মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর বাকি আছে মাত্র আট মাস। চলতি
বছরের ৮ নভেম্বর সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আর নয়া
প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি। দুটি বড়
দল—ডেমোক্রেটিক আর রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীরা এখন বিভিন্ন রাজ্য ককাসে
(প্রাথমিক বাছাই) অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পর্বে কোন দুজন
প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা স্পষ্ট হচ্ছে। যেমন ইতিমধ্যে
রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ছোট ভাই
ও ফ্লোরিডার সাবেক গভর্নর জেব বুশ ছিটকে পড়েছেন। জেব বুশকে একসময় সম্ভাব্য
প্রার্থী হিসেবে মনে করা হতো। এখন জেব বুশ নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে
সরিয়ে নিলেন। তবে সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ডোনাল্ড
ট্রাম্পের বিজয় নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন একটি মাত্রা এনে দিয়েছে। প্রথম
দিকে তাঁকে রিপাবলিকান পার্টির একজন সিরিয়াস প্রার্থী হিসেবে মনে করা হয়নি।
অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির সর্বশেষ সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে
অনুষ্ঠিত ককাসে বিজয়ী হয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। এখন শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট
নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিলারি আর ট্রাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে কি
না, সেটাই দেখার বিষয়। ১৯৪৭ সালে জন্ম নেওয়া ও ৬৭ বছর বয়সী হিলারি
ক্লিনটনের হোয়াইট হাউস, প্রশাসন ও আইন প্রণেতা হিসেবে অভিজ্ঞতা অনেক দিনের।
হোয়াইট হাউসে তিনি ছিলেন আট বছর, ১৯৯৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একজন ফার্স্ট
লেডি হিসেবে। এরপর নিউ ইয়র্ক থেকে একজন সিনেটর হিসেবে তিনি কংগ্রেসে আইন
প্রণয়নে সহায়তা করেন ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত। আবার ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল
পর্যন্ত সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি
প্রণয়নপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর আগে ২০০৮ সালে তিনি বারাক ওবামার
সঙ্গে ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু
চূড়ান্ত বিচারে তিনি ওবামার কাছে হেরে গিয়েছিলেন। এরপর বারাক ওবামা তাঁকে
মন্ত্রিপরিষদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিলেও হিলারি ক্লিনটন বারবারই
আলোচনায় ছিলেন। মিডিয়া তাঁকে বারবার ফোকাস করেছে। শেষ পর্যন্ত সব
জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হোয়াইট হাউসে আসার পথটি কি
মসৃণ? তিনি কি পারবেন ইতিহাস গড়তে? যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ২০০৮ সালে ওবামাকে
নির্বাচিত করে ট্রাডিশনাল প্রথা ভেঙেছিল—একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রথমবারের মতো
প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।এই
ধারাবাহিকতায় এখন যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্টকে পায় কি না, সেটাই
দেখার বিষয়। তবে অনেক প্রশ্ন তো আছেই। যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ এখনো
কনজারভেটিভ। তারা একজন নারীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে নাও পারে; যদিও
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারীরা সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনায় বেশ সাফল্যের পরিচয়
দিয়েছেন। জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলসহ চার ডজন দেশে নারীরা এখনো
রাষ্ট্র তথা সরকার পরিচালনা করে আসছেন। ইউরোপের অনেক দেশে রাষ্ট্রপ্রধান
এখন নারী। ফলে একদিকে হিলারি ক্লিনটনের সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমনি এটাও
সত্য, তিনি কনজারভেটিভদের বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। বলা ভালো, জনগণের ভোটে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। নির্বাচিত হন
নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে। যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা ৫০, আর
নির্বাচকমণ্ডলীর সংখ্যা ৫৩৮। সাধারণত সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের
(প্রতিনিধি পরিষদ) সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে এই নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হয়।
হিলারি ক্লিনটনের জন্য সমস্যা হচ্ছে কনজারভেটিভ রিপাবলিকানরা এখন কংগ্রেসের
উভয় কক্ষ (সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ) নিয়ন্ত্রণ করেন। অর্থাৎ
নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে রিপাবলিকানরা ভারী। ২০১৬ সালে এক-তৃতীয়াংশ সিনেট ও
প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। তাতে যদি পরিবর্তন আসে, তাহলে
তা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। নতুবা কনজারভেটিভদের বলয় ভাঙা
তাঁর জন্য কঠিন হবে। উল্লেখ্য, হিলারিকে বলা হয় দুর্বলচিত্তের একজন মানুষ।
তাঁর স্বামী বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় যখন মনিকা লিউনস্কির
সঙ্গে অবৈধ যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে যান তখন স্ত্রী হিসেবে তিনি যথাযথ ভূমিকা
পালন করতে পারেননি; যদিও ওই ঘটনার পরও তিনি স্বামীকে ‘ক্ষমা’ করে দিয়েছিলেন
এবং বৈবাহিক জীবন টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। তবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না,
নির্বাচনী প্রচারণায় হিলারি ক্লিনটনকে ভবিষ্যতেও এ ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি
হতে হবে। এ জন্য হিলারি ক্লিনটন কতটুকু মানসিক শক্তির অধিকারী হন, সেটাই
এখন বড় প্রশ্ন। উপরন্তু ক্লিনটন দম্পতির বিরুদ্ধে বেশ কিছু আর্থিক অনিয়মের
অভিযোগ রয়েছে। যখন এই দম্পতি হোয়াইট হাউস ছাড়েন তখন তাঁদের আর্থিক ভিত্তি
তেমন শক্তিশালী ছিল না। কিন্তু পরে নিউ ইয়র্কে ২৭ লাখ ডলারের একটি বাড়ি ও
ওয়াশিংটনে ২৮ লাখ ৫০ হাজার ডলারে তাঁদের অপর একটি বাড়ি কেনা নিয়েও প্রশ্ন
তুলেছে বিরোধীরা। ক্লিনটন ফাউন্ডেশন নিয়েও প্রশ্ন আছে। অভিযোগ আছে অনেক
বিদেশি রাষ্ট্র এই ফাউন্ডেশনকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে তাদের ‘সুবিধা’ আদায় করে
নিয়েছে; যদিও দুজনই বক্তৃতা আর সেমিনার করে বেশ অর্থ আয় করেন। একই সঙ্গে
হিলারির বিরুদ্ধে বড় একটি অভিযোগ হচ্ছে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায়
লিবিয়ার বেনগাজিতে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটে জঙ্গিবাদীদের হামলা ও ওই
হামলায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিহত হওয়ার ঘটনা ঠেকাতে পারেননি এবং
রাষ্ট্রদূতসহ অন্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। ওয়াশিংটনের পিউ
রিচার্স ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বৈদেশিক নীতি ইস্যুতে মানুষ
রিপাবলিকানদের বেশি বিশ্বাস করে। এটা হিলারি ক্লিনটনের জন্য একটা মাইনাস
পয়েন্ট। অতীতে হিলারি ইরাক, বসনিয়া ও কসোভোয় ‘যুদ্ধ’ সমর্থন করেছিলেন। ফলে
যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরোধী একটা জনমত তাঁকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে। তবে
হিলারি ক্লিনটনের বেশ কিছু প্লাস পয়েন্টও রয়েছে। এক. তিনি পররাষ্ট্র ও
নিরাপত্তা বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞ। এ ক্ষেত্রে রিপাবলিকান সম্ভাব্য প্রার্থী
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা বিতর্কিত মন্তব্য মার্কিন সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া
সৃষ্টি করেছে। ফলে ট্রাম্পের চেয়ে তিনি অনেক এগিয়ে আছেন। দুই. ২০১৪ সালের
শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে যে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে
রিপাবলিকানরা বিজয়ী হলেও ইতিমধ্যে রিপাবলিকান স্রোতে উল্টো বাতাস বইছে,
বিশেষ করে তরুণ ও গরিব আমেরিকান ভোটারদের মাঝে ডেমোক্রেটিক পার্টির
জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তিন. যুক্তরাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী তরুণ প্রজন্ম রয়েছে,
যাদের নেতৃত্বে নিউ ইয়র্কসহ অন্যান্য শহরে ‘অক্যুপাই মুভমেন্ট’ পরিচালিত
হয়েছিল। এই ‘শক্তি’ ডেমোক্র্যাটদের আবার ২০১৬ সালে কংগ্রেসে ফিরিয়ে আনতে
পারে, যা হিলারিকে বিজয়ী হতে সাহায্য করবে। চার. ওবামা তাঁর শেষ টার্মে এসে
বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন (স্বাস্থ্যসেবা, অভিবাসন, তরুণদের
