রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

পারস্য উপসাগর অঞ্চলে নতুন উত্তেজনার নেপথ্যে



পারস্য উপসাগরীয় রাজনীতিতে নতুন একটি মাত্রা যুক্ত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সৌদি আরব সফর, আরব-ইসলামিক-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান এবং সৌদি আরবকে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তির পরপরই দুটো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে এ অঞ্চলে; যা পারস্য উপসাগরীয় তথা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে আগামী দিনে। প্রথমটি হচ্ছে, কাতারের সঙ্গে সৌদি আরব তথা গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত চারটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং কাতারের বিরুদ্ধে এক ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তেহরান পার্লামেন্টে এবং ইমাম খোমেনির মাজারে সন্ত্রাসী হামলা।

২১ মে রিয়াদে আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলন শেষে ৩৪ হাজার সৈন্যের এক বিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। সৌদি আরব এ সেনাবাহিনী গঠনের উদ্যোক্তা এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান এ বাহিনীর নেতৃত্ব দেবেন। ফলে সঙ্গত কারণেই ইরান এক ধরনের অস্বস্তিতে আছে। এবং এটা এক ধরনের হুমকিও বটে! মূলত ট্রাম্পের সফরের পরপরই এ অঞ্চলে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন এর সঙ্গে যোগ হল সৌদি আরব-কাতার দ্বন্দ্ব। সৌদি আরব-ইরান দ্বন্দ্বের সঙ্গে সৌদি আরব-কাতার দ্বন্দ্বের একটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিল আছে। আগামী দিনে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে এর একটা প্রভাব থাকবে। সৌদি-কাতার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে অনেক প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে। প্রথমত, কেন এ দ্বন্দ্ব? বস্তুতপক্ষে সৌদি আরবের সঙ্গে কোনো ক্ষেত্রেই কাতারকে মেলানো যাবে না। ছোট দেশ কাতার। সৌদি আরবের সঙ্গেই রয়েছে তার সীমান্ত। যেখানে সৌদি আরবের আয়তন ২১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৯০ বর্গকিলোমিটার, সেখানে কাতারের আয়তন মাত্র ১১ হাজার ৫৪৬ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা কাতারের মাত্র ২৬ লাখ ৭৫ হাজার, যেখানে সৌদি আরবের ৩ কোটি ৩০ লাখ। সৌদি আরবের জিডিপির পরিমাণ ১ দশমিক ৮০৩ ট্রিলিয়ন ডলার (পিপিপি) আর কাতারের ৩৫৩ দশমিক ১৪৩ বিলিয়ন ডলার। ফলে যে প্রশ্নটা ওঠা স্বাভাবিক তা হচ্ছে, অর্থনীতি, আয়তন ও লোকসংখ্যায় দেশ দুটির মধ্যে এত পার্থক্য থাকলেও সৌদি আরব ও কাতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেল কেন?

ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে অতীতেও এ দেশ দুটির সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও বাহরাইন দোহা (কাতারের রাজধানী) থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। অভিযোগ ছিল কাতার এসব দেশের ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে’ হস্তক্ষেপ করছে। এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও কাতার তা মানছিল না। এর আগে ২০০২ সালেও সৌদি আরব তার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ১৯৯২ সালে সৌদি আরব কাতার সীমান্ত চৌকিতে হামলা করেছিল, যে ঘটনায় দু’জন কাতারি সৈন্য মারা যায়। উভয় দেশ রাষ্ট্রীয় ধর্ম তথা আদর্শ হিসেবে ‘ওয়াহিবিজম’কে ধারণ করলেও সমস্যা ছিল এ অঞ্চলের রাজনীতিতে কে প্রভাব রাখবে, তা নিয়ে। ছোট্ট দেশ কাতার সৌদি কর্তৃত্ব মানতে রাজি ছিল না। ফলে দেশ দুটি বারবার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছে। তবে এটা সত্য, সৌদি আরব সবসময়ই আরব আমিরাত ও বাহরাইনকে তার পাশে পেয়েছে।

