বাংলাদেশ কি সত্যি সত্যিই সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিতে রয়েছে? ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া
সম্প্রতি এই প্রশ্নটি তুলেছে। ২৮ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের
বাংলাদেশ সফরে আসার কথা। এখন তারা ওইদিন আসছে না। সবকিছু ঠিক থাকলে ৮
অক্টোবর প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার কথা। এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যবিষয়ক অধিদপ্তর (ডিএফএটি)। তারা
নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রশ্নটি তুলেছে। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের জন্য যে
বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ, তা জানাতেও তারা ভোলেনি। কোন কারণে ডিএফএটি এই
সিদ্ধান্তটি নিল। আমরা জানি না। Global terrorism Inbox ২০১৪ ঘেঁটে আমরা
দেখেছি, তাতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের বাস নেই। বরং
পাকিস্তানের নাম আছে ৩ নাম্বারে (প্রথম ইরাক, দ্বিতীয় আফগানিস্তান)। তবে
ডিএফএটি যখন এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেয় এবং যা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক
মিডিয়ায় স্থান পেয়েছে, তাতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়
বৈকি! সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কিন্তু ঝুঁকির সমস্যাটা ভিন্ন। গত
প্রায় ১৫ বছর ধরেই বিশ্ব এই সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা করেছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভাব-গম্ভীর পরিবেশে ১১ সেপ্টেম্বর দিনটি পালিত হয়েছে। কিন্তু যে প্রশ্নটির জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। এবং বোধকরি কোনোদিন পাওয়াও যাবে না, তা হচ্ছে আসলেই কি মুসলমানরা 'টুইন টাওয়ার' হামলা ও ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল? আসলেই কি আল-কায়েদা এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিল এবং বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই হামলা চালিয়েছিল? সারা বিশ্ব অনেক আগেই জেনেছে ষড়যন্ত্রকারীরা সংখ্যায় ছিল ১৯ জন, যাদের প্রায় সবাই সৌদি, ইয়েমেন ও মিসরের নাগরিক। এরা দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসছিলেন এবং বিমান চালানোর প্রশিক্ষণও তারা নিয়েছিলেন। এর অর্থ পরিষ্কার দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে তারা অগ্রসর হয়েছিলেন। মোট ৪টি বিমান তারা হাইজ্যাক করেছিলেন। এর মধ্যে ২টি বিমান (আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট এএ ১১ ও ইউনাইটেড এয়ার ফ্লাইট ১৭৫) নিউইয়র্কে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার 'টুইন টাওয়ার'-এ বিধ্বস্ত হয়েছিল। অন্য একটি পেনসিলভানিয়া স্টেট ও অপরটি ভার্জেনিয়া স্টেটে বিধ্বস্ত হয়েছিল। বলা হয় হোয়াইট হাউসে একটি বিমান বিধ্বস্ত করতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু তা পেনসিলভানিয়ায় ভেঙে পড়ে। এই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ২৯৯৬ ব্যক্তি, যাদের মধ্যে ২৭৫৩ জনের 'ডেথ সার্টিফিকেট' ইস্যু করা হয়েছিল। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারের হামলায় যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরাও ছিলেন, যার সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। গবেষকরা দেখিয়েছেন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ষড়যন্ত্রকারীরা ৫ লাখ ডলার ব্যয় করেছিল। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল ১২ বিলিয়ন ডলারের। ইনসিওরেন্স কোম্পানি পরিশোধ করেছিল ৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের দাবিনামা। শুধু বিধ্বস্ত ভবন পরিষ্কার করতে ব্যয় হয়েছিল ৭৫০ মিলিয়ন ডলার। এসব পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে এ কারণে যে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা কোনো সাধারণ ঘটনা ছিল না। যারাই এ কাজটা করে থাকুক না কেন, এর পেছনে ছিল একটি গভীর ষড়যন্ত্র। তাহলে যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছিল, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? এটা কী একটা 'ইহুদি ষড়যন্ত্র' যারা 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা এই ঘটনাকে একটি 