রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

রুখে দাঁড়াও হে তারুণ্য!

 
নয়টি তরুণের ছবি পড়ে আছে রাস্তায় কল্যাণপুরে। রক্তাক্ত। কালো পাঞ্জাবি। একজনের ডান হাতে একটি চাকু। বড় নয়, মনে হয় তরকারি কাটার জন্য ব্যবহার করা হয়। আমরা জানলাম এরা সবাই জঙ্গি। এই শব্দটির সঙ্গে ইদানীং আমাদের পরিচয়টা অনেক বেশি। অনেকগুলো নাম কাগজে এসেছে_ অর্ক, আবদুল্লাহ, নাইম, রাশিক, মতিয়ার আরো অনেক। এই নামগুলো যেন আমাদের সবার পরিচিত। আমাদের আশপাশেরই এক একজন। যেন ওরা আমারই ছাত্র। যেন মনে হয় কোথায় দেখেছি। ক্লাসে। ডিপার্টমেন্টে কলাভবনের নতুন তিন তলা ভবনের করিডোরে। কিন্তু আমি মেলাতে পারি না। ওদের হাতে কেন চাকু? কেন ওরা কালো পোশাক পরে 'জিহাদি' হয়ে উঠবে? ওদের তো তা হওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল ক্লাসে_ কথা হবে ওদের কারো সঙ্গে তুরস্কের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে। কথা হবে ডিপ স্টেটের ধারণা নিয়ে। বলা হবে 'রাষ্ট্রের ভেতরে আলাদা রাষ্ট্র তৈরি করার' যে ধারণা, যাকে বলা হচ্ছে ডিপ স্টেট তত্ত্ব তা তুরস্কের তৈরি হলো কেন? ধারণা করেছিলাম ওরা ফাতেহউল্লাহ গুলেন, রাজনৈতিক ইসলাম নিয়ে কথা বলবে।
ধারণা করেছিলাম একজন 'মেতিন দোগান'কে নিয়ে ওরা কথা বলবে, যে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ইস্তাম্বুলের রাস্তায় একটি ধাবমান ট্যাঙ্কের সম্মুখে। কিন্তু না, ওরা এক একজন 'মেতিন দোগান' হতে পারেনি। হয়ে উঠেছিল জঙ্গি। হাতে নিয়েছিল পিস্তল। ওদের বন্ধুরা হলি আর্টিজানে বিদেশিদের গলা কেটে হত্যা করেছিল। গলা কেটে ওরা 'হুর-পরীদেও' দেশে যেতে চেয়েছিল! কিন্তু এই বয়সে, যে বয়সে একজন তরুণ স্বপ্ন দেখে, পৃথিবীটাকে নিজের মতো করে দেখতে চেষ্টা করে, সে কেন মেতিন দোগান, ডিপ স্টেট, পোস্ট মডার্নিজম, আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিষয় বাদ দিয়ে হুর-পরীদের দেশ যেতে চাইল! কেন? এই কেনর জবাব আমি এই যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস শহরে বসে খুঁজতে চেষ্টা করি। পাই না। নিশ্চয়ই এটা আমার, আমার বন্ধুদের ব্যর্থতা। নর্থ সাউথ কেন ওদের পারল না বসুন্ধরার ক্যাম্পাসে আটকে রাখতে? আমরা যারা ক্লাসে পড়াই শুধু কী পড়ানোই আমাদের কাজ। নর্থ সাউথের উপাচার্য পদত্যাগ করতে পারতেন। করেননি। তিনি, তার সহকর্মীরা তাদের ছাত্রদের এক একজন মেতিন দোগান করে গড়ে তুলতে পারেননি। দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারেননি। ওরা জঙ্গি হয়েছে। মানুষ হত্যাকারী হয়েছে। হলি আর্টিজান ঘটনার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে কল্যাণপুরে একটা আস্তানা গড়ে তোলা প্রমাণ করে জঙ্গিরা একটা বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গোয়েন্দারা সক্রিয় থাকায় তাদের সেই তৎপরতা বাস্তবে রূপ পায়নি সত্য। কিন্তু আশঙ্কা থেকেই গেল তারা আবার অন্যত্র সংগঠিত হতে পারে এবং যে কোনো স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে! কলকাতার একটি জনপ্রিয় বাংলা দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে ঢাকার আশপাশে জঙ্গিরা ১৯টি আস্তানা গড়ে তুলেছে। কল্যাণপুরের ঘটনা প্রমাণ করল ওই সংবাদের পেছনে সত্যতা আছে। এখন গোয়েন্দাদের দায়িত্ব ঢাকার আশপাশে নিম্ন পরিবারের জন্য যেসব আবাসস্থল গড়ে উঠেছে (বাড্ডা, বাসাবো, আদাবর ইত্যাদি) সেসব জায়গায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো। পুলিশের পক্ষ থেকে অনেক আগেই প্রতিটি থানাধীন এলাকায় বসবাসরতদের ডাটাবেজ তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।
