রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

একটি হত্যাকাণ্ড, অনেক প্রশ্ন

ইতালির নাগরিক সিজারি তাভেল্লার হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি দুটি বিষয় জড়িত : এক. অভিযোগ করা হয়েছে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সিরিয়ার জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস জড়িত। দুই. এ ঘটনা তথা নিরাপত্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর একরকম বাতিল হয়ে গেছে। সারা বিশ্বের মিডিয়ায় এখন বলা হচ্ছে, আইএসের জঙ্গিরা বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়েছে! বাংলাদেশের জন্য বহির্বিশ্বে এ ধরনের একটি সংবাদ নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক নষ্ট হয়েছে। স্পষ্টতই এ ঘটনার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের ইস্যুটি এখন সামনে চলে এলো। বাংলাদেশে আইএস কিংবা আল কায়দার কোনো শাখা আছে কি-না, এটা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। এখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যতই বলুন না কেন বাংলাদেশে আইএসের কোনো শাখা নেই; কিন্তু অতীতে তো মন্ত্রীরা বলেছেন ভিন্ন কথা। কিছুদিন আগে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে দু’জন আইএস সংগঠককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের একজনকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছিল আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তাছাড়া একাধিক মন্ত্রী প্রকাশ্যেই বলতেন আল কায়দার জঙ্গিরা কোন কোন উগ্রবাদী সংগঠনের ব্যানারে কাজ করছে। বেশক’টি সংগঠনকে ইতিমধ্যেই জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনও বলা হয়েছিল, ওইসব সংগঠনের সঙ্গে আল কায়দা ও আইএসের যোগাযোগ রয়েছে! ওইসব বক্তব্যের পেছনে যে কোনো সত্যতা ছিল না, তা এখন প্রধানমন্ত্রী কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত হল। তাহলে সিজারি তাভেল্লাকে হত্যা করল কারা? কোনো শক্তি কি তাহলে আইএসের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে? আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নেই এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এখানে একটা কথা বলা দরকার, যে পর্যবেক্ষণ সংস্থার মাধ্যমে (SITE Search for International Terrorist Entities) আইএস কর্তৃক এ হত্যাকাণ্ডের খবর প্রচারিত হয়েছে, তার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না। এটি আইএসের মুখপাত্র নয়। আল কায়দা নেতা আইমান আল জাওয়াহিরির অডিও টেপ মাঝে মধ্যে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশ পেলেও আইএস কখনও এভাবে তাদের বক্তব্য প্রকাশ করে না। SITE- মূলত একটি ইহুদি প্রতিষ্ঠান এবং ইহুদিদের অর্থে এটি পরিচালিত হয়। জিহাদি সংগঠনগুলোর কার্যক্রম মনিটর করা এবং ‘তথ্য বিক্রি’ করা তাদের প্রধান কাজ। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ব্যক্তি রিটা কাটজ (Rita Katz) একজন ইহুদি এবং অভিযোগ আছে এক সময় তিনি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করতেন। যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের সংগঠনগুলো অতীতে তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। তিনি মূলত মোসাদ তথা ইহুদি লবির স্বার্থেই কাজ করেন। ফলে SITE-এ বাংলাদেশ নিয়ে যখন বিভ্রান্তিকর একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়, তখন নানা প্রশ্নের জন্ম হয় বৈকি!যারা আন্তর্জাতিক রাজনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা জানেন বিশ্ব জঙ্গিবাদের উদ্যোক্তা মূলত যুক্তরাষ্ট্র। এক সময় (১৯৭৯) আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে মাদ্রাসা ছাত্রদের দিয়ে তৈরি করেছিল তালেবান বাহিনী। তার পরের ইতিহাস সবাই জানেন। আফগান যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। এ যুদ্ধ সম্প্রসারিত হয়েছে ইরাকে ও সিরিয়ায়। যুদ্ধ এখন সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে আফ্রিকাতে। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা। যুদ্ধ থাকলে ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়, মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। তাই বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার সঙ্গে মার্কিন স্বার্থ, বিশেষ করে কর্পোরেট হাউসগুলোর স্বার্থ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। SITE-এর মতো এ ধরনের বেশকিছু সংস্থা ‘তৈরি’ করা হয়েছে, যারা মার্কিন স্বার্থ তথা ইহুদি স্বার্থের পক্ষে কাজ করে।প্রসঙ্গক্রমে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ‘টুইন টাওয়ার’ হামলার কথা উল্লেখ করা যায়। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আফগানিস্তান ও ইরাকে সামরিক আগ্রাসন, লিবিয়া ও সর্বশেষ সিরিয়ার ঘটনাবলীতে মারা গেছে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ইরাকে ৫০ লাখ, আফগানিস্তানে ৫০ লাখ, সিরিয়ায় ৫ লাখ। একই সঙ্গে ইতিমধ্যে ৩ কোটি মানুষ পরিণত হয়েছে উদ্বাস্তুতে। শুধু সিরিয়ারই ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। আজ হাজার হাজার সিরীয় ও ইরাকি শরণার্থীর ইউরোপে প্রবেশের দৃশ্যগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র ফলে মুসলিম দেশগুলোতে ভয়াবহ অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কথা। তাই সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য আসলে কী?