'ষড়যন্ত্র' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ওই ঘটনায় কোনো মুসলমান জড়িত ছিল না, এ ধরনের তথ্য আমরা জানতে পারি মার্কিন গবেষকদের কাছ থেকেই। পাঠক,Elias Davidson-এর প্রসঙ্গ 'There is no evidence that muslims committed the crime of 9-11' পড়ে দেখতে পারেন। (oPEd News, 10 january, 2008)। শুধু তাই নয়_ অধ্যাপক Michel chossudovsky'র গ্রন্থ AmericaÕs war on Terrorism ও যুক্তরাষ্ট্রের 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'-এর পেছনের কাহিনীর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। অধ্যাপক চসুডোভস্কি, যিনি কানাডাতে থাকেন এবং সেখানে একটি গবেষণা সংস্থা পরিচালনা করেন তথ্য-উপাত্তসহ দেখিয়েছেন কারা 'টুইন টাওয়ার' হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বব্যাপী 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' প্রমোট করে কি কি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তারও হিসাব দিয়েছে। তার মূল্যায়ন হচ্ছে 'টুইন টাওয়ার' ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের যত বেশি ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে লাভ হয়েছে অনেক বেশি। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর আফগানিস্তানের প্রয়াত তালেবান নেতা মোল্লাহ ওমর আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে 'আশ্রয়' দিয়েছেন, এই অভিযোগ তুলে আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দেশটি দখল করে নেয়। এর পরের ইতিহাসও সবাই জানে। ২০০৩ সালে ইরাকে মরণাস্ত্র রয়েছে (Weapoms of Mass Destruction), এই অভিযোগ তুলে ইরাকে বোমা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দেশটি দখল করে নিয়েছিল। এখানেই থেমে থাকেনি যুক্তরাষ্ট্র। লিবিয়াতেও বিমান হামলা চালিয়ে দেশটি ধ্বংস করে দিয়েছিল। অথচ ওসামা বিন লাদেনকে আফগানিস্তানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের অ্যাসোটাবাদ শহরে ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে এক মার্কিন সেনা অভিযানে লাদেন নিহত হয়েছেন বলা হলেও, সম্প্রতি প্রকাশিত এক গ্রন্থে দাবি করা হয়েছে অনেক আগেই লাদেন মারা যান। যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ড্যান রার্থাস তার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে 'টুইন টাওয়ার' হামলার একদিন আগে লাদেন ১০ সেপ্টেম্বর (২০০১) রাওয়ালপিন্ডির মিলিটারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। রার্থাস মনে করেন অসুস্থ লাদেনের পক্ষে সন্ত্রাসী হামলা চালানো ও পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে_ যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৯-১১ নামে একটি কমিশন গঠন করেছিল। কমিশন ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পেছনে 'কোন শক্তি' কাজ করেছিল, সে ব্যাপারে কোনো অসুন্ধান করেনি। কমিশনকে এ ব্যাপারে কাজ করতে অনুমতিও দেয়া হয়নি। ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। তবে এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর আল-কায়েদা সারা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছিল। দীর্ঘ ১৪ বছর পরও আল-কায়েদার সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ হয়নি। এই সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কে যে খারাপ ধারণা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। এখন আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইসলামিক স্টেডের নাম। ২১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আফগানিস্তান ও ইরাকে সামরিক আগ্রাসন, লিবিয়া ও সর্বশেষ ঘটনাবলিতে মারা গেছেন প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে ইরাকে ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ, আফগানিস্তানে ৫ মিলিয়ন, সিরিয়ায় ৫ লাখ। একই সঙ্গে ইতোমধ্যে ৩০ মিলিয়ন মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। শুধু সিরিয়ার ১১ মিলিয়ন মানুুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। আজ যখন হাজার হাজার সিরীয় ও ইরাকি শরণার্থী ইউরোপে প্রবেশ করছে, তখন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'-এর ফলে মুসলিম দেশগুলোতে ভয়াবহ অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য আসলে কী?