আমার ধারণা সেই কার্যক্রমে কিছুটা হলেও স্থবিরতা এসে গেছে। না হলে কল্যাণপুরের মতো একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত এলাকায় একটি বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য দেবে না, এটা কী করে সম্ভব হলো? এই ঘটনা প্রমাণ করল ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য নেয়ার উদ্যোগটি সঠিক ছিল। বাস্তব তথ্যগুলো দ্রুত বিচার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এখন গুরুত্ব দিতে হবে নয়া আবাসিক এলাকাগুলোর দিকে। যেখানে শত শত মেস তৈরি করে সীমিত আয়ের মানুষদের বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে কিছু বাড়িঅলা। জঙ্গিরা এসব জায়গা বেছে নিচ্ছে। সাধারণত উচ্চ মধ্যবিত্তের জন্য যেসব আবাসিক এলাকা রয়েছে (গুলশান, ধানম-ি) সেখানে উচ্চ ভাড়ার কারণে জঙ্গিরা বাসাভাড়া নেবে না। তাদের টার্গেট থাকে নিম্ন মধ্যবিত্ত এলাকার দিকে। পুলিশের পক্ষে প্রতিটি বাসায় যাওয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয় মুরুবি্বদের সঙ্গে নিয়ে একটি 'জঙ্গিবিরোধী সেল' গঠন করা যেতে পারে। কিন্তু এতে যদি 'রাজনীতি' ঢুকে যায় যদি বিরোধীদলীয় কর্র্মীদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয় (?) তা কোনো ফল দেবে না। যারা নিয়মিত মসজিদে নামাজ আদায় করেন, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ তাদের দিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকালে, তা কোনো ফল দেবে না। যারা নিয়মিত মসজিদে যান তারা মৌলবাদী (?) এটা আমি বিশ্বাস করি না। ইসলামের সঙ্গে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ইসলামের নামেই এই জঙ্গিবাদ বিস্তার হচ্ছে। এবং আমি অনেক তথ্য যাচাই করে দেখেছি ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে যারা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত এবং জঙ্গি তৎপরতা চালাতে গিয়ে মারা গেছে, তারা কেউই ব্যক্তিগত জীবনে জঙ্গিবাদী নামাজি ছিলেন না। ধর্ম-কর্মও করতেন না। ফলে যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করে, তাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখলে আমরা ভুল করব। হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া এবং এখন কল্যাণপুর প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে উচ্চশিক্ষিত, ধনীর দুলাল এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এইসব সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত। কল্যাণপুরের ঘটনায় যেসব জঙ্গি নিহত হয়েছে। আমার ধারণা তাদের মাঝে উচ্চশিক্ষিত তরুণরাও আছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের দিকে নজরদারি বাড়ানোটা জরুরি।
এক্ষেত্রে যেটা করা প্রয়োজন তা হচ্ছে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সরকারি ও বেসরকারি) একটি 'সেল' গঠন করতে হবে। তাদের কাজ হবে অনিয়মিত ছাত্রদের দিকে নজরদারি বাড়ানো। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নির্যাতন বেড়ে গেলে উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেল গঠন করা হয়েছিল। সেই আদলে একটি জঙ্গি পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করা যায়। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে করণীয় কী সে ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। 