রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

সার্চ কমিটি গঠনে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ ও প্রাসঙ্গিক কথা


নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর এ মুহূর্তে দেশবাসীর দৃষ্টি বঙ্গভবনের দিকে। রাষ্ট্রপতি বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করছেন। উদ্দেশ্য নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সবার মতামত নেয়া এবং সে মতে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এরই মধ্যে তিনি বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এলডিপি এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে কথা বলেছেন। জাসদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন পরে। আরও ছয়টি দলকে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তার উদ্দেশ্য পরিষ্কারÑ তিনি সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের একটা মতামত নিতে চানÑ কীভাবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা যায়। সংবিধানে এর একটি ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু এর বাইরে গিয়ে তিনি সবার মতামত নিয়ে একটা ‘সিদ্ধান্ত’ নিতে চান। এ সিদ্ধান্তে একটি সার্চ কমিটি গঠিত হতে পারে, যারা ৫ জন কমিশনারসহ সিইসিকে মনোনয়ন দেবেন। অথবা তিনি কোনো সার্চ কমিটি গঠন না করেও একটি পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করতে পারেন। সংবিধানের ১১৮(১) ধারা তাকে এ সুযোগ দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি সবার মতামত নিতে চাচ্ছেনÑ এটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো খবর। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির এ উদ্যোগ কি ফল বয়ে আনবে? প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কি এ সিদ্ধান্ত মেনে নেবে? যদি বিএনপি রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তে খুশি না হয়, তাহলে বিএনপি কী সিদ্ধান্ত নেবে? রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের দিকে যেমন তাকিয়ে আছে পুরো জাতি, তেমনি তাকিয়ে আছে বিএনপির দিকেও। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন জরুরি। কেননা এ কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে। নতুন একটি কমিশন আসছে, যারা ২০১৯ সালের সম্ভাব্য নির্বাচন পরিচালনা করবেন। নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে একটি প্রশাসনিক বিষয়। তবে এখানে রাষ্ট্রপতিকে কিছুটা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ১১৮(১) এ বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন।’ সমস্যাটা এখানেই। এই যে ‘নিয়োগ দান করিবেন’ কথাটা বলা হয়েছে, এতে রাষ্ট্রপতির একটি ‘স্বাধীন তথা নিরপেক্ষ’ ক্ষমতা কতটুকু? রাষ্ট্রপতি কি এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? আমাদের দেশে সংসদীয় সরকার বিদ্যমান। এ সংসদীয় সরকারে একজন রাষ্ট্রপতিকে কিছু ‘সেরিমনিয়াল’ দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছেÑ তিনি কী করতে পারেন। তার ক্ষমতা কতটুকু। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, প্রধান নির্বাহীর সম্মতি ছাড়া তিনি সংলাপ আয়োজন করতে পারতেন না। সংবিধানের ৫৬ ধারা সম্পর্কে একজন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান রাষ্ট্রপতি ধারণা রাখবেন, এটা স্বাভাবিক। তাছাড়া প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনেক বক্তব্য আমরা দেখেছি, যেখানে তিনি রাষ্ট্রপতির হাতে ইসি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তটি ছেড়ে দিয়েছেন। এখন রাষ্ট্রপতি একটি সিদ্ধান্ত নেবেন। তাতে সরকারের, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এটা ভালো হতো যদি রাষ্ট্রপতি বিএনপির পরপরই আওয়ামী লীগকে সংলাপে ডাকতেন। তাতে করে আওয়ামী লীগের একটা মতামত আমরা পেতে পারতাম। আমরা এরই মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের একটা মতামত পেয়েছি। এ মতামতগুলো মূলত কীভাবে ইসি পুনর্গঠন করা যায়, তা নিয়ে। যেহেতু ইসি গঠন নিয়ে কোনো আইন নেই এবং কোনো বিধিবিধানও নেই যে কীভাবে ইসি গঠন করতে হবে, সেক্ষেত্রে পুরো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে। রাষ্ট্রপতি সবার মতামত নিতে বাধ্য নন। একটি সার্চ কমিটি গঠনের কথাও সংবিধানে নেই। তবুও একটা ‘ট্র্যাডিশন’ এ দেশে চালু হয়েছে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এ ধরনের সংলাপ করেই ২০১২ সালে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। যদিও সার্চ কমিটির মাধ্যমে যিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রায় ৫ বছর দায়িত্ব পালন করলেন, তিনি তার নামের প্রতি, সার্চ কমিটির প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। অদক্ষতা