রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ফ্রান্সে ম্যাখোঁর বিজয় ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ


শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বিজয়ী হয়েছেন। এই বিজয় ইউরোপে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রার্থীদের অবস্থান শক্তিশালী করলেও ব্রেক্সিটের পর তাঁরা যে খুব স্বস্তিতে আছেন, তা বলা যাবে না। ফ্রান্সে উগ্র দক্ষিণপন্থীদের ক্ষমতা গ্রহণ ঠেকানো গেছে বটে, তার পরও রয়ে গেছে নানা প্রশ্ন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যত্ নিয়ে প্রশ্ন আছে এবং তা থাকবেও। ম্যাখোঁ বিজয়ী হয়েছেন বহু কারণে। প্রথমত, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুটি বড় দল সমাজতান্ত্রিক আর রিপাবলিকান পার্টির কোনো প্রার্থী ছিল না। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলের মনোনয়নই পাননি। আর রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল দুর্নীতির। ফলে একসময় ওলাঁদের মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী ম্যাখোঁ অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, ফ্রান্স ঐতিহ্যগতভাবেই অভিবাসীদের দেশ। অভিবাসীদের রক্তেই ফ্রান্সের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে। ফলে মারিন ল্য পেনের অভিবাসনবিরোধী বক্তব্য সাধারণ মানুষ গ্রহণ করেনি। তৃতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকতেই মানুষ বেশি পছন্দ করেছে। ব্রেক্সিটের পর ফ্রেক্সিটের (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ফ্রান্সের বেরিয়ে যাওয়া) ব্যাপারে সমর্থন ছিল না ফ্রান্সবাসীর। বলা ভালো, ছয়টি দেশ নিয়ে ১৯৫৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্বসূরি ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি গঠিত হয়েছিল, ফ্রান্স ছিল তার মধ্যে অন্যতম। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যাপারে ফ্রান্সবাসীর এক ধরনের দুর্বলতা আছে। তারা ল্য পেনকে ক্ষমতায় বসিয়ে ইইউ ছাড়তে রাজি ছিল না।
অনেক প্রশ্ন, আর অনেক জিজ্ঞাসা সামনে রেখেই ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ক্ষমতা নিতে যাচ্ছেন ১৪ মের মধ্যে। এটাই নিয়ম। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ফ্রান্সের মতো একটি বড় শক্তির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াকে বিশ্লেষকরা কেউ কেউ সম্রাট নেপোলিয়নের (১৭৬৯-১৮২১) সঙ্গে তাঁকে তুলনা করেছেন। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ১৮০৪ সালে ফ্রান্সের ক্ষমতা দখল করেছিলেন (১৮০৪-১৪)। আর ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ক্ষমতা নিচ্ছেন ৩৯ বছর বয়সে। ফ্রান্স বিশ্বের ষষ্ঠ অর্থনীতি জি-৭-এর সদস্য। সুতরাং ফ্রান্স যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকে, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শক্তিশালী হবে। আর ল্য পেন বিজয়ী হলে ফ্রান্স বেক্সিটের পথ অনুসরণ করত, তাতে ক্ষতি হতো ইউরোপীয় ঐক্যের। লাভবান হতো রাশিয়া ও ট্রাম্প। ট্রাম্প তো বেক্সিটকে সমর্থন করেছিলেন এবং ফ্রেক্সিটকেও সমর্থন করতেন। এতে আমরা এক দুর্বল ইউরোপকে পেতাম। এ যাত্রা রক্ষা পেয়েছে ইইউ। কিন্তু ইইউয়ের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। ফ্রান্সের মতোই ইইউয়ের অন্যান্য দেশে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা শক্তিশালী হচ্ছে। এরা ইউরোপীয় ঐক্যকে আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। ফলে ভেঙে যেতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই প্রক্রিয়া ব্রিটেন থেকেই শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকা নিয়ে ব্রিটেনে গণভোট হয়েছিল। সেই