'লোক দেখানো' এ ধরনের সভার আয়োজন করে পত্রিকায় সংবাদ হওয়া যায় বটে। কিন্তু তাতে করে মূল সমস্যা যা ছিল, তা রয়েই যায়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন দূরদর্শিতার আর দক্ষতার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আজ অনেক। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র মাসের পর মাস ক্লাসে অনুপস্থিত থাকার পরও 'রাজনৈতিক বিবেচনায়' তাদের বিরুদ্ধে কোনো 'ব্যবস্থা' নেয়া হয় না কখনই। জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে একটি অর্থের প্রশ্ন জড়িত। কারা জঙ্গিদের অর্থ যোগায়, কীভাবে তারা বিস্ফোরক সংগ্রহ করে, তা জানা জরুরি। বিদেশ থেকে অর্থ আসতে পারে। অভ্যন্তরীণভাবেও অর্থের যোগান থাকতে পারে। কোনো কোনো এনজিওর নামেও অর্থ আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানোটা খুবেই জরুরি। টিভি টকশোতে আলোচনায় কোনো কোনো বক্তার মুখে 'রেজিম চেঞ্জ' বা সরকার পরিবর্তনের কথা আমি শুনেছি। অর্থাৎ তারা বলতে চেয়েছেন জঙ্গি কার্যক্রমের একটি মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারের পরিবর্তন। এটি একটি ভুল ব্যাখ্যা। হলি আর্টিজানে ১৭ জন বিদেশিকে হত্যা করে কখনো কোন দেশে সরকার পরিবর্তন করা যায়নি। বাংলাদেশেও জঙ্গিদের টার্গেট সরকার পরিবর্তন নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে 'ইসলামিক খেলাফত' প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করা। বৃহত্তর পরিসরে আইএস যে 'ইসলামিক খেলাফত' প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে, সেই আদর্শেই স্থানীয় জঙ্গিরা 'মটিভেটেড' বা অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে এইসব তরুণরা বিভ্রান্ত। তাদের 'ভুলগুলো' আমরা ভাঙতে পারিনি। তরুণদের একটা অংশের জঙ্গিবাদী আদর্শ গ্রহণ করার পেছনে অনেকগুলো কারণের মাঝে হতাশা, বেকারত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্যতম। আমরা ফ্রান্সের দৃষ্টান্ত থেকে দেখেছি সেখানে নর্থ আফ্রিকা থেকে আসা ইমিগ্রান্টরা, যারা পারিবারিকভাবে ফ্রান্সের নাগরিকত্ব গ্রহণ করার পর 'বেকারত্ব' ও 'ছদ্ম বেকারত্ব তাদেরকে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বেকারত্ব তরুণ সমাজের একটা অংশকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলতে পারে। বাংলাদেশে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই সরকার একমাত্র চাকরিদাতা নয়। যেভাবে আমাদের দেশে বেসরকারি খাত বিকশিত হওয়ার সুযোগ ছিল, তা হয়নি। উপরন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মারাত্মক সব ত্রুটি রয়েছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থা বেশি মাত্রায় 'রাজনীতি নির্ভর'। 'রাজনৈতিক বিবেচনায় একমতের উপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেখানে 'সার্টিফিকেট' বিক্রির উদ্দেশ্যই প্রধান। ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে করে বাড়ছে শিক্ষা বেষম্য। এই বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মজুরি কমিশন তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ আমি কখনো দেখিনি। দক্ষ নেতৃত্বের অভাবে যা হয়, তাই হয়েছে। মঞ্জুরি কমিশনের কোনো 'ভিশন' নেই। তারা যেন সবাই সেখানে 'চাকরি' করেন। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বিবিএ'র একখানা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে যখন 'বেকার' থাকে তখন তার মাঝে হতাশা আসতে বাধ্য। আর এই সুযোগটিই নেয় 'অদৃশ্য শক্তি। এরা হতাশাগ্রস্ত তরুণদের 'হুর-পরীদের' কথা শোনায়। রিক্রুট করে। ২৪-২৫ বছরের এক যুবকের এতে করে বিভ্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। আমাদের দুর্ভাগ্য এইসব তরুণদের যারা রিক্রুট করে সেইসব 'অদৃশ্য শক্তি'কে আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। এখানেই বোধ হয় আমাদের বড় ত্রুটি। রাজনৈতিক বিবেচনায় কখনো কখনো এইসব 'অদৃশ্র শক্তি'কে চিহ্নিত করা হয় বটে, কিন্তু 'মূলশক্তি' থেকে যায় আলোচনার বাইরে। আমাদের দেশে 'তাবলিগের জামাত' এর নাম করে বিশেষ কয়েকটি দেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর মুসলি্ল এদেশে আসেন এবং থেকে যান অবৈধভাবে। বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসা নাগরিকদের দিকে দৃষ্টি দেয়া এখন প্রয়োজন। এসব অঞ্চল থেকে প্রচুর লোক আইএসএ যোগ দিয়েছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুল আত্মঘাতী বোমা হামলায় এরা জড়িত ছিল। আমি ওইসব অঞ্চল থেকে আসা মুসলি্লদের সঙ্গে আমাদের তরুণদের ঢাকা শহরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে দেখেছি। ওদের দিকে নজরদারি বাড়ানো দরকার। এদের দ্বারা অর্থ সরবরাহ ও জঙ্গি তৎপরতা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি দেয়া হয়। আপাতত সীমিত সময়ের জন্য নির্দিষ্ট কিছু দেশের মুসলি্লদের জন্য ভিসা সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত। কিংবা তাদের দেয়া ঠিকানা, তাদের অবস্থান, কর্মকা- মনিটর করা উচিত। এখানে আমাদের দুর্বলতা আছে, এটা স্বীকার করতেই হবে। একজন তরুণের পক্ষে বিস্ফোরক ব্যবহার, স্থানীয় গ্রেনেড তৈরি কিংবা অস্ত্র ব্যবহার জানার কথা নয়। এর অর্থ এদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। তাহলে প্রশ্ন ওঠে প্রশিক্ষণটা হয়েছিল কোথায়। দেশে? বিদেশে? পশ্চিমবঙ্গে যেখানে বাংলাদেশি জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নেয়, এমন তথ্য আমাদের জানিয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দারাই।
আমাদের তরুণরা বিভ্রান্ত। তাদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। ওই তারুণ্যকে আমি চিনি না। একজন অর্ক বা মতিয়ারকে আমি চিনি না। এই বয়সে ১৯৭১ সালে আমি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলাম। পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলাম। বাংলাদেশের তারুণ্যের বিদ্রোহের সঙ্গে আমি মেলাতে চাই ২০১১ সালে নিউইয়র্কের অক্যুপাই ম্যুভমেন্টের সঙ্গে। মেলাতে চাই তিউনেশিয়ার তরুণ কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট, কিন্তু বাস্তবে ফল বিক্রেতা বউ আজিজির সঙ্গে, যিনি প্রতিবাদ স্বরূপ নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে 'আরব বিপ্লব'-এর সূচনা করেছিলেন।
আমি এই তারুণ্যকে তুলনা করতে চাই মিসরের কায়রোর তাহরির স্কোয়ারের আছমা মাহফুজদের সঙ্গে। আমি এই তারুণ্যকে তুলনা করতে চাই বাংলাদেশ গড়ার নতুন এক 'কারিগর' হিসেবে। হিলারি ক্লিনটন ঢাকায় এসে যাদের নিয়ে বসেছিলেন এই তরুণরাই বাংলাদেশকে একটি 'সফ্ট পাওয়ার' এ পরিণত করবে। আমি তারুণ্যের এই 'শক্তিকেই দেখতে চাই। যে তরুণ হাতে একে রাইফেল তুলে নেয়, গলা কেটে মানুষ হত্যা করে, স্বপ্নের যে বয়স সেই বয়সে 'হুর-পরীদের' দেশে যেতে চায়, আমি সেই তারুণ্যকে চাই না। এই হতাশাগ্রস্ত তারুণ্য বাংলাদেশ গড়তে পারবে না। তাই রুখে দাঁড়াও হে তারুণ্য। হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া আর কল্যাণপুরই বাংলাদেশ নয়। আমাদের যেতে হবে অনেক দূর।
(ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র)
Daily Jai Jai Din02.08.2016

0 comments:

Post a Comment