রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ভ্যাট গেল, বাকিগুলোর কী হবে?

শেষ পর্যন্ত সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর আরোপিত শতকরা সাড়ে ৭ ভাগ ভ্যাট প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও এরই মধ্যে অনেক প্রশ্ন উঠেছে, যার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। প্রথমত, কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিকভাবে সচ্ছল হলেও এরা যে ব্যবসা করছে, তাদের আর আর্থিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা গেল না। এখন কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণের পথ বন্ধ হয়ে গেল। ব্যক্তিগতভাবে আমি শিক্ষার ওপর ভ্যাট আরোপের পক্ষপাতী নই। শিক্ষায় কেন ভ্যাট আরোপ করা হবে? শিক্ষা তো কোনো পণ্য নয়। কিন্তু প্রশ্ন সেখানে নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের আয় থেকেই ভ্যাট দেবে। এটাই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন। কিন্তু দেখা গেল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি। যতই বলা হোক না কেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়, এর সঙ্গে সত্যের কোনো মিল নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই এখন লাভজনক। প্রধানমন্ত্রী গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এটা তদন্ত করে দেখতে পারেন। এনবিআরে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইল রয়েছে। অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে ওইসব ফাইলে কোনো ত্র“টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের আয়ের সঠিক তথ্য দেন কিনা কিংবা ঠিকমতো কর পরিশোধ করেন কিনা এটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আমি কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর জানি, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা হওয়ার পরিবর্তে জমা হয় ভিসি তথা মালিকদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে। এ নিয়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও কোনো একটি ক্ষেত্রে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এর কোনো রেকর্ড নেই। অভিযোগগুলো সংবাদপত্রের পাতাতেই থেকে যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে এ বিষয়টি আমার সামনে চলে এলো। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যদি আয় না-ই হয়, তাহলে কোনো কোনো ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা মিটিংপ্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নেন কী করে? মালিকপক্ষ নিশ্চয়ই নিজের পকেট থেকে এ টাকা দেবেন না। আসলে মালিকপক্ষ বিনিয়োগের একটা ক্ষেত্র হিসেবে এখানে বিনিয়োগ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন এবং নানা কৌশলে এখান থেকে তাদের বিনিয়োগকৃত পুঁজি উঠিয়ে নিচ্ছেন। সরকারকে অনুরোধ করব, এনবিআরের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইলগুলো পরীক্ষা করার। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এনবিআর এখানে অনেক ত্রুটি পাবে। শিক্ষা পণ্য নয়, এটা সত্য। ছাত্রদের ভুল ব্যাখ্যা শুনিয়ে তাদের মাঠে নামিয়েছে মালিকপক্ষ। কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষককে টিভি টকশোতে ভ্যাটের বিপক্ষে বলতে শুনলাম। এরা বললেন, এটাই স্বাভাবিক। কেননা এরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন না, চাকরি করেন। তারা মালিক পক্ষের জন্য তদবির করবেন, এটাই স্বাভাবিক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেমিস্টারপ্রতি যে ফি ধার্য করেন (যা আবার এক এক বিশ্ববিদ্যালয়ে এক এক রকম), তার ভেতরেই ভ্যাট আছে। সুতরাং কর্তৃপক্ষকে এখন ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে, তা যেভাবেই হোক না কেন।