উচ্চশিক্ষায় সাহায্য ইত্যাদি), যা কিনা তিনি কংগ্রেসের বিরোধিতার কারণে
বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। এই তরুণ প্রজন্মের সমর্থন পেতে পারেন হিলারি।
পাঁচ. যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরোধী একটি জনমত রয়েছে, যা বেশ শক্তিশালী।
প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলেই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আইএসবিরোধী যুদ্ধে অংশ
নিয়ে নতুন একটি ‘ফ্রন্ট’ ওপেন করেছেন। কোটি কোটি ডলার খরচ হয় যুদ্ধে।
হিলারি যদি এই ‘যুদ্ধবিরোধী’ জনমতের সঙ্গে অবস্থান করেন, তাহলে তাঁর সমর্থন
ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। ছয়. রিপাবলিকান শিবিরে তেমন কোনো শক্ত প্রার্থী
নেই। এটা হিলারির জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট। সর্বশেষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের
নারীবিদ্বেষী মন্তব্য তাঁর অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে।
ডেমোক্রেটিক শিবিরে হিলারি ক্লিনটনের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁকে একজন সম্ভাব্য ‘ভালো প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তুলনামূলক বিচারে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে তিনি ভারমন্ট রাজ্যের সিনেটর বার্নি স্যান্ডারসের চেয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে আছেন। জনপ্রিয়তাও তাঁর বেশি। কৌশলী হিলারি অনেক আগে তাঁর প্রার্থী পদ ঘোষণা করে প্রতিযোগিতায় নিজেকে এগিয়ে রেখেছিলেন। তবে যেতে হবে অনেক দূর। আরো পার্টি ফোরামে ও কনভেনশনে তাঁকে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে নিজ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তাঁকে আরো অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। বড় ব্যবসায়ী হাউসগুলো অর্থ জোগায়। হিলারিকে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। এটা কতটুকু সম্ভব হবে, তা বলা এই মুহূর্তে কঠিন।
হিলারি ক্লিনটনের একটা বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে তিনি বৈদেশিক নীতিতে একটা পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলকে ঘিরে যে 'Forward Deployed Diplomacy' প্রণয়ন করেছিলেন তা এ অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ এই কূটনীতির মূলকথা হচ্ছে—এ অঞ্চলের রাজনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক স্থাপন করা। জন কেরি (যিনি পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে হিলারি ক্লিনটনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন) হিলারি ক্লিনটন প্রণীত এই নীতি নিয়ে এগিয়ে গেলেও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো উন্নত হয়েছে, এটা বলা যাবে না; বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে বিতর্কিত দ্বীপে চীনের একটি বিমানবন্দর নির্মাণ, বিতর্কিত টিপিপি চুক্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া (যেখানে চীনকে এই চুক্তির আওতায় রাখা হয়নি) ইত্যাদি কারণে দুই দেশের সম্পর্কের মাঝে সেই আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে একজন সম্ভাব্য ‘প্রেসিডেন্ট’ হিলারি ক্লিনটন চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে কোন পর্যায়ে উন্নীত করতে পারবেন সেটা নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকলই। উপরন্তু রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের উত্থান এবং ইরানের সঙ্গে ছয় জাতি পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি। ওবামা এই চুক্তি করে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের ‘সম্ভাবনা’ কমিয়ে এনেছেন, এটা সত্য। কিন্তু রিপাবলিকান সমর্থিত কংগ্রেস এই চুক্তি অনুমোদন না করলে জটিলতা আরো বাড়বে। হিলারি ক্লিনটনের জন্যও বিষয়টি খুব সহজ হবে না।
স্পষ্টতই রিপাবলিকান শিবিরে কোনো শক্ত প্রার্থী নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর একাধিক বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে কট্টরপন্থীদের আকর্ষণ করতে পারলেও কিছুটা মডারেট টেড ক্রুজের অবস্থানও ভালো। এখন চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ডেমোক্রেটিক শিবিরে যখন হিলারি ক্লিনটন আর বার্নি স্যান্ডারসের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি রিপাবলিকান শিবিরে চূড়ান্ত বাছাই পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকছে টেড ক্রুজ আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে। ১৭৮৯ সালে জর্জ ওয়াশিংটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর ২২৭ বছর পর একজন নারী প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কি না, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে নভেম্বর পর্যন্ত। Daily Kalerkontho 29.02.16