দ্বিতীয়ত, সৌদি-কাতার দ্বন্দ্ব যতটুকু না রাজনৈতিক তার চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক। তবে রাজনৈতিক প্রশ্নেও এদের মাঝে দ্বিমত আছে। অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বই বেশি। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি সম্পদ কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, এটা নিয়েই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। কাতারের রয়েছে বিশাল গ্যাস সম্পদ। বিশ্বের গ্যাস সম্পদের ১৪ ভাগ রিজার্ভ রয়েছে কাতারে। এর পরিমাণ ৮৯৬ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট। সবচেয়ে বেশি গ্যাস রিজার্ভ রয়েছে রাশিয়ায়। তারপর রয়েছে ইরানে। বিশাল এক গ্যাসক্ষেত্র আবার ইরান ও কাতার ভাগাভাগি করে নিয়েছে। অন্যদিকে সৌদিতে তেল রয়েছে বেশি (২৬০ বিলিয়ন ব্যারেল, বিশ্বের শতকরা ১৮ ভাগ), কিন্তু গ্যাস রয়েছে কম (৮৪৮৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন কিউবিক ফিট)। সুতরাং এ গ্যাস সম্পদের ওপর সৌদি আরবের আগ্রহ থাকবে, এটা স্বাভাবিক। দ্বন্দ্বটা সেখানেই। একইসঙ্গে আরব আমিরাত কাতারের গ্যাসের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। এ গ্যাস দিয়ে আমিরাত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আরও একটা কথা, কাতার-তুরস্ক পাইপলাইনের মাধ্যমে কাতারের গ্যাস যাচ্ছে ইউরোপে। গ্যাস উত্তোলনে ইরান ও কাতারের মাঝে এক ধরনের সমঝোতা রয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই বিষয়টি সৌদি আরবের অপছন্দ।

তৃতীয়ত, বেশকিছু রাজনৈতিক ইস্যুতে দেশ দুটোর মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। কাতার মিসরের ইসলামিক ব্রাদারহুড এবং ফিলিস্তিনের হামাসকে সমর্থন করে আসছে- এটা সত্য। ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ায় ব্রাদারহুড সমর্থক ড. মুরসি মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। কাতার তাকে সমর্থন করেছিল; কিন্তু সৌদি আরব সমর্থন করেছিল ফিল্ড মার্শাল সিসিকে, যিনি এখন মিসরের প্রেসিডেন্ট। ঠিক তেমনি হামাসকে সমর্থন এবং হামাস নেতাদের দোহায় আশ্রয় দিয়েছিলেন কাতারের আমীর। কাতার গাজায় ইসরাইলি বোমায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বাড়িঘরও নির্মাণ করে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু ইসরাইল রাজি হয়নি। সৌদি আরব কখনই হামাসকে সমর্থন করেনি। সুদান ও শাদের মধ্যে দ্বন্দ্বে সমঝোতা করা, দারফুর সংকটের সমাধান, জিবুতি ও ইরিত্রিয়ার মধ্যকার বিবাদের সমাধান, সিরিয়ায় আসাদবিরোধী ইসলামী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন কিংবা লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে উৎখাতে বিরোধী দলগুলোকে কাতারের সমর্থন সৌদি আরবে ভুল মেসেজ পৌঁছে দিয়েছিল। সৌদির রাজপরিবারের তরুণ নেতৃত্ব মনে করেছে, এর মধ্য দিয়ে কাতার মুসলিম বিশ্বের ‘নেতা’ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, যা মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের গ্রহণযোগ্যতাকে একটা প্রশ্নের মুখে ফেলে দেবে। এ নিয়েও একটা দ্বন্দ্ব ছিল।

চতুর্থত, ২০১২ সাল থেকে কুয়েত বিশ্বের ১০০টি দেশকে বছরে ৫২৪ মিলিয়ন পাউন্ড সমমানের সাহায্য দিয়ে আসছে। এর মধ্য দিয়ে ওইসব দেশ জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস’ অর্জনে সহায়তা পাচ্ছে।

পঞ্চমত, সাম্প্রতিক সময়ে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরানের ভূমিকা বাড়ছে। এ ভূমিকা সৌদি আরবের নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ।

এমনই এক পরিস্থিতিতে কাতার যখন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার উদ্যোগ নেয়, সঙ্গত কারণেই তা সৌদি নেতৃত্বকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। যেমন সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়া, ইরাক, লেবানন ও ইয়েমেনে ইরানি প্রভাব বাড়ছিল। এটা সৌদি নেতৃত্ব ভালো চোখে নেয়নি। সৌদি আরবে শিয়া সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন আছে সৌদি নেতৃত্বের। সৌদি রাজবংশের বিরুদ্ধে শিয়া নেতারা মানুষকে উসকে দিচ্ছে- এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি শিয়া নেতা নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সৌদি আরব। এই যখন পরিস্থিতি তখন কাতার সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় ‘নাক’ গলাচ্ছে- এমন অভিযোগও শোনা গিয়েছিল। তাই খুব সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠবে, আইএসের নামে কারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে ইরানি পার্লামেন্ট ভবনে ও খোমেনির মাজারে? অভিযোগের আঙুল সৌদি আরবের দিকে থাকলেও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকাকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ যত বাড়বে, ততই লাভ ইসরাইলের।

