রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শেষ কোথায়


    নিউইয়র্কে ‘টুইন টাওয়ার’-এ সন্ত্রাসী হামলার ১৪ বছর পর যে প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠেছে, তা হচ্ছে এই সন্ত্রাসী হামলার শেষ কোথায়? বিশ্বে কি সন্ত্রাসী কর্মকা- কমেছে? এর জবাব বোধকরি সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন, সন্ত্রাসী কর্মকা- বরং বেড়েছে, কমেনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক Reader Supported News আমাদের জানাচ্ছে যে, ২০০২ সালের পর থেকে সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়েছে শতকরা ৬৫০০ ভাগ হারে। আর সন্ত্রাসী আক্রমণের হার বেড়েছে শতকরা ৪৫০০ ভাগ হারে। মূলত যেখানে মার্কিন সেনার উপস্থিতি ছিল (ইরাক ও আফগানিস্তান, ২০০৭-২০১১) সেখানেই এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৪ সালে শতকরা ৭৪ ভাগ সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালিত হয়েছে ৫টি দেশেÑ ইরাক, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও সিরিয়ায়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছোট ও বড় আকারে মার্কিন সেনা উপস্থিতি যেমনি বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মার্কিন সেনাছাউনির সংখ্যাও। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মার্কিন সেনাছাউনির অথবা ‘বেস’-এর সংখ্যা এখন ৮০০। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে আফ্রিকাতে, গঠিত হয়েছে  US-African Command (AFRICOM)। আফ্রিকার ২৮ দেশে এখন মার্কিন সেনার উপস্থিতি রয়েছে। আর একে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছে বোকো হারাম, আল কায়েদা ইন ইসলামিক মাগরেব, মুরাবিতুন কিংবা আনসারুর মতো সংগঠন। আর তাতে করে সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়েছে, কমেনি। গত ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভাবগম্ভীর পরিবেশে দিনটি পালিত হয়েছে। কিন্তু যে প্রশ্নটির জবাব এখনো পাওয়া যায়নি এবং বোধকরি কোনোদিন পাওয়াও যাবে না, তা হচ্ছেÑ আসলেই কি মুসলমানরা ‘টুইন টাওয়ার’ হামলা ও ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল? আসলেই কি আল কায়েদা এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিল এবং বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই হামলা চালিয়েছিল? সারা বিশ্ব অনেক আগেই জেনেছে ষড়যন্ত্রকারীরা সংখ্যায় ছিল ১৯ জন, যাদের প্রায় সবাই সৌদি, ইয়েমেন ও মিসরের নাগরিক। তারা দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসছিলেন এবং বিমান চালানোর প্রশিক্ষণও তারা নিয়েছিলেন। এর অর্থ পরিষ্কার, দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে তারা অগ্রসর হয়েছিলেন। মোট ৪টি বিমান তারা হাইজ্যাক করেছিলেন। এর মধ্যে ২টি বিমান (আমেরিকান এয়ারলাইনস ফাইট এএ১১ ও ইউনাইটেড এয়ার ফাইট ১৭৫) নিউইয়র্কে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘টুইন টাওয়ার’-এ বিধ্বস্ত হয়েছিল। অপর একটি পেনসিলভানিয়া স্টেট ও অপরটি ভার্জেনিয়া স্টেটে বিধ্বস্ত হয়েছিল। বলা হয়, হোয়াইট হাউসে একটি বিমান বিধ্বস্ত করতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা, কিন্তু তা পেনসিলভানিয়ায় ভেঙে পড়ে। এই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ২ হাজার ৯৯৬ ব্যক্তি, যাদের মধ্যে ২ হাজার ৭৫৩ জনের ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ইস্যু করা হয়েছিল। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারের হামলায় যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরাও ছিলেন। যার সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। গবেষকরা দেখিয়েছেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ষড়যন্ত্রকারীরা ৫ লাখ ডলার ব্যয় করেছিল। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল ১২ মিলিয়ন ডলারের। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পরিশোধ করেছিল ৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের দাবিনামা। শুধু বিধ্বস্ত ভবন পরিষ্কার করতে ব্যয় হয়েছিল ৭৫০ মিলিয়ন ডলার। এসব পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে এ কারণে যে, ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা কোনো সাধারণ ঘটনা ছিল না। যারাই এ কাজটি করে থাকুক না কেন, এর পেছনে ছিল একটি গভীর ষড়যন্ত্র। তাহলে যারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছিল, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? এটি কি একটি ‘ইহুদি ষড়যন্ত্র’ ছিল? যারা ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা এ ঘটনাকে একটি ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ওই ঘটনায় কোনো মুসলমান জড়িত ছিল না, এ ধরনের তথ্য আমরা জানতে পারি মার্কিন গবেষকদের কাছ থেকেই। পাঠক, Elias Davidson-এর প্রবন্ধ ÔThese is no evidence that Muslims committed the crime of ৯/১১’ পড়ে দেখতে পারেন। (OP.Ed News, 10 January, 2008)। শুধু তাই নয়, অধ্যাপক Michel Choosiness -এর গ্রন্থ America's War on Terrorism ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর পেছনের কাহিনির বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক চসুডোভস্কি, যিনি কানাডাতে থাকেন এবং সেখানে একটি গবেষণা সংস্থা পরিচালনা করেন। তিনি তথ্য-উপাত্তসহ দেখিয়েছেন কারা ‘টুইন টাওয়ার’ হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ প্রমোট করে কী কী সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তারও হিসাব দিয়েছেন। তার মূল্যায়ন হচ্ছে ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের যত বেশি ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে লাভ হয়েছে অনেক বেশি। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর আফগানিস্তানের প্রয়াত তালেবান নেতা মোল্লা ওমর আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে ‘আশ্রয়’ দিয়েছেন, এ অভিযোগ তুলে আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দেশটি দখল করে নেয়। এর পরের ইতিহাসও সবাই জানে। ২০০৩ সালে ইরাকে মারণাস্ত্র রয়েছে (Weapons of Mass Destruction) এই অভিযোগ তুলে ইরাকে বোমা হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দেশটি দখল করে নিয়েছিল। এখানেই থেমে থাকেনি যুক্তরাষ্ট্র। লিবিয়াতেও বিমান হামলা চালিয়ে দেশটি ধ্বংস করে দিয়েছিল। অথচ ওসামা বিন লাদেনকে আফগানিস্তানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে এক মার্কিন সেনা অভিযানে লাদেন নিহত হয়েছে বলা হলেও সম্প্রতি প্রকাশিত এক গ্রন্থে দাবি করা হয়েছেÑ অনেক আগেই লাদেন মারা যান। যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ড্যান রাথার্স (Dan Rathers) তার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ‘টুইন টাওয়ার’ হামলার একদিন আগে লাদেন ১০ সেপ্টেম্বর (২০০১) রাওয়ালপি-ির মিলিটারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। রাথার্স মনে করেন, অসুস্থ লাদেনের পক্ষে সন্ত্রাসী হামলা চালানো ও পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৯-১১ নামে একটি কমিশন গঠন করেছিল। কমিশন ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পেছনে ‘কোন শক্তি’ কাজ করেছিল, সে ব্যাপারে কোনো অনুসন্ধান করেনি। কমিশনকে এ ব্যাপারে কাজ করতে অনুমতিও দেওয়া হয়নি। ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। তবে এটি আমাদের স্বীকার করতেই হবে, ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর আল কায়েদা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছিল। দীর্ঘ ১৪ বছর পরও আল কায়েদার সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ হয়নি। এ সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কে যে খারাপ ধারণা হবে, সেটিই স্বাভাবিক। এখন আল কায়েদার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইসলামিক স্টেটের নাম। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আফগানিস্তান ও ইরাকে সামরিক আগ্রাসন, লিবিয়া ও সর্বশেষ সিরিয়ার ঘটনাবলিতে মারা গেছেন প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে ইরাকে ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ, আফগানিস্তানে ৫ মিলিয়ন, সিরিয়ায় ৫ লাখ। একই সঙ্গে ইতোমধ্যে ৩০ মিলিয়ন মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। শুধু সিরিয়ার ১১ মিলিয়ন মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। আজ যখন হাজার হাজার সিরীয় ও ইরাকি শরণার্থী ইউরোপে প্রবেশ করছে, তখন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’-এর ফলে মুসলিম দেশগুলোতে ভয়াবহ অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই সংগতকারণেই প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য আসলে কী? আমরা পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পকে চাঙ্গা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ও আফগান যুদ্ধে খরচ করেছে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। আর এক ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় এই যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করা হয়। বাহ্যত Corporate Globalization-এর যুগে যুক্তরাষ্ট্রের Corporate House -গুলোর স্বার্থেই এসব যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে এবং তারা লাভবান হচ্ছে। এসব Corporate House-এর জন্যই চাই যুদ্ধ। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা। একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারেÑ ইরাক যুদ্ধের পর ইরাক পুনর্গঠনের কাজ পেয়েছিল বেকটেল গ্রুপ (ইবপঃবষ এৎড়ঁঢ়)। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক প্রাথমিকভাবে দেওয়া ১০০ বিলিয়ন ডলারের কনট্রাক্ট পেয়েছিল এই বেকটেল গ্রুপ, আর সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে মার্কিন প্রশাসন ৬টি মার্কিন বৃহৎ করপোরেশনের সঙ্গে ইরাক পুনর্গঠনের কাজের জন্য গোপনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এরাই বুশ প্রশাসনকে যুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আর সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের পর ইরাক তেল বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্রকে এই অর্থ পরিশোধ করেছিল। আজ সিরিয়ার পরিস্থিতি অনেকটা এ রকমই। হঠাৎ করেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইসলামিক স্টেটের আবির্ভাব। সিরিয়ার সব তেল ক্ষেত্রগুলো এখন আইএস জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে। এরা কালোবাজারে তেল বিক্রি করছে। তেলের ব্যারেলপ্রতি মূল্য এখন ৪০ ডলারের নিচে। ফলে লাভবান হচ্ছে মার্কিন সংস্থাগুলো, তারা এখন সস্তায় তেল পাচ্ছে যা তাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প মিডিয়ার যারা পাঠক, তারা দেখছেন বিভিন্ন গবেষক তথ্য-উপাত্ত সহকারে দেখিয়েছেন করপোরেট হাউসগুলোর স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ পরিচালনা করে। David Vine তার গ্রন্থে Base Nation: How US Military Bases Abroad Harm America and the World গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব সেনাছাউনি রয়েছে, তা পরিচালনা কিংবা মেইনটেইন করতে শুধু ২০১৪ সালেই খরচ হয়েছে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার (আফগানিস্তান ও ইরাকসহ)। এর বাইরে রয়েছে যুদ্ধ খরচ ও বেতনভাতাদি। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছ থেকেই এ টাকা নেওয়া হয়। যার পরিমাণ বছরে ১০ থেকে ৪০ হাজার ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-এর ঘটনার সঙ্গে (টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনা) যে ‘টাকার খেলা’ জড়িত, তার প্রমাণও আছে। একটি নয়, একাধিক গবেষণা প্রবন্ধে ও গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই টুইন টাওয়ার হামলায় কারা সুবিধা পেয়েছেন। টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ‘গ্রাউন্ড জিরো’ (সেখানে টুইন পাওয়ার ছিল) কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য। ২০১৪ সালে আমি ‘গ্রাউন্ড জিরো’তে দেখে এসেছি সেখানে দাঁড়িয়ে গেছে সুউচ্চ নতুন একটি ভবন। আর এই ভবন কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে বিশাল এক বাণিজ্য। নিউজার্সি থেকে সরাসরি ট্রেন চালু হয়েছে লোয়ার ম্যানহাটন পর্যন্ত। পর্যটকরা আসছেন। টিকিট কেটে ঢুকছেন। স্যুভেনির কিনছেন। শুধুই বাণিজ্য। মোট ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করে তৈরি হয়েছে নতুন শিল্প-বাণিজ্য সংস্থার ভবন। তৈরি করেছে সিলভারস্ট্রেইন প্রোপার্টিজ (Silverstein Properties) নামে একটি ডেভেলপার সংস্থা। এখানে তাদের বিনিয়োগ মাত্র ১৪ মিলিয়ন। চিন্তা করা যায়, ১০৪ তলা নতুন ভবনে সিলভারস্ট্রেইন মাত্র বিনিয়োগ করছে ১৪ মিলিয়ন, বাকিটা বিভিন্ন সংস্থার কাছে এরা ফোর বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করেছে। বলা ভালো, এখানে যে ভবনটি তৈরি হয়েছে (উচ্চতা ১৭৭৬ ফুট) তা শুরু হয় ২০০৬ সালে, আর শেষ হয় ২০১৩ সালে। উদ্বোধন হয় ২০১৪ সালে। নতুন ভবনটির জন্য ইন্স্যুরেন্স করা হয়েছে ৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। বিভিন্ন গবেষকের লেখাতে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, ১১ সেপ্টেম্বর (২০০১) ঘটনার পেছনে ছিল ‘টাকার খেলা’। ১১ সেপ্টেম্বরের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের পেছনে ২৩ কারণের কথা উল্লেখ করেছেন রিচার্ড এনড্রিউ (Richard Andre তার একটি প্রবন্ধে (৯/১১ Trillions: Follow the Money, Courbet Report, 12 September,২০১৫)। মাইক ম্যালোয় (Mike Malloy) উল্লেখ করেছেন ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৫ সৌদি নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। অভিযুক্ত সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি জাতিসংঘ (OP.Ed News, 11 September, 2015)। একটি রাশিয়ান ওয়েবসাইট বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছে। তারা একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য আমাদের দিয়েছে। আর তা হচ্ছে, ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংস করার জন্য ড-৫৪ নামে একটি পারমাণবিক অস্ত্র (স্বল্পমাত্রার) ব্যবহার করা হয়েছিল এবং এই ‘ষড়যন্ত্রের’ সঙ্গে জড়িত ছিল অ্যাংলো-আমেরিকান-ইসরায়েলি লবি (Michael Thomas, Resian 9/11 Date Dump Riveals State Actors, Zumfeed, 14 September, 2015)। ড-৫৪ ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে দ্রুত স্টিলের স্ট্রাকচারগুলো গলে যায়। এটি তো ঠিক, টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজনও ইহুদি ছিলেন না। কেন? তাই খুব সংগতকারণেই এই সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে কারা জড়িত ছিল, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিলÑ এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। দীর্ঘ ১৪ বছর পরও মানুষ আসল তথ্যটি জানল না। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের তালেবানদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ পরিচালনা করতে গিয়ে দেশটি কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। ইরাক আক্রমণের (২০০৩) আগে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বুশ বলেছিলেনÑ তিনি ইরাকি জনগণের শান্তির নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। আজ ১২ বছর পর দেখা গেল, হাজার হাজার মানুষ দেশান্তরিত হচ্ছে। ইরাকে শান্তি আসেনি। সিরিয়া কার্যত এখন একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি বোমা হামলা চালিয়ে তালেবান (আফগানিস্তান) ও সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করতে পারে, তাহলে সিরিয়া ও ইরাক থেকে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের কেন উৎখাত করতে পারছে নাÑ এ প্রশ্ন উঠবেই। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতা বজায় থাকলে লাভ যুক্তরাষ্ট্রেরই। যুক্তরাষ্ট্র এখন নজর দিচ্ছে আফ্রিকায়। পশ্চিম আফ্রিকায় সাদ, নাইজার, মালি, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুনে তথাকথিত সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ছে। ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসনের। পারস্য অঞ্চলের তেলের নিয়ন্ত্রণ আর পশ্চিম আফ্রিকার খনিজসম্পদের (নাইজারের ইউরেনিয়াম) বড় প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। তাই যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ যে যুদ্ধ শুরু করেছে, তা প্রলম্বিত হবে এবং সম্প্রসারিত হবে। 

0 comments:

Post a Comment