সিরিয়া সংকট শুরু হওয়ার পর এবং
১৯৯১ সালের ডিসেম্বরের পর রাশিয়া প্রথমবারের মতো ভিন্ন একটি দেশে সামরিক
হামলা চালিয়ে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দিল কি-না, এ প্রশ্নটি এখন
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্রদের কাছে আলোচনার অন্যতম একটি বিষয়। সিরিয়ার
ব্যাপারে জেনেভায় ২০১৩ সালে লেভারভ-কেরি সমঝোতা এবং জাতিসংঘের অস্ত্র
পরিদর্শকদের তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের পর ওই সময় মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ
এড়ানো গিয়েছিল বটে; কিন্তু ইসলামিক স্টেটের উত্থান এবং সিরিয়ার এক অংশ ও
ইরাকের এক অংশ নিয়ে তথাকথিত একটি জিহাদি রাষ্ট্র গঠন পুরো পরিস্থিতিকে বদলে
দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমিত বিমান হামলার পরও যেখানে আইএস
জঙ্গিদের উৎখাত করা যাচ্ছিল না, সেখানে রুশ বিমান আইএস জঙ্গিদের আস্তানা
পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিতে না পারলেও তাদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। আর মজার
ব্যাপারটা হচ্ছে এখানেই। যেখানে আইএস জঙ্গিদের উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্র ও
রাশিয়ায় এক হওয়ার কথা, সেখানে এ রুশ হামলাকে সহজভাবে নিতে পারছে না মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র। তারা মনে করছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে রক্ষা করতেই এ
রুশ হামলা। তবে এটা তো সত্য, মার্কিন তথা মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় যেখানে
ইসলামিক স্টেটের ঘাঁটি ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি, সেখানে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে
রুশ বিমান বাহিনীর হামলায় ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের অনেক ছোট ছোট ঘাঁটি
ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তাদের শক্তি অনেক দুর্বল হয়েছে।
এদিকে রুশ বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বে একটি
মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এই বিমান হামলা
সিরিয়ায় আসাদবিরোধী মডারেট জোটকে দুর্বল করবে। প্রায় ৪০টির মতো ছোট ছোট
জোট, যারা আসাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র যাদের অর্থ ও
অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল, তারাও রুশ বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে। কোনো কোনো গ্রুপ ধ্বংসও হয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতদিন প্রায়
৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এসব গ্রুপের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল। এখন
যুক্তরাষ্ট্র এ প্রশিক্ষণ বাতিল ঘোষণা করেছে। ওবামা নিজে স্বীকার করেছেন,
সিরিয়া পরিস্থিতি সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে।এ
রুশ বিমান হামলা অনেকগুলো সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে এসেছে। এক. এর মধ্য দিয়ে
রাশিয়া তার সীমান্তের বাইরে সমরশক্তিকে ব্যবহার করল এবং বিশ্বকে জানান দিল,
বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্বকে রাশিয়া মেনে নেবে না। দুই.
সিরিয়া সংকটে এবং আইএস জঙ্গিদের উৎখাতে রাশিয়ার অবস্থানকে সমর্থন করেছে
চীন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে চীন-রাশিয়ার ঐক্য আরও শক্তিশালী হল। বলা
ভালো, রাশিয়া ও চীন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সদস্য। তিন.
সৌদি আরব এ অঞ্চলের অন্যতম একটি শক্তি। সৌদি আরব আসাদ সরকারকে না চাইলেও
সিরিয়া সংকট নিরসনে রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছে। সৌদি
প্রতিরক্ষামন্ত্রী অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথমদিকে রাশিয়া সফর করেন।
প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সোচিতে পুতিনের বৈঠকের খবরও
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে সৌদি আরবের একটি শংকাও রয়েছে।
ইরান-রাশিয়া-আসাদ ঐক্য সৌদি আরবের জন্য চিন্তার কারণ। ইরান-সৌদি বিরোধ নতুন
কোনো ঘটনা নয়। চার. সিরিয়া সংকটে তুরস্ক একটি ফ্যাক্টর। তুরস্ক ন্যাটোর
সদস্য এবং রুশ বিমানের তুরস্কের আকাশসীমা লংঘন তুরস্ক খুব ভালো চোখে
দেখেনি। ঘরের পাশে রাশিয়ার উপস্থিতি (সিরিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ তুরস্ক)
তুরস্ক খুব সহজভাবে নেবে বলেও মনে হয় না। একই সঙ্গে তুরস্কের রাজধানী
আঙ্কারায় শান্তি সমাবেশে বোমা হামলার (যে ঘটনায় ৯৭ জন মারা যান) ঘটনায়
আইএসকে অভিযুক্ত করেছে তুরস্ক। এ পরিস্থিতি তুরস্কের অবস্থানকে জটিল করে
তুলেছে।এখানে নিঃসন্দেহে সিরিয়ার
ব্যাপারে মার্কিন ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। তথাকথিত সন্ত্রাসের
বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে ২০০১ সালে আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছিল
যুক্তরাষ্ট্র। এর ঠিক দুবছর পর ২০০৩ সালে বুশ প্রশাসন প্রিয়েমটিভ অ্যাটাক
তত্ত্ব ব্যবহার করে ইরাক দখল করে নিয়েছিল। এ তত্ত্বের মূল বিষয় হচ্ছে
শত্র“র আঘাত করার আগেই শত্র“কে আঘাত করে শেষ করে দেয়া। বলা হয়েছিল, ইরাকের
কাছে মারণাস্ত্র রয়েছে, যা মার্কিন স্বার্থের প্রতি হুমকিস্বরূপ।
যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক হামলা ও এর পরবর্তী পরিস্থিতি আমরা সবাই জানি। ইরাক
এখন অকার্যকর একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রটি এখন কার্যত তিনটি অংশে
ভাগ হয়ে গেছে। ইরাকের পর যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী টার্গেট ছিল লিবিয়া।
লিবিয়া আক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল হিউম্যানিটারিয়ান ইন্টারভেনশন
তত্ত্ব। তথাকথিত মানবিক বিপর্যয়ের কথা বলে গাদ্দাফিকে উৎখাত করা হয়েছিল।
এরপর পুরো লিবিয়া সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে কোনো
কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব নেই। গাদ্দাফির সময়কার পরিস্থিতির চেয়ে এখনকার
পরিস্থিতি অনেক খারাপ। সেখানে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। কিন্তু আমরা
যুক্তরাষ্ট্রকে আর সেখানে হিউম্যানিটারিয়ান ইন্টারভেনশন তত্ত্ব ব্যবহার
করতে দেখিনি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট ছিলেন সিরিয়ার আসাদ। আসাদের
বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ ছিল, তিনি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র
ব্যবহার করছেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিরিয়ায় একটি সামরিক হামলার
সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতা এবং সিরিয়া তার কাছে
সংরক্ষিত সব ধরনের রাসায়নিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে ধ্বংস করার
প্রতিশ্র“তি দিলে শেষ অব্দি সেখানে যুদ্ধ এড়ানো গেছে। কিন্তু ২০১৪ সালে
হঠাৎ করে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামক একটি জঙ্গি সংগঠনের উত্থান
পুরো দৃশ্যপট বদলে দেয়। অনেক পর্যবেক্ষকই বলার চেষ্টা করেছেন, আইএসের
উত্থানের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে। এমনকি ইসরাইলি গোয়েন্দা
সংস্থাও এর সঙ্গে জড়িত বলে অনেকে মনে করেন। ফলে সিরিয়ার ব্যাপারে মার্কিনি
স্বার্থ স্পষ্ট নয়।সিরিয়ার পরিস্থিতি
নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যখন একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখছে, ঠিক তখনই
এলো একটি উদ্বেগজনক সংবাদ। ডাচ অনুসন্ধানকারী দল জানিয়েছে, গেল বছর
ইউক্রেনের আকাশে যে মালয়েশিয়ান বিমানটি ভেঙে পড়েছিল এবং তাতে ২৯৫ জন আরোহী
প্রাণ হারিয়েছিল, তা রাশিয়ার মিসাইল হামলার শিকার হয়েছিল। এ প্রতিবেদন
নিঃসন্দেহে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটাবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্ররা অনেকদিন ধরেই লক্ষ করছেন, এ দুই বৃহৎ শক্তির
মাঝে এক ধরনের আস্থাহীনতার সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক
বর্তমান পরিস্থিতিতে স্নায়ুযুদ্ধকালীন ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। পাঠক স্মরণ করতে
পারেন ক্রিমিয়ার গণভোট (২০১৪) এবং রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তি-পরবর্তী
পরিস্থিতির কথা। ইউক্রেনে একটি রুশপন্থী সরকারকে উৎখাতের ব্যাপারে
ওয়াশিংটনের ষড়যন্ত্র এবং সরকার উৎখাতের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার
সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। ক্রিমিয়ার রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির পরই
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এবং সীমান্তে রাশিয়ার সেনা
মোতায়েনের ঘটনা ঘটে। পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করেছিল
রাশিয়া। এরপর একপর্যায়ে রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
কার্যত ইউক্রেনের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছিল একটি প্রক্সি
ওয়ারের- যার একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, অন্যদিকে রাশিয়া।সূক্ষ্মভাবে
দেখলে দেখা যায়, স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর পূর্ব ইউরোপে যে ন্যাটোর
সম্প্রসারণ ঘটেছে, তাকে কেন্দ্র করেই এ অঞ্চলে উত্তেজনার জন্ম হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন ধরে চাচ্ছে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দুটি দেশ জর্জিয়া ও
ইউক্রেন ন্যাটোর পূর্ণ সদস্য হোক। একসময় এ দেশ দুটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের
অন্তর্ভুক্ত ছিল। যদি জর্জিয়া ও ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেয়, তাহলে এ দেশ
