রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

জঙ্গি উত্থান, বৈশ্বিক সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি

হঠাৎ করেই যেন অনেকগুলো ঘটনা একের পর এক ঘটে গেছে দেশে। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের আগেই প্রশ্ন তোলা হল নিরাপত্তার। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের নিরাপত্তা দল যখন ঢাকায় এলো, ঠিক তখনই ঢাকায় খুন হলেন এক ইতালিয়ান নাগরিক। এর ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় রংপুরে খুন হলেন একজন জাপানি নাগরিক। সারা দেশের মানুষ যখন এ দুটি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে এক ধরনের উদ্বেগের মাঝে ছিল ঠিক তখনই পুলিশ চট্টগ্রাম থেকে গ্রেনেডসহ গ্রেফতার করল জঙ্গিগোষ্ঠী জেএমবির পাঁচ সদস্যকে। একজন আবার গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারাও গেলেন। প্রায় একই সময় ঈশ্বরদীতে খ্রিস্টান ব্যাপ্টিস্ট মিশনের ধর্মপ্রচারক লুক সরকারকে গলা কেটে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। তিনি বেঁচে যান। কিন্তু বাঁচতে পারেননি ঢাকায় পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ খিজির খান, আর ঈশ্বরদীতে কর্তব্যরত একজন পুলিশ সদস্য সুজাউল ইসলাম। এগুলো কি সব একই সূত্রে গাঁথা? বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার একটি চেষ্টা? চলতি সপ্তাহে প্রতি রাতেই বিভিন্ন টিভি টকশোতে আলোচনার বিষয় ছিল এ হত্যাকাণ্ড তথা জঙ্গি উত্থান। দুজন বিদেশীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চট্টগ্রামে জেএমবির আস্তানা থেকে গ্রেনেড উদ্ধার ও শীর্ষ জেএমবি কমান্ডারের মৃত্যুর কোনো যোগসূত্র আছে কি-না বলতে পারব না; তবে দুজন বিদেশী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে জঙ্গি কানেকশন আছে, এটাই এখন প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি করে। তবে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিদেশী জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোগসূত্র রয়েছে বলে অভিযোগ উঠলেও তা প্রমাণিত নয়। ঝওঞঊ নামে একটি জিহাদ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা, যাদের সঙ্গে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে, তারা ইতালিয়ান নাগরিককে হত্যার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ সংবাদটি প্রচার করলেও আইএস নিজে ভিডিও টেপের (যা সাধারণত তারা করে) মাধ্যমে সিজারি তাভেল্লার হত্যাকাণ্ডের কথা প্রচার করেনি। এমনকি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা তথা একাধিক কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স গ্র“পের পক্ষ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আইএসের সম্পর্ক থাকার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আলোচিত তাদের গোয়েন্দা কার্যক্রমের কারণে। তারাও বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে, এমন তথ্যও আমাদের জানা নেই। তবে ৬ অক্টোবর একটি ভারতীয় সংবাদপত্র ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে আমাদের জানাচ্ছে যে, বিদেশী নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াতের একটি অংশ জড়িত রয়েছে।আসলে বিদেশী দুই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত, তা এখন অব্দি প্রমাণিত না হলেও কতগুলো প্রশ্ন কিন্তু সামনে চলে এসেছে। এক. যেখানে নিরাপত্তা শংকার কথা আগেই বলেছিল যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন সতর্কতা অবলম্বন করল না? দুই. মার্কিন রাষ্ট্রদূত যে বলেছেন, আইএসের উত্থান ঠেকাতে যৌথ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ, তা কোনো ইঙ্গিত বহন করে কি-না? তিন. সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশীদের আশ্বাস ও নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলা হলেও বিদেশীরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তারা নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। এমনকি তৈরি পোশাক ক্রেতাদের সংস্থা বায়ার্স ফোরামের সভাও স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কি তৈরি পোশাক রফতানিতে ভাটা পড়বে? জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হবে? এ ঘটনা কীভাবে বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা এ মুহূর্তে স্পষ্ট করে বলা না গেলেও এটা ঠিক, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সংযোজিত নতুন একটি অধ্যায়!