আমরা পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করে মার্কিন অর্থনীতিকে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পকে চাঙ্গা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ও আফগান যুদ্ধে খরচ করেছে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। আর ১ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় এ যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করা হয়। বাহ্যত কর্পোরেট গ্লোবালাইজেশনের যুগে যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট হাউসগুলোর স্বার্থেই এসব যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে এবং তারা লাভবান হচ্ছে। এ কর্পোরেট হাউসগুলোর জন্যই চাই যুদ্ধ। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা। একটা দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে। ইরাক যুদ্ধের পর ইরাক পুনর্গঠনের কাজ পেয়েছিল বেকটেল গ্রুপ। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক প্রাথমিকভাবে দেয়া ১০০ মিলিয়ন ডলারের কনট্রাক্ট পেয়েছিল এই বেকটেল গ্রুপ, যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে মার্কিন প্রশাসন ৬টি মার্কিন বৃহৎ কর্পোরেশনের সঙ্গে ইরাক পুনর্গঠনের কাজের জন্য গোপনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এরাই বুশ প্রশাসনকে যুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আর সাদ্দাম হোসেনের উৎখাতের পর ইরাক তেল বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্রকে এই অর্থ পরিশোধ করেছিল। আজ সিরিয়ার পরিস্থিতি অনেকটা এরকমই। হঠাৎ করেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইসলামিক স্টেটের আবির্ভাব। সিরিয়ার তেলক্ষেত্রগুলো এখন আইএস জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে। এরা কালোবাজারে তেল বিক্রি করছে। তেলের ব্যারেলপ্রতি মূল্য এখন ৪০ ডলারের নিচে। ফলে লাভবান হচ্ছে মার্কিন সংস্থাগুলো। তারা এখন সস্তায় তেল পাচ্ছে, যা তাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখছে।সম্প্রতি ছোট্ট শিশু আয়লানের মৃতদেহ বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। এটিও ছিল ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র পরিণতি। এ ‘যুদ্ধ’ ওই অঞ্চলে কোনো স্থিতিশীলতা আনতে পারেনি। কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে পারেনি। যুদ্ধও বন্ধ হয়নি। ওই অঞ্চল যত অস্থিতিশীল থাকবে, যুদ্ধ বজায় থাকবে, ততই লাভ মার্কিন কর্পোরেট হাউসগুলোর। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা। সুতরাং তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র কর্পোরেট হাউসগুলোর স্বার্থ যেমন উদ্ধার করছে, তাদের ব্যবসা যেমন বেড়েছে, ঠিক তেমনি পারস্য উপসাগর অঞ্চলে উত্তেজনা ‘জিইয়ে’ রেখে পরোক্ষভাবে ইহুদি লবির পক্ষেই কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্যই বোধকরি যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষক প্রফেসর নোম চমস্কি মন্তব্য করেছেন, যে দেশগুলো ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র প্রবক্তা, তারাই মূলত রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসের প্রধান মদদদাতা। তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নামই উল্লেখ করেছেন। তাই খুব সহসাই ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র ধারণা পরিত্যক্ত হবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। পারস্য উপসাগর অঞ্চল ছেড়ে সহসাই এ ‘যুদ্ধ’ সম্প্রসারিত হবে আফ্রিকায়! কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশে এ যুদ্ধের বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখানে মাঝে মধ্যে দু’-একজন তথাকথিত জঙ্গির খবর পুলিশ বা র‌্যাবের মাধ্যমে সংবাদপত্রে প্রকাশ পায় বটে; কিন্তু তাদের সঙ্গে বৈশ্বিক জঙ্গিদের কতটুকু মেলানো যাবে, আমি সে বিষয়ে নিশ্চিত নই।বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট পাগল। তারা ক্রিকেট পছন্দ করেন। আমি বিশ্বাস করি, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নিশ্চয়ই এটা উপলব্ধি করবেন যে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি ঝুঁকি নেই। এটা সত্য, ইতালির নাগরিক সিজারি তাভেল্লার হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর স্থগিত হয়ে যাওয়ার একটি যোগসূত্র আছে বলেই মনে হয়। বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানিয়ে(?) কোনো পক্ষ এ থেকে ফায়দা নিতে চায়।বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট বা আল কায়দার ঘাঁটি রয়েছে- এ ধরনের ‘তত্ত্ব’ যারা উপস্থাপন করেছেন, কিংবা বলতে চান, তারা সত্য বলছেন না। আইএস যেভাবে তাদের সংগঠন পরিচালনা করে, বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব আমার চোখে ধরা পড়েনি। বলতে গেলে নেইও। আর যারা বাংলাদেশে আল কায়দা আছে বলে মনে করেন এবং বলেনও, তারা আবু মুসাব আল সুরির Global Resistance Movement বইটি পড়ে দেখতে পারেন। বইটি ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয়েছে এবং এর অংশবিশেষ ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। আবু মুসাবকে বলা হয় আল কায়দার তাত্ত্বিক। কীভাবে একটি জিহাদি সংগঠন পরিচালিত হবে (ঝঢ়রফবৎ বিন বা মাকড়সার জাল তত্ত্ব) তার বর্ণনা এতে আছে। আল কায়দার সন্ত্রাসীরা এ তত্ত্ব তাদের অপারেশন পরিচালনার সময় ব্যবহার করে। তাদের স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো উগ্র সংগঠনের কোনো মিল আছে বলে আমার কখনোই মনে হয়নি। তবে এটা সত্য, বাংলাদেশে কিছু উগ্র সংগঠন রয়েছে। এরা ইসলামের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এদের কোনো গ্রহণযোগ্যতাও নেই এবং মানুষ এদের পছন্দও করে না। বাংলাদেশ একটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু মানুষ এদের ‘রাজনীতি’ গ্রহণ করে নেয়নি কোনো দিন। তাই তাভেল্লার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আইএস জড়িত বলে যে ধারণা তৈরি করা হয়েছে, তা নিছক বিভ্রান্তিকর একটি অপচেষ্টা।প্রসঙ্গক্রমে এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন। লন্ডনের Institute for Economics and Peace প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের একটি তালিকা তুলে ধরে। Global Terrorism Index 2014 সালের সর্বশেষ প্রতিবেদনে ইরাককে যেখানে সন্ত্রাসকবলিত দেশ হিসেবে এক নম্বরে দেখানো হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ২৩ নম্বরে। এতেই বোঝা যায় সন্ত্রাসের কারণে বাংলাদেশে ঝু্ঁকি কত কম। মোট ১৬২টি দেশ নিয়ে এ গবেষণা হয়েছিল। যেহেতু সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং কর্পোরেট হাউসগুলোর স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্ব এ সন্ত্রাসবাদকে টিকিয়ে রাখছে, সেহেতু বাংলাদেশের মতো দেশে এর ছিটেফোঁটা যে লাগবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশ কখনোই ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ছিল না, এবং এখনও নেই। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক Reader Supported News আমাদের জানাচ্ছে যে, ২০০২ সালের পর থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে শতকরা ৬৫০০ ভাগ হারে। আর সন্ত্রাসী আক্রমণের হার বেড়েছে ৪৫০০ ভাগ হারে। মূলত যেসব স্থানে মার্কিন সেনার উপস্থিতি ছিল (ইরাক ও আফগানিস্তান), সেখানেই এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৪ সালে শতকরা ৭৪ ভাগ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে ৫টি দেশে- ইরাক, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও সিরিয়ায়। তাই কোনো পর্যায়েই বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তালিকায় ফেলা যাবে না। বাংলাদেশ অতীতে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রশংসা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের Country Report on Terrorism 2014-এ স্পষ্ট করেই বলা আছে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে কোনো বড় ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি। South Asia Terrorism Portal-এও বাংলাদেশের এ ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে। বাংলাদেশ Global Coalition to Counter ISIL-এ যোগ না দিলেও Global Fund for Community Engagement and Resilience-এর বোর্ড মেম্বার। এটি গঠিত হয় ২০১৪ সালে। ফলে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে বাংলাদেশের স্পষ্ট ‘কমিটমেন্ট’ রয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে বিদেশী নাগরিক তাভেল্লার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে জড়ানো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের একটি উদ্যোগ বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। এর পেছনে কোনো ‘ষড়যন্ত্র’ যে নেই, তা হলফ করে বলা যাবে না।আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এখন যত দ্রুত সম্ভব তাভেল্লার হত্যাকাণ্ডের মোটিভ খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এটা যদি অনুদ্ঘাটিত থেকে যায়, তাহলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে বিদেশে বিভ্রান্তি বাড়বেই। এটা আমাদের জন্য কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না। বাংলাদেশ এখন Global Coalition to Counter ISIL-এ যোগ দিতে পারে। আইএসের জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ এবং সিরিয়া-ইরাক থেকে আইএস জঙ্গিদের উৎখাতের ব্যাপারে পশ্চিমা উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশ সংহতি প্রকাশ করতে পারে। তবে তাভেল্লার হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনটা জরুরি। একই সঙ্গে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশে সব দলের ঐকমত্য থাকা প্রয়োজন। আমরা যদি ‘ব্লেম গেমে’র আশ্রয় নেই, তাহলে এ থেকে সুযোগ নেবে তৃতীয় পক্ষ। তাভেল্লার হত্যাকাণ্ড নিছক একটি সাধারণ ঘটনা নয়। যারা হত্যা করেছে, তারা ভাড়াটে খুনি এবং বাংলাদেশী। কিন্তু তাদের কারা প্ররোচিত করেছে, কোন ‘শক্তি’ এর পেছনে কাজ করেছে এটা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অনেক ‘প্রশ্ন’ ও ‘জিজ্ঞাসা’ থেকে গেল। জানি না আমাদের গোয়েন্দারা এসব প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসার কোনো জবাব আমাদের দিতে পারবেন কি-না। ০২ অক্টোবর ২০১৫ Daily Jugantor

0 comments:

Post a Comment