রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক সমঝোতা কি ভেস্তে গেল


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে ইরানের সঙ্গে একটি পারমাণবিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই সমঝোতা চুক্তিটি ছয় জাতি সমঝোতা চুক্তি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু গত জানুয়ারিতে (২০১৭) ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই পারমাণবিক সমঝোতা চুক্তিটি এখন প্রশ্নের মুখে আছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ইরান চুক্তিটি ঠিকঠাক মানছে না। দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই তিনি এটা নিশ্চিত করেছিলেন ওই চুক্তিটি তিনি মানবেন না! এরই ধারাবাহিকতায় তার প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ২১ মে রিয়াদে তিনি যখন আরব-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন, তখনো তিনি তার ওই ইরানবিরোধী মনোভাব আবারও স্পষ্ট করেছেন। রিয়াদে তিনি বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে জাতিগত দ্বন্দ্ব ও সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য ইরান দায়ী! ফলে ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির যে পারমাণবিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা এখন বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বলা ভালো, ওই সমঝোতা চুক্তিতে (২০১৫) ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এতে দেখা যায় যে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে পারবে না। তাদের পরমাণুকেন্দ্রে চলবে নজরদারি। অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকছে এবং তেহরান শর্ত ভাঙলে ৬৫ দিনের মধ্যে ফের কিছু নিষেধাজ্ঞা বহাল হবে। একই সঙ্গে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে কতটা এগিয়েছে, তা তদন্ত করবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএ। ফের আইএইএ ইরান বিরোধ হলে, তা মেটাবে একটি শালিসি বোর্ড। ওই চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ইরানের যে সম্পদ জব্দ করা হয়েছিল, তা ইরানকে ফেরত দেওয়া হবে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ফলে ইরান তার যাত্রীবাহী বিমান সংস্থার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানি করতে পারবে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১০ বছর পর ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আরও গবেষণা ও উন্নয়নকাজ করতে পারবে। কিন্তু এর পরও নিষেধাজ্ঞা ছিল। এতে সমঝোতার কোনো কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা দেখার বিষয়।
নিঃসন্দেহে এ অঞ্চলের রাজনীতির জন্য ওই চুক্তিটি উত্তেজনা হ্রাস করতে সাহায্য করার কথা। ওবামা প্রশাসনের ওপর ইসরায়েলি প্রশাসনের প্রচ- একটা ‘চাপ’ থাকা সত্ত্বেয় ওবামা প্রশাসন এ ধরনের শর্তে রাজি হয়েছিলেন। ফলে আলোচনায় বাকি বৃহৎ শক্তিগুলোও রাজি হয়েছিল। ওবামার জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট ছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্টার এবং প্রায় ১০০ জন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত কর্তৃক ওবামাকে সমর্থন। কংগ্রেস সদস্যদের বিরোধিতার মুখেও তিনি ওই সমঝোতাকে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তী সময়ে ১১টি ইরানি কোম্পানি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে ইরানবিরোধী একটা অবস্থান নিয়েছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে প্রায় ১৩ হাজার কোটি ডলারের একটি অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। রিয়াদ ঘোষণায় ৩৪ হাজার সেনাবাহিনীর একটি বাহিনী গঠনের কথাও বলা হয়েছে।
ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছিল বটে। কিন্তু নতুন করে নিষেধাজ্ঞা ও মানবাধিকার-সম্পর্কিত অভিযোগ রয়েছে। ইরানের অবস্থা অনেকটা ফাঁদে পড়ার মতো। ইরান পুরোপুরিভাবে ‘মুক্ত’ হচ্ছে না। নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক এখন প্রশ্নের মুখে থাকল। বলতে দ্বিধা নেই, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরিভাবে উঠে গেলে ইরান এ অঞ্চলে অন্যতম একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে, যা ইসরায়েল ও সৌদি আরবÑ কারোরই পছন্দ নয়। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে অন্যতম ফ্যাক্টর হচ্ছে ইসরায়েল। পারমাণবিক চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মন্তব্য করেছিলেন, ‘এটা একটা ঐতিহাসিক ভুল’। ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ চুক্তির কোনো কোনো ধারা নিয়ে সমালোচনাও করেছেন। ফলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার ওই চুক্তির প্রশংসা এবং ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ চুক্তির মধ্য দিয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে বলে মন্তব্য করলেও পরবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এখন দ্রুত বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে, এই অভিযোগ তুলে ২০০৬ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাতিল করার দাবি-সংবলিত একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। এরপর অন্তত এ-সংক্রান্ত আরও ছয়টি প্রস্তাব পরে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং ইরান ওই কর্মসূচি বাতিল না করায় ২০১০ সালে জাতিসংঘ ইরানের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানার সম্পদ জব্দসহ দেশটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তবে ২০০৬ সাল থেকেই ইরানের সঙ্গে ছয় জাতি (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও জার্মানি) আলোচনা চলে আসছিল। কিন্তু তাতে কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছিল না। ২০১৩ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে উদারপন্থি হিসেবে পরিচিত হাসান রুহানি বিজয়ী হলে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যায়। ফলে এই ছয় জাতি আলোচনা আরও গতি পায়। ২০১৪ সালের নভেম্বরে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং এপ্রিলে (২০১৫) সুইজারল্যান্ডের লুজানে একটি খসড়া চুক্তিতে ইরান ও ছয় জাতি উপনীত হয়। ওই বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ওই খসড়া চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। জুলাই (২০১৫) সালে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে অন্তত একটি জিনিস স্পষ্ট হয়েছিল। আর তা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনা। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই সম্পর্ক আরও উন্নত করার প্রয়োজন রয়েছে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে, প্রশাসনে,
সেনাবাহিনীতে এখনো ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পর দীর্ঘ ৪৪৪ দিন রেভল্যুশনারি স্টুডেটস কর্তৃক তেহরানের মার্কিন দূতাবাস দখল করে নেওয়ার ঘটনার স্মৃতি একটি ‘ক্ষতচিহ্ন’ হিসেবে রয়ে গেছে। ফলে সম্পর্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনাটা অত সহজ ছিল না। এরপর যোগ হয় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। ওই ঘটনার দীর্ঘ ৩৬ বছর পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি এই দেশ দুটিকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল। এর ফলে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘বন্ধু’ ইসরায়েলের আপত্তি সত্ত্বেও। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিস্টরা মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে ইরাক-সিরিয়ায় জঙ্গিবাদী ইসলামিক স্টেটের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে হলে তাদের ইরানের সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে। অনেকের স্মরণ থাকার কথা গেল নভেম্বরের (২০১৪) বারাক ওবামা স্বীকার করেছিরেন, তিনি গোপনে ইরানি সমর্থন চেয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। প্রত্যুত্তরে খামেনিও তাকে একটি গোপনে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। আইএস (ইসলামিক স্টেট) জঙ্গিদের ঠেকাতে ওবামা খামেনির সমর্থন চেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইয়েমেনে ‘হুথি বিদ্রোহ’ প্রমাণ করেছিল, সেখানেও একটি স্থিতিশীল সরকার গঠনে ইরানের সমর্থন প্রয়োজন রয়েছে। কেননা হুথিরা শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত এবং অভিযোগ আছে হুথি বিদ্রোহীরা ইরান থেকে আর্থিক ও সামরিক সাহায্য পেয়ে থাকে, যদিও ইরান বারবার তা অস্বীকার করে আসছে। ২০১৫ সালে ‘ইরান চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হওয়ায় সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক আরও স্বাভাবিক হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এটাই চেয়েছিল। সৌদি-ইরান জোট প্যারিসীয় অঞ্চলের রাজনীতিতে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে, এটা মনে করেন অনেক মার্কিন গবেষক। কেননা ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহের কারণে সেখানে সরকারের পতন ঘটে এবং প্রেসিডেন্ট দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর মার্চে সৌদি বিমান হুথি বিদ্রোহী ঘাঁটিতে বোমা হামলা চালালেও সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। এরই মধ্যে সৌদি আরবে শিয়া নেতা নিমর আল নিমরের মৃত্যুদ- কার্যকর করায় নভেম্বর ২০১৬ সৌদি আরব-ইরান সম্পর্কে অবনতি ঘটিয়েছে। এ দেশ দুটির মধ্যে আস্থাহীনতার সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। উপরন্তু সৌদি আরবের নেতৃত্বে একটি সামরিক জোট গঠিত হওয়ায় ইরান এটাকে ভালো চোখে নেয়নি। নতুন করে শিয়া-সুন্নি বিতর্কটি সামনে চলে এসেছে আবার। এরই মধ্যে নতুন করে যোগ হলো সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি এবং সৌদি আরবের নেতৃত্বে ৩৪ হাজার সেনাবাহিনীর (বিভিন্ন মুসলিম দেশের) একটি সামরিক জোটের, যা পরিচিতি পেয়েছে ‘আরব ন্যাটো’ হিসেবে।
