশ্ন’ আছে। জানুয়ারির আগে আর সংসদ অধিবেশন বসার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হবে, তারও পরে। কেননা সংবিধান অনুযায়ী যিনি প্রেসিডেন্ট, তিনি একদিকে রাষ্ট্রেরও প্রধান আবার মন্ত্রিপরিষদেরও প্রধান। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। যদিও মিয়ানমারের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর কোনো পদ নেই। তাহলে অং সান সুচির অবস্থান কী হবে? সংবিধান অনুযায়ী তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। কেননা তিনি একজন বিদেশিকে বিয়ে করেছিলেন এবং তার দুই সন্তানের বিদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে। এটা সুচি জানেন এবং বোঝেন। সেনাবাহিনী তাদের স্বার্থেই সংবিধানে এই পরিবর্তনটা এনেছে। এখন সু চি চাইলেও সংবিধান পরিবর্তনের কাজটি খুব সহজ হবে না। সংসদের উভয় পক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন এতে প্রয়োজন। উচ্চকক্ষের আসন সংখ্যা ২২৪, যেখানে ৫৬ জন সেনাসদস্য রয়েছেন, যারা সেনাপ্রধান কর্তৃক মনোনীত। তবে উচ্চকক্ষের ১৬৮ জন (প্রতিটি রাজ্য থেকে ১২ জন করে) নির্বাচিত। ঠিক তেমনি নিম্নকক্ষের ৪৪০ জন সদস্যের মধ্যে ১১৬ জন সেনাসদস্য মনোনীত। বাকি ৩৩০ জন (প্রতিটি টাউনশিপ থেকে একজন করে) নির্বাচিত। মোট ৬৬৪ জনের মধ্যে ৭৫ শতাংশ নির্বাচিত। আর ২৫ শতাংশ মনোনীত, যারা সেনাসদস্য। এ ক্ষেত্রে ৪৪২ জন সংসদ সদস্যের প্রয়োজন রয়েছে সংবিধানের এই ধারাগুলো পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু এ সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ ক্ষেত্রে দুটি সম্ভাবনা রয়েছে। এক সংবিধানের এই ধারা মেনে নিয়ে সুচির সেনাবাহিনী ও প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সঙ্গে একটি ‘সমঝোতা’য় যাওয়া। সমঝোতার অংশ হিসেবে অং সান সুচিকে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া। সেনাবাহিনী সংবিধান পরিবর্তনে তাদের সমর্থন দেবে না। অং সান সুচি সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে পেসিডেন্ট থেইন সেইনকে দ্বিতীয় টার্মের জন্য সমর্থন করবেন। প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের প্রথম পাঁচ বছরে টার্ম শেষ হবে ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ। দুই. শেষ পর্যন্ত সুচি যদি সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব অস্বীকার করেন তাহলে এক পর্যায়ে নির্বাচনটি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ১৯৯০ সালের পরিস্থিতি আর ২০১৫ সালের পরিস্থিতি এক নয়। বিশ্ব রাজনীতি তথা আঞ্চলিক রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। সুতরাং নির্বাচনটি বাতিল করার ঝুঁকি হয়তো সেনাবাহিনী নেবে না। শেষ পর্যন্ত হয়তো সুচি বাস্তবতা মেনে নেবেন। কিন্তু শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। সু চি গণতন্ত্রের কথা বলছেন বটে। কিন্তু মিয়ানমারের সমাজ ও সংস্কৃতি একটু ভিন্ন ধরনের। সংবিধান সংশোধনের (১৯৮৮) পরও সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। রাষ্ট্রপতিই এখানে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান। অর্থাৎ মূল ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে। এখানে সু চি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। তাতে ক্ষমতার ভারসাম্যে আদৌ কোনো পরিবর্তন হবে না। এমনকি প্রধানমন্ত্রী হতে হলেও তাকে সেনাবাহিনীর সমর্থনের প্রয়োজন হবে। নিদেনপক্ষে নিম্নকক্ষে ১১০ সদস্যবিশিষ্ট সেনাসদস্যের সমর্থন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সেনাবাহিনী রাষ্ট্রযন্ত্রে সুচিকে