রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

সিরিয়া শান্তি আলোচনা কোন পথে


জাতিসংঘের উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত জেনেভায় শান্তি আলোচনা শুরু হলেও সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে রেখে গেছে নানা প্রশ্ন। প্রথমদিকে এই শান্তি আলোচনায় সিরিয়ার বিরোধী দলের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল। পরে বিরোধী দল অংশ নিলেও তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। শেষপর্যন্ত এই আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে। বিরোধী দলের এই অংশগ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন আছে। কেননা এই বিরোধী পক্ষ, যা ‘হাই নেগোসিয়েশনস কমিটি’ নামে পরিচিত এবং সৌদি আরব সমর্থিত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সিরিয়ায় আরও দুটি বিরোধী পক্ষ রয়েছে। একটি কুর্দিদের সমর্থিত এবং অন্যটি আসাদ সরকারের সঙ্গে এক ধরনের ‘সহাবস্থানে’ আছে। এখন জেনেভা সম্মেলনে এদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। কুর্দি প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ পর্যন্ত জানানো হয়নি শুধু তুরস্কের আপত্তির কারণে। এখন হাই নেগোসিয়েশনস কমিটি যদি আদৌ একটি সমঝোতায় উপনীত হয়ও (?), প্রশ্ন থাকবে কুর্দি প্রতিনিধিত্ব ছাড়া এই সমঝোতা আদৌ কোনো ‘ফল’ দেবে কিনা? জেনেভায় আলোচনা শুরু হলেও সিরিয়ায় আইএস সমর্থিত বিদ্রোহীদের ওপর মার্কিনি তথা মিত্রদের বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে সিরিয়া শরণার্থীদের দেশত্যাগও অব্যাহত রয়েছে। পাঠকমাত্রই জানেন সিরীয় সংকটে রাশিয়া একটি পক্ষ। রাশিয়াও আইএস ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ করে তাদের শক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিল। মার্কিন তথা রাশিয়ার বোমাবর্ষণের পরও আইএস পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে, এটা বলা যাবে না। বরং আইএস সিরিয়া-ইরাক সীমান্তের বাইরেও তাদের ‘দূরবর্তী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছে। ইন্দোনেশিয়ায় আত্মঘাতী বোমা হামলা ও আফগান-পাকিস্তান সীমান্তের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আইএসের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা প্রমাণ করে আইএসের শক্তি এতটুকুও কমেনি।
বলাই বাহুল্য, রুশ বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে এই বিমান হামলায় সিরিয়ায় আসাদ বিরোধী মডারেট জোটকে দুর্বল করেছে। প্রায় ৪০টির মতো ছোট ছোট জোট, যারা আসাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র যাদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল, তারাও রুশ বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো গ্রুপ ধ্বংসও হয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতদিন প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এসব গ্রুপকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্র ওই প্রশিক্ষণ বাতিল ঘোষণা করেছে। ওবামা নিজে স্বীকার করেছেন, সিরিয়া পরিস্থিতি সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। ইতিমধ্যেই সিরিয়া নিয়ে দুই পরাশক্তির মাঝে দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে।
রুশ বিমান হামলা অনেকগুলো ‘সম্ভাবনা’কে সামনে নিয়ে এসেছিল। এক. এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া সীমান্তের বাইরে তার সমরশক্তিকে ব্যবহার করেছিল এবং বিশ্বকে জানান দিয়েছিল বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্বকে রাশিয়া মেনে নেবে না। দুই. সিরিয়া সংকটে এবং আইএস জঙ্গিদের উৎখাতে রাশিয়ার অবস্থানকে সমর্থন করেছিল চিন। এর মধ্য দিয়ে মিশন রাজনীতিতে চিন-রাশিয়া ঐক্য আরও শক্তিশালী হয়েছে। বলা ভালো রাশিয়া ও চিন ‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন’ (এসসিও)-এর সদস্য। তিন. সৌদি আরব এ অঞ্চলের অন্যতম একটি শক্তি। সৌদি আরব আসাদ সরকারকে না চাইলেও তারা সিরিয়া সংকট নিরসনে রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছে। সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গেল অক্টোবরের (২০১৫) দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথমদিকে রাশিয়া সফর করেছিলেন। প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সেচিতে পুতিনের বৈঠকের পরই সৌদি নেতৃত্বাধীন একটি সামরিক জোটের জন্ম হয়। তবে একটা সৌদি শঙ্কাও রয়েছে। ইরান-রাশিয়া-আসাদ ঐক্য সৌদি আরবের জন্য চিন্তার কারণ। ইরান-সৌদি বিরোধ নতুন কোনো ঘটনা নয়। চার. সিরিয়া সংকটে তুরস্ক একটি ফ্যাক্টর। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য এবং রুশ বিমানের তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘন তুরস্ক খুব ভালো চোখে দেখেনি। ‘ঘরের পাশে’ রাশিয়ার উপস্থিতি (সিরিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ তুরস্ক) তুরস্ক খুব সহজভাবে নেবে বলেও মনে হয় না। একই সঙ্গে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় শান্তি সমাবেশে বোমা হামলার (যাতে ৯৭ জন মারা যান) ঘটনায় আইএসকে অভিযুক্ত করেছিল তুরস্ক। এই পরিস্থিতিতে তুরস্কের অবস্থানকে জটিল করে তুলেছে। এখানে নিঃসন্দেহে সিরিয়ার ব্যাপারে মার্কিনি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। ‘তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ যুদ্ধের অংশ হিসেবে ২০০১ সালে আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর ঠিক দু’বছর পর ২০০৩ সালে বুশ প্রশাসন চৎববসঃরাব অঃঃধপশ তত্ত্ব ব্যবহার করে ইরাক দখল করে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই তত্ত্বের মূল বিষয় হচ্ছে, ‘শত্রুর আঘাত করার আগেই শত্রুকে আঘাত করে শেষ করে দেওয়া।’ বলা হয়েছিল ইরাকের কাছে মরণাস্ত্র রয়েছে, যা মার্কিন স্বার্থের প্রতি হুমকিস্বরূপ। যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক হামলা ও এর পরবর্তী পরিস্থিতি আমরা সবাই জানি। ইরাক এখন অকার্যকর একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রটি এখন কার্যত তিনটি অংশে ভাগ হয়ে গেছে! ইরাকের পর যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী টার্গেট ছিল লিবিয়া। লিবিয়া আক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল ঐঁসধহরঃধৎরধহ রহঃবৎাবহঃরড়হ তত্ত্ব। তথাকথিত ‘মানবিক বিপর্যয়’-এর কথা বলে গাদ্দাফিকে উৎখাত করা হয়েছিল। এরপর পুরো লিবিয়া এখন সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব নেই। গাদ্দাফির সময়কার পরিস্থিতির চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অনেক খারাপ। সেখানে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। কিন্তু আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে আর সেখানে ঐঁসধহরঃধৎরধহ রহঃবৎাবহঃরড়হ-এর তত্ত্ব ব্যবহার করতে দেখিনি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট ছিল সিরিয়ার আসাদ। আসাদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ ছিল আসাদ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিরিয়ায় ইরাকের মতো একটি সামরিক আগ্রাসনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতা ও সিরিয়া তার কাছে সংরক্ষিত সব ধরনের রাসায়নিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিলে শেষ অবধি সেখানে যুদ্ধ এড়ানো গিয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে হঠাৎ করে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের উত্থান পুরো দৃশ্যপটকে বদলে দেয়। অনেক পর্যবেক্ষকই বলার চেষ্টা করেছেন, আইএসের উত্থানের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ‘হাত’ রয়েছে। এমনকি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাও এর সঙ্গে জড়িত বলে অনেকে মনে করেন। ফলে সিরিয়ার ব্যাপারে মার্কিনি স্বার্থ স্পষ্ট নয়।
সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যখন একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখছে, ঠিক তখনই এসেছিল একটি উদ্বেগজনক সংবাদ। ডাচ অনুসন্ধানকারী দল জানিয়েছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আকাশে যে মালয়েশিয়ান বিমানটি ভেঙে পড়েছিল এবং তাতে ২৯৫ জন আরোহী প্রাণ হারিয়েছিল, তা রাশিয়ার মিসাইল হামলার শিকার হয়েছিল। এই প্রতিবেদন নিঃসন্দেহে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও অবনতি ঘটাবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্ররা অনেকদিন ধরেই লক্ষ করছেন যে, এই দুই বৃহৎ শক্তির মাঝে এক ধরনের আস্থাহীনতার সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক বর্তমান পরিস্থিতিতে স্নায়ুযুদ্ধকালীন ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। পাঠক স্মরণ করতে পারেন ক্রিমিয়ার গণভোট (২০১৪) ও ক্রিমিয়ার রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তি পরবর্তী পরিস্থিতির কথা। ইউক্রেনে একটি রুশপন্থী সরকারকে উৎখাতের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের ‘ষড়যন্ত্র’ ও সরকার উৎখাতের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। ক্রিমিয়ার রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির পরই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও সীমান্তে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনের ঘটনা ঘটেছিল। পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করেছিল রাশিয়া। এরপর একপর্যায়ে রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। বাহ্যত ইউক্রেনের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছিল একটি ‘প্রস্ক্রিওয়ার’-এরÑ একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, অন্যদিকে রাশিয়া। তখন এর সঙ্গে যোগ হলো সিরিয়ার ঘটনাবলি। সূক্ষ্মভাবে দেখলে দেখা যায় স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর পূর্ব ইউরোপে যে ন্যাটোর সম্প্রসারণ ঘটেছে, তাকে কেন্দ্র করেই এ অঞ্চলে উত্তেজনার জন্ম হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন ধরেই চাচ্ছে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দুটো দেশ জর্জিয়া ও ইউক্রেন ন্যাটোর পূর্ণ সদস্য হোক। এক সময় এ দেশ দুটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। যদি জর্জিয়া ও ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেয়, তাহলে এই দেশ দুটিতে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা যাবে। ফলে ‘চাপের’ মুখে রাখা যাবে রাশিয়াকে। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার জ্বালানিসম্পদের (গ্যাস) (যার ওপর ইউরোপ অনেকটা নির্ভরশীল) ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এখানে ২০০৮ সালে রাশিয়ার সঙ্গে জর্জিয়ার সীমিত যুদ্ধের (ওসেটিয়া প্রশ্নে) কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে। ‘ব্লাকসি’র অপর পাশের দেশগুলো (বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড ও রুমানিয়া) এরই মাঝে ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে। তুরস্ক ও গ্রিস আগে থেকেই ন্যাটোর সদস্য। জর্জিয়া ও ইউক্রেন এখনো ন্যাটোতে যোগ দেয়নি। তাই ইউক্রেনে একটি ‘পরিবর্তন’ প্রয়োজন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তাই রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের উৎখাতের প্রয়োজন ছিল। ২০১০ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হলেও ‘গণঅভ্যুত্থানে’ তিনি উৎখাত হন। অভিযোগ আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওই অভ্যুত্থানের পেছনে মদদ জুগিয়েছিল। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি সরকার ইউক্রেনে ক্ষমতায় রয়েছে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ক্রিমিয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাশিয়াকে জি-৮ থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা ইউরোপ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তিনটি পাইপলাইন, বর্ডস্ট্রিম, বেলারুশ আর ইউক্রেন লাইনে এই গ্যাস রাশিয়া সরবরাহ করে পূর্ব তথা পশ্চিম ইউরোপে। যদি ‘সংকট’ আরও গভীরতর হয় তাহলে রাশিয়া এই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ (?) করে দিতে পারে, যদিও রাশিয়ার বৈদেশিক আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে এই গ্যাস (পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্যাস রিজার্ভ রাশিয়া অবস্থিত)। মজার কথা বেলারুশ আর ইউক্রেন আবার রাশিয়ার গ্যাস নিয়ে নিজেরা রিজার্ভ গড়ে তুলছে। তারা আবার এই গ্যাস পশ্চিম ইউরোপে বিক্রি করে। ২০০৯ সালে এই ‘গ্যাস বিক্রি’র বিষয়টি নিয়ে বেলারুশের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল এবং একপর্যায়ে রাশিয়া বেলারুশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। ওই পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকরা ‘গ্যাসওয়ার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই এ অঞ্চলে এক ধরনের ‘প্রস্ক্রিওয়ার’ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলেও রাশিয়া তথাকথিত এই ‘নিরাপত্তা’কে দেখছে তার নিজের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবে। অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এই পরিস্থিতিকে স্নায়ুযুদ্ধ-২ নামেও অভিহিত করেছেন।
এখন সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ফায়দা উঠাতে চাইছে। জেনেভা সম্মেলনে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র দুটি পক্ষ। কিন্তু জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি জুন মাসের মধ্যে একটি ঐকমত্যের সরকার কিংবা আগামী বছরের জুনের আগেই সেখানে একটি নির্বাচনের সম্ভাবনা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলই। সহসাই সিরিয়া সংকটের সমাধান হবে, এটা মনে হয় না। একই সঙ্গে সিরিয়া সংকটকে ঘিরে নতুন করে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হচ্ছে।
dainik Amader Somoy
07.02.16

0 comments:

Post a Comment