এবং অযোগ্যতা নিয়ে পুরো কমিশন বিদায় নিচ্ছে ৯ ফেব্রুয়ারি। ফলে সার্চ কমিটির অভিজ্ঞতা আমাদের আছে এবং তা সুখকর নয়। তবে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কতগুলো প্রস্তাব এসেছে। খালেদা জিয়া যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন, তার মাঝে রয়েছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ইসি গঠিত হবে, একটি বাছাই কমিটি গঠন (৫ সদস্যবিশিষ্ট) এবং বাছাই কমিটির আহ্বায়ক হবেন একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি, যিনি সরকারের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন না, বাছাই কমিটির সদস্যরা হবেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সাবেক সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও একজন জ্যেষ্ঠ নারী। প্রতি পদের বিপরীতে দুইজনের নাম প্রস্তাব করা হবে এবং রাষ্ট্রপতি ৫ জনকে (সিইসিসহ) মনোনয়ন দেবেন। তত্ত্বগতভাবে এ ধরনের প্রস্তাব ভালো। কিন্তু সমস্যা রয়েছে অন্যত্র। জাতি হিসেবে আমরা এত ‘বিভক্ত’ যে, কোনো সিনিয়র সিটিজেন এ ধরনের পদে নিয়োগলাভে আদৌ উৎসাহিত হবেন না। তিনি দ্রুত বিতর্কিত হয়ে যেতে পারেনÑ এ আশঙ্কায় কেউই দায়িত্ব নিতে রাজি হবেন না। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমনই যে, আমরা যে কোনো সিদ্ধান্ত যদি আমাদের মনঃপূত না হয়, তাহলে দ্রুত তাকে বিতর্কিত করে ফেলি। অনেক সময় দলের শীর্ষ পদ থেকে যখন মন্তব্য করা হয়, তখন দলের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী ওই ব্যক্তির সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশে এখনও বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রয়েছেন, যারা এখনও কর্মক্ষম। তাদের গ্রহণযোগ্যতাও আছে। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে কেউই রাজি হবেন না দায়িত্ব গ্রহণ করতে। ইসি গঠনে একটি জাতীয় ঐকমত্যের কথা বলেছেন খালেদা জিয়া। তত্ত্বগতভাবে এটা ভালো। কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। আমাদের মধ্যে ‘বিভক্তি’ এত বেশি এবং একদল অপর দলকে বিতর্কিত করতে এত বেশি পারঙ্গম, তাতে ঐকমত্যের প্রশ্নটি অবান্তর। আমরা বারবার বলে আসছি একটি ‘কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস’ বা আস্থার সম্পর্ক স্থাপন করা ছাড়া কোনো দিনই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে না। বিজয়ের ৪৫ বছর যখন পার করে ফেলেছি আমরা, তখনও অতীত নিয়ে অনেক বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করছি। রাজনীতির চেয়ে ব্যক্তি আক্রমণ প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি। এ মানসিকতা যতদিন না আমরা পরিত্যাগ করতে পারব, ততদিন ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। রাজনীতিবিদদের কিছু অলিখিত ‘কোড অব কনডাক্ট’ অনুসরণ করা উচিত। জাতীয় ইস্যুতে, জাতীয় নেতাদের সম্পর্কে ন্যূনতম একটা ঐকমত্য থাকা জরুরি। না হলে বিভক্তি, তিক্ততা শুধু বাড়বেই। আর তাতে করে জাতি ‘বিভক্ত’ থাকবেই। রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবেই। এ মতপার্থক্য যেন শুধু রাজনীতি আর কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালীকরণের প্রশ্নে বিএনপির প্রস্তাব থাকতেই পারে। এখন আওয়ামী লীগও এ ধরনের প্রস্তাব দিতে পারে। এখন অব্দি আওয়ামী লীগ এ ধরনের প্রস্তাব দেয়নি এবং আমার ধারণা, আওয়ামী লীগ কোনো প্রস্তাব দেবে না। বরং বিষয়টি ছেড়ে দেবে রাষ্ট্রপতির ওপর। বাস্তবতা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি এমন কিছু করবেন না, যা সংবিধান তাকে অনুমতি দেয়নি।
বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য দল এ পর্যন্ত যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তা নিয়েও আমরা আলোচনা করতে পারি। জাতীয় পার্টি ৫ সদস্যের একটি সার্চ কমিটির নাম দিয়েছে। তারা আইন করতে বলেছে ইসি গঠনের জন্য। একটি ইসি সচিবালয় ও কমিশনারদের ‘নিরপেক্ষতার’ কথাও বলা হয়েছে। কাজী রকিব উদ্দীন তো ‘নিরপেক্ষই’ ছিলেন। অন্য কমিশনারদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও ছিল না। তাহলে তারা গ্রহণযোগ্য হলেন না কেন? প্রশ্নটা এখানেই। তারা সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেননি। অনেকটা ‘চাকরি’ করে গেছেন। একজন ‘আমলা’ সারা জীবনই আমলা থাকেন। সরকারের প্রতি যে ‘দায়বদ্ধতা’ চাকরি জীবনে তিনি ধারণ করেন, সাংবিধানিক পদে গিয়েও তিনি তা উপেক্ষা করতে পারেন না। তার ভেতরে সব সময় সেই মানসিকতা কাজ করে। তার ‘মাইন্ড সেটআপ’ থেকে তিনি বের হয়ে আসতে পারেন না। কাজী রকিব উদ্দীনের ক্ষেত্রে এমনটিই হয়েছে। একজন নারী কমিশনার তথা সার্চ কমিটির সদস্য হবেনÑ এমন কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু নারী হলেই তিনি গ্রহণযোগ্য হবেন, এমন কোনো গ্যারান্টি নেই।