আমরা পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্র 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পকে চাঙ্গা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ও আফগান যুদ্ধে খরচ করেছে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। আর ১ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় এই যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করা হয়। বাহ্যত Corporate Globalization-এর যুগে যুক্তরাষ্ট্রের Corporate House-গুলোর স্বার্থে এসব যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে এবং তারা লাভবান হচ্ছে এসব Corporate House-গুলোরে জন্যই চাই যুদ্ধ। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা। একটা দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে। ইরাক যুদ্ধের পর ইরাক পুনর্গঠনের কাজ পেয়েছিল বেকটল গ্রুপ (Bectel Group) যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক প্রাথমিকভাবে দেয়া ১০০ বিলিয়ন ডলারের কনট্রাক্ট পেয়েছিল এই সেকটেল গ্রুপ, আর সঙ্গে জড়িত ছিল তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে মার্কিন প্রশাসন ৬টি মার্কিন বৃহৎ করপোরেশনের সঙ্গে ইরাক পুনর্গঠনের কাজের জন্য গোপনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এরাই বুশ প্রশাসনকে যুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আর সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের পর ইরাক তেল বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্রকে এই অর্থ পরিশোধ করেছিল। আজ সিরিয়ার পরিস্থিতি অনেকটা এক রকমই। হঠাৎ করেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইসলামিক স্টেটের আর্বিভাব। সিরিয়ার সব তেল ক্ষেত্রগুলো এখন আইএস জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে। এরা কালো বাজারে তেল বিক্রি করছে। তেলের ব্যারেলপ্রতি মূল্য এখন ৪০ ডলারের নিচে। ফলে লাভবান হচ্ছে মার্কিন সংস্থাগুলো। তারা এখন সস্তায় তেল পাচ্ছে, যা তাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখছে।
একটি ছোট্ট শিশু আইলানের মৃতদেহ সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। এটা ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফলশ্রুতি। এই যুদ্ধ ওই অঞ্চলে কোনো স্থিতিশীলতা আনতে পারেনি। কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করতে পারেনি। যুদ্ধও বন্ধ হয়নি। যতদিন ওই অঞ্চল অস্থিতিশীল থাকবে, যুদ্ধ বজায় থাকবে, ততই লাভ মার্কিন করপোরেট হাউসগুলোর। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা। সুতরাং তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র করপোরেট হাউসগুলোর স্বার্থ যেমনি উদ্ধার করছে, তাদের ব্যবসা যেমনি বেড়েছে, ঠিক তেমনি ব্যবসায়ী অঞ্চলে উত্তেজনা জিইয়ে রেখে পরোক্ষভাবে ইহুদিবাদীর পক্ষেই কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্যই বোধকরি যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষক প্রফেসর চমস্কি মন্তব্য করেছেন, যে দেশগুলো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রবক্তা তারাই মূলত রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসের প্রধান মদদদাতা। তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নামই উল্লেখ করেছেন। তাই খুব সহসাই 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'-এর ধারণা পরিত্যক্ত হবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। পারস্যিয় অঞ্চল ছেড়ে সহসাই এই যুদ্ধ সম্প্রসারিত হবে আফ্রিকায়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশে এই যুদ্ধের বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখানে মাঝেমধ্যে দু'একজন আকস্মিক জঙ্গির খবর পুলিশ বা র্যাবের মাধ্যমে সংবাদপত্রে প্রকাশ পায় বটে, কিন্তু তাদের সঙ্গে বৈশ্বিক জঙ্গিদের কতটুকু মেলানো যাবে, আমি তা নিশ্চিত নই।
বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটপাগল। তারা ক্রিকেট পছন্দ করেন। আমি বিশ্বাস করি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নিশ্চয়ই এটা উপলব্ধি করবেন যে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি ঝুঁকি নেই। এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর অনুষ্ঠিত হবে। এখানে আরো একটা কথা বলা প্রয়োজন। অতীতে আমরা বার বার দেখেছি সরকারের কোনো কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের কথা বলা হচ্ছে। কোনো কোনো টিভি চ্যানেলে নির্দিষ্ট দুই-একজন বক্তা বার বার এটা বলার চেষ্টা করেন যে বাংলাদেশ জঙ্গি ঝুঁকিতে রয়েছে। দুই-একজন সঞ্চালককেও আমি দেখেছি অতি উৎসাহ সহকারে জঙ্গি তৎপরতা ফলাও করে প্রকাশ করতে। এখন যদি ডিএফএটি ওইসব বক্তব্য, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার ব্রিফিং আমলে নেয়, তাহলে কী তারা ভুল করবে? নিশ্চয়ই তারা অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশন থেকে পাঠানো এসব প্রতিবেদন আমলে নিয়েছেন। আমার মনে হয় জঙ্গিদের ব্যাপারে আমাদের আরো সতর্ক হয়ে মন্তব্য করা উচিত। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা একটা প্রপাগান্ডা মাত্র। র্যাবপ্রধানও একই কথা বলেছেন। বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই এটাই হচ্ছে মুদ্দা কথা।
আমরা কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা ইরাকের পরিস্থিতিকে মেলাতে পারব না। ওইসব দেশের পরিস্থিতি আর বাংলাদেশের পরিস্থিতি এক নয়। ২০১৩ সালের পর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী কর্মকা-ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে শতকরা ৩৭ ভাগ হারে, আর আহতদের সংখ্যা বেড়েছে ২৮ ভাগ হারে (গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্স ২০১৪)। কিন্তু বাংলাদেশ যথেষ্ট স্থিতিশীল। মৃত্যু কিংবা আহতের খবর আদৌ নেই। সরকার ও রাষ্ট্র যথেষ্ট স্থিতিশীল এবং সরকার নাগরিকদের জানমাল নিশ্চিত করেছে। সুতরাং আজ ডিএফএটি যে বক্তব্য দিয়েছে, তা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ আদৌ কোনো ঝুঁকিপূর্ণ দেশ নয়। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ আছে বটে, কিন্তু তা বাংলাদেশকে স্পর্শ করেনি এবং করার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
কেননা বাংলাদেশের মানুষ সহনশীল ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। মানুষ ইসলামের নামে জঙ্গি তৎপরতা পছন্দ করে না। বরং জঙ্গিবাদকে তারা ঘৃণা করে। তাই আমরা বিশ্বাস করি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল বাংলাদেশে আসবে এবং আমাদের তামিম-মুশফিকরা আবারো প্রমাণ করবে তারা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তি। Daily Jai Jai Din 01.10.15
গত ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভাব-গম্ভীর পরিবেশে ১১ সেপ্টেম্বর দিনটি পালিত হয়েছে। কিন্তু যে প্রশ্নটির জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। এবং বোধকরি কোনোদিন পাওয়াও যাবে না, তা হচ্ছে আসলেই কি মুসলমানরা 'টুইন টাওয়ার' হামলা ও ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল? আসলেই কি আল-কায়েদা এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিল এবং বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই হামলা চালিয়েছিল? সারা বিশ্ব অনেক আগেই জেনেছে ষড়যন্ত্রকারীরা সংখ্যায় ছিল ১৯ জন, যাদের প্রায় সবাই সৌদি, ইয়েমেন ও মিসরের নাগরিক। এরা দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসছিলেন এবং বিমান চালানোর প্রশিক্ষণও তারা নিয়েছিলেন। এর অর্থ পরিষ্কার দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে তারা অগ্রসর হয়েছিলেন। মোট ৪টি বিমান তারা হাইজ্যাক করেছিলেন। এর মধ্যে ২টি বিমান (আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট এএ ১১ ও ইউনাইটেড এয়ার ফ্লাইট ১৭৫) নিউইয়র্কে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার 'টুইন টাওয়ার'-এ বিধ্বস্ত হয়েছিল। অন্য একটি পেনসিলভানিয়া স্টেট ও অপরটি ভার্জেনিয়া স্টেটে বিধ্বস্ত হয়েছিল। বলা হয় হোয়াইট হাউসে একটি বিমান বিধ্বস্ত করতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু তা পেনসিলভানিয়ায় ভেঙে পড়ে। এই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ২৯৯৬ ব্যক্তি, যাদের মধ্যে ২৭৫৩ জনের 'ডেথ সার্টিফিকেট' ইস্যু করা হয়েছিল। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারের হামলায় যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরাও ছিলেন, যার সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। গবেষকরা দেখিয়েছেন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ষড়যন্ত্রকারীরা ৫ লাখ ডলার ব্যয় করেছিল। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল ১২ বিলিয়ন ডলারের। ইনসিওরেন্স কোম্পানি পরিশোধ করেছিল ৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের দাবিনামা। শুধু বিধ্বস্ত ভবন পরিষ্কার করতে ব্যয় হয়েছিল ৭৫০ মিলিয়ন ডলার। এসব পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে এ কারণে যে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা কোনো সাধারণ ঘটনা ছিল না। যারাই এ কাজটা করে থাকুক না কেন, এর পেছনে ছিল একটি গভীর ষড়যন্ত্র। তাহলে যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছিল, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? এটা কী একটা 'ইহুদি ষড়যন্ত্র' যারা 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা এই ঘটনাকে একটি 'ষড়যন্ত্র' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ওই ঘটনায় কোনো মুসলমান জড়িত ছিল না, এ ধরনের তথ্য আমরা জানতে পারি মার্কিন গবেষকদের কাছ থেকেই। পাঠক,Elias Davidson-এর প্রসঙ্গ 'There is no evidence that muslims committed the crime of 9-11' পড়ে দেখতে পারেন। (oPEd News, 10 january, 2008)। শুধু তাই নয়_ অধ্যাপক Michel chossudovsky'র গ্রন্থ AmericaÕs war on Terrorism ও যুক্তরাষ্ট্রের 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'-এর পেছনের কাহিনীর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। অধ্যাপক চসুডোভস্কি, যিনি কানাডাতে থাকেন এবং সেখানে একটি গবেষণা সংস্থা পরিচালনা করেন তথ্য-উপাত্তসহ দেখিয়েছেন কারা 'টুইন টাওয়ার' হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বব্যাপী 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' প্রমোট করে কি কি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তারও হিসাব দিয়েছে। তার মূল্যায়ন হচ্ছে 'টুইন টাওয়ার' ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের যত বেশি ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে লাভ হয়েছে অনেক বেশি। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর আফগানিস্তানের প্রয়াত তালেবান নেতা মোল্লাহ ওমর আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে 'আশ্রয়' দিয়েছেন, এই অভিযোগ তুলে আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দেশটি দখল করে নেয়। এর পরের ইতিহাসও সবাই জানে। ২০০৩ সালে ইরাকে মরণাস্ত্র রয়েছে (Weapoms of Mass Destruction), এই অভিযোগ তুলে ইরাকে বোমা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দেশটি দখল করে নিয়েছিল। এখানেই থেমে থাকেনি যুক্তরাষ্ট্র। লিবিয়াতেও বিমান হামলা চালিয়ে দেশটি ধ্বংস করে দিয়েছিল। অথচ ওসামা বিন লাদেনকে আফগানিস্তানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের অ্যাসোটাবাদ শহরে ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে এক মার্কিন সেনা অভিযানে লাদেন নিহত হয়েছেন বলা হলেও, সম্প্রতি প্রকাশিত এক গ্রন্থে দাবি করা হয়েছে অনেক আগেই লাদেন মারা যান। যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ড্যান রার্থাস তার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে 'টুইন টাওয়ার' হামলার একদিন আগে লাদেন ১০ সেপ্টেম্বর (২০০১) রাওয়ালপিন্ডির মিলিটারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। রার্থাস মনে করেন অসুস্থ লাদেনের পক্ষে সন্ত্রাসী হামলা চালানো ও পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে_ যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৯-১১ নামে একটি কমিশন গঠন করেছিল। কমিশন ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পেছনে 'কোন শক্তি' কাজ করেছিল, সে ব্যাপারে কোনো অসুন্ধান করেনি। কমিশনকে এ ব্যাপারে কাজ করতে অনুমতিও দেয়া হয়নি। ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। তবে এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর আল-কায়েদা সারা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছিল। দীর্ঘ ১৪ বছর পরও আল-কায়েদার সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ হয়নি। এই সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কে যে খারাপ ধারণা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। এখন আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইসলামিক স্টেডের নাম। ২১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আফগানিস্তান ও ইরাকে সামরিক আগ্রাসন, লিবিয়া ও সর্বশেষ ঘটনাবলিতে মারা গেছেন প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে ইরাকে ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ, আফগানিস্তানে ৫ মিলিয়ন, সিরিয়ায় ৫ লাখ। একই সঙ্গে ইতোমধ্যে ৩০ মিলিয়ন মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। শুধু সিরিয়ার ১১ মিলিয়ন মানুুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। আজ যখন হাজার হাজার সিরীয় ও ইরাকি শরণার্থী ইউরোপে প্রবেশ করছে, তখন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'-এর ফলে মুসলিম দেশগুলোতে ভয়াবহ অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য আসলে কী?
আমরা পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্র 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পকে চাঙ্গা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ও আফগান যুদ্ধে খরচ করেছে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। আর ১ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় এই যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করা হয়। বাহ্যত Corporate Globalization-এর যুগে যুক্তরাষ্ট্রের Corporate House-গুলোর স্বার্থে এসব যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে এবং তারা লাভবান হচ্ছে এসব Corporate House-গুলোরে জন্যই চাই যুদ্ধ। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা। একটা দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে। ইরাক যুদ্ধের পর ইরাক পুনর্গঠনের কাজ পেয়েছিল বেকটল গ্রুপ (Bectel Group) যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক প্রাথমিকভাবে দেয়া ১০০ বিলিয়ন ডলারের কনট্রাক্ট পেয়েছিল এই সেকটেল গ্রুপ, আর সঙ্গে জড়িত ছিল তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে মার্কিন প্রশাসন ৬টি মার্কিন বৃহৎ করপোরেশনের সঙ্গে ইরাক পুনর্গঠনের কাজের জন্য গোপনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এরাই বুশ প্রশাসনকে যুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আর সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের পর ইরাক তেল বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্রকে এই অর্থ পরিশোধ করেছিল। আজ সিরিয়ার পরিস্থিতি অনেকটা এক রকমই। হঠাৎ করেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইসলামিক স্টেটের আর্বিভাব। সিরিয়ার সব তেল ক্ষেত্রগুলো এখন আইএস জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে। এরা কালো বাজারে তেল বিক্রি করছে। তেলের ব্যারেলপ্রতি মূল্য এখন ৪০ ডলারের নিচে। ফলে লাভবান হচ্ছে মার্কিন সংস্থাগুলো। তারা এখন সস্তায় তেল পাচ্ছে, যা তাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখছে।