দ্বিতীয়ত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়। যুক্তি হিসেবে এটা যদি সত্য বলে ধরে নিই, তাহলে উচিত হবে অলাভজনক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একত্রিত করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা। এ কাজটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন করতে পারে। তারা একটা স্টাডি করে দেখতে পারে কোন্ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ভিত্তি কী রকম। তবে ইউজিসির মাধ্যমে কোনো স্টাডি করানো ঠিক হবে না। কেননা সেখানে শর্ষের মধ্যে ভূত আছে। সৎ ও দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে সেখানে। তাদের কমিটমেন্ট নিয়েও প্রশ্ন আছে। ছাত্র অসন্তোষ এ বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এলো।তৃতীয়ত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ধরন এ রকম যে, এটা এক একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বাবা, মা, সন্তানরা সবাই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। যিনি কোনোদিন শিক্ষকতা করেননি, যাদের কারও কারও বয়স ত্রিশের নিচে, শিক্ষায় যাদের কোনো উচ্চতর ডিগ্রি নেই, তারা কীভাবে ট্রাস্টি বোর্ডে থাকেন? আলু-পটোল আর সিমেন্টের ব্যবসায় তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে তারা বোর্ড মেম্বার হন, আপত্তি কোথায়? আমার আপত্তি সেখানেই যখন দেখি বাবা-মা, ভাই-বোন, বোধ করি নাতিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য! এরা তো শিক্ষা লিডার হতে পারেন না। বাপের টাকা আছে। নতুন একটা ভদ্রজনিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলে সমাজে সম্মান বাড়ে। তাই আলু-পটোল ব্যবসায়ীরা এখন বিশ্ববিদ্যালয় চালান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার তারা ভিসি হন, নামের আগে ডক্টরেট, অধ্যাপক লাগান। দিব্যি অধ্যাপক পদবি ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির চেয়ারে বসেন। রাষ্ট্রপতি এদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেন কীভাবে? শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের ফাইল প্রসেস করে কীভাবে? এটা দেখার কেউ নেই। কদিন আগে শিক্ষা সচিব দুটো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আকস্মিক সফর করে মিডিয়া কভারেজ পেয়েছিলেন। তিনি তার অসন্তোষের খবর মিডিয়াকে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করেছিলেন? যদি না করে থাকেন, তাহলে কেন করলেন না? নাকি তিনি করতে পারলেন না? দুঃখ পাই যখন দেখি, তিনি স্পষ্ট কথা বলেন বটে, কিন্তু কাজ করেন ঠিক উল্টো। তার সম্পর্কে তাহলে আস্থাটা থাকে কোথায়? ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের ব্যাপারে যে আইন আছে, তা সংশোধন করা হোক। শুধু শিক্ষাবিদরাই এখানে থাকবেন। আলু-পটোল ব্যবসায়ীরা অন্য ব্যবসা করুন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার দরকার নেই।চতুর্থত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম মনিটর করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের। কিন্তু কমিশন দায়িত্বটি সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না। আমি দুঃখজনকভাবে লক্ষ করেছি ছাত্রদের অসন্তোষ যখন চরমে, চারদিন ছাত্ররা যখন রাস্তা দখল করে একটা অরাজকতা সৃষ্টি করল এবং ঢাকা শহরকে যখন জিম্মি করে ফেলল, তখন মঞ্জুরি কমিশনের একজন সদস্যকেও দেখলাম না সেখানে ছুটে যেতে, ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে। মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে দেখলাম বিদেশে- সংকটের গভীরতা অনুধাবন করে তিনি দেশে এলেন না! একজন শিক্ষা লিডার, যার ওপর দায়িত্ব ৩৭টি পাবলিক ও ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখভাল করার, তিনি কী করে এ সংকটে বিদেশে থাকেন? মঞ্জুরি কমিশনে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক বিবেচনায় যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তারা নমস্য ব্যক্তি। যোগ্য শিক্ষক। পণ্ডিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করা, নজরদারি করার যে স্ট্র্যাটেজি ও মেধা থাকা দরকার, তা সবার আছে, এটা মনে