কীভাবে আনবে তাও স্পষ্ট নয়। ১৯৯০ সালের নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতির মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে। সু চি অনেক দিন ধরেই চাচ্ছেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটা সহাবস্থানে যেতে। যারা সু চির গত এক বছরের ভূমিকা ও বক্তব্য অনুসরণ করেছেন, তারা দেখবেন তিনি সেনাবাহিনীবিরোধী কোনো বক্তব্য দেননি। কিন্তু সেনা আস্থা কতটুকু তিনি পেয়েছেন, তা নিশ্চিত নয়। মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরাও একটি ফ্যাক্টর। সেনাবাহিনী এই উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। অন্যদিকে প্রচ- মুসলমানবিদ্বেষী ও উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীরা মা বা থা (অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রটেকশন অব রেস অ্যান্ড রিলিজিয়ন) সংগঠনের ব্যানারে সংগঠিত হয়েছে। তাদের সমর্থন নিশ্চিত করার জন্য সু চি নির্বাচনে ১ হাজার ৭১১টি আসনের (সংসদের উভয় কক্ষ, ১৪টি রাজ্যের সংসদ ও বিভিন্ন অঞ্চল) একটিতেও কোনো মুসলমান প্রার্থী দেননি। সরকারি দল এসপিডিসিও কোনো মুসলমান প্রার্থী দেয়নি। এমনকি নির্বাচনের আগে সু চি রাখাইন স্টেট সফরে গিয়েছিলেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের সমর্থনে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি। সিরিয়াস পাঠকরা লক্ষ করে থাকবেন ২০১২ সালের পর থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপকতা পেলে এবং শত শত রোহিঙ্গাকে নৌকাযোগে মালয়েশিয়া যাওয়ার ব্যাপারেও সু চির কোনো বক্তব্য নেই। মিয়ানমারের বর্তমান সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে না। মিয়ানমার সরকার মনে করে রোহিঙ্গারা মূলত বাংলাদেশের নাগরিক! অথচ ইতিহাস বলে, শত বছর ধরেই রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমানের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছেন। উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা মিয়ানমারকে একটি বৌদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে। সু চি এই প্রক্রিয়ার পুরোপুরি বাইরে নন। তিনি জানেন, ক্ষমতা পেতে হলে তার উগ্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে। তাই উগ্রপন্থীরা যখন মুসলমানদের হত্যা করছে, তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে, তাদের বাধ্য করছে বাংলাদেশে ‘পুস ইন’ করতে, তখন তিনি নিশ্চুপ। মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারেও তার কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই। ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি যে স্ট্র্যাটেজি বহন করছেন, তা সুবিধাবাদিতায় ভরা। সর্বজন গ্রহণযোগ্য একজন নৈত্রী তিনি, এ কথাটা বলা যাবে না। ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচনের আগে একদিকে তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক ধরনের ‘সহাবস্থান’-এ গেছেন, অন্যদিকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থেকে উগ্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অবস্থানকেই সমর্থন করেছেন। এতে করে তিনি ‘বিজয়ী’ হয়েছেন এটা সত্য। কিন্তু সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি সমাজব্যবস্থা সেখানে কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হবে, সে প্রশ্ন থাকলই। মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনের পর এখন অনেক প্রশ্ন সামনে চলে এলো। প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন যে সংস্কার চালু করেছিলেন, এর অংশ হিসেবেই ওই নির্বাচনটি হলো। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বড় আগ্রহ রয়েছে মিয়ানমারের ব্যাপারে। প্রেসিডেন্ট ওবামা দু-দুবার মিয়ানমার সফর করেছেন। মার্কিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখন মিয়ানমারে ভিড় করছে। মার্কিন বিনিয়োগ সেখানে বাড়ছে। দীর্ঘ ৫৩ বছরের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সেনা শাসনের পর মিয়ানমারের ‘দুয়ার খুলে দেওয়া’ হয়েছে। সু চিকে সামনে রেখেই পশ্চিমা শক্তি তাদের স্ট্র্যাটেজি রচনা করছে। এই মুহূর্তে অত্যন্ত ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী এই ‘পরিবর্তন’ মেনে নিলেও ভবিষ্যতে কী হবে, তা এই মুহূর্তে বলা যায় না। নয়া রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অং সান সুচির অবস্থান কী হবে, তাও স্পষ্ট নয়। সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত হওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীও হতে পারছেন না। যদিও তিনি আভাস দিয়েছেন তার ভূমিকা হবে ‘প্রধানমন্ত্রীর ঊর্ধ্বে’। এ ব্যাপারেও কথা আছে। সংবিধানে এ ধরনের কোনো পদ নেই। একজন ‘সিনিয়র মন্ত্রী’ অথবা এক উপদেষ্টা হিসেবে তিনি প্রশাসনে থাকতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর আস্থা তিনি যতদিন পাবেন, ততদিন ‘কোনো ঝামেলা ছাড়াই’ প্রশাসনের অংশ থাকবেন। সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ তিনি নিতে পারেন। কিন্তু সেনাবাহিনী এই উদ্যোগকে সমর্থন করবেÑ এটা মনে হয় না। জনগণই যে ‘সকল ক্ষমতার উৎস’Ñ মিয়ানমারের নির্বাচন এ কথাটা আবার প্রমাণ করল। এই নির্বাচন পার্শ¦বর্তী থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের সাংবিধানিক শক্তিকে উৎসাহিত করবে। এই প্রথমবারের মতো সংসদে কোনো মুসলিম প্রতিনিধিত্ব থাকল না। ফলে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ আরও দানা বাঁধবে। উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা মুসলিম নিধন ও উৎখাতে এতে আরও উৎসাহিত হবে। রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি পাবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর। অর্থাৎ আগামী জানুয়ারিতে সংসদ গঠন হওয়ার পর ২০২০ সাল পর্যন্ত এই সংসদ টিকে থাকার কথা। সময়টা অনেক লম্বা। নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার আগে অন্তত এক মাস সময় থাকবে হাতে। সু চি এই সময়টা কাজে লাগাবেন সেনাবাহিনী সঙ্গে একটি ‘সমঝোতা’য় যেতে। সম্ভবত এটাই তার জন্য শেষ সময়। ২০১০ সালেও একটি নির্বাচন হয়েছিল। তার দল ঠিক সময়মতো নিবন্ধন করতে না পারায় অথবা নিবন্ধন না করায় পাঁচ বছর পিছিয়ে গিয়েছিলেন সু চি। এবারও যদি তিনি ভুল করেন তাহলে তাকে অপেক্ষা করতে হবে ২০২০ সাল পর্যন্ত। সময়টা অনেক বেশি। সু চির বয়স গিয়ে দাঁড়াবে তখন ৭৪-এ। এরপর তার পক্ষে আর রজনীতিতে সক্রিয় থাকা সম্ভব হবে না। সে কারণেই তিনি মিয়ানমারের সমাজে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে মেনে নেবেন। আমরা তার নির্বাচন বিজয়ে স্বাগত জানাই।
বাংলাদেশের জন্য মিয়ানমারে একটি বন্ধুপ্রতিম সরকার থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বমুখী পররাষ্ট্র নীতির কারণে মিয়ানমার আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সড়কপথ চালু হলে তা একদিকে যেমন আমাদের চিনের সঙ্গে সংযোগ ঘটাবে, অন্যদিকে আমরা আমাদের পণ্য নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয়ও যেতে পারব। আমাদের পণ্যের বিশাল এক বাজার সৃষ্টি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে উভয় দেশই বিমসটেক (ইওগঝঞঊঈ পরিবর্তিত নাম ইইওগঝঞঊঈ) এবং ইঈওগ জোটের সদস্য। যদিও প্রস্তাবিত ইঈওগ জোটটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ভুটান ও নেপাল বিমসটেক জোটে যোগ দেওয়ায় এ জোটটি শক্তিশালী হয়েছে। এই জোটের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডে একটি মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা। মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে চট্টগ্রামে মিয়ানমারের কাঁচামালভিত্তিক ব্যাপক শিল্প-কারখানা স্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিভিত্তিক মিয়ানমারে বাংলাদেশি সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন চট্টগ্রাম এলাকায় বেশ কিছু সার কারখানা স্থাপন করে বাংলাদেশ মিয়ানমারে সার রপ্তানি করতে পারে। মিয়ানমারের আকিয়াব ও মংডুর আশপাশের অঞ্চলে প্রচুর বাঁশ, কাঠ ও চুনাপাথর পাওয়া যায়। এসব কাঁচামালের ওপর ভিত্তি করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সিমেন্ট ও কাগজশিল্প বিকশিত হতে পারে। মিয়ানমারে প্রচুর জমি আনাবাদি রয়েছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের ভূমি লিজ নিয়ে বাংলাদেশের জন্য চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। মান্দালয়-ম্যাগওয়ের তুলা আমদানি করতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তার ক্রমবর্ধিষ্ণু গার্মেন্ট সেক্টরের কাঁচামাল হিসেবে তুলা মিয়ানমারের এই অঞ্চল থেকে আমদানি করতে পারে। গবাদি পশু আমদানি করার সম্ভাবনাও রয়েছে। বাংলাদেশিরা মিয়ানমারে গবাদি পশুর খামারও গড়ে তুলতে পারেন। মিয়ানমারের সেগুন কাঠ পৃথিবী বিখ্যাত। আমাদের ফার্নিচার শিল্পের চাহিদা মেটাতে পারে এই সেগুন কাঠ, যার ওপর ভিত্তি করে আমরা মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপে আমাদের ফার্নিচারশিল্পের প্রসার ঘটাতে পারি। মিয়ানমারে মূল্যবান পাথর যেমনÑ রুবি, জেড আর মারবেলসমৃদ্ধ। এসব মূল্যবান পাথর আমাদের জুয়েলারিশিল্পকে সমৃদ্ধ করে ভ্যালু এডিশনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হতে পারে। ভারত-মিয়ানমার প্রস্তাবিত গ্যাস পাইপলাইন থেকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশও উপকৃত হতে পারে। ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্স মিয়ানমারে গভীর সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত রয়েছে। এই গ্যাস তারা পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতে নিয়ে যেতে চায়। অতীতে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের আপত্তি ছিল। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। বাংলাদেশ মিয়ানমারের গ্যাস ব্যবহার করে সেখানে বিদ্যুৎ তথা জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, যা পরে বাংলাদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে মিয়ানমার। এখন সেনাবাহিনী ও অং সান সু চিÑ উভয়পক্ষই যদি কিছু ‘ছাড়’ না দেয়, তাহলে তা মিয়ানমারের জন্য কোনো মঙ্গল ডেকে আনবে না। সেনা জেনারেলদের বুঝতে হবে মানুষ সেখানে পরিবর্তন চেয়েছে। আশার কথা, প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন এবং সেনাপ্রধান মিন অং হাইং সু চিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অন্যদিকে সু চিকেও বুঝতে হবে নির্বাচনে বিজয় মানেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নয়। বাস্তবতা তাকে মেনে নিতে হবে। তাই সেনাবাহিনী ও নির্বাচনে বিজয়ী এনএলডির মধ্যে একটি ‘সমঝোতা’ প্রতিষ্ঠিত হোক- এটাই সবার কাম্য।
Daily Amader Somoy
15.11.15

0 comments:

Post a Comment