আমরা এক কঠিন সময় পার করছি। ৫ জানুয়ারির (২০১৪) অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো নয়। একদিকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, অন্যদিকে নির্বাচন বয়কট ও নির্বাচন বয়কটকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি কালো দিক। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষা করা গেছে বটে, কিন্তু দেশে নির্বাচনী সংস্কৃতির মৃত্যু ঘটেছে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য এটা কোনো ভালো খবর নয়। দেশে সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য শক্তিশালী একটি বিরোধী দল থাকা দরকার। আমরা এরই মধ্যে একটি হাস্যাস্পদ সংসদের জন্ম দিয়েছি। জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের ‘আসনে’ আছে বটে। আবার তারা মন্ত্রীও হয়েছেন। পার্টিপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দলের ওপর কর্তৃত্ব আছে বলে মনে হয় না। ফলে জাতীয় পার্টি বিএনপির বিকল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল, তা হয়নি। এ কারণে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল সংসদে থাকা দরকার। না হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না। গত তিন বছরে অনেক জাতীয় ইস্যু সংসদে আলোচিত হয়নি। অনেক সময় সংসদ সদস্যদের অনুপস্থিতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে সংসদ বসেনি। এর অর্থ, অনেক সংসদ সদস্যই সংসদীয় কার্যক্রমের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। এখন সেই ‘পরিস্থিতি’ থেকে ফিরে আসতে হবে। বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। কেননা, এ সংসদ নির্বাচনে (২০১৯, জানুয়ারি) বিএনপি অংশ না নিলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। উপরন্তু নেতাকর্মীদের স্থানীয়ভাবে ‘নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করার স্বার্থেও বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া জরুরি। তাই বিএনপির জন্য একটি ‘স্পেস’ দরকার। তবে বড় কথা হলো, আমাদের মানসিকতায় আমূল পরিবর্তন দরকার। বিএনপি নিঃসন্দেহে এখন যথেষ্ট দুর্বল। মামলা-মোকদ্দমা আর কোর্টে যাওয়া-আসার মধ্য দিয়ে তাদের দিন যাচ্ছে। সিনিয়র অনেক নেতা এখন আর সক্রিয় নন। কোনো বড় আন্দোলনও তারা গড়ে তুলতে পারছেন না। তারপরও বিএনপির একটা বড় জনসমর্থন আছে। বিএনপিকে আস্থায় নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে আমার বিবেচনায় সার্চ কমিটি নয়, বরং বিএনপি যদি সিইসি’সহ কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করে সেখান থেকে অন্তত দুইটি নামকে বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। আর যদি সার্চ কমিটি গঠন করতে হয়, সেক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদে যারা আছেন, তাদেরসহ সাবেক বিচারপতি ও শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। সাবেক বা এখনও রাষ্ট্রীয় পদে আছেন, এমন আমলাদের সার্চ কমিটির প্রধান করা ঠিক হবে না। আমলাদের অনেকের মাঝে সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নেয়ার একটা প্রবণতা থাকে। এমনকি অবসরের পরও তারা সরকারি দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন। এক্ষেত্রে একজন বিচারপতিকে সার্চ কমিটির প্রধান করা শ্রেয়। এখনও বিচারপতিরা আমাদের শদ্ধার পাত্র। তাদের ওপর আস্থা রাখা যায়। রাষ্ট্রপতি অনেক ‘খুচরা’ দলের সঙ্গে সংলাপ করবেন। আসলে এদের কি আদৌ কোনো গণভিত্তি আছে? ন্যাশনাল ফ্রন্ট, বিজেপি, তরিকত ফেডারেশনÑ এদের গণভিত্তি কী? কিংবা ওয়ার্কার্স পার্টি? বিগত সংসদ নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে এদের ভোটের প্যাটার্ন সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। তাই আস্থাটা রাখা দরকার দুইটি বড় দলের মাঝে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ যদি ন্যূনতম ইস্যুতে ‘এক’ হয়, তাহলে এ দেশে একটি সুস্থ নির্বাচন সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রয়োজন এ দুইটি দলের নেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন। মানসিকতায় যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে ওই ‘তালগাছ তত্ত্ব’ (বিচার মানি, তালগাছ আমার) সামনে চলে আসবে। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ ব্যর্থ হবে। আমরা আরও সংকট প্রত্যক্ষ করব আগামী দিনগুলোতে। সেটি আমরা কেউই চাই না। এরই মধ্যে নাসিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বিজয়ী হয়েছেন এবং তিনি বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের বাসায় গিয়ে তার সহযোগিতা চেয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা আগামী দিনগুলোতে এমনটাই দেখতে চাই।
Daily Alokito Bangladesh
25.12.2016

0 comments:

Post a Comment