রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের চল্লিশ বছর

চলতি বছর বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পার করছে। চীন বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী এবং দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যকার সাংস্কৃতিক বন্ধনের সম্পর্ক হাজার বছরের পুরনো। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্ম হলেও পাকিস্তানি জামানায়ও এ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ চীন সফর করেছেন। মওলানা ভাসানী কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। তবে এটাও সত্য, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরই ১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট চীন বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক ধাপে ধাপে উন্নত হয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর উপলক্ষে চীন রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দিনটি পালন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে চীন সফরে গিয়েছিলেন। এরপর গত মে মাসে (২০১৫) ঢাকা সফর করে যান চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়েন তোং। এর আগে গেল ডিসেম্বরে (২০১৪) ঢাকায় এসেছিলেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং আই। এসব সফর হয়েছে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পালন উপলক্ষে। চীন বাংলাদেশকে যে গুরুত্ব দেয়, এসব সফর তাই প্রমাণ করে। এমনকি এ বছরের কোনো এক সময় চীনা প্রধানমন্ত্রী লি চেখিয়াংয়ের বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনাও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর একটা ব্যাপক প্রত্যাশার সৃষ্টি করলেও ওই সফর নিয়ে প্রশ্ন যে ছিল না, তা বলা যাবে না। কোনো কোনো মহল থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়ার এই প্রবণতাকে ভালো চোখে দেখেনি ভারতের নীতিনির্ধারকরা। ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দি হিন্দু এক প্রতিবেদনে তখন জানিয়েছিল, চীনা নেতৃত্বাধীন শতাব্দীতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ভারতের নীতিনির্ধারকরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। যদিও সরাসরি কোনো ভারতীয় নেতা এই সফরের সমালোচনা করেননি। ইতিমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার সার্ক সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। ওই সফরে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের বন্ধনের কথাও উল্লেখ করে গেছেন। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে যেভাবে গুরুত্ব দেয়, ঠিক একইভাবে গুরুত্ব দেয় চীনের সঙ্গে সম্পর্ককেও। তবে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে গভীর সমুদ্রবন্দর (নির্মিতব্য) পরিচালনার ভার বাংলাদেশ কোনো বিদেশী কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিতে চায় না। চীনা সরকার এটি পেতে চেয়েছিল। উল্লেখ্য, চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানির পাশাপাশি ইউএই, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু একটি বাছাই কমিটি প্রথমে চায়না হারবারকে যোগ্য বলে অভিমত দিয়েছিল। চায়না হারবারের প্রস্তাব অনুযায়ী তিন ধাপে ১০ বছরের মধ্যে এই নির্মাণ সম্পন্ন হবে। ব্যয় হবে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। তবে প্রথম পর্যায়ে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১.২৮ বিলিয়ন ডলার। ৩ বছরে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। বড় জাহাজগুলো তখন এখানে নোঙর করতে পারবে (এখন চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ ঢুকতে পারে না। সিঙ্গাপুর থেকে ছোট জাহাজে পণ্য আনতে হয়। এতে সময় নষ্ট হয় প্রচুর)। প্রথম পর্যায়ে বন্দরে ২০ লাখ টিইউইউস (কনটেইনার টার্মিনাল) কনটেইনার ধারণ করতে পারবে। আর সাধারণ কার্গোর (খোলা পণ্য) ধারণ সক্ষমতা হবে ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টন। এখানে এখন অনেকগুলো দেখার বিষয় রয়েছে। আমার বিবেচনায় বাছাই কমিটির চায়না হারবারকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল সঠিক। কেননা চীনারা এ বিষয়ে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছে। এ অঞ্চলে অন্তত তিনটি গভীর সমুদ্রবন্দরের খবর জানা যায়, যা চীনা অর্থে ও চীনা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নির্মিত হয়েছে এবং পরিচালিত হচ্ছে। শ্রীলংকায় দুটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে দিয়েছে চীন। একটি হামবানতোতায়, অপরটি কলম্বোতে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত হামবানতোতায় ছিল গভীর জঙ্গল। ছোট একটি শহর, যেখানে কোনো ভালো হোটেল ছিল না। সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের জন্মস্থান এখানে। চীন এখানে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে। এর ফলে পুরো হামবানতোতার দৃশ্যপট বদলে