গণভোটে ইইউতে না থাকার পক্ষে রায় পড়েছিল। এরই প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের আইনসভার উভয় কক্ষে এটি অনুমোদিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে গত ২৯ মার্চ আর্টিকেল ৫০ অনুযায়ী একটি চিঠি লিখেছেন। ৪৪ বছর আগে ১৯৭৩ সালে ব্রিটেন ইইসিতে যোগ দিয়েছিল। আর ২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত লিসবন চুক্তি হচ্ছে ইইউয়ের সাংবিধানিক ভিত্তি। অর্থাত্ লিসবন চুক্তির আর্টিকেল ৫০ অনুযায়ী যেকোনো সদস্য দেশ ইইউ ত্যাগ করতে পারে। ব্রিটেন এখন এই ধারা অনুসরণ করছে। তবে সমস্যা কিছু রয়ে গেছে। ব্রিটেনকে বিশাল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। ব্রিটেনে বসবাসরত ইইউয়ের নাগরিকদের অধিকার নিয়েও প্রশ্ন আছে। আলোচনা শুরু হবে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। আর সব ঠিক থাকলে ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ কার্যকর হবে। এখন যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে, ফ্রান্সে ম্যাখোঁর বিজয় ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থীদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু ব্যাপক অভিবাসন নিয়ে বিতর্ক, সন্ত্রাসবাদ—যার সঙ্গে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন জড়িত। কিংবা ইইউয়ের ভেতরকার আর্থিক টানাপড়েন, উগ্র ডানপন্থী তথা কট্টর জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান কি ভবিষ্যতে ইইউকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আদৌ কোনো সাহায্য করবে?
এটা অস্বীকার করা যাবে না বিশ্ব রাজনীতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি অবস্থান রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়া এবং পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে। কেননা পূর্ব ইউরোপের সাবেক সমাজতান্ত্রিক  রাষ্ট্রগুলোর প্রায় সব কটি এখন ন্যাটো তথা ইইউয়ের সদস্য। ফলে ইইউ বিশ্ব রাজনীতিতে এখন একটি শক্তি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়েও আলাদা একটি অবস্থান নিয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এক ও অভিন্ন, তা বলা যাবে না। কিন্তু ইউরোপে ব্যাপক অভিবাসী আগমনকে কেন্দ্র করে বদলে গেছে দৃশ্যপট। এই অভিবাসন ইস্যুতে ব্রিটেনে নির্বাচনে হেরে গেছে ক্ষমতাসীন দল। ভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় পড়ে। আর টেরেসা মে সেই প্রক্রিয়াই এখন শুরু করেছেন। তবে ভালো সংবাদ হচ্ছে, ফ্রান্সে ভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থীরাই জয়ী হয়েছেন।
গেল মার্চ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার জন্মের ৬০ বছর পার করেছে। ১৯৫৭ সালে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবার্গকে নিয়ে যে সংগঠনটির জন্ম হয়েছিল (ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি) তা এখন ২৭টি রাষ্ট্রের একটি সংগঠনে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া এই সংগঠনে যোগ দিয়েছে ২০০৭ সালে। মূলত ২০০৪ সালের আগে কোনো সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশ ইইউতে যোগ দিতে পারেনি। এ জন্য কোপেনহেগেন ফর্মুলায় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু, মুক্তবাজার অর্থনীতি, মানবাধিকার রক্ষা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যের কথা আমরা এখানে উল্লেখ করতে পারি। এক. শেঙেন চুক্তি ও দুই. একক মুদ্রা ইউরো চালু। ১৯৯৭ সালের ১৬ মার্চ শেঙেন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে ইইউভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকরা ভিসা ছাড়া এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলাচল করতে পারে। অন্যদিকে ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এক মুদ্রা ইউরো চালু হয়। ১৯৯২ সালের ম্যাসট্রিচট্ চুক্তির ফলে ইউরো চালু হয়েছিল। এখানে বলা ভালো, ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে ইইসি ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) ইইউয়ের জিডিপির পরিমাণ ১৯.