রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

আইএসের ‘দূরবর্তী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

ইসলামিক স্টেট বা আইএস তাদের ‘দূরবর্তী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছে। এত দিন তাদের ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম সিরিয়া ও ইরাকে কেন্দ্রীভূত ছিল। এ অঞ্চলে তথাকথিত একটি ‘জিহাদি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বব্যাপী একটি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছিলেন আইএসের স্বঘোষিত নেতা বুগদাদি। অতি সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তা এই ‘দূরবর্তী  খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবেই করা হয়েছে বলে আইএসের মুখপত্র বলে পরিচিত সাময়িকী ‘দাবিগ’-এ দাবি করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় এই সন্ত্রাসী হামলা প্রথমবারের মতো আমাদের জানান দিল যে আইএস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলমানপ্রধান দেশগুলোতে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করেছে। আগে তাদের কর্মকাণ্ড শুধু ইরাক ও সিরিয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল। আইএস তাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শাখা ‘কাতিবা নুসানতারা’কে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। ইন্দোনেশিয়ার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের রেশ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই আইএস পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে নতুন একটি রাজ্যের ঘোষণা দিয়েছে। এই খোরাসান রাজ্যে একজন আমির অর্থাৎ শাসনকর্তার নামও ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর নাম আমির শায়খ হাফিজ সাঈদ খান। খোরাসান অঞ্চলকে পাঁচটি প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করে শাসনকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে। ‘দাবিগ’-এর ১৩তম সংখ্যায় আমির হাফিজ সাঈদ খানের একটি সাক্ষাত্কারও ছাপা হয়েছে, যা উপমহাদেশের রাজনীতিবিদদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে থাকতে পারে আগামী দিনগুলোতে। হাফিজ সাঈদ বলেছেন, ‘একসময় মুসলমানদের শাসনে থাকা ভারতকে পুনরায় দখল করা হবে।’ অর্থাৎ আইএস তাদের কর্মকাণ্ড দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় উপমহাদেশে সম্প্রসারিত করতে চায়! বলা ভালো, মধ্য এশিয়ার একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল হচ্ছে এই খোরাসান। মধ্যযুগে যেমনটা ছিল, তেমন করে ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, প্রায় সমগ্র আফগানিস্তান, দক্ষিণ তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, ভারত ও চীনের একটা অংশকে খোরাসানের অন্তর্ভুক্ত করে এ অঞ্চল দখলে নিতে চায় আইএস। হাফিজ সাঈদ খান (যিনি মোল্লাহ সাঈদ ওরাকাজি নামেও পরিচিত) ইসলামী খেলাফতের বিস্তার ঘটাতে এসব অঞ্চল আইএসের পুনর্দখলে নিয়ে আবার মুসলমানদের শাসন জারি করার আকাঙ্ক্ষার কথাও জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর দারনাকে ইসলামিক খেলাফতের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখন এর সঙ্গে যোগ হলো খোরাসান, যেখানে তারা একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে।