ডেমোক্রেটিক শিবিরে হিলারি ক্লিনটনের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁকে একজন সম্ভাব্য ‘ভালো প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তুলনামূলক বিচারে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে তিনি ভারমন্ট রাজ্যের সিনেটর বার্নি স্যান্ডারসের চেয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে আছেন। জনপ্রিয়তাও তাঁর বেশি। কৌশলী হিলারি অনেক আগে তাঁর প্রার্থী পদ ঘোষণা করে প্রতিযোগিতায় নিজেকে এগিয়ে রেখেছিলেন। তবে যেতে হবে অনেক দূর। আরো পার্টি ফোরামে ও কনভেনশনে তাঁকে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে নিজ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তাঁকে আরো অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। বড় ব্যবসায়ী হাউসগুলো অর্থ জোগায়। হিলারিকে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। এটা কতটুকু সম্ভব হবে, তা বলা এই মুহূর্তে কঠিন।
হিলারি ক্লিনটনের একটা বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে তিনি বৈদেশিক নীতিতে একটা পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলকে ঘিরে যে 'Forward Deployed Diplomacy' প্রণয়ন করেছিলেন তা এ অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ এই কূটনীতির মূলকথা হচ্ছে—এ অঞ্চলের রাজনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক স্থাপন করা। জন কেরি (যিনি পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে হিলারি ক্লিনটনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন) হিলারি ক্লিনটন প্রণীত এই নীতি নিয়ে এগিয়ে গেলেও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো উন্নত হয়েছে, এটা বলা যাবে না; বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে বিতর্কিত দ্বীপে চীনের একটি বিমানবন্দর নির্মাণ, বিতর্কিত টিপিপি চুক্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া (যেখানে চীনকে এই চুক্তির আওতায় রাখা হয়নি) ইত্যাদি কারণে দুই দেশের সম্পর্কের মাঝে সেই আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে একজন সম্ভাব্য ‘প্রেসিডেন্ট’ হিলারি ক্লিনটন চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে কোন পর্যায়ে উন্নীত করতে পারবেন সেটা নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকলই। উপরন্তু রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের উত্থান এবং ইরানের সঙ্গে ছয় জাতি পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি। ওবামা এই চুক্তি করে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের ‘সম্ভাবনা’ কমিয়ে এনেছেন, এটা সত্য। কিন্তু রিপাবলিকান সমর্থিত কংগ্রেস এই চুক্তি অনুমোদন না করলে জটিলতা আরো বাড়বে। হিলারি ক্লিনটনের জন্যও বিষয়টি খুব সহজ হবে না।
স্পষ্টতই রিপাবলিকান শিবিরে কোনো শক্ত প্রার্থী নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর একাধিক বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে কট্টরপন্থীদের আকর্ষণ করতে পারলেও কিছুটা মডারেট টেড ক্রুজের অবস্থানও ভালো। এখন চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ডেমোক্রেটিক শিবিরে যখন হিলারি ক্লিনটন আর বার্নি স্যান্ডারসের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি রিপাবলিকান শিবিরে চূড়ান্ত বাছাই পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকছে টেড ক্রুজ আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে। ১৭৮৯ সালে জর্জ ওয়াশিংটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর ২২৭ বছর পর একজন নারী প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কি না, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে নভেম্বর পর্যন্ত। Daily Kalerkontho 29.02.16
0 comments:
Post a Comment