একটি ছোট্ট শিশু আইলানের মৃতদেহ সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। এটা ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফলশ্রুতি। এই যুদ্ধ ওই অঞ্চলে কোনো স্থিতিশীলতা আনতে পারেনি। কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করতে পারেনি। যুদ্ধও বন্ধ হয়নি। যতদিন ওই অঞ্চল অস্থিতিশীল থাকবে, যুদ্ধ বজায় থাকবে, ততই লাভ মার্কিন করপোরেট হাউসগুলোর। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা। সুতরাং তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র করপোরেট হাউসগুলোর স্বার্থ যেমনি উদ্ধার করছে, তাদের ব্যবসা যেমনি বেড়েছে, ঠিক তেমনি ব্যবসায়ী অঞ্চলে উত্তেজনা জিইয়ে রেখে পরোক্ষভাবে ইহুদিবাদীর পক্ষেই কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্যই বোধকরি যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষক প্রফেসর চমস্কি মন্তব্য করেছেন, যে দেশগুলো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রবক্তা তারাই মূলত রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসের প্রধান মদদদাতা। তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নামই উল্লেখ করেছেন। তাই খুব সহসাই 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'-এর ধারণা পরিত্যক্ত হবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। পারস্যিয় অঞ্চল ছেড়ে সহসাই এই যুদ্ধ সম্প্রসারিত হবে আফ্রিকায়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশে এই যুদ্ধের বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখানে মাঝেমধ্যে দু'একজন আকস্মিক জঙ্গির খবর পুলিশ বা র্যাবের মাধ্যমে সংবাদপত্রে প্রকাশ পায় বটে, কিন্তু তাদের সঙ্গে বৈশ্বিক জঙ্গিদের কতটুকু মেলানো যাবে, আমি তা নিশ্চিত নই।
বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটপাগল। তারা ক্রিকেট পছন্দ করেন। আমি বিশ্বাস করি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নিশ্চয়ই এটা উপলব্ধি করবেন যে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি ঝুঁকি নেই। এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর অনুষ্ঠিত হবে। এখানে আরো একটা কথা বলা প্রয়োজন। অতীতে আমরা বার বার দেখেছি সরকারের কোনো কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের কথা বলা হচ্ছে। কোনো কোনো টিভি চ্যানেলে নির্দিষ্ট দুই-একজন বক্তা বার বার এটা বলার চেষ্টা করেন যে বাংলাদেশ জঙ্গি ঝুঁকিতে রয়েছে। দুই-একজন সঞ্চালককেও আমি দেখেছি অতি উৎসাহ সহকারে জঙ্গি তৎপরতা ফলাও করে প্রকাশ করতে। এখন যদি ডিএফএটি ওইসব বক্তব্য, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার ব্রিফিং আমলে নেয়, তাহলে কী তারা ভুল করবে? নিশ্চয়ই তারা অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশন থেকে পাঠানো এসব প্রতিবেদন আমলে নিয়েছেন। আমার মনে হয় জঙ্গিদের ব্যাপারে আমাদের আরো সতর্ক হয়ে মন্তব্য করা উচিত। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা একটা প্রপাগান্ডা মাত্র। র্যাবপ্রধানও একই কথা বলেছেন। বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই এটাই হচ্ছে মুদ্দা কথা।
আমরা কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা ইরাকের পরিস্থিতিকে মেলাতে পারব না। ওইসব দেশের পরিস্থিতি আর বাংলাদেশের পরিস্থিতি এক নয়। ২০১৩ সালের পর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী কর্মকা-ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে শতকরা ৩৭ ভাগ হারে, আর আহতদের সংখ্যা বেড়েছে ২৮ ভাগ হারে (গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্স ২০১৪)। কিন্তু বাংলাদেশ যথেষ্ট স্থিতিশীল। মৃত্যু কিংবা আহতের খবর আদৌ নেই। সরকার ও রাষ্ট্র যথেষ্ট স্থিতিশীল এবং সরকার নাগরিকদের জানমাল নিশ্চিত করেছে। সুতরাং আজ ডিএফএটি যে বক্তব্য দিয়েছে, তা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ আদৌ কোনো ঝুঁকিপূর্ণ দেশ নয়। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ আছে বটে, কিন্তু তা বাংলাদেশকে স্পর্শ করেনি এবং করার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
কেননা বাংলাদেশের মানুষ সহনশীল ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। মানুষ ইসলামের নামে জঙ্গি তৎপরতা পছন্দ করে না। বরং জঙ্গিবাদকে তারা ঘৃণা করে। তাই আমরা বিশ্বাস করি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল বাংলাদেশে আসবে এবং আমাদের তামিম-মুশফিকরা আবারো প্রমাণ করবে তারা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তি। Daily Jai Jai Din 01.10.15