রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কোন পথে

রোহিঙ্গা সমস্যাটা এখন আবারও ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। রোহিঙ্গা সমস্যাটি নিয়ে গত সপ্তাহে একাধিক সংবাদ ছাপা হয়েছে। জাতিসংঘের এক মুখপাত্র স্পষ্ট করেই বলেছেন, সেখানে (অর্থাৎ আরাকান রাজ্যে) যে নির্যাতন চলছে, তা গণহত্যার শামিল। দ্বিতীয় সংবাদটি হচ্ছে, মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করেছে, ওই কমিটির লোকজন ওই রাজ্য সফরে গেলে কট্টরপন্থী বৌদ্ধরা তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। বিবিসির বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছে, এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপের শামিল! তৃতীয় সংবাদটি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির একটি বক্তব্যÑ যেখানে বলেছেন, তিনি ‘শান্তি ও জাতীয়ভাবে সমঝোতা’র কাজ করবেন। সিঙ্গাপুরে একটি ব্যবসায়িক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। অথচ একটিবারের জন্যও তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। চতুর্থ সংবাদটি ছাপা হয়েছে একটি জাতীয় দৈনিকে। ওই সংবাদে বলা হয়েছে, নির্যাতিত মুসলমান রোহিঙ্গারা যখন দেশত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন, তখন একটি ঘটনায় নৌকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ গুলি চালিয়ে তাদের কয়েকজনকে আহত করেছে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনের মতে, ১০ হাজার রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছেন। পঞ্চম সংবাদটি ছাপা হয়েছে কুয়ালালামপুরেÑ সেখানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত একাট মিছিলে অংশ নেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। মিছিলে তার অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে রোহিঙ্গা সমস্যাটির নতুন একটি মাত্রা পেয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করে তা ধীরে ধীরে একটি আন্তর্জাতিক রূপ পেতে যাচ্ছে। তাই সঙ্গত কারণেই প্রশ্নটি উঠেছে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কোন পথে? বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে কী করতে পারে? গত সপ্তাহে একটি টিভি চ্যানেলে রোহিঙ্গা নিয়ে একটি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন। তিনি অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই। সেখানেও ওই প্রশ্নটি উঠেছিল, বাংলাদেশ এখন কী করবে? রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সমস্যাটি বিবেচনা করে বাংলাদেশ সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এতে কী সমস্যাটির সমাধান হবে? আমার বিবেচনায় এভাবে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং সমস্যার গভীরতা আরও বাড়বে। বাংলাদেশ শুধু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ‘বসে’ থাকতে পারে না। বাংলাদেশের অনেক কিছু করার আছে। এক. রোহিঙ্গা সমস্যাটির আন্তর্জাতিকীকরণ করার উদ্যোগ বাংলাদেশ নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করতে পারে বাংলাদেশ। দুই. দ্বিপক্ষীয় আলোচনার (বাংলাদেশ-মিয়ানমার) পাশাপাশি চিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ আলোচনা এবং তাদের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করতে পারে। তিন. মিয়ানমারের ভেতরেই একটি ‘সেফ হ্যাভেন’ প্রতিষ্ঠা করে আন্তর্জাতিক তদারকিতে সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বলতে পারে বাংলাদেশ। চার. জাতিসংঘ যেহেতু রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যা বলছে, সেহেতু বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ওই গণহত্যার বিষয়টি তুলতে পারে। পাঁচ. এটি সত্য, মিয়ানমারে আমাদের স্বার্থ রয়েছে। আমাদের পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতির আলোকে এই সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক। ন্যূনতম দুটি আঞ্চলিক সংস্থায় (বিসিআইএন ও বিমসটেক) বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একসঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যাটিকে এই সম্পর্কের বাইরে রাখা যাবে না। এ জন্য দরকার ‘স্মার্ট ডিপ্লোম্যাটিক’। সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়েই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। ছয়. রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমারের সিভিল সোসাইটির সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। বলা