গেছে। হামবানতোতা আজ একটি আন্তর্জাতিক নগরীর মর্যাদা পেয়েছে। নামকরা ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে এখানে। আগামী ২০১৮ সালে এখানে কমনওয়েলথ গেমস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কলম্বোতে যে বন্দরটি নির্মিত হয়েছে, তাতে বছরে ৮ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা একটাই, এখানে মেগাশিপ অর্থাৎ বড় জাহাজগুলো ভিড়তে পারে এবং পণ্য খালাস করতে পারে। বলা হচ্ছে, বন্দর পরিচালনা কার হাতে থাকবে- এটা নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হয়েছিল। যদি সর্বশেষ কলম্বোর সিআইসিটি অর্থাৎ কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল কনটেইনার টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা দেখি, তাহলে দেখতে পাব শতকরা ৮৫ ভাগ মালিকানা চীনের হাতে। ১৫ ভাগের মালিকানা শ্রীলংকা সরকারের হাতে। যদি পাকিস্তানের গাওদার গভীর সমুদ্রবন্দরের কথা বলি, তাহলে শতকরা একশ ভাগ মালিকানাই চীনাদের হাতে। এক সময় সিঙ্গাপুরের হাতে দায়িত্ব ছিল এর পরিচালনার। এখন চীনাদের হাতে রয়েছে পরিচালনার ভার। যেখানে তাদের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেখানে পরিচালনার ভার থাকলে আপত্তি কোথায়? সোনাদিয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যদি বিঘ্নিত না হয়, তাহলে চীনাদের হাতে বন্দর পরিচালনার ভার দেয়া যেতে পারত। সবচেয়ে বড় কথা এ ধরনের বন্দর পরিচালনায় যে অভিজ্ঞ জনশক্তি প্রয়োজন, তা আমাদের নেই। বরং চীনাদের সঙ্গে থেকে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারতাম। ডিজাইন তৈরিতেও অভিজ্ঞ চীনারা। সুতরাং তাদের ওপর আস্থা রাখা যেত। কিন্তু এখন তা আর হচ্ছে না।সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তি না হওয়া ছিল নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। তবে যত দ্রুত আমরা সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে পারব ততই আমাদের জন্য তা মঙ্গল। কেননা দেরি হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, এ অঞ্চলের উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বিসিআইএম-এর কর্মকাণ্ডকে স্বাগত জানিয়েছি। বাংলাদেশ, চীন (ইউনান প্রদেশ), ভারত (উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য) ও মিয়ানমারের সমন্বয়ে যে অর্থনৈতিক করিডর গড়ে উঠছে, তার উন্নয়ন ও বিকাশের স্বার্থেই এই সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরের গুরুত্ব অনেক বেশি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এই বন্দর দিয়েই তাদের পণ্য আমদানি-রফতানি করতে পারবে। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরের গুরুত্ব থাকলেও চুক্তিটি হল না কেন? একটি ধারণা দেয়া হয়েছে যে, চীনা ঋণের ধরন নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ সহজ শর্তে ঋণ চেয়েছিল। এতদিন একটা ধারণা ছিল যে, এ প্রকল্পে প্রথমে চীন নমনীয় ঋণের শর্ত দিয়েছিল। এই ঋণের সুদের হার কম, মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু পরে জানা গেল চীন এই ঋণকে বাণিজ্যিক ঋণে পরিণত করতে চায়, যেখানে সুদের হার ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এখানে একটি বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। প্রথমত, বাংলাদেশ অতীতেও বিভিন্ন চীনা প্রকল্পে যে ঋণ নিয়েছে, তার ধরন কী? তা কি বাণিজ্যিক ঋণ? দ্বিতীয়ত, এই প্রকল্প নিয়ে চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিন আলোচনা চলে আসছিল। ওই আলোচনায় কি বাণিজ্যিক বন্দরের ঋণের প্রশ্নটি এসেছিল? তৃতীয়ত, কোনো সমঝোতা ছাড়াই কেন বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে? চতুর্থত, বাংলাদেশের আলোচনাকারীরা কী চীনা অর্থে নির্মিত ও পরিচালিত গাওদার, হামবানতোতা ও কলম্বো গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও পরিচালনায় কি ধরনের চুক্তি হয়েছিল, তা পর্যালোচনা করেছিলেন? এমন কথাও বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশ মূলত গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনা অর্থায়নের বিষয়টি ভারত কীভাবে দেখছে, এটা বিবেচনায় নিতে চায়। যাই হোক, সোনাদিয়ায় আর গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মিত হচ্ছে না। এখন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হচ্ছে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে। এ ক্ষেত্রে সোনাদিয়ায় সমুদ্রবন্দরের পরিকল্পনাটি পরিত্যক্ত হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারেও একটা ধোঁয়াশা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তা স্পষ্ট করা হয়নি। ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ এখনও চাচ্ছে সোনাদিয়াতে আরেকটি সমুদ্রবন্দর নির্মিত হোক। আমাদের অর্থনীতির জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরটির ব্যাপারে চীনাদের স্বার্থ আছে, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু আমাদেরও স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্যিক স্বার্থে এই বন্দর, এমনকি কুনমিং-কক্সবাজার মহাসড়কের গুরুত্ব অনেক।চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশের বেশ কটি বড় প্রজেক্টে চীন অর্থায়ন করেছে। বেশ কটি ব্রিজও চীন তৈরি করে দিয়েছে, যা চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু নামে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী চীন সফরের সময় চীনের কাছ থেকে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো ও বিশেষ ছাড়-এর দাবি বাংলাদেশ উত্থাপন করেছিল বলে জানা গেছে। বর্তমানে চীনের ঋণের ক্ষেত্রে পরিশোধের মেয়াদ ১০ থেকে ১৩ বছর, এ ছাড়া আরও ৩ বছর গ্রেস পিরিয়ড দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী এই ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২০ বছরের পাশাপাশি গ্রেস পিরিয়ড আরও ৫ বছর বৃদ্ধি করার অনুরোধ করেছিলেন। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করে দেখা যায়- বাণিজ্য চীনের অনুকূলে। বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য চীনে রফতানি করে, তার চেয়ে প্রায় ১৩ দশমিক ৮ গুণ পণ্য বেশি আমদানি করে। ১৯৯৭-৯৮ সালে বাংলাদেশ রফতানি করেছিল ৪৮.৫১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, আর আমদানি করেছিল ৫৯২.৬৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। ২০০১-২০০২ সময়সীমায় প্রায় ৬১ গুণ বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি করতে হয়েছিল (১১.৬৭ মি.-এর বিপরীতে ৭০৮.৯৪ মি.)। ২০১২-১৩ সালে এটা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫৮.১২ মি. (রফতানি) ও ৬৩২৪ মি. (আমদানি)। অন্যদিকে চীনের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ তেমন বেশি নয়। ২০০৫ সাল পর্যন্ত চীন ঋণ দিয়েছিল ১৮১ মি. ডলার, যা ছিল সুদমুক্ত। একই সঙ্গে ৭৫ মি. কম সুদে, ৭৬৪ মি. সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট ও ৩২.৯৪ মি. অনুদান দিয়েছিল। ২০১৩ সালে চীন তার নিজ দেশে ৫০০০ আইটেমের বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ করে দিয়েছিল। বাংলাদেশ মূলত ফ্রজেন ফুড, পাটজাত দ্রব্য, চা, চামড়া, তৈরি পোশাক চীনে রফতানি করে। চীনা বিনিয়োগের যে পরিসংখ্যান আমরা পাই, তাতে দেখা যায়, ২০০৯ সালে চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে ৮৮ মিলিয়ন ডলার। আর ২০১৩ সালে এসে ১৮৬ জন উদ্যোক্তা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে ৩২০ মিলিয়ন ডলার। একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা সেক্টরের কথা বলা যায়। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য ব্যবহৃত সমরাস্ত্রের শতকরা ৭৫ ভাগের উৎস হচ্ছে চীন। ট্যাংক, সাঁজোয়াযান, আর বিমান বাহিনীর জন্য ফাইটার প্লেন চীন থেকে ক্রয় করা হয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগেই বাংলাদেশ-চীন সামরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জীবদ্দশায় জিয়া একাধিকবার চীন সফর করেছেন। ২০০৯ সাল পর্যন্ত চীনের ঊর্ধ্বতন জেনারেলদের বাংলাদেশ সফর ছিল নিয়মিত। এখন এই প্রবণতা কিছুটা কম। ২০০২ সালে খালেদা জিয়ার সময়সীমায় বাংলাদেশ ও চীন একটি সামরিক সহযোগিতামূলক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল।বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতিতে ভারত ও চীনকে সমানভাবে গুরুত্ব দেয়। ভারত পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায়, খুব স্বাভাবিক কারণেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে নিকট প্রতিবেশী দেশ হিসেবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ককেও বাংলাদেশ গুরুত্ব দেয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক বেশি। এই দুটি দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পার হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, মাত্র ৪০ বছর দিয়ে এ সম্পর্ককে বিচার করা যাবে না। হাজার বছরের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ভিত্তি রয়েছে এই দুটি দেশের মাঝে। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত গত ২৯ জুন (২০১৫) স্থানীয় একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হতে চায়। সে বছর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১০০ বছর পূর্তি হবে। বাংলাদেশের স্বপ্ন ২০৫০ সালে ধনী দেশে পরিণত হওয়া। এ স্বপ্ন পূরণে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। চীনা রাষ্ট্রদূত মা মিং ছিয়ায়ের বক্তব্যের মধ্যেই ফুটে উঠেছে আসল কথাটি। এটাই হচ্ছে মূল কথা। আমাদের উন্নয়নে, দারিদ্র্য দূর করতে ও আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করতে হলে চীনের সাহায্য আমাদের প্রয়োজন রয়েছে। দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পালন উপলক্ষে এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। Daily Jugantor 26.10.15

0 comments:

Post a Comment