২০৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের বড় অর্থনীতি। কিন্তু ইইউয়ের জন্য বড় সমস্যা হচ্ছে দক্ষিণপন্থী উত্থান। শুধু ফ্রান্স কেন? ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশ (ইইউভুক্ত) এই দক্ষিণপন্থী প্রবণতায় আক্রান্ত। অস্ট্রিয়ায় নব্য নাজি নেতা নর্বাট হফার ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রায় জিতে গিয়েছিলেন। তিনি ফ্রিডম পার্টির নেতা। জার্মানিতে জুন মাসে (২০১৭) সংসদ নির্বাচন। ধারণা করা হচ্ছে, উগ্র দক্ষিণপন্থী অলটারনেটিভ ফর জার্মান পার্টি, যাদের নব্য নাজি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তারা সংসদে প্রথমবারের মতো যেতে পারে। হল্যান্ডে উগ্র দক্ষিণপন্থী পার্টি ফর ফ্রিডমের উত্থান লক্ষ করার মতো। মার্চে (২০১৭) সেখানে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। এই দলটি নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছে। নিউ ইর্য়ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে (মার্চ ২০, ২০১৭) পরিসংখ্যান দিয়ে দেখানো হয়েছে—ইতালি, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি, সুইডেন কিংবা সুইজারল্যান্ডের মতো দেশে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা নির্বাচনী রাজনীতিতে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পেরেছে। ফলে ফ্রান্সে মারিন ল্য পেনের উত্থান ঘটবে, উগ্র দক্ষিণপন্থীরা সেখানে শক্ত অবস্থানে থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। এই উগ্র দক্ষিণপন্থী উত্থান ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্যের জন্য হুমকি। এই উগ্র দক্ষিণপন্থীদের উত্থানের কারণে ইতালিতেও সরকারের পতন ঘটেছিল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য আরেকটি অশনিসংকেত হচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে ধনী ও গরিব রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। গ্রিসের অভিজ্ঞতা পাঠকদের মনে আছে। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে গ্রিস দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। পরে সেখানকার বামপন্থী সিপ্রাস সরকার শর্ত মেনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ঋণ গ্রহণ করে। বলা যেতে পারে, এক ধরনের শর্তযুক্ত ঋণ গ্রহণ করেই গ্রিস তার অর্থনীতি টিকিয়ে রাখছে। পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে, ইতালি, পর্তুগাল কিংবা আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতিও কোনো ভালো অবস্থানে নেই। মূলত ইইউভুক্ত দেশগুলোতে একদিকে জার্মানি কিংবা ফ্রান্সের মতো ধনী রাষ্ট্র রয়েছে, যারা নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রভাব খাটাচ্ছে। অন্যদিকে গ্রিস কিংবা পর্তুগালের মতো দেশ রয়েছে, যারা পরিপূর্ণভাবে ধনী রাষ্ট্রগুলোর সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে বৈষম্য যদি কমিয়ে আনা না যায়, তাহলে ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে অসন্তোষ থাকবেই। আর এই অসন্তোষই ইইউকে বিভক্তির মুখে ঠেলে দেবে। ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে গেছে। ফ্রান্সে এ রকম একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, যা ম্যাখোঁর বিজয়ের মধ্য দিয়ে এড়ানো গেছে। ভবিষ্যতে ইতালির দিকে লক্ষ্য থাকবে অনেকের। সেখানে অসন্তোষ আছে। ইইউবিরোধী সেন্টিমেন্ট আছে। উগ্র দক্ষিণপন্থীরা এই অসন্তোষ তাদের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, কিছু বিষয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উঠে এসেছে। ইউরোপীয় ঐক্য, অভিবাসন, অর্থনীতি, ফরাসি নাগরিকদের মর্যাদা ও সন্ত্রাসবাদ বিষয়গুলো ভবিষ্যতে ফ্রান্সের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে। ১১ জুন সেখানে সংসদ নির্বাচন। যদিও ফ্রান্সে সংসদীয় রাজনীতি নেই। এখানে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। এ কারণে সংসদের ভূমিকা মুখ্য নয়, গৌণ। তার পরও সংসদে যে দলের আসন বেশি থাকবে, তার একটি ভূমিকা থেকে যাবেই। এর মধ্যেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মূলধারার রাজনীতিবিদদের বিদায় নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে সেখানে। এখন দেখার পালা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ কী ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তিনি ভালো অর্থনীতিবিদ। অর্থমন্ত্রী ছিলেন। করপোরেট হাউসগুলোর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে। ফ্রান্সে বেকার সংখ্যা জনগোষ্ঠীর প্রায় ১০ শতাংশ। এই বেকারদের একটা বড় অংশ অভিবাসী, বিশেষ করে মুসলমান ধর্মাবলম্বী এবং মুসলমানপ্রধান দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীদের সন্তান। তাদের একটা অংশ বিভ্রান্ত হয়ে আইএসে যোগ দিয়েছে। সেখান থেকে কেউ কেউ ফিরেও এসেছে। তবে ম্যাখোঁর নীতি নিয়ে ভয়ও আছে। নির্বাচনের আগে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আগামী পাঁচ বছরে এক লাখ ২০ হাজার সরকারি কর্মসংস্থান কমিয়ে সরকারি খরচ ৬০ বিলিয়ন ইউরো কমাবেন। সেই সঙ্গে সরকারি বিনিয়োগ কমাবেন ৫০ মিলিয়ন ইউরো। করপোরেট লাভের কর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনবেন ২৫ শতাংশে। সরকারি খরচ জিডিপির ৫২ শতাংশে নামিয়ে আনবেন। সপ্তাহের শ্রমঘণ্টা ৩৫ ঘণ্টা তিনি বহাল রাখবেন। যারা স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের সবার স্বাস্থ্যসেবা তিনি নিশ্চিত করবেন। প্রতি মাসে ৫০০ ইউরো বাসা ভাড়া বরাদ্দ ও বেকার ভাতার পরিধি বাড়াবেন। ইইউ যে সাধারণ শরণার্থী নীতি গ্রহণ করেছে, তা তিনি অনুসরণ করবেন। অতিরিক্ত ১০ হাজার পুলিশ নিয়োগ দেবেন। কিন্তু যে প্রশ্ন আমি এরই মধ্যে অনেকের লেখায় পেয়েছি, তা হচ্ছে তাঁর এসব অর্থনৈতিক কর্মসূচি বেকার সমস্যা সমাধানে ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হ্রাসে কতটুকু সাহায্য করবে? ম্যাখোঁ অর্থনীতি ভালো বোঝেন। সুতরাং ইসলামবিরোধী একটি সেন্টিমেন্টের জন্ম দিয়ে গেলেন, তার কী হবে? প্রায় ৬৬.৮১ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৭.৭ মিলিয়ন ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। শতকরা হিসেবে প্রায় ১১ ভাগ। মূল জনগোষ্ঠীর জন্য এটা কোনো হুমকি নয়। তবে আইএস তাদের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণ মুসলমানদের মধ্যে কিছুটা ঘাঁটি গেড়েছে। ম্যাখোঁ এখন এই তরুণদের ব্যাপারে কী নীতি গ্রহণ করেন সেটাই দেখার বিষয়। ম্যাখোঁর বিজয় তাই এই মুহূর্তে হয়তো অনেক প্রশ্নের কোনো জবাব দেবে না। তবে এটা তো ঠিক, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যত্ রাজনীতির দিকে দৃষ্টি থাকবে অনেকের। রাশিয়ার আগ্রহ বাড়ছে ইউরোপের দিকে। ম্যাখোঁর ই-মেইল ফাঁসের সঙ্গে রাশিয়া জড়িত, এমন একটা কথা শোনা গেছে। আবার ডোনাল্ড ট্রাম্পও চান ব্রিটেনের মতো অন্যান্য দেশও ইইউ থেকে বেরিয়ে আসুক। সব মিলিয়ে ব্রেক্সিটের পর ফ্রান্সের নির্বাচনে বড় পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু ইইউ নিয়ে আলোচনা যে শেষ হয়েছে, এটা বলা যাবে না।
Daily kalerkontho
10.05.2017

0 comments:

Post a Comment