আমি দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়ায় বলার চেষ্টা করছি, দেশে তথাকথিত চরমপন্থী জঙ্গি উত্থানের সম্ভাবনা ক্ষীণ। পাকিস্তান, আফগানিস্তান কিংবা পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে যে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের তথাকথিত জঙ্গিদের মেলানো যাবে না। বাংলাদেশে কিছু উগ্রপন্থী সংগঠনকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সরকারিভাবেও এদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যেমন-আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিজবুত তাহরির, হরকাতুল জিহাদ, জামাআতুল মুজাহিদীন, জাগ্রত মুসলিম জনতা, শাহাদাত আল হিকমা। টিভিতে আমার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে অনেককে বলতে শুনেছি, আল কায়দা অথবা ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিদের মিল আছে এবং তাদের সহযোগী মিত্র হিসেবে বাংলাদেশের জঙ্গিরা কাজ করছে। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়া সিনিয়র অফিসারদের কেউ কেউ যখন প্রকাশ্যে মিডিয়ায় এ ধরনের মন্তব্য করেন, তখন সাধারণ মানুষ ওই সব মন্তব্য বিবেচনায় না নিয়ে পারে না। সাধারণ মানুষ এসব কথা বিশ্বাস করে। বিদেশী দূতাবাস, গবেষণা সংস্থা এসব বক্তব্য গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যবিষয়ক অধিদফতর যদি ওই সব বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে থাকে, তাহলে আমরা তাদের দোষী সাব্যস্ত করতে পারব না। তাই বলে আমি বলছি না বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। দেশে যারা ওই সব চরমপন্থী রাজনীতি ধারণ করে, তাদের সংখ্যা কম। তারা বিভ্রান্ত। সাধারণ মানুষের মধ্যে এদের কোনো প্রভাব নেই। এটা সত্য, আমাদের সমাজেই শায়েখ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের মতো সন্ত্রাসীর জন্ম হয়েছিল। একসময় (২০০৫) সারা দেশে একসঙ্গে বোমা ফাটিয়ে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল। ২১ আগস্ট বোমা ফাটিয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীকে হত্যা করতে চেয়েছিল। এরা সন্ত্রাসী। কিন্তু এরা যে আদর্শ লালন করে, এ দেশে তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। আল কায়দার বর্তমান নেতা জাওয়াহিরি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পাক-ভারত-বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আল কায়দার শাখা গঠন করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু আল কায়দা যেভাবে তাদের অপারেশন পরিচালনা করে (যেমন- ইয়েমেন ও ইরাকে), বাংলাদেশে সেভাবে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা হতে এখনও আমরা দেখিনি। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে পরিচিত আল কায়দার বাংলাদেশে কোনো শাখা আছে- এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত হতে পারছি না। যারা সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করেন, তারা জানেন আল কায়দার তাত্ত্বিক হচ্ছেন আবু মুসাব আল সুরি। সুরি আল কায়দার স্ট্র্যাটেজির কথা বলতে গিয়ে Spider Web-এর কথা বলেছেন। অর্থাৎ মাকড়সারা যেমন এখানে-সেখানে জাল তৈরি করে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে এবং সেই জাল ভেঙে দিলে অন্যত্র গিয়ে একইরকম জাল তৈরি করে, আল কায়দার স্ট্র্যাটেজিও ঠিক তেমনি। ছোট ছোট গ্রুপে অঞ্চল ভিত্তিতে তারা সংগঠিত হয় এবং তাদের ওপর আক্রমণ হলে তারা অন্যত্র গিয়ে সংগঠিত হয়, ঠিক মাকড়সারা যেমনটি করে। Al-Qaeda in Arabian Peninsula, Al-Qaeda in Islamic Magreb, Al-Qaeda in Iraq এভাবেই সংগঠিত। এর বাইরে তারা ভিন্ন নামেও অপারেট করে। যেমন আল নুসরা ফ্রন্ট (সিরিয়া), আল গামা আল ইসলামিয়া। এ দুটো সংগঠনের সঙ্গে আদর্শগতভাবে আল কায়দার মিল আছে।