তাহলে পরিস্থিতি এখন কোন্ দিকে যাচ্ছে? সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যকার বিরোধের মধ্যস্থতা করছে কুয়েত। দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে যদি বিরোধ থাকে এবং যদি তা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ইসরাইল এ থেকে ফায়দা নেবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে কতগুলো মন্তব্য করা যায়। নিশ্চয়ই সৌদি ও ইরানের নেতারা এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবেন। সৌদি আরবের নেতৃত্বে যে সামরিক জোট গঠিত হয়েছে, তাতে ইরান আতংকিত। এখন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ইরান যে অভিযোগ এনেছে, তা হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। একইসঙ্গে ট্রাম্প তার সৌদি আরব সফরের সময় ইরানের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের’ অভিযোগ এনেছেন। এখন ইরানে সন্ত্রাসী হামলা হল। কেউ এর সঙ্গে কোনো মিল বা যোগসূত্র খুঁজতে পারেন। কাতারের ব্যাপারে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত সুস্পষ্ট অভিযোগ এনেছিল। এ দেশ দুটোর অভিযোগ ছিল কাতার আইএস সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীকে অর্থ জোগাচ্ছে। কাতার কর্তৃক জঙ্গিদের এক বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের একটি অভিযোগ পাওয়া যায়। ট্রাম্পও অনেকটা কাতারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কাতারের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক সাম্প্রতিককালে বেশ ভালো। এ কাতার-ইরান ঐক্যে ফাটল ধরাতে ইরানে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে এবং তা ইরানকে নিবৃত্ত করতে ‘কোনো পক্ষের’ উদ্যোগ হতে পারে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের রাজনীতিতে ইসরাইলের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যাবে না। ১৯৮২ সালে কট্টরপন্থী ওদেদ ইনন (ঙফবফ ণরহড়হ) যে বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন, এসব সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

সিরিয়া সংকটকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি যখন এমনিতেই উত্তপ্ত, ঠিক তখনই সৌদি-কাতার দ্বন্দ্ব ও তেহরানে সন্ত্রাসী হামলা নতুন একটি মাত্রা এনে দিয়েছে। ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপপ্রধান রেজা সেইফুল্লাহ ‘প্রতিশোধ’ নেয়ার কথা বলেছেন। এখন দেখতে হবে ইরান এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় কী সিদ্ধান্ত নেয়। তবে স্পষ্টতই মধ্যপ্রাচ্য তথা পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়েছে। এ উত্তেজনা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে তা বিশ্ব রাজনীতিতে একটি পরিবর্তন আনতে পারে। সৌদি আরবের দুটি মসজিদের (মসজিদ আল হারাম, মক্কা শরিফ ও মসজিদ আল নববী, মদিনা শরিফ) জিম্মাদার হচ্ছেন সৌদি বাদশাহ। ধর্মীয়ভাবে এ মসজিদ দুটো মুসলমানদের জন্য পবিত্র স্থান। সুতরাং বাংলাদেশের মানুষ সবসময়ই সৌদি আরবের পাশে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে ইরানের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ‘স্ট্রেইট অব হরমুজ’ বা হরমুজ প্রণালী, যে প্রণালী দিয়ে পারস্য উপসাগরের তেল বহির্বিশ্বে যায়। বিশ্বে সমুদ্রপথে যে পরিমাণ তেল পরিবহন করা হয়, তার ২০ ভাগ এ পথে পরিবাহিত হয়, যার পরিমাণ ১৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন ব্যারেল (প্রতিদিন)। সুতরাং এ অঞ্চলে যে কোনো দ্বন্দ্বে এই জ্বালানি তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে। অন্যদিকে কাতারে রয়েছে বিশ্বের বড় গ্যাস রিজার্ভ। প্রতি মাসে বিশ্বে যে পরিমাণ তরল গ্যাস (এলএনজি) রফতানি হয়, তার মধ্যে কাতার একাই সরবরাহ করে ৮ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। কাতারের এলএনজি ও পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল আরব আমিরাত। এমনকি ভারত, জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া কাতার থেকে এলএনজি ক্রয় করে। এই এলএনজি সরবরাহে যদি বিঘ্ন ঘটে, তাহলে বিশ্বে উত্তেজনা বাড়বে।

কাতারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক ও ইরান। একমাত্র সীমান্ত বন্দর (সৌদি আরবের সঙ্গে) বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাতারে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তুরস্ক সেখানে খাদ্য ও সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনিতেই সেখানে একটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে প্রায় ১১ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আগামীতে কী হবে, সেটাও দেখার বিষয়। সব মিলিয়ে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এ উত্তেজনা সৌদি-কাতারকে কোনো ধরনের ‘যুদ্ধের’ দিকে ঠেলে দেবে না, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। এমনিতেই সৌদি আরবের বিমান বাহিনী ইয়েমেনে হাওথি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় (শিয়া) বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। এখন সৌদি আরব যদি কাতারে আরেকটি ফ্রন্ট ‘ওপেন’ করে, তা কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।
Daily Jugantor
15.06.2017

0 comments:

Post a Comment