জাতীয় বাজেট ২০১৭-১৮-তে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা
হয়েছে। প্রস্তাবিত চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেটে এর পরিমাণ ৬৫ হাজার ৬৪৩
কোটি টাকা, যা কিনা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৪ ভাগ। কিন্তু ওই বাজেট বৃদ্ধি কি
আদৌ শিক্ষার মানোন্নয়নে কোনো অবদান রাখবে? উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে এই
বাজেট বৃদ্ধির প্রভাব কী? এখানে আমাদের নীতিনির্ধারকদের একটা বড় সমস্যা,
তারা মনে করেন প্রতি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে কিংবা
হাজার হাজার জিপিএ-৫ ‘পাইয়ে’ দিয়ে তারা মনে করেন উচ্চশিক্ষায় একটি ‘বিপ্লব’
আনতে যাচ্ছেন। কিন্তু এটা একটি ভুল ধারণা। এভাবে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন
করা যায় না। কিছুদিন আগে তরুণ প্রজন্মের কয়েকজন ছাত্রের একটি বেসরকারি টিভি
চ্যানেল একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিল। এরা সবাই তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং সবাই জিপিএ-৫ এর অধিকারী। সাক্ষাৎকারে তাদের
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তারা এর যেসব জবাব দিয়েছিল তা
তখন ভাইরাল হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছিল। এ নিয়ে আলোচনা করা অর্থহীন।
শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে জিপিএ-৫ নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা আজ কোন পর্যায়ে
উন্নীত হয়েছে, ওইসব ছাত্রছাত্রীর জবাবের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে।
অর্থাৎ আমরা মানসর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারিনি। আমাদের এক
সময়ের ‘সমাজতাত্ত্বিক’ শিক্ষামন্ত্রী জিপিএ-৫ নিয়ে গর্ব করেন। এখন
ছাত্রছাত্রীদের ওই বক্তব্য তাকে কতটুকু গৌরবান্বিত করতে পেরেছিল আমি জানি
না। কিন্তু আমি এটা বুঝি যে, তরুণ প্রজন্ম আমাদের ভরসার স্থল, তারা আমাদের
আশাভঙ্গ করেছে। এই প্রজন্মকে নিয়ে আমি আশাবাদী হতে পারছি না। বিভিন্ন
‘কোটায়’ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে, তারা একটি দক্ষ জনশক্তি কী আদৌ
গড়ে তুলতে পারবে? তাই ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে যখন শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ৬৫
হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়, তাতে করে শিক্ষার মানোন্নয়নে
তা কতটুকু অবদান রাখবে, এ প্রশ্ন থাকলই। তরুণ প্রজন্ম আমাদের ‘শক্তি’।
কিন্তু এই শক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে আমরা পরিণত করতে পারিনি। শিক্ষক হিসেবে এ
ব্যর্থতা আমার। কীভাবে একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা যায়, সিঙ্গাপুর আমাদের
কাছে দৃষ্টান্ত। চীনের দৃষ্টান্তও আমরা দিতে পারি। আমাদের বড় ব্যর্থতা
এখানেই যে, আমরা এই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছি কম। শিক্ষা খাতে ব্যয়
বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। তাতে করে উপকৃত হয়েছে কারা? বেতন খাতেই তো চলে যায়
পুরো টাকা। সরকারি কলেজগুলোয় (সরকারি) অবকাঠামো খাতে কিছু উন্নয়ন হয়।
কিন্তু এখানে মানসম্মত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন না কেউ। আর শিক্ষকরা এখন
গুরুত্ব দেন ‘প্রাইভেট পড়ানোর’ ওপর। মানসম্মত শিক্ষা তাদের কাছে মুখ্য নয়।
এসব দেখারও যেন কেউ নেই। অর্থমন্ত্রী যখন নতুন বাজেট উপস্থাপন করলেন তখন এ
কথাটাই আবার মনে হলো। নিয়ম রক্ষার্থে তিনি শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ
বাড়িয়েছেন। কিন্তু যে প্রশ্নটি ওঠে, তা হচ্ছে এই বিশাল ব্যয় দিয়ে আমরা
উচ্চশিক্ষার কতটুকু মানোন্নয়ন করতে পারব? বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষার
মানোন্নয়ন, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় গবেষণা, আইটি সেক্টরের উন্নয়নÑ এই বরাদ্দ
দিয়ে আদৌ সম্ভব নয়। কেননা এই অর্থের মধ্যে ২২ হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয় হবে
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পেছনে। আর ২৩ হাজার ১৪১ কোটি
(নির্দিষ্ট) টাকা ব্যয় হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পেছনে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
জন্য যে বরাদ্দ তাতে করে আমাদের উৎফল্লিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা এই
টাকার খুব সামান্যই ব্যয় হয় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত
অর্থের মধ্যে একটা অংশ বরাদ্দ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য। ২০০১-০২ সালে
এর পরিমাণ ছিল ২৯৩.৫৭ কোটি টাকা, আর ২০১০-১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল
১১০২.২৪ কোটি টাকা। জাতীয় বাজেটের মাত্র ০.৭৫ ভাগ বরাদ্দ থাকে শিক্ষা খাতে