এখানে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি সংগঠনটির কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। আল কায়দার সঙ্গে আইএসের আদর্শগতভাবে অমিল রয়েছে। আল কায়দা যেখানে শরিয়াভিত্তিক ইসলামী শাসন চায়, সেখানে আইএস চায় একটি ইসলামী খিলাফত। অর্থাৎ একটি খিলাফত রাষ্ট্রের আওতায় সব মুসলিম রাষ্ট্র একত্রিত হবে। সেখানে একজন খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধান থাকবেন। আল কায়দার সঙ্গে পার্থক্য এখানেই যে, আল কায়দা খিলাফতের পরিবর্তে ইসলামিক আমিরাতে বিশ্বাসী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ উপমহাদেশে আল কায়দা কি আদৌ স্থান করে নিতে পেরেছে? ভারতে এর কোনো স্থান নেই। পাকিস্তানে তালেবানদের প্রভাব বেশি, আল কায়দা তার শাখা স্থাপন করতে পেরেছে, এমন খবর আমাদের জানা নেই। তবে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকতে পারে। আর বাংলাদেশে তাদের আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। বাংলাদেশে জঙ্গিগোষ্ঠী হিসেবে যারা পরিচিত তাদের সঙ্গে আল কায়দার যোগাযোগ আছে, এমন কোনো তথ্যভিত্তিক প্রমাণও আমাদের কাছে নেই। ফলে বাংলাদেশে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, এটা ঠিক নয়। তাহলে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখানোর অর্থ কী ছিল? এর আগে অনেক বিদেশী ক্রিকেট টিম বাংলাদেশ সফর করে গেছে। তখন তো এ প্রশ্ন তোলা হয়নি? এখন তাহলে তোলা হল কেন? সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যাতে করে তা বিদেশীদের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে বলেছিলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। এটাই হচ্ছে আসল কথা। বাংলাদেশে ইসলামের নামে যারা উগ্রবাদ প্রচার করছে, তারা বিভ্রান্ত। আল কায়দা বা আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের মেলানো যাবে না। তবে এটা সত্য, কোনো কোনো মন্ত্রী, সরকারের সমর্থক বুদ্ধিজীবী যখন মিডিয়ায়, টিভির টকশোতে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন, তখন তা দেশে নয় বরং বিদেশেও বিভ্রান্তি তৈরি করে। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ৯০ ভাগ মুসলমান। এখানে উগ্রপন্থী ইসলামী দল আছে। ফলে বাংলাদেশ যে কোনো কোনো দেশের গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে রয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশ একটি মডারেট ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দেশ। এখানে উগ্রবাদের কোনো স্থান নেই। উগ্রবাদকে মানুষ পছন্দ করে না। সাধারণ মানুষের মাঝে এদের কোনো গ্রহণযোগ্যতাও নেই। তাই জঙ্গিবাদকে নিয়ে যত কম কথা বলা যায়, ততই মঙ্গল। মনে রাখতে হবে, দলের সিনিয়র নেতারা, মন্ত্রীরা যদি জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বলেন, তাহলে তাতে সমর্থকরা প্রভাবিত হন। তাই তাদের সংযত কথাবার্তা বলা উচিত।জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা কেন, কোনো দেশই এ সমস্যার বাইরে নয়। এ সমস্যার সঙ্গে আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নটি সরাসরি জড়িত। এ ক্ষেত্রে সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের মাঝে সমঝোতা প্রয়োজন। জঙ্গিবাদ নিয়ে কোনো ব্লেমগেম নয়, বরং সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে যদি সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে তৃতীয় পক্ষ এ থেকে ফায়দা উঠাবে, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উদ্ধারে তাই প্রয়োজন এ মুহূর্তে একটি সমঝোতা। তবে অতি সম্প্রতি ঢাকায় দেয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূতের একটি মন্তব্য আমার কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেছেন, আইএসের উগ্রবাদ দমনে যৌথ উদ্যোগ গুরুতপূর্ণ। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বার্নিকাট আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও তথাকথিত সন্ত্রাস দমনে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ ইতিমধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে গেল সেপ্টেম্বরে (২০১৫) যুগান্তরে আমি একটি উপ-সম্পাদকীয় লিখেছিলাম। এই তথাকথিত সন্ত্রাস দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে সামরিকভাবে নিজেদের জড়িত করেছে, সেখানে সন্ত্রাস দমন তো হয়ইনি, বরং সন্ত্রাসের মাত্রা বেড়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জিইয়ে রেখে যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ আদায় করে নিচ্ছে। পাঠক আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া কিংবা সিরিয়ার বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিতে পারেন। আমার আতংকটা সেখানেই- আইএসের উগ্রবাদ দমনে বার্নিকাট যৌথ উদ্যোগের কথা বলে কি কোনো ইঙ্গিত করলেন?একাধিক কারণে বাংলাদেশ ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। একদিকে চীনের উত্থান, অন্যদিকে চীন-রাশিয়া মৈত্রী যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আঘাত করছে। ভারত মহাসাগর ক্রমশই মার্কিন সামরিক নীতিনির্ধারকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক ফ্লিটের কর্মকাণ্ড এখন সম্প্রসারিত হচ্ছে ভারত মহাসাগরে। অনেকেই মনে করতে পারেন, ২ মার্চ (২০১২) সিনেটের এক অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক ফ্লিটের (বাংলাদেশ এর অন্তর্ভুক্ত) তৎকালীন কমান্ডার অ্যাডমিরাল রবাট উইলার্ড বলেছিলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এ নিয়ে ওই সময় বাংলাদেশে কম বিতর্ক হয়নি। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ বেশ কটি চুক্তিতে আবদ্ধ (যেমন, অংশীদারিত্ব সংলাপ চুক্তি ২০১৩, টিকফা চুক্তি ইত্যাদি), যেখানে সন্ত্রাস দমনে যৌথ কর্মসূচি নেয়ার কথা বলা হয়েছে। অনেকেই জানেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে SOFA (Status of Forces Agreement) ও আকসা (Acquisition and Cross Servicing Agreement) নামে দুটি চুক্তি করতে চাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সাময়িক উপস্থিতি, জ্বালানি গ্রহণ, পোর্ট অব কল সুবিধা দেয়া হবে। বাংলাদেশ এখন অব্দি এ ব্যাপারে সম্মতি না দিলেও চাপে আছে। আইএসকে মোকাবেলায় বৈশ্বিক কোয়ালিশনে বাংলাদেশ যাতে যোগ দেয়, সেজন্যও চাপ থাকতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে SITE-এর ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব আবিষ্কার এবং বার্নিকাটের যৌথ উদ্যোগের কথা বলার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি-না, তা ভবিষ্যৎই বলতে পারবে।এটা সত্য, বিশ্বে মুসলমান জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য যেখানে বেশি, সেখানেই ইসলামের নামে উগ্রবাদের জন্ম হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া, সোমালিয়া, এমনকি থাইল্যান্ডের একটা অঞ্চলে (যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ) ইসলামের নামে উগ্রবাদ বিস্তার লাভ করেছে। এদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগসাজশও রয়েছে। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। এখানে আল কায়দা কিংবা আইএস সরাসরি সংগঠিত হতে না পারলেও স্থানীয় জঙ্গিরা যে তাদের কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেউ কেউ চেষ্টা করছে যোগাযোগ রাখার। তবে যোগাযোগ হয়েছে, এটা বলার সময় বোধহয় এখনও আসেনি। বিদেশীদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিল। অভ্যন্তরীণ কিংবা বাইরের শক্তি এ থেকে সুবিধা নিতে পারে। তাই বিষয়গুলো হালকাভাবে না নেয়াই মঙ্গলজনক।
Daily Amader Somoy

0 comments:

Post a Comment