৯ আগস্ট তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে একটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হতে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের কাছে এ সংবাদটির গুরুত্ব অনেক। কেননা, ১৫ জুলাইয়ের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর এ প্রথম তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশে যাচ্ছেন। এ সফরের সঙ্গে তুরস্কের নিরাপত্তার প্রশ্নটি যে সরাসরি জড়িত তা অস্বীকার করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, তুরস্কের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তথা সিআইএ’র জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছে তুরস্ক। তুরস্কের ন্যাটো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার একটা কথা বিভিন্ন মহলে শোনা যাচ্ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও এমন একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এরদোগানের রাশিয়া সফরের গুরুত্ব রয়েছে বৈকি। মনে রাখতে হবে, রাশিয়া অনেক আগেই তুরস্ককে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, এ ধরনের একটি সামরিক অভ্যুত্থান হতে পারে। তৃতীয়ত, পুতিনের সঙ্গে এরদোগানের বৈঠক এ অঞ্চলের রাজনীতিতে একটি পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে। সিরিয়া সংকটও নতুন মোড় নিতে পারে। এ সফর রাশিয়া-ইরান-তুরস্ককে এক টেবিলে নিয়ে আসতে পারে। ইরানও রাশিয়ার মতো তুরস্কের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের সমালোচনা করেছে। ইরানের অভিযোগ, এই ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনে সৌদি আরব ও কাতারের ইন্ধন রয়েছে। এখন আইএস নির্মূলে তুরস্কের যেমন একটি ভূমিকা রয়েছে, ঠিক তেমনি সিরিয়ায় আসাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা, লাখ লাখ সিরীয় নাগরিকের দেশান্তরের ঘটনায়ও তুরস্কের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। প্রতিটি ক্ষেত্রে তুরস্কের রাজনীতি, তুরস্কের স্ট্র্যাটেজিক অবস্থান গুরুত্বের দাবি রাখে। সুতরাং তুরস্কে যখন একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই এর একটি প্রতিক্রিয়া তুরস্কের রাজনীতির পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনীতিতেও থাকবে। বিশেষ করে, সিরিয়া সংকটের সমাধান, আইএসকে পরিপূর্ণভাবে নির্মূলের প্রশ্নে তুরস্কের ভূমিকা কী হবে, সেটা হবে একটা বড় প্রশ্ন এখন। এক্ষেত্রে দুইটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে। তুরস্ক ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তুরস্কে মার্কিন সেনা রয়েছে এবং একাধিক বিমানঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করে। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যে স্ট্র্যাটেজিক ইন্টারেস্ট রয়েছে, তাতে তুরস্ক অন্যতম একটি ফ্যাক্টর এবং তুরস্কের ব্যাপারে রাশিয়ারও স্বার্থ রয়েছে। তুরস্ক রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ নয়। ব্ল্যাক সি বা কৃষ্ণ সাগর এদেশ দুইটিকে আলাদা করেছে। এদেশ দুইটির মাঝে আছে আবার তিনটি দেশÑ জর্জিয়া, আরমেনিয়া ও আজারবাইজান। জর্জিয়াকে ন্যাটো সদস্যভুক্ত করার আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের। জর্জিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার ‘সীমিত যুদ্ধ’ এর খবর আমরা জানি। অন্যদিকে আরমেনিয়া ও আজারবাইজানের ‘অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে’ তুরস্ক ও রাশিয়া পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। তবে ক্রিমিয়া রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় (২০১৪) কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্ব বেড়েছে। এখানে রয়েছে রাশিয়ার বড় নৌ-ঘাঁটি। কৃষ্ণ সাগরের পাশ ঘেঁষে রয়েছে তুরস্কের বিখ্যাত বসফরাস প্রণালি ও মারমারা সাগর। ইস্তানবুলের বিখ্যাত বসফরাস প্রণালি হচ্ছে প্রাচ্য ও পশ্চিমের অদ্ভুত এক মিলন স্থান। এ মারমারা প্রণালি ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণ সাগরকে সংযুক্ত করেছে। রাশিয়ার নৌ-স্ট্র্যাটেজিস্টরা এ কারণেই তুরস্ককে গুরুত্ব দেন বেশি। সুতরাং তুরস্কে একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যতটুকু