(২০০১-০২)। এ পরিসংখ্যান বেড়েছে ০.৮৪ ভাগ ২০১০-১১ সালে। আবার যদি শুধু
শিক্ষা খাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বরাদ্দের দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা
যাবে এ বরাদ্দ মাত্র ৭.৮৫ ভাগ (২০০১-০২) থেকে ৮.২২ ভাগ (২০১০-১১)। চলতি
অর্থবছরে এই হার খুব বেড়েছে তা নয়। অর্থাৎ পরিসংখ্যানই বলে দেয়,
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার পরিমাণ খুব বেশি নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে, বেড়েছে
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়ও। যদিও তুলনামূলক বিচারে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর
তুলনায় বাংলাদেশের বাজেট শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। তার পরও কথা
থেকে যায়। রাষ্ট্রের পক্ষে এর চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। এখন
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ভেবে দেখতে হবে,
কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় বাড়ানো যায় এবং সরকারের ওপর পূর্ণ
নির্ভরশীলতা কমানো যায়। এখানে আরও একটা বিষয় বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজনÑ আর তা
হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যে টাকা বরাদ্দ করা হয়, তার খুব কম অংশই ব্যয় হয়
গবেষণার কাজে। বরাদ্দকৃত টাকার সিংহভাগ চলে যায় শিক্ষক,
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, উপাচার্য
মহোদয়রা উন্নয়ন খাতে কিংবা গবেষণায় যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, সেই টাকা
নতুন শিক্ষকদের বেতন দিতে ব্যয় করেছেন। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্যরা দলীয় কোটায়, স্থানীয় কোটায় অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন।
কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিক বেশ কটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত
শিক্ষক নিয়োগের ওপর একটি প্রতিবেদন ছেপেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পরিণত
হয়েছে পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি নিজের
মেয়ে, ভাই, আপন ভায়রা, শ্যালিকার মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়েকে শিক্ষক
তথা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে একটা রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন। এই প্রবণতা
প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে। অভিযোগ আছে, জাহাঙ্গীরনগর ইতোমধ্যে
একটি পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিণত হয়েছে! ফলে অতিরিক্ত শিক্ষক ও
কর্মচারী নিয়োগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।
উন্নয়ন বাজেট থেকে টাকা এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে।
প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে অতিরিক্ত লোক নিয়োগ
করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতো বিষয়ে
বিজ্ঞাপিত পদের (প্রভাষক) বিপরীতে প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল।
অতীতে এমনটি কখনই হয়নি। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যক্তিদের শিক্ষক
হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য একাধিক বিভাগ ভেঙে নতুন নতুন বিভাগ সৃষ্টি করা
হয়েছে। যার আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল না। অনেক শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলে তারা বলতে
পারবেন না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মোট বিভাগের সংখ্যা কত। ফলে সঙ্গত
কারণেই যে প্রশ্নটি ওঠে, তা হচ্ছে নতুন করে সৃষ্টি করা বিভাগগুলো কি আদৌ
দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারবে? প্রসঙ্গক্রমেই আরও একটা বিষয় উল্লেখ করা
প্রয়োজন। তা হচ্ছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ফলে
উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
গ্রাজুয়েট কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটের সঙ্গে পটুয়াখালী
কিংবা গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা কী সমমানসম্পন্ন?
আমি কাউকে ছোট করতে চাই না। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়
যোগ্য শিক্ষক নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ান, তারা মূলত কলেজ শিক্ষক।
কলেজ শিক্ষক এনে পাঠদান করানো হচ্ছে। সেদিন একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখলাম।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভিনিং বা সান্ধ্যকালীন এমবিএ
কোর্সের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি! সান্ধ্যকালীন কোর্স, তাও আবার এমবিএ কারা পড়াবেন?