হয় না। বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখভাল করার দায়িত্ব বর্তমানে যার ওপর তাকে নিয়ে কিছু বলা শোভন নয়। কিন্তু একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তিনি নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেননি। একটি অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু এ কাউন্সিলটি গঠিত হয়নি, যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং করবে, যা দেখে ছাত্রছাত্রীরা তথা অভিভাবকরা তার সন্তানকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাবেন। আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরি করার, যাতে করে একজন অভিভাবক জানতে পারেন শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী। কেননা অভিযোগ আছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নাম ব্যবহার করে (ঢাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক ফায়েজের নাম ব্যবহার করতে আমি দেখেছি) কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। আমি এমন অনেক অধ্যাপককে চিনি, যাদের নাম একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার করছে শুধু ছাত্র টানার জন্য।ইউজিসি নিয়ে আরও একটা কথা বলা প্রয়োজন। সেখানে একজন সদস্যের দায়িত্ব ৮৩টি (আরও বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয় পাইপলাইনে আছে) বিশ্ববিদ্যালয় দেখভাল করার। এটা কি সম্ভব? তিনি কীভাবে দেখবেন এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়? এখন সরকার দুটো কাজ করতে পারে। মঞ্জুরি কমিশন একটি আলাদা উইং প্রতিষ্ঠা করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি স্বতন্ত্র প্রশাসন পরিচালনা করতে পারে। এজন্য সেখানে একাধিক সদস্য নিয়োগ দিতে হবে। এটা করতে হলে মঞ্জুরি কমিশনের আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। অথবা বিকল্প হিসেবে মঞ্জুরি কমিশনের আদলে আরও একটি সংস্থা গঠন করা, যার কাজ হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরদারি করা। ছাত্র অসন্তোষের ঘটনায় এটা প্রমাণিত হয়েছে, মঞ্জুরি কমিশন ব্যর্থ। মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকুক ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখভাল করার। ১৯৭৩ সালে মঞ্জুরি কমিশন গঠিত হয়েছিল। আজ ২০১৫ সালে এসে ভাবতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দেশে যেখানে ১২০টি বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে মাত্র ৫ জন সদস্য কীভাবে এর দেখভাল করেন? মঞ্জুরি কমিশনের নামটিরও পরিবর্তন দরকার। সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় শুধু দলীয় লোকদেরই যদি এখানে নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে সুস্থ পরিচালনা নিশ্চিত হবে না। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে পড়া ব্যক্তি (অনেকের বয়স ৭০-এর কাছাকাছি) কিংবা দলীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকা ব্যক্তিদের এখানে নিয়োগ না দেয়াই মঙ্গল। পঞ্চমত, ছাত্র অসন্তোষের সময় অনেক ছাত্র মিডিয়াকে বলেছে, তারা কোয়ালিটি এডকুশেন চায়। এটাই হচ্ছে আসল কথা। দু-একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো শিক্ষকমণ্ডলী আছেন। তারা ভালো শিক্ষা দেন। তাদের জ্ঞানও ভালো। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও একটা বড় প্রশ্ন রয়েছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। তারা সার্টিফিকেট বিক্রি করেন। সেখানে আদৌ কোনো কোয়ালিটি এডুকেশন নেই। উত্তরায় একটি তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি ছাত্রদের কাছে নোট বিক্রি করেন এবং ছাত্রদের বাধ্য করেন তা কিনতে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই ভালো শিক্ষকমণ্ডলী নেই। সিনিয়র শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে। এক বিভাগের শিক্ষক অন্য বিভাগে পড়ান, এমন খবরও আছে। আবার দেখা গেছে পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে চলছে বিভাগ দিনের পর