ভূমিকাই পালন করে থাকুক না কেন, দুই পরাশক্তির (রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র) এতে একটা ‘যোগসূত্র’ থাকা বিচিত্র কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের ‘সনাতন সম্পর্ক’ থাকলেও সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছিল না ওয়াশিংটন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধও লক্ষণীয়। অন্যদিকে স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্বের কারণে রাশিয়া তুরস্কে এমন একটি সরকার চাইবে, যা তার স্বার্থ রক্ষা করবে। বিশ্ব আসরে রাশিয়াকে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে হলে তুরস্ককে তার আস্থায় নেয়া প্রয়োজন। এরই মধ্যে ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের কারণে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে রাশিয়ার অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পারমাণবিক সমঝোতা’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ইরান এ অঞ্চলের অন্যতম উঠতি শক্তি, যা কিনা বিশ্ব এখন গ্রহণযোগ্যতায় নিয়েছে। ফলে খুব সঙ্গত কারণেই এ অঞ্চলে যদি রাশিয়া-ইরান-তুরস্কের মধ্যে একটি ‘ঐক্য’ গড়ে ওঠে, তাহলে তা বিশ্ব রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে, যা বলাই বাহুল্য। মনে রাখতে হবে, বেশকিছু ইস্যুতে চীন-রশিয়া ঐক্য গড়ে উঠেছে। দেশ দুইটি এসসিও বা ‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন’ এর সদস্য। ভারত এ জোটের অবজার্ভার। অন্যদিকে চীন-রাশিয়া-ভারত এবং আরও বেশ ক’টি দেশের সমন্বয়ে একটি বিকল্প বিশ্ব ব্যাংক (ব্রিকস ব্যাংক) গড়ে উঠেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আঘাত করছে। ফলে দুই পরাশক্তির মাঝে এক ধরনের প্রভাব বলয়ের রাজনীতি শুরু হয়েছে অনেক আগেই। এক্ষেত্রে তুরস্কের স্ট্র্যাটেজিক অবস্থানের কারণে এ দুই পরাশক্তি তুরস্কের ব্যাপারে যে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করে আসছে। ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ পার্টনার হচ্ছে তুরস্ক। ন্যাটোর পারমাণবিক অস্ত্রের একটা মজুদ আছে তুরস্কে, যা কিনা রাশিয়ার বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হতে পারে আগামীতে। সুতরাং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাশিয়া যে তুরস্কের পাশে এসে দাঁড়াবে এটা স্বাভাবিক। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কেরও একাধিক স্বার্থ কাজ করছে। প্রথমত, সিরিয়ার সংকটে কুর্দিদের একটি গ্রুপ কুর্দিস ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টি (পিওয়াইডি) অত্যন্ত সক্রিয়। রাশিয়া পিওয়াইডিকে সমর্থন করে এবং মস্কোতে তাদের একটি লিয়াজোঁ অফিস খুলতেও অনুমতি দিয়েছে। তুরস্ক মনে করে, পিওয়াইডি হচ্ছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) একটি অঙ্গ সংগঠন। পিকেকে তুরস্ক ও ইরাকি কুর্দিস্তানে তৎপর। দলটি ১৯৮৪ সালের পর থেকে তুরস্ক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করে আসছে। দলটি তুরস্কে নিষিদ্ধ। এখন তুরস্ক মনে করছে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে পিকেকে তথা পিওয়াইডির ওপর থেকে রাশিয়ার সমর্থন কমে যাবে এবং পিকেকে তুরস্কের অভ্যন্তরে যে সন্ত্রাসবাদী কর্মকা- পরিচালনা করে, তা হ্রাস পাবে। দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার গ্যাস। প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার (১২০০ কোটি ডলার) ব্যয়ে একটি পাইপ লাইন নির্মিত হচ্ছে, যার মাধ্যমে রাশিয়ার গ্যাস ইউরোপে যাবে (টার্কিস স্ট্রিম প্রজেক্ট)। ইউরোপের অনেক দেশ রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল, যা কিনা ইউরোপের মাধ্যমে (সাউথ স্ট্রিম) সরবরাহ করা হতো। কিন্তু ইউক্রেন সংকট গভীর হলে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পুতিন তার তুরস্ক সফরের সময় এ বিকল্প ‘টার্কিস স্ট্রিম’ গ্যাস পাইপ লাইন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ফলে রাশিয়ার গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে কৃষ্ণ সাগরের নিচ দিয়ে ইউরোপের কয়েকটি দেশে সরবরাহ করা হবে। এ গ্যাস পাইপ লাইন চালু হলে তা