রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

দুদক তদন্ত করুক, দুর্নীতিবাজরা শাস্তি পাক




ভদ্রলোক প্রতিদিন নাশতা খেয়েছেন সাত হাজার ২৩৩ টাকার। তিনি একজন ভিসি, অর্থাৎ উপাচার্য, এখন সাবেক। ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ এই দুই অর্থবছরে মাত্র ১৬৫ দিন ক্যাম্পাসে অবস্থান করে মোট ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৫২৮ টাকার 'নাশতা' খেয়েছেন। যার অর্থ প্রতিদিন ৭ হাজার ২৩৩ টাকা। নাশতা তিনি খেতেই পারেন। তিনি যখন মিটিংয়ে থাকেন, তখন নাশতা খেতে পারেন। তবু তার জন্য প্রতিদিন সাত হাজার ২৩৩ টাকা বরাদ্দ। কী খেয়েছিলেন তিনি?
সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, মন্ত্রীরা কিংবা সচিবরাও কী তাহলে এ ধরনের ঋণ করেন? এই ভদ্রলোকের নাম অধ্যাপক নুর উন নবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক। কোথায় যেন শুনেছিলাম তিনি একসময় জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সত্য-মিথ্যা জানি না। তবে তিনি যে আওয়ামী লীগের সম্মানিত শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। জাসদ এখন সরকারের অংশীদার। হতে পারে 'জাসদ কোটায়' তিনি ভিসি হয়েছিলেন। একজন শিক্ষক যখন দুর্নীতিবাজ হন, আমরা তখন কার কাছে আস্থাটা রাখি? তার দুর্নীতির যে খবর পত্র-পত্রিকায় ও অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে (যায়যায়দিন ও পরিবর্তন.কম) তা নিছক কোনো একটি সাধারণ রিপোর্ট নয়। ওটা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট সুতরাং এর পেছনে সত্যতা আছে। ভদ্রলোকের দুর্নীতির আরও কাহিনী আছে। তিনি নিজে একা তিনটি গাড়ি ব্যবহার করতেন। এর মাঝে একটি আবার সার্বক্ষণিকভাবে ঢাকায় তার স্ত্রী ব্যবহার করতেন। স্ত্রী কেন সরকারি গাড়ি ব্যবহার করবেন? বিশ্ববিদ্যালয় কেন ওই গাড়ির ড্রাইভারের বেতন ও জ্বালানি বিল পরিশোধ করবে? জ্বালানি বাবদ তিনি কত ব্যবহার করেছিলেন, তারও হিসাব নেয়া প্রয়োজন। আরও 'কাহিনী' আছে। তিন বছরে ভর্তি পরীক্ষার 'সম্মানী' বাবদ ১৬ লাখ টাকা তিনি নিয়েছেন। এটা তো তিনি পারেন না? মঞ্জুরি কমিশনের আইনে তা অনুমোদন করে না। এসব দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের কারণে শিক্ষক সম্পর্কে আজ সবাই অন্য চোখে দেখে। প্রশ্ন হচ্ছে_ শিক্ষক হিসেবে তিনি কী মাফ পেতে পারেন? আইন কী তাকে অন্য চোখে দেখবে? দুদক অতি সম্প্রতি অনেক ভালো কাজ করেছে। সর্বশেষ ঘটনায় দুদক সিলেটেরে হাওর অঞ্চলের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাদের ডেকেছে। তাদের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকা নিয়ে যারা 'নয়-ছয়' করেন, তা দেখার দায়িত্ব দুদকের। এখন যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত শেষে এসব আর্থিক কেলেঙ্কারী ধরা পড়েছে। সুতরাং দুদক তদন্ত করতেই পারে। করা উচিত। কেউই আইনের ঊধর্ে্ব নন। একজন শিক্ষক কিংবা একজন উপার্চায হিসেবে কেউই মাফ পেতে পারেন না। তিনি যদি আর্থিক কেলেঙ্কারীর সঙ্গে জড়িয়ে যান, তার বিচার প্রচলিত আইনেই হওয়া উচিত। দুদক যদি তার আর্থিক অনিয়মের বিচার করে, তাহলে এটা একটা মেসেজ পেঁৗছে যাবে সব ভিসির কাছে_ কেউই তখন আর দুর্নীতির সঙ্গে নিজেকে জড়িত করবেন না।