দিন। আরও একটা ভয়ানক খবর উল্লেখ করতে চাই- প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই আইন অনুষদ রয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের প্রায় সবারই অনার্স ল ডিগ্রি নেই। একজনকে চিনি, যিনি সোসিওলজিতে পাস করে যেনতেন প্রকারে রাতে ল ডিগ্রি নিয়ে (অবশ্যই অনার্স নয়) এখন ধানমণ্ডিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান। আরেকজনের কথা বলি- পাস করেছেন ইসলামিক ইতিহাসে। পিএইচডি আছে ইতিহাসে। এখন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক। এটাও সম্ভব এ দেশে! এ ক্ষেত্রে ইউজিসির যে নজরদারি থাকা দরকার ছিল, তা নেই। তাই সঙ্গত কারণেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। ভালো ও দক্ষ শিক্ষক না থাকলে ভালো গ্র্যাজুয়েট তৈরি হবে না, এটাই স্বাভাবিক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হাজার হাজার এমবিএ তথা বিবিএ ডিগ্রিধারী তৈরি করছে। কিন্তু কজন যোগ্য? কজন ভালো শিক্ষকের সান্নিধ্য পেয়েছে? কজন কাজের ক্ষেত্রে তার যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারছে? এই সমাজ কি হাজার হাজার এমবিএ ডিগ্রিধারীদের জন্য প্রস্তুত? ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক এমবিএ প্রোগ্রাম আছে। সেই প্রত্যন্ত পাবনা কিংবা পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়েও একাধিক এমবিএ প্রোগ্রাম আছে। কারা পড়ান সেখানে? বিশ্বাস করবেন- কলেজ শিক্ষকরা (কমার্সের শিক্ষক) পড়ান সেখানে! আমরা সার্টিফিকেটসর্বস্ব একটি জাতিতে পরিণত হয়েছি। আর যার মামার জোর আছে, তারা ওইসব ডিগ্রি দেখিয়ে ভালো চাকরিও বাগিয়ে নিচ্ছেন। ডিগ্রি পাস করে আমলা হওয়া অনেক সহকারী ও উপসচিব এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (কোনো ক্লাস না করেই) মাস্টার্স ডিগ্রি ক্রয় করছেন। এ প্রবণতা আমরা বন্ধ করতে পারিনি।এভাবে হাজার হাজার গ্রাজুয়েটের মাস্টার্স পড়ার কোনো দরকার নেই। পৃথিবীর কোনো দেশে এ নিয়ম অনুসরণ করা হয় না। গ্রাজুয়েট শেষ করে সবাই কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করে। যারা শিক্ষকতায় যাবেন, শুধু তারাই মাস্টার্স করবেন। সরকারি চাকুরেদের জন্যও মাস্টার্সের প্রয়োজন নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা গ্রাজুয়েট তৈরি করার জন্য রেখে দিতে পারি। কিন্তু আমাদের শিক্ষা নীতিতে তা নেই। বছরে ক্লাস না করেও অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি নেয়া যায়-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর বড় প্রমাণ। আর সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষকরা ক্লাস নেন না। তারা বাড়িতে প্রাইভেট পড়ান। একজন বাংলায় বা ইসলামের ইতিহাসে অনার্স পড়–য়া ছাত্র প্রাইভেট পড়ে- এটাই বাস্তবতা। কিন্তু দেখভাল করার কেউ নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা আসেন। যান। কিন্তু কোনো উদ্যোগ দেখি না ভালো করার।বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অসন্তোষ আমাদের চোখ খুলে দিল কিনা জানি না। কিন্তু দেখলাম এতবড় সংকটে শিক্ষামন্ত্রী নেই। মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান নেই। তারা বিদেশে সেমিনারে অভিজ্ঞতা অর্জন করা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেন! আর এ জাতি সংকটের মধ্য দিয়ে কাটাল কয়েকটি দিন। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকেই সিদ্ধান্ত নিতে হল। তিনিই এগিয়ে এলেন। হতে পারে অর্থমন্ত্রী বয়সের কারণে সঠিকভাবে শব্দ চয়ন করতে পারেননি। যেখানে ব্যবসা হয়, সেখানে ভ্যাটের প্রশ্ন আসবেই- এটাকে ভ্যাট না বলে আয়ের ওপর ট্যাক্স আরোপের কথা বলা যেতে পারত। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কেউ এলেন না। সরকারকে একটি বেকায়দায় ফেলার কি কোনো উদ্যোগ ছিল? ঘটনা যাই ঘটে থাকুক না কেন, মালিকপক্ষের ভূমিকা প্রশ্নের মাঝে থাকল। সেই সঙ্গে থাকল মালিকপক্ষের সমিতির ভূমিকাও। Daily Jugantor 18 September 2015

0 comments:

Post a Comment