দুটিতে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা যাবে। ফলে চাপের মুখে রাখা যাবে রাশিয়াকে।
শুধু তাই নয়, রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদ (গ্যাস), যার ওপর ইউরোপ অনেকটা
নির্ভরশীল, তার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এখানে ২০০৮
সালে রাশিয়ার সঙ্গে জর্জিয়ার সীমিত যুদ্ধের (ওসেটিয়া প্রশ্নে) কথা উল্লেখ
করা যেতে পারে। কৃষ্ণ সাগরের অপর পাশের দেশগুলো (বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড ও
রুমানিয়া) এরই মধ্যে ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে। তুরস্ক ও গ্রিস আগে থেকেই
ন্যাটোর সদস্য। জর্জিয়া ও ইউক্রেন এখনও ন্যাটোতে যোগ দেয়নি। তাই ইউক্রেনে
একটি পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তাই রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট
ইয়ানুকোভিচের উৎখাতের প্রয়োজন ছিল। ২০১০ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে
বিজয়ী হলেও গণঅভ্যুত্থানে তিনি উৎখাত হন। অভিযোগ আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ওই অভ্যুত্থানের পেছনে মদদ জুগিয়েছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রসমর্থিত একটি সরকার
ইউক্রেনে ক্ষমতায় রয়েছে।এখানে
উল্লেখ করা প্রয়োজন, ক্রিমিয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাশিয়াকে জি-৮ থেকে
বহিষ্কার করা হয় এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়। কিন্তু তা
সত্ত্বেও রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা ইউরোপ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তিনটি
পাইপলাইন- নর্ড স্ট্রিম, বেলারুশ আর ইউক্রেন লাইনে এ গ্যাস রাশিয়া সরবরাহ
করে পূর্ব তথা পশ্চিম ইউরোপে। যদি সংকট আরও গভীরতর হয়, তাহলে রাশিয়া এ
গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। যদিও রাশিয়ার বৈদেশিক আয়ের অন্যতম উৎস
হচ্ছে এই গ্যাস (পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্যাস রিজার্ভ রাশিয়ায় অবস্থিত)। মজার
কথা, বেলারুশ আর ইউক্রেন আবার রাশিয়ার গ্যাস নিয়ে নিজেরা রিজার্ভ গড়ে
তুলছে। তারা এই গ্যাস পশ্চিম ইউরোপে বিক্রি করে। ২০০৯ সালে এই গ্যাস
বিক্রির বিষয়টি নিয়ে বেলারুশের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল এবং
একপর্যায়ে রাশিয়া বেলারুশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। ওই পরিস্থিতিকে
আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকরা গ্যাস ওয়ার হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। ফলে
দীর্ঘদিন ধরেই এ অঞ্চলে এক ধরনের প্রক্সি ওয়ার চলছে। যুক্তরাষ্ট্র এ
অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলেও রাশিয়া তথাকথিত এই নিরাপত্তাকে
দেখছে তার নিজের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবে। অনেক আন্তর্জাতিক
পর্যবেক্ষক এই পরিস্থিতিকে স্নায়ুযুদ্ধ-২ নামেও অভিহিত করেছেন।এখন
ইউক্রেনের পরিস্থিতির যখন শান্তিপূর্ণ কোনো সমাধান হয়নি, তখনই রাশিয়া
সিরিয়া সংকটে নিজেকে জড়িত করল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান
হামলাকে সহজভাবে নেয়নি। গত দুসপ্তাহে রাশিয়ার বিমান হামলায় তাদের ব্যয়
হয়েছে ৮৭ মিলিয়ন ডলার। লন্ডনের রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিস ইন্সটিটিউটের মতে,
প্রতিদিনের বিমান হামলার পেছনে খরচ হচ্ছে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। সুতরাং
প্রশ্ন একটা থাকলই- কতদিন এই বিমান হামলা রাশিয়া অব্যাহত রাখতে পারবে? তবে এ
বিমান হামলায় বেশ সফলতা পাওয়া গেছে। আইএসের শক্তি অনেক খর্ব হয়েছে, যা
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট পারেনি। রাশিয়া চীনকেও তার পাশে পেয়েছে। ভারতের
অবস্থান স্পষ্ট না হলেও ভারত এক্ষেত্রে এক ধরনের নীরবতা পালন করবে। এ বিমান
হামলার ঘটনায় নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের বিষয়টি আবার সামনে চলে এলো।ইসলামিক
স্টেটের জঙ্গিবাদকে উৎখাতের ব্যাপারে তত্ত্বগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার
অবস্থান এক হলেও রাশিয়ার জড়িত হওয়ার বিষয়টি মানতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব থেকে বোঝা যায়, তাদের মূল টার্গেট আসাদ
সরকারকে উৎখাত করা, আইএসকে উৎখাত করা নয়। স্পষ্টতই সিরিয়ায় উত্তেজনা থেকেই
গেল। সিরিয়ায় যুদ্ধ আপাতত বন্ধ হবে, এটা মনে করারও কোনো কারণ নেই। এ যুদ্ধ
দীর্ঘস্থায়ী হবে। তবে একটা কথা বলাই যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে
সম্পর্কের যে চিড় ধরেছিল, তা আরও বড় হল। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে উত্তেজনা
বাড়বে বৈ কমবে না।
Daily Jugantor
19.10.15
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment