রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে জলবায়ু চুক্তিটি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিজেকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত জলবায়ু চুক্তি, যা কপ-২১ নামে পরিচিত, ভবিষ্যতে একটি বড় প্রশ্নের মাঝে ফেলে দিয়েছে। অথচ গেল বছর ২২ এপ্রিল জাতিসংঘের সদর দফতরে জলবায়ুসংক্রান্ত কপ-২১ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ১৭০টির মতো দেশ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে তা আইনে পরিণত করেছিল। অনেকের স্মরণ থাকার কথা, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জাতিসংঘের সদর দফতরে আয়োজিত স্বাক্ষর করা অনুষ্ঠানে ৩ বছরের নাতনিকে কোলে নিয়ে স্বাক্ষর করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি একটি মেসেজ দিয়েছিলেনÑ বিশ্ব যে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির মুখে, তা যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করে এবং আগামী প্রজন্মের মানুষের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী সৃষ্টি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তার নাতনি আগামী প্রজন্মের মানুষ। তাই তাকে কোলে নিয়ে তিনি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ-২১ এর যে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৯৫ দেশ অংশ নিয়েছিল এবং কপ-২১ চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছিল। তবে কপ-২১ স্বাক্ষর অত সহজ ছিল না। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পরই দেশগুলো একটি চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা, অর্থাৎ বিশ্বের উষ্ণতা হ্রাস করার ব্যাপারে বিশ্বের দেশগুলো নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল এবং একেক গ্রুপের ছিল একেক এজেন্ডা। তারপরও দেশগুলো আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে ন্যূনতম একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। এখন ওই ঐকমত্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ট্রাম্প জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেন। তিনি যে এ কাজটি করবেন, তা এক রকম নিশ্চিতই ছিল। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আগে ও পরে একাধিকবার তিনি এটা নিশ্চিত করেছিলেন যে, তিনি জলবায়ু চুক্তিটি মানেন না। নানা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছিল এবং জাতিসংঘ কর্তৃক গঠিত বৈজ্ঞানিক প্যানেলও এটা স্পষ্ট করেছিল, অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং বিশ্বের উষ্ণতা কমাতে হবে। আর এটা কমাতে হলে জ্বালানি ব্যবহার কমাতে হবে। কিন্তু ট্রাম্প বিজ্ঞানের এ গবেষণাকে অস্বীকার করেছিলেন। অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণেই যে বিশ্বের উষ্ণতা বাড়ছে, আর্কটিকের বরফ যে গলছে, ট্রাম্প এটা বিশ্বাস করেন না। বাহ্যত আইওসি বা আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর স্বার্থেই যে যুক্তরাষ্ট্র কপ-২১ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিল, এটা অনেকে মনে করেন। মে মাসের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপ সফরে গিয়েছিলেন। তার এ সফরও যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। সিসিলিতে তিনি জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে জি-৭ ভুক্ত ছয়টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে প্যারিস কপ-২১ চুক্তির ব্যাপারে তাদের সমর্থন ও ‘কমিটমেন্ট’ পুনরায় উল্লেখ করলেও ট্রাম্প সেখানে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি। তবে আকার-ইঙ্গিতে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এ চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেবেন। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রগুলো খবর দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ রক্ষাকারী সংস্থার প্রধান স্কট প্রুইট একটি খসড়া তৈরি করছেন কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র কপ-২১ থেকে বেরিয়ে আসবে। তবে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প একটি সিদ্ধান্ত নিলেও তা কার্যকর করতে অন্তত ৩ বছর সময় লাগবে। এখন যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে? টেড স্ট্রান, যিনি প্যারিস কপ-২১ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেবে। যুক্তরাষ্ট্র তার গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত বিশ্বের বড় কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো কীভবে নেবেÑ এটা নিয়ে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও সম্প্রতি দুইটি সংবাদ আমাদের জন্য আশার সংবাদ সৃষ্টি করেছে। চীন ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর ব্যাপারে তাদের ‘কমিটমেন্ট’ তারা রক্ষা করবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সাহায্য করার ব্যাপারে ১০০ বিলিয়ন ডলার ফান্ড সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। একইসঙ্গে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাশিয়া প্যারিস সমঝোতাকে (কপ-২১) যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় এবং মনে করে, ‘বড় কার্বন নিঃসরণকারী’ দেশগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া এ চুক্তি মূল্যহীন। রাশিয়ার বক্তব্য মূলত মার্কিন বর্তমান অবস্থাকেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। বলা ভালো, এখন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সিরিয়া ও নিকারাগুয়াও জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর না করা দেশের তালিকায় থাকল। প্রসঙ্গক্রমেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বা সমঝোতা, যা কপ-২১ নামেও পরিচিত, সে বিষয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। প্যারিসে সমঝোতা স্মারকে ১৯৫ দেশ স্বাক্ষর করেছিল, আর জাতিসংঘে স্বাক্ষর করেছিল ১৭০ দেশ। চুক্তিতে বলা আছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা হবে। এর জন্য বায়ুম-লে কার্বন নির্গমন হ্রাস করতে হবে। প্রশ্ন ছিল তখন, কে কতটুকু হ্রাস করবে, তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। প্রশ্ন ছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে কী একই কাতারে আমরা দেখব? কিংবা রাশিয়াসহ ইউরোপের দেশগুলো কতটুকু কমাবে? এ ব্যাপারে সমঝোতা চুক্তিতে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। সমঝোতায় আছে, উন্নত বিশ্ব জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার সাহায্য দেবে। এটা শুনতে ভালোই শোনায়। কিন্তু এই অর্থ কে দেবে? কোন দেশ কতটুকু দেবে, তার কোনো উল্লেখ নেই। দ্বিতীয়ত, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো নানা ক্যাটাগরিতে বিভক্ত (ভালনারেবল ২০, রেইন ফরেস্ট কোয়ালিশন ইত্যাদি)। এই দেশগুলোর মাঝে অর্থ বণ্টনের ভিত্তিটি কী হবে? তৃতীয়ত, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এই অর্থ কীভাবে ম্যানেজ করবে? কেননা উন্নয়নশীল বিশ্বের দুর্নীতির বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত। বাংলাদেশে জলবায়ু ফান্ডে প্রাপ্ত টাকা বরাদ্দ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। একসময় কথা হয়েছিল প্রাপ্ত টাকা বিলি-বণ্টনের বিষয়টি দেখভাল করবে বিশ্বব্যাংক। পরে বিশ্বব্যাংক এখান থেকে সরে যায়। বিষয়টি যে শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য তা নয়; বরং উন্নয়নশীল বিশ্বে, বিশেষ করে সাগর পারের অনেক দেশ নিয়ে এ ধরনের সমস্যা আছে। সমঝোতা স্মারকে উন্নয়নশীল বিশ্বের স্বার্থ দেখা হয়নি। আইনি বাধ্যবাধকতার বিষয়টিও অত কঠোর নয়। অর্থাৎ সাগরপারের দেশগুলো, যারা বিশ্বের উষ্ণতা বেড়ে গেলে, সাগর-মহাসাগরে পানির পরিমাণ বেড়ে গেলে তাদের বিশাল এলাকা সাগরগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, কোনো ক্ষতিপূরণ এর জন্য দাবি করতে পারবে না। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আসবে বড় দেশগুলোর মর্জিমাফিকের ওপর।
নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। এর প্রয়োজন ছিল। কেননা বিশ্বের উষ্ণতা যে হারে বেড়ে যাচ্ছে, সাগর উত্তপ্ত হচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছেÑ এসবই বাস্তব। এ ব্যাপারে কারও কোনো বক্তব্য নেই। পৃথিবী উত্তপ্ত হচ্ছে, গ্রিনল্যান্ড ও অ্যন্টার্কটিকায় বরফ গলছে। এর জন্য একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়া প্রয়োজন ছিল। এটা সবাই উপলব্ধি করেন। কিন্তু কর্মপরিকল্পনাটা কী, কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমানো যাবে, তার কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা প্যারিস সম্মেলনে নেয়া হয়নি। এটা বলা যাচ্ছে, বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে বায়ুম-লে কার্বনের পরিমাণ বাড়ছে। অর্থাৎ শিল্পে, কলকারখানায়, যানবাহনে অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহার করার ফলে বায়ুম-লে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু এ জ্বালানির ব্যবহার আমরা কমাব কীভাবে? জ্বালানি ব্যবহারের সঙ্গে উন্নয়নের প্রশ্নটি সরাসরিভাবে জড়িত। জীবাশ্ম জ্বালানি কম ব্যবহার করলে কার্বন নিঃসরণ কম হবে, এটা সত্য। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বের কাছে কী বিকল্প জ্বালানি আছে? উন্নয়নশীল বিশ্ব জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল। উন্নত বিশ্বের কাছে ‘নয়া প্রযুক্তি’ থাকলেও তাদের অনীহা রয়েছে উন্নয়নশীল বিশ্বে এ প্রযুক্তি সরবরাহের। সোলার এনার্জির একটা বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও উন্নয়নশীল বিশ্বে এ এনার্জির ব্যবহার বাড়ছে না। বাংলাদেশে যে পরিমাণে এর ব্যবহার বাড়ানো উচিত ছিল, তা কিন্তু হয়নি। কেননা এর জন্য যে খুচরা যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়, তা বিদেশ থেকে আনতে হয়। খরচ অনেক বেশি পড়ে, যা আমাদের সাধ্যের মধ্যে পড়ে না। এ সেক্টরে যতদিন পর্যন্ত না বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া যাবে, ততদিন এ সেক্টর বিকশিত হবে না। আর এ সেক্টর বিকশিত না হলে মানুষ জ্বালানির জন্য নির্ভরশীল থাকবে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় মানুষের নির্ভরশীলতা আরও বেড়েছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো, এমনকি সাগরপারের দেশগুলোর জ্বালানি দরকার। তারা বিকল্প জ্বালানি অর্থাৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্ভাবন করতে পারেনি। ফলে তাদের পক্ষে কার্বন নিংসরণ হ্রাস করাও সম্ভব হবে না।
ফলে একটা প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল যে, জলবায়ু চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত কি বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে আদৌ কোনো সাহায্য করবে? ভুলে গেলে চলবে না, মার্কিন তথা বহুদেশীয় সংস্থাগুলোর স্বার্থ এখানে বেশি। জ্বালানি একটা বিশাল ‘ব্যবসা’। এ ‘ব্যবসা’ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটা কখনোই চাইবে না বহুদেশীয় সংস্থাগুলো। প্যারিসে একটি সমঝোতা হয়েছিল এবং পর্বে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তবে এর প্রয়োজন ছিল। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওসিস্টেমের অধ্যাপক মাইলেস এলেন এরই মধ্যে প্যারিস চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ৩৫০ অঙ্গ সংগঠনের প্রধান বিল মেকিব্বেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বড় বড় ব্যবসায়িক তথা বহুজাতিক সংস্থার কারণে এ ‘সমঝোতা’ শেষ পর্যন্ত ভ-ুল হয়ে যাবে! দাতব্য সংস্থা অক্সফামও তাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল। ফলে একটা সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বটে; কিন্তু তাতে আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো কারণ ছিল না। যারা অনলাইনে নিয়মিত বিভিন্ন জার্নাল পাঠ করেন, তারা দেখবেন প্যারিস চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার সংখ্যাই ছিল বেশি। তারপরও একটা প্লাস পয়েন্ট ছিল, এতগুলো দেশ একসঙ্গে প্যারিসে মিলিত হয়েছিল। বিশ্বে শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই সেখানে গিয়েছিলেন এবং তারা সবাই একবাক্যে একটি চুক্তির কথা বলেছিলেন। বাংলাদেশও প্যারিসে গিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় পরিবেশমন্ত্রী নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন এবং চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি সিদ্ধান্ত পুরো দৃশ্যপট বদলে দিল। তিনি জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেন। তাহলে পরিস্থিতি এখন কোন দিকে যাবে? চীন ও রাশিয়া চুক্তির পক্ষে। চীন কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখন চীন, ইইউ, ভারত কিংবা রাশিয়াসহ অন্য দেশগুলো কী যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে এককভাবে এ চুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারবে? এটা একটা প্রশ্ন বটে।
বিশ্ব এখন রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভারতে খরা দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, ভারতকে পানি আমদানি করতে হতে পারে। এরই মধ্যে খরায় এখানে মারা গেছে শতাধিক মানুষ। ফলে বিশ্বে তাপমাত্রা যাতে নির্দিষ্ট সীমায় রাখা যায়, সে লক্ষ্যেই প্যারিস সমঝোতা ও নিউইয়র্ক চুক্তির বাস্তবায়নটা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র এখন এ চুক্তিতে না থাকলেও বাকি বিশ্বকে এ চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
Daily Alokito Bangladesh
04.06.2017

0 comments:

Post a Comment