ভালো, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে অং সান সু চির কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিল অনেক। দুঃখজনক হলেও সত্য, ২০১২ সালের পর থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপকতা পেলে এবং শত শত রোহিঙ্গাকে নৌকাযোগে মালয়েশিয়া যাওয়ার ব্যাপারেও ওই সময় সু চির কোনো বক্তব্য ছিল না। মিয়ানমারের বর্তমান সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে না। মিয়ানমার সরকার মনে করে, রোহিঙ্গারা মূলত বাংলাদেশের নাগরিক। অথচ ইতিহাস বলে, শত বছর ধরেই রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছেন। উগ্রপন্থি বৌদ্ধরা মিয়ানমারকে একটি বৌদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে। সু চি এই প্রক্রিয়ার পুরোপুরি বাইরে নন। তিনি জানেন, ক্ষমতায় থাকার জন্য তার উগ্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সমর্থনের প্রয়োজন আছে। তাই উগ্রপন্থিরা যখন মুসলমানদের হত্যা করছে, তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে, বাধ্য করছে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করতেÑ তখন তিনি নিশ্চুপ। মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারেও তার কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই। ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি যে স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেছেন, তা সুবিধাবাদিতায় ভরা। সর্বজন গ্রহণযোগ্য নেত্রী তিনিÑ এ কথাটা বলা যাবে না। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনের আগে একদিকে তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক ধরনের সহাবস্থানে গিয়েছিলেন, অন্যদিকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থেকে উগ্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অবস্থানই সমর্থন করেছিলেন। এতে তিনি ‘বিজয়ী’ হয়েছেনÑ এটা সত্য। কিন্তু সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি সমাজব্যবস্থা সেখানে কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হবে, এ প্রশ্ন আছে। একটি জনগোষ্ঠী যখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়, তখন ওই সমাজকে একটি গণতান্ত্রিক সরকারও বলা যায় না। বিপুল ভোটে মিয়ানমারের জনগণ সু চিকে নির্বাচিত করেছে। কিন্তু তিনি বাহ্যত একটি শ্রেণির স্বার্থেই কাজ করছেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ন্যূনতম অধিকার নিশ্চিত করেননি।
এখন যে অভিযোগটি মিয়ানমারের কোনো কোনো মহল থেকে উচ্চারিত হয় যে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নন। এর পেছনে আদৌ কোনো সত্যতা নেই। ইতিহাস বলে, রোহিঙ্গারা অষ্টম শতাব্দী থেকেই আরাকান অঞ্চলে বসবাস করে আসছেন। ১৪৩০ সালের দিকে তৎকালীন আরাকান শাসক বৌদ্ধ রাজা নারামাইখালা (ঘধৎধসবরশযষধ)Ñ যিনি মিন স মুন (গরহ ঝধি গঁহ) নামেও পরিচিত ছিলেন। তার শাসনামলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের তিনি এ অঞ্চলে নিয়ে এসেছিলেন এবং আরাকানে বসবাস করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ওই থেকে রোহিঙ্গারা সেখানে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছেন। তাই আজ নতুন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা অর্থহীন এবং তা গ্রহণযোগ্য নয়।
রোহিঙ্গা নিয়ে যে সমস্যা, এর শুরু মূলত ১৯৭৮ সালের এপ্রিলে। ওই সময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ঙঢ়ৎধঃরড়হ ফৎধমড়হ-এর শিকার হয়ে আরাকানের মুসলমানরা (রোহিঙ্গা) দলে দলে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ছিলেন আকিয়াব (সিটওয়ে), পালেটবা, মিনবিয়া, মায়োহং, মাইবন, মংডু ও রাথেডং অঞ্চলের অধিবাসী। ওই সময় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৮ সালের জুলাইয়ে মিয়ানমার ৩টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং ১৯৭৮ সালের ৩১ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে আসা ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়। তাদের সবার কাছেই মিয়ানমার সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত ঘধঃরড়হধষ