এখন নয়া রাজনৈতিক সমীকরণের ফলে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা লক্ষ করার বিষয়। সিরিয়া সংকট সমাধানে ইরানের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। চলতি বছর সিরিয়ায় একটি সর্বদলীয় সরকার গঠিত হওয়ার কথা এবং আগামী বছর সেখানে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখন ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যদি আরও অবনতি ঘটে, তাহলে তা সিরিয়ার ঘটনাবলিতেও প্রভাব ফেলবে। চলতি বছরের কোনো একসময় জেনেভায় সিরিয়া নিয়ে একটি বহুদলীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই আলোচনায় ইরান ও সৌদি আরবও অংশ নেবে। এখন নতুন করে সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রি ও সামরিক জোট গঠন করায়, তা সামগ্রিকভাবে আলোচনায় একটা অচলাবস্থা এনে দিতে পারে। এটা সবাই জানে যে, ইরান সিরিয়ায় আসাদ সরকারকে সমর্থন করছে। আর ইরান পাশে পেয়েছে রাশিয়ার মতো বড় একটি শক্তিকে। ফলে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতিতে সিরিয়ায় শান্তি প্রক্রিয়া বিস্মিত হবে। দীর্ঘ প্রায় ৩৬ বছর ইরান আন্তর্জাতিক আসরে একা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে ইরান বিশ্বে একা হয়ে গিয়েছিল। ইরানের বৈদেশিক আয়ের বড় উৎস পেট্রোলিয়াম সেক্টরে কোনো বিনিয়োগ আসছিল না। এমনকি ইরান তেল রপ্তানি করতেও পারছিল না। এ জন্যই ইরানিদের প্রয়োজন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন। কট্টর শিয়া ধর্মীয় ভাবধারায় বিশ্বাসী ইরানি ধর্মীয় নেতারা এটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেনÑ এটাই হচ্ছে বাস্তববাদী নীতির মূল কথা। ২০১৬ সালে ইরানের পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই পার্লামেন্ট নির্বাচনে রুহানি সমর্থকরা বিজয়ী হয়েছিলেন। একই সঙ্গে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হয় ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ওই নির্বাচনে রুহানি দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন। আর ওই সময়েই ট্রাম্প সৌদি আরব সফর করেছেন। তবে কট্টরপন্থিরা ইরানে এখনো তৎপর।
ইসরায়েলের বিরোধিতার কারণে মার্কিন কংগ্রেসে এই ইরান সমঝোতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ট্রাম্পের পাশাপাশি রিপাবলিকান পার্টির একটা বড় অংশ ইরান পারমাণবিক সমঝোতার বিরোধী। ডেমোক্র্যাটরা এটাকে সমর্থন করলেও, কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের অবস্থান অত্যন্ত দুর্বল। এখন ট্রাম্প যদি চান, তাহলে কংগ্রেসে ওই সমঝোতা বাতিল কিংবা ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি বিল উত্থাপিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি লবি এটাই চাইছে। এমনকি মে মাসে (২০১৭) ট্রাম্পের ইসরায়েল সফরের সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইরান চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইরানের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দার্শনিক রামিন জাহানবেগলু (জধসরহ ঔধযধহনবমষড়ড়) একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছিলেনÑ ‘মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির মেরুকরণে এই মুহূর্তে ইরান একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ’। এটাই হচ্ছে মোদ্দাকথা। ইরানকে ছাড়া যে উপসাগর তথা মধ্যপ্রাচ্যে একটি স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করা যাবে না, এটা প্রমাণিত হয়েছে। এখন দেখার পালা, মার্কিন নীতিতে এ পরিবর্তনটা কীভাবে প্রতিফলিত হয়। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের আগে, অর্থাৎ রেজা শাহ পাহলেভির শাসনামলে মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে যে মার্কিনি নীতি তার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ইরান। ইরানকে সঙ্গে নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু সেই দৃশ্যপট বদলে যায় ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর। তারপর অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। ইরানে রুহানির উত্থান ও দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয় প্রমাণ করেÑ ইরানের নয়া নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত করতে চায়। কিন্তু ট্রাম্প যেভাবে এগোচ্ছেন, তা পুরো দৃশ্যপটকে বদলে দিতে পারে। এখানে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব-ইরান দ্বন্দ্ব কিংবা শিয়া-সুন্নি সেই পুরনো বিরোধ যদি আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, তাহলে তা কারো জন্যই কোনো মঙ্গল ডেকে আনবে না।
Daily Amader Somoy
27.05.2017

0 comments:

Post a Comment