তুরস্কের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। তৃতীয়ত, তুরস্ক ও রাশিয়া একটি ‘যৌথ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। ফলে তুরস্ক তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। রাশিয়াকে এখন কাছের বন্ধু হিসেবে মনে করছে। এ ‘নয়া সম্পর্ক’ সিরিয়ার সংকট থেকে শুরু করে এ অঞ্চলের রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। সিরিয়ায় আসাদ বিরোধিতা থেকে তুরস্ক এখন সরে আসবে এবং আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী বাহিনীগুলো এখন আর তুরস্ক সরকারের সহযোগিতা পাবে না। তুরস্কের এ ‘অবস্থান’ কিছুটা হলেও এ অঞ্চলের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। তবে এ অবস্থান পরিবর্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখে, সেটাই এখন মূল আলোচনার বিষয়।
নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দুইজন প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন নির্বাচনী প্রচারণার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছেন।
পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তাদের দুইজনের বক্তব্য পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। তবে এরা কেউ-ই তুরস্কের সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে কথা বলেননি। তবে ন্যাটো নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, ১৯৪৯ সালে ন্যাটো গঠিত হওয়ার পর প্রায় ৬৭ বছর পার করেছে। এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু আছে কিংবা যুক্তরাষ্ট্র এর আর্থিক সংশ্লিষ্টতা কতটুকু বহন করবে, তা ভেবে দেখতে হবে। যদিও হিলারি এ বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। রাশিয়া তথা পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সখ্য নিয়েও কথা উঠেছে। ফলে ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তা হলে ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকবেই। সে ক্ষেত্রে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়েও কথা উঠবে তখন। তবে এটা ঠিক, যুক্তরাষ্ট্র এরদোগানের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্ত্বেও প্রতিদিন তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত দিয়ে ১০০ ইসলামিক জিহাদি সিরিয়ায় প্রবেশ করত। এটা ছিল ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য। এসব জিহাদি আইএসের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিত। উপরন্তু তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো, এমন অভিযোগও উঠেছে। আইএসের জঙ্গিরা সিরিয়া ও ইরাকের দখলকৃত এলাকার তেল উত্তোলন করে তুরস্কের মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে বিক্রি করত, যার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যায়। এ তেল ছিল আইএসের অর্থের অন্যতম উৎস। জিহাদিদের বেতন দেয়া হতো এ অর্থ থেকে। উপরন্তু ইরানের ওপর যখন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বজায় ছিল, ইরানের তেল তুরস্কের ব্যবসায়ীরা (যার সঙ্গে এরদোগানের ঘনিষ্ঠজনরা জড়িত ছিলেন) বিশ্ব বাজারে বিক্রি করে অবৈধ টাকা আয় করত। ফলে তত্ত্বগতভাবে মার্কিন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এরদোগানের ওপর খুশি ছিলেন না। তাদের করারও কিছু ছিল না এরদোগানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা ছাড়া।
সুতরাং সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দিয়ে প্রকাশ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের যোগসূত্র আবিষ্কার করে এরদোগান যখন তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন, তখন এ ব্যাপারে ওয়াশিংটনের চিন্তা থাকবেই। ওয়াশিংটনের এ চিন্তা উসকে দিতেই এরদোগান এখন যাচ্ছেন রাশিয়ায়। আর পুতিন এ দিনটির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। এ সফরে হয়তো বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু মূল বিষয় হবে একটিÑ তুরস্ক-রাশিয়া ঐক্য। এই ঐক্য এ অঞ্চলের রাজনীতিতে যে পরিবর্তন ডেকে আনবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
Daily Alokito Bangladesh
07.08.2016
Daily Alokito Bangladesh
07.08.2016
0 comments:
Post a Comment