সাম্প্রতিক সময়ে উপাচার্যদের নানা কাহিনী পত্র পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে, যা পড়ে মাথা হেট হেয়ে যায়। আরেক উপাচার্যের কাহিনী ছাপা হয়েছিল ক'দিন আগে। তাতে দেখা গেছে তিনি তার সরকারি বাসায় একটি বিউটি পার্লার স্থাপন করেছেন। ছবিও আছে একটি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ভিসি তার বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত বিউটি পার্লারের সিরিয়াল নিজেই নিয়ন্ত্রণ করছেন। একজন ভিসি, অর্থাৎ উপাচার্য, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিউটি পার্লার কেন, আলু-পটোলের ব্যবসা করতেই পারেন। এটা তার অধিকার। কিন্তু তিনি তো এর জন্য উপাচার্য ভবন ব্যবহার করতে পারেন না? খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই বিউটি পার্লারের জন্য যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে, তাও নেয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, তা থেকে। আমাদের দুঃখ লাগে আমরা এ ধরনের 'লোককেও' ভিসি বানিয়েছি। তিনি তো শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক। তিনি গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। নাম তিনি গোপালগঞ্জের মানুষ হতে পারেন। কিন্তু গোপালগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ওই এলাকার একজন শিক্ষকেই নিয়োগ দিতে হবে কেন। এ প্রবণতা তো আঞ্চলিকতার জন্ম দেবে। দিয়েছেও। একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধির কাছে তিনি প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করেছেন। এটা তিনি করতে পারেন না। দুদকে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও আর্থিক কেলেঙ্কারীর অভিযোগ রয়েছে। তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন দুদকের চিঠির কোনো জবাব দিতে হবে না। কেননা তিনি ম্যানেজ করে ফেলেছেন। কী সাংঘাতিক কথা। সরাসরি তিনি বললেন 'ম্যানেজ' করার কথা। দুদক তো কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না ইদানীং। ভদ্রলোক গোপালগঞ্জের মানুষ এবং ভিসি হতে পারেন। তাই বলে কী ছাড় পেতে পারেন? নিশ্চয়ই তিনি এটা পারেন না। তার বিরুদ্ধেও তহবিল তসরূফ ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এখন ভবিষ্যতই বলতে পারবে দুদক বিষয়গুলোকে কিভাবে দেখছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে অনেক ভিসির 'কাহিনী' কোনোদিই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়নি। হয়তো হবেও না। তবে তাদের সম্পদের হিসাব যদি নেয়া যায়, তাহলে 'থলের বিড়াল' বেরিয়ে এলেও আসতে পারে। মনে আছে বিএনপি জমানায় এক ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ক্রয়কৃত ইট-সিমেন্ট দিয়ে ঢাকায় নিজের বাড়ি নির্মাণের কাজে ব্যবহার করেছিলেন। আরেক ভিসি তার জন্য নির্ধারিত বাসভবনে না থেকে নিজ বাড়িতে থেকে বাসা ভাড়া গ্রহণ করেছিলেন (সে টাকা ফেরত দিতে আমি বাধ্য করেছিলাম আমার তদন্ত শেষে)। আরেক ভিসি নিজের বোনকে বিয়ের বিনিময়ে একজনকে চাকরি দিয়েছিলেন। তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তার দুর্নীতি সংক্রান্ত ফাইল হারিয়ে গিয়েছিল। কোনো বিচার হয়নি। আজ তাই গোপালগঞ্জের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির 'বিউটি পার্লার' দেয়ার কাহিনী শুধু সংবাদপত্রেই থেকে যাবে বলে আমার আশঙ্কা। আর শিক্ষামন্ত্রীও আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যাবেন এবং উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের আহ্বান জানাবেন। সংবাদপত্রে সে খবর ছাপা হবে। আমরা উৎসাহিত হব। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন হবে, আমরা তা আশা করতেই থাকব। এ 'কাহিনীর' যেন শেষ নেই। সরকার একটু ভাবুন কাদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে? কী তাদের যোগ্যতা? 'বিউটি পার্লার' দেয়ার যার মানসিকতা তিনি কী ভিসি হতে পারেন? যোগ্য লোককে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদগুলোতে নিয়োগ না দিলে যা হয় তাই হয়েছে গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ক্ষেত্রে। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিক তাকে ওই পদে রাখা কতটুকু যৌক্তিক হবে? আমরা শুধু আশা করতেই পারি বিশ্ববিদ্যালয়টি ঠিকমতো চলুক। দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি অবদান রাখুক। প্রধানমন্ত্রীর নিজের বাড়ি গোপালগঞ্জ। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের কথা বিবেচনা করে তিনি গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু একজন ব্যক্তির জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়বে, আমরা তা চাই না। বিষয়টি তদন্ত হোক এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো হোক। সেই সঙ্গে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও কথা বলা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ি রংপুর। উপরন্তু একজন মহীয়সী নারীর নামে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অধ্যাপক নবী মাত্র তৃতীয় ভিসি। অধ্যাপক নূর উন নবী তার টার্ম শেষ করেছেন ৫ মে। তিনি অনেক তদবির করেছেন দ্বিতীয় টার্মের জন্য। তার অতীত রেকর্ড ও দুর্নীতির অভিযোগের কারণে সরকার আর দ্বিতীয় টার্মের জন্য তাকে নিয়োগ দেয়নি। দ্বিতীয় টার্ম যে কখনো ভালো হয় না তার বড় প্রমাণ অধ্যাপক মীজানুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। তার একটি মন্তব্যের জন্য তিনি বিতর্কিত হয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, 'ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চাকরি দিতে তিনি বাধ্য।' হয়ত কথাটা তিনি এভাবে বলতে চাননি। কিন্তু প্রথম আলোর মতো পত্রিকা তার বক্তব্য এভাবেই ছেপেছিল। তিনি নাকি বলতে চেয়েছিলেন তার আমলে কোনো জামায়াত-শিবির কর্মী জগন্নাথে চাকরি পাবে না। তিনি ভিসি। সিদ্ধান্ত তিনি নিতেই পারেন। কে শিবির, কে ছাত্রদল, কে জাসদ_ কাউকে তো এভাবে চিহ্নিত করা যায় না। তিনি স্পষ্টভাষী। সবসময় স্পষ্ট করে কথা বলেন। টিভি টকশোতেও বলেন। বিরোধী পক্ষকে ছাড় দেন না। তার রাজনৈতিক দর্শনের কারণে তিনি এমনটি করতেই পারেন। আমার ধারণা তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সরাসরি অংশ নিলে ভালো করবেন। ভবিষ্যতে দেশ ভালো নেতৃত্ব পাবে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতি আর শিক্ষকতা এক সঙ্গে তিনি মেলাতে পারছেন না। রাজনীতি প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি। নিশ্চয়ই তিনি এটা উপলব্ধি করতে পারবেন। একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমার অনুরোধ থাকবে তিনি রাজনীতিতে আসুন। আমরা দেশে ভালো নেতৃত্ব পাব।
