রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ইতিহাসে এরদোগান কীভাবে চিহ্নিত হবেন

ইতিহাসে এরদোগান কীভাবে চিহ্নিত হবেনগত ১৫ জুলাই ২০১৬ তারিখ তুরস্কের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর কেটে গেছে প্রায় চার সপ্তাহ। এরই মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে তুরস্কে। প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ এক সামরিক কর্মকর্তাকে রিমান্ডে নেয়া, প্রায় একশ’র মতো জেনারেল তথা একই পদমর্যাদার অফিসারদের গ্রেফতার করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগে ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান চালানোর পর যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে, এরদোগান তুরস্ককে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত করছেন কেউ কেউ। যুক্তরাষ্ট্র তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা এবং রাশিয়া-চীনের প্রতি ঝুঁকে যাওয়ার প্রবণতার কথাও বলছেন কেউ কেউ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। প্রধানমন্ত্রী এরদোগান যেভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করছিলেন, সে ব্যাপারে অনেকেরই আপত্তি আছে। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের একটি হচ্ছে, তিনি ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে চান। ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কিন্তু সংবিধান তাকে আরো একবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ না দেয়ায় তিনি ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। একপর্যায়ে তার ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে তিনি প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এর ফলে তিনি তার এক সময়ের বিশ্বস্ত ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুলগলুর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যান এবং দাভুলগলুকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। তিনি রাজধানী আঙ্কারার একটি পাহাড়ে প্রেসিডেন্ট হাউস নির্মাণ করছেন, যার পরিচিতি ‘হোয়াইট প্যালেস’ হিসেবে। প্রায় এক হাজার কক্ষ বিশিষ্ট এই বাড়িটি ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসস্থান হোয়াইট হাউস থেকেও বড়। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬১৫ মিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪৯২০ কোটি টাকা। এত বিপুল অর্থ ব্যয় করে প্রাসাদতুল্য এ ধরনের একটি ভবন তৈরি করা আদৌ উচিত কিনা, সে প্রশ্ন কোনো কোনো মহলে উঠেছে। এরদোগানের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গ সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। শীর্ষ স্থানীয় একেপি দলের নেতাদের এই দুর্নীতি তিনি রোধ করতে পারেননি। ইরানের বিরুদ্ধে যখন আন্তর্জাতিক অবরোধ বজায় ছিল, তখন তুরস্ক ইরান থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছে। একই কথা প্রযোজ্য সিরিয়ার আইএস (ইসলামিক স্টেট) বিদ্রোহীর ক্ষেত্রেও। সিরিয়ার এবং ইরাকের অনেক তেলক্ষেত্র দখল করে নিয়েছিল আইএস বিদ্রোহীরা। তারা ওই তেলক্ষেত্র থেকে তেল উত্তোলন করে অবৈধ পথে তুরস্ক দিয়ে ওই তেল বিদেশে রফতানি করত। এই তেল বিক্রি ছিল আইএসের অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস। সারা বিশ্ব যখন মোটামুটিভাবে জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপারে উৎকণ্ঠিত, তখন তুরস্ক আইএসের অর্থ আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। এমন কথাও শোনা যায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয় তুরস্কের কোনো কোনো গোপন