অতি সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে এবং প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা জানা গেছে। ঘটনার শুরু প্যারিসে জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়ে, যেখানে আইএসের জঙ্গিরা ১২৯ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছিল। এরপর ঘটল মালির রাজধানী বামাকোতে সন্ত্রাসবাদী ঘটনা। আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গিরা হোটেল র্যাডিসনে ১৭০ জনকে জিম্মি করেছিল। তাদের উদ্ধারের অভিযানে মারা যায় ২৭ জন সাধারণ মানুষ। এরপর জঙ্গিরা বর্ষবরণে হামলা চালাল তুরস্কের বড় ও প্রাচীন শহর ইস্তাম্বুলে। এই হামলায় ১০ জন জার্মান পর্যটক নিহত হয়েছিল। এর পরের ঘটনাও মালিতে। মধ্য জানুয়ারিতে দুটি ঘটনায় দুই সেনা ও এক রক্ষীসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে। আফ্রিকার মালির মধ্যাঞ্চলীয় শহর মোপতি ও মরু শহর তিম্বাকুতে ইসলামপন্থীরা এই হামলা চালায়। এর পরের ঘটনা ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকার বুরকিনা ফাসোতে। ইন্দোনেশিয়ায় জঙ্গি হামলা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতির জন্য একটি বড় ধরনের ঘটনা। এই ঘটনা অনেকটা প্যারিস হামলার মতো। এর মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হলো যে আইএস তথাকথিত ইসলামিক খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্থানীয় কোনো কোনো সংগঠনকে স্বীকৃতি দেয়। আর জাকার্তায় জঙ্গি হামলার রেশ শেষ হওয়ার আগেই সর্বশেষ জঙ্গি হামলায় আক্রান্ত হলো পশ্চিম আফ্রিকার অপর একটি দেশ বুরকিনা ফাসো। এতে মারা যায় ২৭ জন এবং এর দায়দায়িত্বও স্বীকার করেছে আল-কায়েদা ইন ইসলামিক মাগরেব। জঙ্গি তত্পরতা এখন মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে পশ্চিম আফ্রিকায়। মালির উত্তরে Tuareg অঞ্চলে আমরা ন্যূনতম চারটি ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীর খবর জানি, যারা একটি ‘জিহাদি যুদ্ধ’ পরিচালনা করছে। একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও তারা কাজ করে যাচ্ছে। এই চারটি সংগঠন হচ্ছে আনসার দিন (Ansar Dine), আল-কায়েদা ইন ইসলামিক মাগরেব (AQIM), মোজওআ (Mojwa) ও আল-মুয়াক্কিন বি ডিমা (Al-Muwaqun Bi Dima)। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ‘সাহেল জোন’-এর অন্তর্ভুক্ত মালি, মৌরিতানিয়া ও নাইজারে ইসলামিক জঙ্গিদের তত্পরতা বেড়েছে। মাগরেবভুক্ত এ অঞ্চলের বাইরে নাইজেরিয়ায় ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারামের নৃশংস ঘটনাবলি সারা বিশ্বের দৃষ্টি কেড়েছিল। বোকো হারামের জঙ্গিরা কিশোরী মেয়েদের স্কুল থেকে অপহরণ করত এবং তাদের জঙ্গি কমান্ডারদের তথাকথিত যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করত। শত শত কিশোরীকে অপহরণের পর আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। বোকো হারাম সম্প্রতি ইসলামিক স্টেটের নেতৃত্বের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেছে। AQIM চাচ্ছে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। ২০০৭ সালে তারা এই ঘোষণা দেয়। আলজেরিয়া, লিবিয়া, মালি, মরক্কো ও তিউনিসিয়ায় তাদের তত্পরতা সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে নাইজেরিয়ায় বোকো হারাম ও আনসারুর মতো সংগঠন একটি খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। নাইজার ও ক্যামেরুনেও তাদের কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হয়েছে। বলা হয় নাইজেরিয়ার ৩৬টি প্রদেশের মধ্যে ১৪টিতে বোকো হারামের অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী। আর মালিতে ২০১১ সালে জঙ্গি সংগঠন আনসার দিন সেখানে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শরিয়া আইন বলবৎ করেছে। ফলে এ অঞ্চলগুলো একটি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছে। উত্তর আফ্রিকার অনেক দেশ একসময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ফলে এসব দেশের অনেক মানুষ ফ্রান্স, বিশেষ করে রাজধানী প্যারিসে বসবাস করে। তাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় জেনারেশন ফ্রান্সে বসবাস করে আসছে। কিন্তু ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পেলেও তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। চাকরির ক্ষেত্রে সামাজিক দিক দিয়ে তারা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছিল। আর এই সুযোগটিই নিয়েছিল আইএস। তারা তরুণসমাজের মাঝে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছিল। ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম এ ক্ষেত্রে আদৌ কোনো ভূমিকা পালন করেনি। এর বড় প্রমাণ হাসনাআইত বুলাচেনের ঘটনা, যিনি ইউরোপে প্রথম নারী আত্মঘাতী হিসেবে পরিচিতি পান। বুলাচেন কিছুদিন আগ পর্যন্ত পশ্চিমা পোশাক ও পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট ছিলেন। তাঁর বন্ধুরা ইংল্যান্ডের টেলিগ্রাফকে জানিয়েছেন, হাসনা ব্যক্তিজীবনে জিন্স প্যান্ট, কোকাকোলা, আর পশ্চিমা সংগীতে বুঁদ হয়ে থাকতেন। তাঁর কাছে ইসলাম ধর্মের কোনো আবেদন ছিল না। হঠাৎ করেই তিনি ‘হিজাবি’ হয়ে যান ও জিহাদি তত্পরতায় জড়িয়ে যান। আইএসের সমর্থক হাসনা বুলাচেন পুলিশের আক্রমণের মুখে গত ১৯ নভেম্বর প্যারিসে নিজেকে উড়িয়ে দেন। আইএস এভাবেই তরুণ প্রজন্মের ভেতরে তার ‘প্রভাব’ বিস্তার করেছিল।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে সিরিয়ায় আইএস বা ইসলামিক স্টেটের নাম প্রথম শোনা যায় ২০১৩ সালে। আর সংগঠনটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট। এই এলাকার ঐতিহাসিক নাম লেভান্ট। জঙ্গিরা এই নাম গ্রহণ করেছিল। পরে নামটি পরিবর্তন করে। তবে ১৯৯১ সালে ‘জামাত আল তওহিদ ওয়াল জিহাদ’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে মূলত এটি সংগঠিত হয়েছিল। পরে তারা ‘আল-কায়েদা ইন ইরাক’ নাম ধারণ করে। এই সংগঠন মূলত সুন্নি প্রভাবাধীন ও সুন্নি সম্প্রদায়নির্ভর। ২০০৬ সালে ইরাকে সুন্নি প্রভাবাধীন মুজাহিদিন শুরা কাউন্সিলে সংগঠনটি যোগ দেয়। ২০১৩ সালে সারা বিশ্ব প্রথমবারের মতো আবু বকর আল বুগদাদির নাম জানতে পারে। ২০১৪ সালের ২৯ জুন বুগদাদি একটি খেলাফতের ডাক দিলে সংগঠনটি ব্যাপক পরিচিতি পায়। তখন সংগঠনটি নতুন নাম ধারণ করে আইএস বা ইসলামিক স্টেট। তবে আল-কায়েদার সঙ্গে সংগঠনটির সম্পর্ক কী, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বলা হচ্ছে, ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে আইএসের সঙ্গে আল-কায়েদার কোনো সম্পর্ক নেই।
আল-কায়েদার রাজনৈতিক দর্শন ও ইসলামিক স্টেটের রাজনীতির মাঝে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। দুটি সংগঠনই মূলত জিহাদি, সালাফি ও ওয়াহাবি মতবাদ দ্বারা পরিচালিত হয়। আল-কায়েদা জিহাদি ও ওয়াহাবি মতবাদ অনুসরণ করলেও খেলাফতের কথা কখনো বলেনি। আইএস খেলাফতের কথা বলেছে। বুগদাদি নিজেকে খলিফা বা আমিরুল মুমেনিন হিসেবে ঘোষণা করেছেন, যা আল-কায়েদার নেতা লাদেন যত দিন জীবিত ছিলেন তত দিন নিজেকে খলিফা ঘোষণা করেননি। বুগদাদি নিজেকে সব মুসলিম বিশ্বের নেতা বা খলিফা হিসেবে ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে দাবি করেছেন, সব মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে এই খেলাফতের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা। তিনি মুসলমানপ্রধান দেশগুলোকে নিয়ে এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেন। অন্যদিকে আল-কায়েদার স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে ছোট্ট ছোট্ট আমিরাত প্রতিষ্ঠা করা। আল-কায়েদা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে অপারেট করে। কিন্তু আইএস তা করে না। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না, আল-কায়েদা ও আইএস—উভয় সংগঠনই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার জন্ম দেওয়া। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় স্ট্র্যাটেজি রয়েছে। এখানে তাদের স্বার্থ অনেক। স্বার্থ রয়েছে ফ্রান্সেরও। বাহরাইন ও কাতারে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি। ফ্রান্স ও ব্রিটেনের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে আমিরাত ও সাইপ্রাসে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সস্তায় তেল পাওয়া যায়। এই তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। লিবিয়ার তেলের ওপর তিনটি পশ্চিমা দেশের নির্ভরশীলতা এরই মধ্যে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ইতালির প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের ২৯ শতাংশ আসে লিবিয়া থেকে। ফ্রান্সের ও স্পেনের এই নির্ভরশীলতার হার যথাক্রমে ১৪ ও ১০ শতাংশ। তারা চাইবে সস্তায় তেল নিতে। সিরিয়ায় খুব বেশি তেলসম্পদ নেই। কিন্তু এই তেলই এখন ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের আয়ের অন্যতম উৎস। আইএস প্রতিদিন তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ৪০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করে কালোবাজারে তা বিক্রি করে। এর মূল্য বছর হিসাবে ৩২ কোটি ডলার। আর প্রতিদিনের তেল বিক্রির অর্থ জমা হচ্ছে ইসলামিক স্টেটের ফান্ডে। এই ফান্ড ব্যবহূত হয় জঙ্গিদের মাসিক বেতন (৪৩০ ডলার থেকে এক হাজার ডলার) ও সেই সঙ্গে বিদেশে জঙ্গি তত্পরতার কাজে। যেমন বলা যেতে পারে, প্যারিসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রায় ৫০ হাজার ডলার ব্যয় হয়েছে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা।
আইএস তার দূরবর্তী খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা পাক-ভারত উপমহাদেশে সম্প্রসারিত করার কথা বলছে। এটা আমাদের জন্য চিন্তার কারণ। বড় ধরনের সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিতে এখন ভারত ও বাংলাদেশ। পাকিস্তান এরই মধ্যে তাদের প্রভাব-বলয়ে চলে গেছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এ অঞ্চলের মানুষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পছন্দ করে না। কিন্তু সন্ত্রাসীদের কাছে তারা অনেক সময় জিম্মি হয়ে যায়। আইএসের এটাই স্ট্র্যাটেজি। জিম্মি করে মানুষ হত্যা করা। ভারত ও বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দুটি দেশ। এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাই বেছে নেয় আইএসের জঙ্গিরা। জাকার্তার ঘটনা এর বড় প্রমাণ। বলা হচ্ছে প্রায় ৭০০ ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক সিরিয়ায় আইএসের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় ফিরে এসেছিল। তারাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ভারত কিংবা বাংলাদেশের কারা কারা সিরিয়ায় গিয়েছিল তার পরিসংখ্যান জানাটা জরুরি। ভারতীয় গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে সক্রিয় থাকলেও আমরা বারবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলতে শুনেছি বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই। আমরাও তেমনটা মনে করি। কিন্তু এ দেশে জঙ্গি আছে। তাদের কেউ কেউ যে আইএসের আদর্শে উদ্দীপ্ত হয়নি, তা স্পষ্ট করে বলা যাবে না। কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন এ দেশে নিষিদ্ধ। এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতারা আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতে পারেন। ভয়টা এখানেই। সর্বশেষ খোরাসান অঞ্চলে ইসলামিক স্টেট তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি সম্প্রসারিত করেছে। তারা ঘোষণা করেছে ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের ‘খেলাফত’ সম্প্রসারিত করার। বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। Daily kaler Kontho 02.02.16

0 comments:

Post a Comment