যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে যে নীতি প্রণীত হয়েছে, বাংলাদেশ তারই অন্তর্ভুক্ত। নানা কারণে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এই এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্র বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এর প্রধান কারণ চীন। চীনকে ঘিরে ফেলার এক সদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্যাসিফিক নীতি প্রণয়ন করছে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ তথা ভারতের গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নীতিনির্ধারকদের কাছে অনেক বেশি। একদিকে ভারত মহাসাগর, অন্যদিকে দক্ষিণ চীন সাগর- এই দুটো অঞ্চলকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র এক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ৬টি জাহাজ মোতায়েন করা হবে। উদ্দেশ্য ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর মুভমেন্টের দিকে লক্ষ্য রাখা। দক্ষিণ চীন সাগরকে বলা হচ্ছে সম্ভাব্য একটি স্থান, যাকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সামরিক সংঘর্ষের সূত্রপাত হতে পারে। বছরে এই দক্ষিণ চীন সাগর এলাকা দিয়ে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য পরিবাহিত হয়। অর্থাৎ এই রুট ব্যবহার করে পণ্য পৃথবীর বিভিন্ন দেশে যায়, যার একটা বড় অংশ চীন রফতানি করে। ১১ বিলিয়ন ব্যারেল তেল ও ১৯০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস রয়েছে এ অঞ্চলে। বছরে এ অঞ্চল থেকে ১০ মিলিয়ন টন মৎস্য আহরণ করা হয়। ফলে চীনের এ অঞ্চলের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এ অঞ্চল ঘিরে উত্তেজনা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী জাহাজ এ অঞ্চলে ঘোরাফেরা করছে। এ অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালত সম্প্রতি চীনের দাবি খারিজ করে দিলেও চীন তা মেনে নেয়নি। ফিলিপাইনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। ফলে এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়লে, তার ঢেউ এসে লাগবে ভারত মহাসাগরেও। সুতরাং চীনের বিরুদ্ধে একটি শক্ত অবস্থান নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার তৎপরতা বাড়াবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই জন কেরির বাংলাদেশ ও ভারত সফর এ দৃষ্টিতেই আমাদের দেখতে হবে। মোদির জমানায় ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও বেড়েছে। ভারতে মার্কিন বিনিয়োগ বেড়েছে। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজির অংশ। ভারতকে তার প্রয়োজন এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব কমানোর জন্য। ফলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের যে নীতি, সেই নীতি ভারতকে আস্থায় নিয়েই তৈরি করা। অর্থাৎ ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আলোকেই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক রচিত হবে। আলাদা করে বাংলাদেশের ব্যাপারে কোনো নীতি প্রণয়ন করবে না যুক্তরাষ্ট্র। এবং যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, যাতে ভারতের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়। ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজন খুব বেশি।
কেরির ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা নিয়ে কথা হতে পারে। সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলে এসেছে। কেরি এ বিষয়টাকে আবারও গুরুত্ব দেবেন। এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির যাতে উন্নতি হয়, সে ব্যাপারেও তিনি কথা বলবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আসলে এ ধরনের বক্তব্য নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে এই বিষয়গুলো আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র কখনও এই বিষয়গুলো নিয়ে কোনো ‘শর্ত’ আরোপ করে না। কেরির সফরে এ ধরনের কোনো সম্ভাবনাও নেই। জন কেরির এ সফরে বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়বে। মার্কিন মিডিয়ায় নতুন করে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হবে। তবে এ সফরের মধ্য দিয়ে খুব বড় ধরনের অগ্রগতি সাধিত হবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।
ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Jugantor
28.08.2016
0 comments:
Post a Comment