ৎবমরংঃৎধঃরড়হ পধৎফ (ঘজঈ) ছিল। এরপর ১৯৯১ সালের মাঝামাঝি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আবারও আরাকানে ‘অপারেশন পিয়েথায়া’ নামে আরেকটি অভিযান পরিচালনা করলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অবৈধভাবে কক্সবাজার এলাকায় প্রবেশ করেন ও আশ্রয় নেন। এরপর থেকেই দুইপক্ষের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হলেও কার্যত তা খুব একটা ফল দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমান বৃহত্তর কক্সবাজার এলাকায় অবৈধভাবে বসবাস করছেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বিবাহিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৪৫। তারা টেকনাফের কুতুপালং ও নোয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। কিন্তু অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশ সরকার অতি সম্প্রতি ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক শুমারি ২০১৫’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২২ কোটি টাকা। এ উদ্যোগটি ভালো। রোহিঙ্গাদের এ দুটি ক্যাম্প থেকে নিঝুম দ্বীপে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাও করছে সরকার। এ উদ্যোগটিও ভালো। বাংলাদেশ সরকারকে এখন রোহিঙ্গা সমস্যাটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক ‘ইয়াবা ট্যাবলেট’ আসছে। ইয়াবা ট্যাবলেট চালানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কঠোর অবস্থান নেওয়ায় বিজেবির সদস্য রাজ্জাকের অপহরণের (জুন ২০১৫) ঘটনাটি ঘটেছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুর সঙ্গে ইয়াবা ট্যাবলেটের প্রশ্নটিও তার অপহরণে জড়িত। গত ৭ বছরে ইয়াবা ট্যাবলেটের চোরাচালান বেড়েছে ১৭৭ গুণ। এই হিসাব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। ঢাকায় ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রির জন্য রয়েছে ৫ শতাধিক স্পট (আমাদের সময়, ২৪ জুন)। আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩৯টি ইয়াবা ট্যাবলেটের কারখানা রয়েছে। সেখান থেকে চোরাইপথে প্রতি মাসে সীমান্ত দিয়ে শতকোটি টাকার ইয়াবা ট্যাবলেটের চালান ঢুকছে বাংলাদেশে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে বাংলাদেশে বছরে তিন হাজার কোটি টাকা মাদকের বাজার রয়েছে। এর অর্ধেক দখল করে রেখেছে ইয়াবা ট্যাবলেট (একটি জাতীয় দৈনিক, ২৪ জুন)। আর দুঃখজনক হলে সত্য, ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারের সঙ্গে মিয়ানমারের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা জড়িত। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এ কাজে জড়িয়ে গেছেন। ফলে অং সান সু চির দল এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলেও ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার বন্ধের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বলতে দ্বিধা নেই, একদিকে ইয়াবা ট্যাবলেটের ‘আগ্রাসন’, অন্যদিকে রোহিঙ্গা ইস্যু দুই দেশের সম্পর্ককে একটি ‘প্রশ্ন’-এর মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশের পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতির আলোকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের গুরুত্ব রয়েছে অনেক। বাংলাদেশ বরাবরই ওই সম্পর্ককে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এখন রোহিঙ্গা ইস্যু কেন্দ্র করে ওই সম্পর্ক নষ্ট করতে দেওয়া যায় না। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, ভারত-মিয়ানমার-বাংলাদেশ যে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে উঠছে, তা এ অঞ্চলের উন্নয়নে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই রোহিঙ্গা ইস্যু কোনো অবস্থাতেই যাতে দুই দেশের সম্পর্ককে অবনতি ঘটাতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ইস্যুটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের করার কিছুই নেই। মিয়ানমারের সরকারকেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশ বাড়তি রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে পারে না। সারা বিশ্ব যখন আজ সিরীয় অভিবাসীদের নিয়ে উৎকণ্ঠিত, তখন রোহিঙ্গা ইস্যুটি চাপা পড়ে যাচ্ছে। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে, আমরা সমস্যাটির আন্তর্জাতিকীকরণে ব্যর্থ হয়েছি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চলতি অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে অভিবাসীদের সমস্যা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছিল। সেখানেও রোহিঙ্গা সমস্যাটি তেমনভাবে আলোচিত হয়নি। আজ সময় এসেছে রোহিঙ্গা প্রশ্নে একটি ‘শক্ত’ অবস্থানে যাওয়ার। মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে সত্য। কিন্তু বাংলাদেশ যেন কোনো অবস্থাতেই নিরাপত্তা ঝুঁকিতে না থাকে, এ বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
Daily Amader Somoy
06.12.2016

0 comments:

Post a Comment