আস্তানায়(?) খোদ এরদোগানের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ তিনি নিজেকে ইতোমধ্যেই তুরস্কের ‘সুলতান’ ভাবতে শুরু করেছেন। তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য ১৮০৮ সাল থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। একদিকে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া, মধ্য এশিয়ার ককেশিয়ান অঞ্চল ও অন্যদিকে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন তুরস্কের শাসকরা, যারা সুলতান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর পরই এই রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। ১৯২২ সালের ১ নভেম্বর অটোমান সাম্রাজ্যের অবসানের ঘোষণা করা হয়। এরপর কামাল পাশার নেতৃত্বে আধুনিক তুরস্কের গোড়াপত্তন হয়। এখন এরদোগান যেভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করছেন, ইতিহাসে এরদোগান কীভাবে চিহ্নিত হবেনযেভাবে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন, তাতে কেউ কেউ তাকে সাবেক অটোমান শাসকদের সঙ্গে তুলনা করছেন। গেল বছর তুরস্কের জনপ্রিয় পত্রিকা জামানের নিয়ন্ত্রণভার সরকারের হাতে তুলে দেয়া হয়। অর্থাৎ দৈনিক পত্রিকাটি সরকারিকরণ করা হয়। এর মাধ্যমে তিনি মিডিয়ার ওপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয়। নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা তার আছে। রাজনীতি বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ‘ক্যারিশম্যাটিক’ বা সম্মোহনী নেতৃত্ব বলে, সেই সম্মোহনী নেতৃত্ব তার রয়েছে। মুসলিম প্রধান দেশগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার এক মহাপরিকল্পনা তার রয়েছে। চীনের মতোই পুরনো ‘সিল্ক রোড’কে তিনি পুনরুজ্জীবিত করতে চান। তুরস্কে আমি দেখেছি আফ্রিকার অনেক গরিব দেশের শিশুদের তার সরকার আশ্রয় দিয়েছে। ইসলামিক মতাদর্শের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকলেও তিনি ওয়াহেবি বা জিহাদি মতাদর্শে বিশ্বাসী নন। এক সময়ের ফুটবল খেলোয়াড় এরদোগান তার রাজনৈতিক জীবন গড়ে তুলেছেন ইসলামিক ওয়েলফেয়ার পার্টির নেতা নেকমাতিন এরবাকানের ছত্রছায়ায়। তিনি ছিলেন প্রাচীন নগরী ইস্তানবুলের জনপ্রিয় মেয়র। এই ইস্তানবুলই হচ্ছে তার ‘ক্ষমতার ঘাঁটি।’ যখন অভ্যুত্থানকারীরা আঙ্কারার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছিল তখন তিনি ছিলেন অবসরকালীন ছুটিতে। তিনি কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন রাস্তায় অবস্থান নিতে। আর হাজার হাজার সমর্থক ইস্তানবুলের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে অভ্যুত্থানকারীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছিল। এখানে বলা দরকার নেকমাতিন এরবাকানের নেতৃত্বে ইসলামি ওয়েলফেয়ার পার্টি ‘অতি ইসলামিক’ এবং তুরস্কের সংবিধানের মূল ধারার (অর্থাৎ ধর্ম নিরপেক্ষতার) পরিপন্থী হওয়ায় দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, যা কিনা সেনাবাহিনী চেয়েছিল। দলটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ায় ওই দলের সমর্থকরা প্রথমে ভাচু পার্টি গঠন করে এবং পরে গঠন করে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, যা একেপি নামেও পরিচিত। আবদুল্লাহ গুল ও এরদোগান একেপি পার্টি গঠনের উদ্যোক্তা। ২০০২ সালের নির্বাচনে একেপি পার্টি বিজয়ী হওয়ায় আবদুল্লাহ গুল প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরদোগান তখন ছিলেন জেলে। একটি কবিতা আবৃত্তি করার অভিযোগে, যেখানে তিনি তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে কটাক্ষ করেছিলেন, তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। একেপি পার্টি সরকার গঠন করে তার সাজা মওকুফ করে দেয়। তিনি উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদে আসেন, প্রধানমন্ত্রী হন আর আব্দুল্লাহ গুল হন প্রেসিডেন্ট। সেই থেকে তার যাত্রা শুরু। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। হয়েছেন প্রেসিডেন্ট এবং সংবিধানে পরির্তন এনে তুরস্ককে রাষ্ট্রপতিশাসিত একটি দেশে পরিণত করেছেন। দেশটিতে একজন প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ক্যাবিনেট থাকলেও মূল ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে। তুরস্কের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি নাম বার বার সংবাদপত্রে আসছে। তিনি হচ্ছেন ধর্মগুরু ফতেহউল্লাহ গুলেন। সনাতন অর্থে তিনি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেননি কিংবা আমাদের দেশের মতো কোনো ‘খানকা’ প্রতিষ্ঠান করেননি। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তার আছে। এই অভ্যুত্থানের পেছনে এরদোগান গুলের অনুসারীদের দায়ী করেছেন। অভিযোগ আছে তুরস্কের সেনাবাহিনীর মধ্যে ফতেহউল্লাহ গুলেনের অনুসারীদের প্রভাব বাড়ছিল যা ছিল এরদোগানের চিন্তার কারণ। এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীতে এখন ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। ৬ লাখ ৪০ হাজার সদস্য নিয়ে গঠিত তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনী। এর মাঝে সেনাবাহিনীর সংখ্যা বেশি। ব্রিগেডিয়ার থেকে শুরু করে পূর্ণ জেনারেল পর্যন্ত সিনিয়র অফিসারের সংখ্যা ৩৫০ জনের ওপরে। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী ১০৩ জন সিনিয়র অফিসারকে ইতোমধ্যে বহিষ্কার অথবা গ্রেফতার করা হয়েছে। এক সময় ধারণা করা হতো তুরস্কে ইসলামপন্থিদের যেভাবে উত্থান ঘটেছে, সেখানে কামাল আতাতুর্কের রাজনীতির অনুসারী সেনাবাহিনী তাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু সে ধারণা পাল্টে গেছে। গুলেনপন্থি ঊর্ধ্বতন সামরিক অফিসারদের বহিষ্কার ও গ্রেফতারের ঘটনা প্রমাণ করে সেনাবাহিনী তথা নৌ ও বিমানবাহিনীতে গুলেনপন্থিদের প্রভাব বাড়ছিল। এতে গুলেনপন্থিদের প্রভাব প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়ে গেছে এটা যেমনি স্বীকৃতি পেল ঠিক তেমনি এদের উৎখাত করে সেনাবাহিনীতে তথা প্রশাসনে এখন ব্যাপক সংস্কার আনতে সক্ষম হবেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এটা করতে গিয়ে তিনি তার জনপ্রিয়তাকে বিতর্কিত করতে পারেন। এখানে বলা ভালো, ফতেহউল্লাহ গুলেন একজন ইসলামিক চিন্তাবিদ। তথাকথিত ইসলামিক শিক্ষায় তিনি শিক্ষিত না হলেও কিংবা তুরস্কে কোনো শীর্ষ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান না হয়েও তিনি ইসলাম ও গণতন্ত্রের সমন্বয় করে ইসলামকে নতুন করে তুরস্কের মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি প্রচুর লিখেছেন এ বিষয়ে। ইংরেজিতে অনূদিত বইও আছে। আমার মনে আছে ঢাকাস্থ তুরস্কের সাংস্কৃতিক বিভাগের প্রধানের মাধ্যমে ২০১২ সালে আমি গুলেনের একটি বইও পেয়েছিলাম। বাংলাদেশে ইসলামিক বুদ্ধিজীবীদের মাঝে গুলেন খুব পরিচিত নাম নয়। তার ওপর লেখা-জোখা খুব কমই হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের এক অধ্যাপকের একটি প্রবন্ধও আমি পড়েছিলাম আজ থেকে ৪-৫ বছর আগে। গুলেন নিজে সুটেড-বুটেড, বর্তমানে স্বেচ্ছানির্বাসিত, থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়াতে। অনেকটা সুফী ভাবধারার অনুসারী তিনি। জিহাদি মতাদর্শকেও তিনি সমর্থন করেন না। তাকে বলা হয় ‘ইসলামের গাঙ্গী।’ তার মূল মন্ত্র হচ্ছে শিক্ষা। ‘জিহাদি শিক্ষা’র কথাও শোনা যায় কোনো কোনো প্রবন্ধে। এর অবিশ্যি বিস্তারিত ব্যাখ্যা আমরা পাইনি। তুরস্কে একটি বিশাল সাম্রাজ্য তিনি গড়ে তুলেছিলেন। যে সাম্রাজ্যের আওতায় রয়েছে ব্যাংক, বীমা, মিডিয়া ও শত শত স্কুল। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে এবং জার্মানিতে একশ’র অধিক স্কুল রয়েছে গুলেন অনুসারীদের। তিনি যে প্রতিষ্ঠান তুরস্কে গড়ে তুলেছিলেন তার নাম ঐরুসবঃ, ইংরেজি করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে ঝবৎারপব অথবা সেবা। এই সংগঠনের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বলা হয় ঈবসধধঃ বা সম্প্রদায় অথবা কমিউনিটি। তার সংগঠন ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে তুরস্কে। বাংলাদেশে উত্তরার ৫নং সেক্টরে যে তার্কিস স্কুল রয়েছে, এটাও তারা পরিচালনা করে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতেও তাদের স্কুল রয়েছে। তুরস্কে তাদের অনুসারীদের সংখ্যা ৬০ লাখ বলে ধরা হয়। এরা প্রশাসনের এত গভীরে প্রবেশ করেছে যা এরদোগানের জন্য ছিল চিন্তার কারণ। একসময় এরদোগানকে গুলেন অনুসারী হিসেবে গণ্য করা হতো। কিন্তু ২০১৩ সালের পর থেকে এরদোগানের সঙ্গে গুলেনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এরদোগান মনে করতেন গুলেন তার জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিচ্ছেন। গুলেন সমর্থকদের দ্বারা উৎখাত হওয়ারও ভয় ছিল তার। দুর্নীতির অভিযোগে এরদোগানের ছেলে তিন মন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে এবং একটি বড় ব্যাংকের বিরুদ্ধে যখন তদন্ত শুরু হয় ২০১৩ সালে তখনই বোঝা গিয়েছিল গুলেনের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এরপর ঘটে ইস্তানবুলে গাজী পার্কের ঘটনা। ইস্তানবুলের মেয়র ছিলেন এরদোগান (১৯৯৪-৯৮) এবং এই ইস্তানবুলই হচ্ছে তার ‘ক্ষমতার উৎস।’ সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এখানেই বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই ইস্তানবুলে তাকসিম গাজী পার্কের ঘটনা যখন ঘটে (২০১৩ জুন, নিউইয়র্কের অক্যুপাই মুভমেন্ট অব আদলে বিশাল এলাকা অক্যুপাই করা, পুলিশের উচ্ছেদ অভিযানে ১১ জনের মৃত্যু), তখন এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল খোদ এরদোগানের অনুসারীদের ভেতরেই একটি পক্ষ এই অক্যুপাই মুভমেন্টকে সমর্থন করেছিল। এরদোগান মনে করতেন এই আন্দোলনের পেছনে গুলেনের ইন্ধন রয়েছে। এ কারণেই গুলেনের প্রতি তার আক্রোশটা বেশি। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণেও তিনি আবারো গুলেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। আপতত মনে করা হচ্ছে এরদোগান টিকে গেছেন। কিন্তু কতদিনের জন্য সেটা একটা বড় প্রশ্ন এখন। তিনি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। এই অভিযান তুরস্ককে কোথায় নিয়ে যাবে সেটাও একটা প্রশ্ন। তুরস্ক শুধু ন্যাটো বা পশ্চিমা বিশ্বের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর নয় বরং জঙ্গিবাদ দমনে, বিশেষ করে সিরিয়ায় আইএসের উত্থান ঠেকাতে তুরস্কের প্রয়োজন রয়েছে। তুরস্কের আদানা শহরে ইনসিরলিক বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন যুদ্ধবিমান রয়েছে। আইএসের বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণে এই ঘাঁটির বিমান ব্যবহার করা হয়। অভিযোগ আছে, এই বিমান ঘাঁটিতে পারমাণবিক সমরাস্ত্র মজুদ রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। সব মিলিয়ে একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান অনেক প্রশ্নের জš§ দিয়েছে। আর এসব প্রশ্নের জবাবের জন্য আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে মাত্র। ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র থেকে Daily Manob Kontho 08.08.2016

0 comments:

Post a Comment