কে পড়বেন? এর কি আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল? ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি তো বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ওখানে তো বিজ্ঞান, আইটিসংক্রান্ত কোর্সই চালু
থাকবে। বিবিএর বিষয়টি কি আইনে অনুমোদন করে? আরও দুটি দৃষ্টান্ত দিই। এক.
গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ চালু করা হয়েছে। আমি অবাক হয়ে যাই ওখানে কারা
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়াবেন? আমরা কী যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারব সেখানে?
যারা শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে আছেন, তাদের আমি চিনি। কাউকে ছোট করা নয় বরং
বিবেচনায় নেওয়া উচিত আমাদের আদৌ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ সব
বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা উচিত কিনা? মঞ্জুরি কমিশন নিশ্চয়ই অনুমতি দিয়েছে।
এখানে মঞ্জুরি কমিশন বিজ্ঞতার পরিচয় দিতে পারেনি। দুই. গণবিশ্ববিদ্যালয়
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানেও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ চালুর
উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে! বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক! কোন
ছাত্ররা হাজার টাকা মাসে বেতন দিয়ে ওখানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়বে? ডা.
জাফরুল্লাহ চৌধুরী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। তাকে আমি শ্রদ্ধা করি।
কিন্তু তার বিচক্ষণতাকে আমি সমর্থন করতে পারলাম না। সবাই
সার্টিফিকেটসর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছে। কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
কেন করবেন? এ ক্ষেত্রে অবশ্য মঞ্জুরি কমিশনকে ধন্যবাদ দিতে হয়। মঞ্জুরি
কমিশন চায়নি গণবিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে শুধু ‘সার্টিফিকেট
বিক্রি করুক।’ ওখানে সরকার ও রাজনীতি বিভাগ আছে। প্রয়োজনে ওই বিভাগে
কোর্সের আওতায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়ানো যায়। আমি অবাক হয়ে যাই, যখন দেখি
গণবিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে! এটা কি
গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পারে? এটা মঞ্জুরি
কমিশনের জন্য একটি অশনিসংকেত। কমিশন যদি শক্ত অবস্থানে না যায়, তাহলে
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও এভাবে মঞ্জুরি কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করবে।
কয়েকদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহারে পিএইচডি ডিগ্রি
দেওয়া নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওখানে আমার নিজের
বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও আছে। এর সত্যতা আছে। লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যায়।
কীভাবে লাইব্রেরি ওয়ার্ক না করে, ফিল্ড সার্ভে না করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন
করা সম্ভব? যারা করছেন, তারা কী এটা বোঝেন না? যে বিভাগে মাত্র একজন
অধ্যাপক ডক্টরেট ডিগ্রিধারী শিক্ষক নেই, সেই বিভাগে উচ্চতর শিক্ষা কমিটি
গঠিত হয় কীভাবে? সংবাদপত্রে যে ‘সিন্ডিকেটের’ মাধ্যমে পিএইচডি ডিগ্রি
দেওয়ার অভিযোগটি উঠেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত, এ ব্যাপারে তদন্ত করে
দেখা। না হলে সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের
পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করবে। সেনাবাহিনীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসও পিএইচডি ডিগ্রি দিচ্ছে। অথচ তাদের
আদৌ সিনিয়র শিক্ষক নেই। ফুলটাইম সিনিয়র শিক্ষক ছাড়া পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া
কতটুকু নীতিমালার মধ্যে পড়ে, আমি বুঝতে অক্ষম। মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদন দিল
কীভাবে? সেনাবাহিনীকে নিয়ে আমাদের অনেক গর্ব। ঊর্ধ্বতন সেনা অফিসারদের
যোগ্যতা ও মেধা নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু তারা যদি একটি ভুল করেন
(?), আমাদের তা কষ্ট দেয়। আমি জানি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আগামীতে ভালো শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। কিন্তু এখানে দরকার যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক। অনেক
শিক্ষক আছেন, যারা অবসর নিয়েছেন, কিন্তু কর্মক্ষম তাদের বিশেষ বিবেচনায়
নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের পিএইচডি কার্যক্রম অব্যাহত রাখুক, এই
অনুরোধ রাখাব।
শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু এতে করে আমি
আশাবাদী হতে পারলাম না। বাজেট বাড়িয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা যায় না।
শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য চাই যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, গবেষণা
বাধ্যতামূলক করা, যোগ্য উপাচার্য নিয়োগ, মঞ্জুরি কমিশনকে ঢেলে সাজানো
ইত্যাদি। না হলে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়বে। তাতে শিক্ষার মানোন্নয়ন
হবে না।
Daily Amader Somoy
07.06.2017
0 comments:
Post a Comment