ভিসিদের নিয়ে নানা কাহিনী আমাকে বিব্রত করে। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যিনি সরকারের শীর্ষ আমলা হয়েছিলেন। তিনি আমাকে দেখাতে চেয়েছিলেন কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে (এমনকি জাহাঙ্গীরনগরের ক্ষেত্রেও)। আমার ওই বন্ধু বর্তমান সরকারের খুব কাছের লোক। ধারণা করছি ভবিষ্যতে কোনো 'বড় পদ' পাবেন তিনি। বন্ধু হিসেবে নিশ্চয়ই খুশি হব আমি তাতে; কিন্তু আমি তাকে বলেছিলাম শিক্ষক হিসেবেই আমি ব্যর্থ। উপাচার্য হই কিভাবে? বর্তমান সময়ে উপাচার্য হলে অনেক 'গ্রুপ'কে সন্তুষ্ট করতে হয়। আমি তা পারব না। আমার অনেক দুঃখবোধ আছে। শিক্ষক হিসেবে ভালো ছাত্রটিকে আমি শিক্ষক হিসেবে পাইনি। কেননা তার কোনো রাজনৈতিক দর্শন ছিল না। অর্থাৎ কোনো বড় ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। শুধু পড়াশোনা করে গেছে সারাটা সময়। অনার্স ও মাস্টার্সে তার অবস্থান দুটোতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম ছিল। কিন্তু শিক্ষক হবার 'যোগ্যতা' সে অর্জন করতে পারেনি। টিআইবি আমাদের জানিয়েছিল টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয়। কাকে শিক্ষক বানানো হবে, প্রথম থেকেই অর্থাৎ প্রথম বর্ষ থেকেই 'টার্গেট' নিয়ে এগিয়ে যায় একটি 'চক্র'। বারে বারে পরীক্ষা কমিটিতে থাকা, বিশেষ বিশেষ শিক্ষকের সঙ্গে সখ্যতা_ যা টিআইবির রিপোর্টে ছিল, তাতে কোনো মিথ্যা কিছু ছিল না। কিন্তু ওই রিপোর্টের পরও কী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো পরিবর্তন এসেছে? না, পরিবর্তন আসেনি। আজও দেখি আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই। কিংবা অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা 'চুপ'। কেননা তাদের স্বার্থ আছে। তাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সন্তানরা শিক্ষক হিসেবে এখন যোগ দিচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগরে। তাই আমার বন্ধুকে বলি আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। অবসরে যাব এই ব্যর্থতা নিয়েই। কোনো দায়িত্ব আমি আগামীতেও নেবো না।
লেখাটা শুরু করেছিলাম দুদককে উদ্দেশ্য করে।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী ভিসি অধ্যাপক নূর উন নবী 'দুর্নীতির ডাকাত' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। প্রতিদিন 'নাশতার' বা আপ্যায়নের জন্য যিনি বিল তোলেন প্রায় সাত হাজার ২৩৩ টাকা (মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত অনুযায়ী), ভর্তি পরীক্ষায় ডিউটি না করেও যিনি তিন বছরে বিল নেন ১৬ লাখ টাকা (তদন্ত রিপোর্ট), তাকে 'দুর্নীতির ডাকাত' বলাই তো যুক্তিসঙ্গত। এখন দুদক তদন্ত করুক। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হোক। একটা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক।
আর ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাছ-বিচার করা হোক। সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের নিরুৎসাহিত করে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের এবং সিনিয়র প্রফেসরদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হোক। যারা এখন ভিসির জন্য তদবির করছেন, টিভি টকশোতে সরকারের গুণগান গাচ্ছেন বেশি করে, বুঝতে হবে তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়। আমরা একুশ শতক উপযোগী করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তৈরি করতে চাই। কিন্তু 'নবী মার্কা ভিসি' কিংবা 'মীজান মার্কা মডেল' (প্রথম আলো), আর যাই হোক, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একুশ শতক উপযোগী করে গড়ে তুলতে কোনো সাহায্য করবে না। আমাদের নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে এই উপলব্ধি বোধটুকু আসুক, এটাই প্রত্যাশা করি।
Daily Jai Jai Din13.05.2017

0 comments:

Post a Comment