রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের তকমা পরিয়ে কার লাভ

গত ২৩ অক্টোবর শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকার হোসনি দালানে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে গ্রেনেড হামলা দেশে জঙ্গি তৎপরতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দুজন বিদেশী হত্যাকাণ্ড এবং প্রায় একই সময় দুজন পুলিশ অফিসার হত্যার ঘটনায় যখন জনমানসে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অস্তিত্ব নিয়ে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, ঠিক তখনই ঘটল শিয়াদের ওপর গ্রেনেড হামলা। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতায় এটা একটা নতুন উপাদান- জঙ্গিদের হাতে গ্রেনেড চলে যাওয়া। এই গ্রেনেড আবার হাতে তৈরি! এমনটাই আমাদের জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। কেননা গ্রেনেডে যেভাবে পিন খুলে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে এবং পুলিশ সেই পিনও খুঁজে পেয়েছে। খুব সাধারণভাবেই একটা প্রশ্ন উঠতে পারে- দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালের গ্রেনেড হামলা কি একই সূত্রে গাঁথা? ঘটনাগুলো যখন একের পর এক ঘটে চলেছে, তখন একটি যোগসূত্র খোঁজা স্বাভাবিক। এমনকি সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রীও একই অভিমত দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা বেধেছে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামানের সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্য নিয়ে। তিনি স্পষ্ট করেছেন, ইতালির নাগরিক হত্যার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। তিনি একটি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কথাও বলেছেন। তার এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তদন্ত কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত হবে কি-না, সে প্রশ্ন থাকলই। ডিএমপি কমিশনারের এ বক্তব্য এলো এমন এক সময় যখন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দুই বিদেশী নাগরিক খুনের ঘটনায় দুজন তথাকথিত বড় ভাইয়ের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে। এই দুজন বড় ভাই বিএনপির নেতা, যাদের সম্পর্কে খবর ও ছবি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ইতালিয়ান নাগরিক সিজারি তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কারও কারও পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের আগেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল (যুগান্তর, ২৭ অক্টোবর)। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট- ডিএমপির পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে যে, ওই হত্যাকাণ্ডে আইএস জড়িত রয়েছে। এক্ষেত্রে আল কায়দাও জড়িত নয় বলে ধারণা করা যায়। তবে এসব আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সমর্থকরা বাংলাদেশে আছে। বলা ভালো, আল কায়দা স্থানীয়ভাবে কোনো কোনো সংগঠনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে সেই ব্যানারে কাজ করে (যেমন সিরিয়ায় নুসরা ফ্রন্ট)। বাংলাদেশের কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে আল কায়দার পরোক্ষ সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। তবে আইএসের নেই। আর এভাবে একজন ব্যক্তিকে হত্যা করে, গ্রেনেড ফাটিয়ে আইএস তার অপারেশন পরিচালনা করে না। মুসলিমপ্রধান দেশে কোনো জঙ্গি সংগঠনকে তারা সাধারণত স্বীকৃতিও দেয় না। তাই আইএসের কোনো শাখা যে বাংলাদেশে নেই, তা প্রথম থেকেই আমাদের মনে হয়েছে।সাধারণত আইএস কোনো ব্যক্তিকে কখনও টার্গেট করে না। অথচ বাংলাদেশে একজন ইতালিয়ান ও একজন জাপানি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। পাঠকদের আরেকটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যে পর্যবেক্ষণ সংস্থার (SITE- Search for International Terrorist Entities) ওয়েবসাইটে এ তথ্যটি কোনো ধরনের বিশ্লেষণ ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই তুলে দেয়া হয়েছিল, সেটি মূলত মার্কিন ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করে। সুতরাং এটা প্রচার করার পেছনে (শিয়াদের ওপর গ্রেনেড হামলার খবরও তারা প্রকাশ করেছে) তাদের কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। যারা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস নিয়ে কাজ করে, গবেষণা করে, তাদের কোনো প্রতিবেদনে আমি বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন দেখিনি (যেমন The Long War Journal, South Asia Terrorism Portal, Institute for the Study of War)। কাজেই যিনি একজন ইহুদি এবং একসময় ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করতেন, সেই রিটা কাটজের (SITE-এর কর্ণধার) উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। কোনো একটি পক্ষ চাচ্ছে এটা বহির্বিশ্বে প্রচার করতে যে, বাংলাদেশে আইএসের কার্যক্রম আছে। সারা বিশ্ব এটা এখন জেনেছে। শিয়াদের ওপর হামলার পর সারা বিশ্বের মিডিয়ায় এটা আইএসের কাজ বলে প্রচার পেয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এখন যারা এ থেকে সুবিধা নিতে চায়, তারা সুবিধা নেয়ার উদ্যোগ নেবে- এতে করে বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হবে, এ প্রশ্ন থাকলই।এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, এসব ঘটনা থেকে কারা সুবিধা নিতে চায়? যারা এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখেন, তারা জানেন এ অঞ্চল ক্রমেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি ঘটেছে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব এখন সংঘর্ষের রূপ নিচ্ছে ধীরে ধীরে। পেন্টাগন Forward presence-এর যে নীতি গ্রহণ করেছে, তার আলোকে ভারত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি বাড়ানো হচ্ছে। সিরিয়া-ইরাকে গৃহযুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান বহিনীর বোমাবর্ষণ পুরো দৃশ্যপটকে বদলে দিয়েছে। চীন-রাশিয়া-ইরান ঐক্য এ ক্ষেত্রে মার্কিন স্বার্থকে আঘাত করছে। চীনকে ঘিরে ফেলার স্ট্র্যাটেজি, চীনকে কয়েকটি চীনা রাষ্ট্রে পরিণত করা, মিয়ানমারে অং সান সুচিকে ক্ষমতায় বসিয়ে (?) সেখানে মার্কিন স্বার্থ বাস্তবায়ন করা- এসবই পেন্টাগনের স্ট্র্যাটেজিতে রয়েছে। সিরিয়াস পাঠক মাত্রেই জানেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে SOFA ও ACSA নামে দুটি চুক্তি করতে চাচ্ছে। এমনকি আইএসের বিরুদ্ধে যে বিশ্ব অ্যালায়েন্স গড়ে উঠেছে (Global Coalition to Counter ISIL), ৬২টি দেশ যার সদস্য, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বাংলাদেশ এই অ্যালায়েন্সে যোগ দিক। SOFA (Status of Forces Agreement) wKsev ACSA (Acquisition of Cross Servicing Agreement)-এ বাংলাদেশ যদি স্বাক্ষর করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সাময়িকভাবে সেনা মোতায়েন, জ্বালানি গ্রহণ, পোর্ট অব কল সুবিধা পাবে, যা মার্কিন নীতিনির্ধারকরা চাইছেন। এখানে তত্ত্বগতভাবে যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড(?) বেড়ে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশকে চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করানো সহজ হবে।আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়- যেখানে প্রায় তিন হাজার পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা নিবিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে কোনো বড় ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ছাড়াই, সেখানে ঢাকার হোসনি দালানে গ্রেনেড হামলা চালানো হল। তাহলে কোনো পক্ষ কি বাংলাদেশে পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে? পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব প্রায়ই আন্তর্জাতিক সংবাদের জন্ম দেয়। পাকিস্তানে শিয়াদের মিছিলে হামলায় ২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন ঠিক একই সময়ে, যখন বাংলাদেশে তাজিয়া মিছিলের প্রাক্কালে গ্রেনেড হামলা হয়। বাংলাদেশে অতীতে কখনও শিয়াদের ওপর হামলা হয়নি। এমনকি শিয়া-সুন্নিদের দ্বন্দ্বের কোনো খবরও আমাদের জানা নেই। এখন বাংলাদেশকে কি সেদিকেই টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? এখানে প্রসঙ্গক্রমে আরও একটি কথা বলা প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে তথাকথিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নাম করে সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপ বা সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকায় নতুন একটি কমান্ড (AFRICOM) প্রতিষ্ঠা করেছে। মালি, নাইজেরিয়া ও সোমালিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী টার্গেট। পাঠকদের জানিয়ে রাখি, অছওগ (আল কায়দা ইন ইসলামিক মাগরেব) মালি, মৌরিতানিয়া ও নাইজারে তৎপর। নাইজেরিয়ায় তৎপর বোকো হারাম আর আনসারুল। সাহেল জোনে তৎপর আনসার ডাইন বা মুজওয়া নামে উগ্র জঙ্গি সংগঠন। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ ও স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব মার্কিনিদের কাছে আকর্ষণীয় হবে এটাই স্বাভাবিক। সে জন্যই সেখানে AFRICOM প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে সীমিত আকারে মার্কিন সেনা মোতায়েনের কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন। পাঠকদের একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৮০০ সেনাছাউনি রয়েছে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রকে বছরে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়। একজন মার্কিন নাগরিককে এজন্য বছরে দিতে হয় ১০ থেকে ৪০ হাজার ডলার। সচেতন পাঠক মাত্রই জানেন, মার্কিন অর্থনীতিই হচ্ছে যুদ্ধ অর্থনীতি। যদি বিশ্বে যুদ্ধ প্রলম্বিত হয়, তাহলে মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। আর এজন্যই যুদ্ধটা(?) খুব প্রয়োজন ওবামা প্রশাসনের জন্য। মধ্যপ্রাচ্যে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের মধ্য দিয়ে ২০০৩ সালে, সেই যুদ্ধের অবসান হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই যুদ্ধ এখন সম্প্রসারিত হবে আফ্রিকায়। আর যেখানেই যুদ্ধ সম্প্রসারিত হয়েছে, সেখানেই বেড়েছে সন্ত্রাস। পাঠক, TomDispatch-এ প্রকাশিত এই নিবন্ধটি পড়ে দেখতে পারেন : Nick Turse, US Special Ops Mission in Africa Fail to Stem Rising Tide of Terror, 13 September 2015)।মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে সিরিয়ায় যুদ্ধ নতুন একটি মাত্রা পাওয়ায় এবং সৌদি আরবে অভ্যন্তরীণ সংকট বেড়ে যাওয়ায় ভারত মহাসাগরের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। এ অঞ্চল ঘিরে ভারত ও চীনের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। চীনের বর্তমান প্রশাসন নতুন করে সিল্ক রুট নবায়ন করার উদ্যোগ নিলে ভারত তার প্রাচীন কটন রুটকে নতুন করে সাজাতে চাচ্ছে। সিসিলি, মরিশাস ও শ্রীলংকায় ভারতের প্রভাব বাড়ছে। সিসিলির সঙ্গে ৪টি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। ভারত মহাসাগরভুক্ত অঞ্চল নিয়ে ইন্ডিয়ান ওসেন বিমের নেতৃত্ব দিতে চায় ভারত। ভারতের এই অবস্থানকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করছে। বাংলাদেশসহ ভারতের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব সংলাপ চুক্তি রয়েছে। এই বলয়ে মিয়ানমারকেও আনতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ভারত মহাসাগরভুক্ত মালাক্কা প্রণালি দিয়ে বিশ্বের জ্বালানি তেলের অর্ধেক পরিবাহিত হয়। চীনের জ্বালানি তেলের শতকরা ৯০ ভাগ এ পথে সরবরাহ করা হয়। এই সরবরাহ যদি কোনো কারণে বিঘ্নিত হয়, তাহলে বিশ্ব একটি বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়বে, যা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব চাইবে না। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি তেলের ওপর এরা এখনও নির্ভরশীল। এ কারণেই বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে। বাংলাদেশে যদি সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়, তাহলে তা ভারতের নিরাপত্তাকেও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। সুতরাং ভারত এটা চাইবে না। সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড যদি বেড়ে যায়(?), তাহলে সরকারের বিদেশ নির্ভরতা আরও বাড়বে।তবে একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, বাংলাদেশে স্থানীয় জঙ্গিরা থাকলেও তারা এখনও কোনো হুমকি সৃষ্টি করতে পারেনি। অকার্যকর রাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। যুক্তরাষ্ট্রের Fund for Peace প্রতি বছর অকার্যকর রাষ্ট্রের তালিকা প্রকাশ করে। ২০১৫ সালের তালিকায় বাংলাদেশের (স্কোর ৯১.৮) অবস্থান মিয়ানমার, শ্রীলংকা, নেপাল ও মিসরের সঙ্গে (ক্যাটাগরি Alert)। ১৭৮টি দেশ নিয়ে অকার্যকর রাষ্ট্রের যে তালিকা, তার শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ সুদান (স্কোর ১১৪ দশমিক ৫, Very High Alert ক্যাটাগরি)। এর অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলেও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এটাকে এখনও বড় হুমকি বলে মনে করছেন না। তবে যে দু-একটি ঘটনা ঘটেছে, তা যেন আমরা হালকাভাবে না নেই। আইএসের হুমকির কথা বলে কোনো পক্ষ কোনো সুবিধা নিতে চাচ্ছে কিনা, এটা বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ব্লেম গেম বা পরস্পরকে দোষারোপের মানসিকতা আমরা যত কমিয়ে আনতে পারব, ততই তা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। সন্ত্রাস দমনে জাতীয় ঐকমত্য থাকাও প্রয়োজন। জাতীয় ঐক্য সন্ত্রাসীদের যে কোনো অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।শিয়াদের ওপর হামলা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নতুন একটি মাত্রা দিয়েছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতি মানুষের ধিক্কারও সেই সঙ্গে বেড়েছে। সাধারণ মানুষ এ ধরনের কর্মকাণ্ড পছন্দ করে না। হোসনি দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রাক্কালে গ্রেনেড হামলার পরও বড় তাজিয়া মিছিল হয়েছে। সুন্নিরাও এ মিছিলে অংশ নিয়েছে। এটাই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমর্থন করেনি। আগামীতেও করবে না। Daily Jugantor 30.10.15

0 comments:

Post a Comment