রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

দুটি পর্যবেক্ষণ ও কিছু মৌলিক প্রশ্ন

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিকাশ নিয়ে দুটি পর্যবেক্ষণের খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। প্রথম পর্যবেক্ষণটি ছিল ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) একটি সার্ভে, যা ছাপা হয়েছিল ২ সেপ্টেম্বর। অন্য পর্যবেক্ষণটি ছিল ব্রিটেনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের, যা ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত 'গণতন্ত্র দিবস' উপলক্ষে প্রকাশ করা হয়েছিল। উভয় পর্যবেক্ষণেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিকাশ, সমস্যা, সম্ভাবনা ইত্যাদি বিষয় বেরিয়ে এসেছে। আইআরআইয়ের সার্ভেটি ছিল যেকোনো বিবেচনায় বেশ ইন্টারেস্টিং। গেল বছরও তারা এ ধরনের একটি সার্ভে প্রকাশ করেছিল। মূলত আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা Global strategic partners-এর পক্ষ হয়ে আইআরআই বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় এই সার্ভে পরিচালনা করে। ওই সার্ভেতে যেসব ফলাফল পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়-এক. ৬৬ শতাংশ মানুষ মনে করে সরকার জনপ্রিয় ও প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা রয়েছে ৬৭ শতাংশ মানুষের কাছে। দুই. ৬২ শতাংশ মানুষ মনে করে দেশ ঠিকমতো চলছে। তিন. ৭২ শতাংশ মানুষ মনে করে অর্থনীতি ইতিবাচক। চার. দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে-এটা মনে করে ৬৪ শতাংশ মানুষ। পাঁচ. ৪৩ শতাংশ মানুষ মনে করে সংসদ নির্বাচন দরকার। ছয়. ৬৭ শতাংশ মানুষ মনে করে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা করা ভালো। সার্ভেতে দেখা যায়, ৬০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে (অপছন্দ করে ২৯ শতাংশ)। অন্যদিকে ৪২ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে পছন্দ করে (অপছন্দ করে ৪৬ শতাংশ)। ৫৯ শতাংশ মানুষ মনে করে গণতন্ত্র দেশটির জন্য ভালো। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ-এটা মনে করে মাত্র ৩৩ শতাংশ মানুষ। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে-এটা মনে করে ৬১ শতাংশ মানুষ, আর ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, এটা মনে করে ৬৩ শতাংশ মানুষ। আমার বিবেচনায় এই সার্ভের এটিই উল্লেখযোগ্য দিক। অর্থাৎ গণতন্ত্র চাই বটে, সেই সঙ্গে চাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য। অন্যদিকে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিশ্বের ১৬৭টি দেশের গণতন্ত্রের ধরন ও বিকাশ নিয়ে রাষ্ট্রগুলোকে র‌্যাংকিং করেছে। তাতে দেখা যায়, যেখানে স্কোর ১০-এর মধ্যে নরওয়ে ৯ দশমিক ৯৩ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৫তম (স্কোর ৫ দশমিক ৭৮)। তবে ২০০৬ সালের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হয়েছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। মোট পাঁচটি ক্ষেত্রকে সামনে রেখে এই র‌্যাংকিং করা হয়েছে। যেসব নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুমুখিতা (বাংলাদেশের স্কোর ৭ দশমিক ৪২), সরকারের পরিচালনা (বাংলাদেশের স্কোর ৫ দশমিক ০৭), রাজনৈতিক অংশগ্রহণ (বাংলাদেশের স্কোর ৫), রাজনৈতিক সংস্কৃতি (বাংলাদেশের স্কোর ৪ দশমিক ৩৮) ও ব্যক্তিস্বাধীনতা (বাংলাদেশের স্কোর ৭ দশমিক ০৬)। ইকোনমিস্টের সার্ভেতে সরাসরি অর্থনৈতিক বিষয়টি স্থান না পেলেও আইআরআইয়ের সার্ভেতে বিষয়টি উঠে এসেছে। গণতন্ত্রের বিকাশের সঙ্গে যে অর্থনীতির বিষয়টি জড়িত, তা দেখা গেছে। গবেষকরা এখন এ বিষয়কে সামনে রেখে গণতন্ত্রের স্বার্থে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কতটুকু প্রয়োজন সে ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এটা বহুল আলোচিত একটি বিষয়-আগে উন্নয়ন, না আগে গণতন্ত্র। ওপরে উল্লিখিত দুটি সার্ভেতে বিষয়টি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসেছে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের ঢেউ বয়ে যায়। বিশেষ করে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে কী ধরনের সমাজ, সংস্কৃতি বিকশিত হয়, এ ব্যাপারে আগ্রহ ছিল অনেকের। দীর্ঘ ৭৩ বছর রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো একদলীয় সমাজতান্ত্রিক সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সালে সাবেক চেক প্রেসিডেন্ট ভাসলাভ হাভেলের নেতৃত্বে যে 'ভেলভেট রেভল্যুশনের' জন্ম হয়েছিল, তা বদলে দিল পূর্ব ইউরোপকে, সেই সঙ্গে রাশিয়াকেও। অবসান ঘটেছিল স্নায়ুযুদ্ধের। আমেরিকার তাত্ত্বিকদের কেউ কেউ তখন বলার চেষ্টা করেছিলেন যে 'সমাজতন্ত্র একটি ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে' এবং লিবারেলিজমেরই জয় হলো (ফ্রান্সিস ফুকিয়ামা)। তখন থেকেই পূর্ব ইউরোপ তথা রাশিয়ার বিকাশমান গণতন্ত্র নিয়ে যেমন প্রশ্ন ছিল, ঠিক তেমনি প্রশ্ন ছিল উন্নয়নশীল বিশ্বের গণতন্ত্র নিয়েও। এখানে অধ্যাপক হানটিংটনের বিখ্যাত প্রবন্ধ (যা পরে বই আকারে প্রকাশিত হয়) The clash of civilizations the next pattern or conflict-এর কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন, যেখানে তিনি বলার চেষ্টা করেছেন কোন 'সভ্যতা' ভবিষ্যতে টিকে থাকবে এবং উন্নয়নশীল বিশ্ব কোন বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেবে। অধ্যাপক হানটিংটন লিখেছিলেন, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নৈকট্য বিভিন্ন জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রগুলোকে আটটি 'সভ্যতার' ছত্রচ্ছায়ায় একত্র করবে এবং এদের মধ্যকার দ্বন্দ্বই বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তিনি অর্থনৈতিক শক্তিজোট ও আঞ্চলিক শক্তিকে একেবারে অস্বীকার করেননি। তিনি মন্তব্য করেছিলেন এভাবে, ‘Economic regionalism may succeed only when it in rooted is a common civilization.’ অর্থাৎ অর্থনৈতিক জোটগুলো সাফল্য লাভ করবে যদি সাংস্কৃতিক (তথা ধর্মীয়) বন্ধনটা অটুট থাকে। এখানেই রয়েছে মোদ্দাকথাটি। অর্থনৈতিক সাফল্যটিই আসল, রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রধান নয়। যদি আরো খোলাসা করে বলা যায়, তাহলে বলা যেতে পারে, গণতন্ত্র হতে পারে; তবে 'কম গণতন্ত্র, বেশি উন্নয়নই মঙ্গল'। গণতন্ত্রকে কাটছাঁট করে যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো যায়, তাহলে মানুষ এই সংস্কৃতিকে গ্রহণ করবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিটিই আসল। উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া এর বড় প্রমাণ। মালয়েশিয়ার কথাও আমরা উল্লেখ করতে পারি। এ দেশগুলোতে সীমিত গণতন্ত্র আছে। এসব সমাজে বিকাশমান প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের সঙ্গে পশ্চিমা সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না, এটা সত্য। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও সত্য, সিঙ্গাপুর বা দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্র নিয়ে সেখানকার মানুষ খুশি।
একটি ছোট্ট দেশ সিঙ্গাপুর। দ্বীপরাষ্ট্র। মাত্র ২৫০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে যে রাষ্ট্রটি আজ বিশ্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি, তা একসময় 'জেলেদের পল্লী' হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রয়াত লি কুয়ান ইউ এই রাষ্ট্রকে কোথায় নিয়ে গেছেন, তা আজ সবাই জানে। সিঙ্গাপুরকে একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে কাজ করেছিল লি কুয়ান ইউয়ের দর্শন, যেখানে তিনি সফলভাবে প্রয়োগ করেছিলেন এই তত্ত্বটি, 'কম গণতন্ত্র, বেশি উন্নয়ন'। সেখানে গণতন্ত্র আছে। সংসদ আছে। বিরোধী দলও আছে। তবে পিপলস অ্যাকশন পার্টির রয়েছে একক কর্তৃত্ব। একটি শিক্ষিত, দক্ষ, ব্যবসাবান্ধব এলিট শ্রেণি রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সক্রিয়। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিনির্মাণে (ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মতে ‘Hybrid’ গণতন্ত্র) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে তারা বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। অনেকের মতে, কনফুসিয়াস মতবাদ সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিকে অন্যতম একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। প্রাচীন চীনা পণ্ডিত কনফুসিয়াস ব্যক্তি ও পরিবারকেন্দ্রিক সমৃদ্ধি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিশ্বাস করতেন (চীনে একসময় কনফুসিয়াস নিষিদ্ধ ছিল। আজ চীন কনফুসিয়াসের মতবাদ ধারণ করে)। সিঙ্গাপুর এই মতবাদ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যবহার করছে। সেই সঙ্গে যোগ্য নেতৃত্ব, রাজনীতিতে শিক্ষিত ও মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ, দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ, সুশাসন ও আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং সেই সঙ্গে সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সিঙ্গাপুরকে একটি বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছে। তথাকথিত পশ্চিমা সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র এখানে বিকশিত হয়নি। সিঙ্গাপুরের নেতৃত্ব এর প্রয়োজনীয়তাও বোধ করেনি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরেকটি দেশ মালয়েশিয়া। ৬১.৩ শতাংশ অধিবাসী মুসলমান, আর ১১ শতাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর দেশ মালয়েশিয়া। এখানে বিকশিত হয়েছে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র। তবে নিঃসন্দেহে তার সঙ্গে ব্রিটেনের গণতন্ত্রের সঙ্গে কোনো মিল নেই। লি কুয়ান ইউয়ের মতো মালয়েশিয়াকেও মাহাথির মোহাম্মদ উঠতি অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেন।
এখানে রাষ্ট্রীয় দর্শনের ভিত্তি হচ্ছে 'ঐক্যই শক্তি'। অর্থাৎ বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত মালয়েশিয়ার জনগোষ্ঠীকে এক পতাকাতলে আনতে ও শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক শক্তির (বারিসোআ ন্যাসিওনাল বা ন্যাশনাল ফ্রন্ট, ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন বা উমনো যার মূলশক্তি) জন্ম দিয়েছিল মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ব। ১৩টি রাজনৈতিক দলের এই ফ্রন্ট যা মালয়েশিয়ার ঐক্যের প্রতীক, দীর্ঘদিন মালয়েশিয়াকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। মাহাথির মোহাম্মদ ১৯৮১ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে ২০০৩ সালে অবসর নেন। এই ২২ বছরে তিনি মালয়েশিয়াকে অন্যতম একটি অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেন। এখানেও কাজ করেছে সেই স্পিরিট, 'কম গণতন্ত্র, বেশি উন্নয়ন'। সেখানে রয়েছে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র। মিডিয়া স্বাধীন নয়। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত। সংসদ আছে। বিরোধী দলের অস্তিত্বও রয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলের বড় ভূমিকা লক্ষ করা যায় না; যদিও সংসদের নিম্নকক্ষে (Dewan Rakyat) যেখানে ক্ষমতাসীন বারিসোআ ন্যাসিওনালের আসন সংখ্যা ১৩৩, সেখানে বিরোধী দলের ফ্রন্ট (Pakatain Rakyat, ৩ দল) পেয়েছে ৮৯টি আসন। বিরোধী দলের আসন বাড়লেও তা রাজনীতিতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের বিকাশ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্নটি এসে যায়। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ছাড়া তা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো একেবারে খারাপ নয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ ধরে রাখা, রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্য কমিয়ে আনা (২৪ শতাংশ), তৈরি পোশাকে ৭৭ লাখ উদ্যোক্তা ও ২৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান, শান্তিসূচকে ৯৮তম স্থান, ডিজিটাল স্বাধীনতায় ৬৩তম স্থান (৮৬টি দেশের মধ্যে) ইত্যাদি সূচক আশার কথা বলে। কিন্তু বড় ব্যর্থতা প্রধান বিরোধী দলকে সরকার আস্থায় নিতে পারেনি। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে যেখানে 'কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস' অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আমরা তা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। সর্বশেষ ৫ জানুয়ারি (২০১৪) একটি নির্বাচন হয়েছে, যেখানে 'সব দলের অংশগ্রহণ' ছিল না। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে পড়েছে। রাজনীতি এখন হয়ে পড়েছে অনেকটা একদলীয়। দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি দলের প্রভাব-প্রতিপত্তি সমাজের সর্বক্ষেত্রে এত প্রকট যে গণতন্ত্র এখানে অনেকটা 'নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র'-এর পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এমনকি বিরোধী দলের টানা তিন মাসের আন্দোলন বাংলাদেশে একটি 'বোমাবাজির' রাজনীতির জন্ম দিয়েছে। এই রাজনীতি সুস্থ গণতন্ত্র চর্চার জন্য কোনো ভালো খবর নয়।
যাঁরা বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করেন, রাজনীতি নিয়ে সারা জীবন থাকতে চান তাঁদের কাছে এই সার্ভে বা তাদের পর্যবেক্ষণ অনেক চিন্তার খোরাক জোগাবে। আইআরআইয়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে (সারা দেশের মাত্র দুই হাজার ৫২৫ জনের মতামত এতে প্রতিফলিত হয়েছে) প্রশ্ন থাকলেও ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সার্ভেতে বাংলাদেশের অবস্থান অন্য ১৬৬ দেশের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এখানে দ্বিমতের সুযোগ কম। এখন সার্ভেতে যা-ই উঠে আসুক না কেন, তা থেকে সরকার কিংবা প্রধান বিরোধী দল কতটুকু শিক্ষা নেবে-এটিই বড় প্রশ্ন আমাদের। Daily Kaler Kontho 20.09.15

0 comments:

Post a Comment