যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত ১৯মে জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দেন তাতে আরব বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তার প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করলেও, আরব বিশ্বে আদৌ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলো কীনা, কিংবা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে তার স্বরূপ কী হবে এ প্রশ্নটা এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। আরব বিশ্বে বিশেষ করে আরবলীগভুক্ত ২২টি দেশে একটি ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। যার সাথে দক্ষিণ তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কিংবা পূর্ব ইউরোপের বিকাশমান গণতন্ত্রের সাথে মেলান যাবে না। এখানে রয়েছে ভিন্ন এক জগত্। একদিকে রয়েছে সামরিক বাহিনীর প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপস্থিতি (মিসর, তিউনেসিয়া, ইয়েমেন) তেমনি রয়েছে পারিবারিক উত্তরাধিকার (সিরিয়া, লেবানন)। রাজতন্ত্র কিংবা আমির শাসিত দেশ তো রয়েছেই (জর্ডান, বাহরাইন, ওমান, সৌদি আরব)। আরব বিশ্বের তেল সম্পদ এ অঞ্চলে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। তবে তেল সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার কিংবা জনগোষ্ঠির একটা বড় অংশ এ থেকে উপকৃত হয়েছে, এটা বলা যাবে না। উপকৃত হয়েছে ক্ষমতাসীনদের সাথে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তি। এক্ষেত্রে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, তেল সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও, আরবলীগভুক্ত কোমোরোস, জিবুতি, সোমালিয়া কিংবা ফিলিস্তিনের কোন তেল সম্পদ নেই। একই বিশ্বে বাস করেও সোমালিয়ার দারিদ্র্যতা চোখে লাগার মত। আবার এ অঞ্চলে ইসলামিক জঙ্গীবাদের যে উত্থান ঘটেছে তা কিন্তু সব আরব দেশে প্রত্যক্ষ করা যায় না। যেমন আলজিরিয়া, ইয়েমেন কিংবা সোমালিয়ায় ইসলামিক জঙ্গীবাদি মনোভাব অত্যন্ত শক্তিশালী। সোমালিয়া কার্যত একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তাই এ অঞ্চলের গণতন্ত্রের বিকাশ নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। ফ্রিডম হাউজ এই দেশগুলোকে নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল। তাতে যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা কোন আশার কথা বলে না। ওবামা প্রশাসন গণতন্ত্রে উত্তরণের কথা বললেও ফ্রিডম হাউজের এই প্রতিবেদনে তাদের আশাভঙ্গ হতে পারে। ১৬৭টি দেশের গণতন্ত্রের যে বিকাশ,তাতে ইয়েমেনের অবস্থান ১৪৬, আরব আমিরাতের ১৪৮, সিরিয়ার ১৫৩, সুদানের ১৫১, লিবিয়ার ১৫৮,জিবুতির ১৫৪, মিসরের ১৩৮, আলজেরিয়ার ১০৫। শুধুমাত্র তুলনামূলক বিচারে বাহরাইনের অবস্থা ভালো, ৪৮। অর্থাত্ এখানে নির্বাচন হয়। একটি সংসদও সেখানে রয়েছে। বিরোধীদলের অস্তিত্বও রয়েছে। রাজতন্ত্র থাকলেও এক ধরনের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এখানে গড়ে উঠেছে। গণতন্ত্রের সাথে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রশ্নটি জড়িত। ফ্রিডম হাউজ এটা নিয়েও গবেষণা করেছে। তাতে দেখা যায়, (মোট ১৯৬টি দেশের মাঝে) সোমালিয়ার অবস্থান ১৮১, ইয়েমেনের ১৭৩, তিউনিসিয়ার ১৮৬, সিরিয়ার ১৭৮, লিবিয়ার ১৯৩, মিসরের ১৩০, জিবুতির ১৫৯, বাহরাইনের ১৫৩ ও আলজেরিয়ার ১৪১। তখন ওবামা যখন গণতন্ত্রের কথা বলেন, তখন স্বভাবতই প্রশ্ন এসে যায় আরব বিশ্বে এই গণতন্ত্রের স্বরূপ কী। এখানে কোন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। রাজতন্ত্রের পাশাপাশি কোথাও কোথাও পারিবারিক শাসনও (সিরিয়ায়) বজায় রয়েছে। সেখানে দল ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি। লিবিয়াতে গত মার্চ মাস থেকেই যুদ্ধ চলছে। সর্বশেষ ঘটনায় মিত্রপক্ষ সর্বাত্মক বিমান আক্রমণ সেখানে শুরু করেছে । দীর্ঘ দু’মাসেও গাদ্দাফিকে উত্খাত করা সম্ভব হয়নি। বারাক ওবামা তার ভাষণে লিবিয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘গাদ্দাফি যখন অপরিহার্যভাবে সরে যাবেন, ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবেন, তখন দশকের পর দশকের দুর্দশার অবসান ঘটবে এবং লিবিয়া গণতন্ত্রের দিকে ধাবিত হবে’। এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয় যে গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করাই হোয়াইট হাউজের উদ্দেশ্য। মাহমুদ জিবরিলের নেতৃত্বে লিবিয়ায় একটি ন্যাশনাল কাউন্সিল গঠিত হয়েছে। কিন্তু লিবিয়ার ব্যাপক জনগোষ্ঠির সমর্থন এই কাউন্সিলের ব্যাপারে রয়েছে এটা মনে করারও কোন কারণ নেই। যুক্তযাষ্ট্রের পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা মাহমুদ জিবরিল যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করতেন। তাঁকে দিয়ে লিবিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। স্পষ্টতই লিবিয়া ইরাকের মত পরিস্থিতি বরণ করতে যাচ্ছে। ২০০৩ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের কোন অনুমতি ছাড়াই বাগদাদ আক্রমণ করে সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর দেশটি দখল করে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে মালিকির নেতৃত্বে একটি সরকার গঠিত হয়েছে সত্য, কিন্তু ইরাকে জন্ম হয়েছে এক নতুন সংস্কৃতির, আত্মঘাতী বোমাবাজি। আল-কায়দার ইরাকি সংস্করণের সেখানে জন্ম হয়েছে। সেখানে এখনই ৫০ হাজার আমেরিকান সেনা রয়েছে, যদিও তারা ‘কমব্যাট’ বা যুদ্ধরত অবস্থায় নয়। সাদ্দাম পরবর্তী এই যে রাজনীতি, তাকে আমরা কী গণতন্ত্র বলবো? একটা ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ সেখানে জন্ম হয়েছে। আত্মঘাতী বোমাবাজদের কারণে কেউই আজ নিরাপদ নন। মালিকির অবস্থানও খুব শক্তিশালী নয়। সাদ্দাম হয়ত অপরাধ করেছেন। তার শাসনে স্বচ্ছতা ছিল না। কিন্তু এক স্থিতিশীল ইরাক তিনি উপহার দিয়েছিলেন। আজ সেই স্থিতিশীলতা ইরাকে নেই। লিবিয়ার পরিস্থিতিও সেদিকে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় শক্তিগুলো এখন সেখানে স্থলযুদ্ধের সূচনা করতে পারে। আর তার পরিণতিতে লিবিয়া হবে আরেক ইরাক। জিবরিল মালিকির ভূমিকা পালন করতে পারেন বটে, কিন্তু প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র লিবিয়ায় প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। আরব বিশ্বের তেল সম্পদের কথাও ওবামা বলেছেন। এটাই হচ্ছে মোদ্দাকথা। মধ্যপ্রাচ্যের তেলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। ইরাকে তেলের নিয়ন্ত্রণ এখন মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক সংস্থাগুলোর হাতে। এখন লিবিয়ার তেল সম্পদ (রিজার্ভ ৪৬.৪ বিলিয়ন ব্যারেল) উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এটাই হচ্ছে ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা’র মূল উদ্দেশ্য। বলে রাখি বিশ্বের তেলের যে রিজার্ভ, তার ৫৬ ভাগ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। আর এই তেল সম্পদের উপর যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিম ইউরোপ পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল।
পর্যবেক্ষকরা আল-কায়দার উত্থান তথা মধ্যপ্রাচ্যের সংকটের মূল কারণ হিসেবে ইসরাইলী আগ্রাসী নীতিকে দায়ী করেছেন। স্বাধীন একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় সেখানে সংকটকে আরো গভীরতর করেছে। বারাক ওবামা তার ভাষণে বলেছেন ইসরাইল ও ফিলিস্তিনে সীমান্তরেখা হবে ১৯৬৭ সালের লাইন অনুসারে। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রয়েছে স্বাধীন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। কিন্তু বাস্তবতা যা তা হচ্ছে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ওবামার উপস্থিতিতেই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন অত্যন্ত কঠোর ভাষায়। এখানেই রয়েছে মূল সমস্যা। যতদিন ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান না হবে, ততদিন মধ্যপ্রাচ্যে সংকট থাকবে। আর এই সংকটকে পুঁজি করে আল-কায়দার মত সংগঠনের জন্ম হবে এবং তাদের ‘জিহাদী’ তত্পরতা বৃদ্ধি পাবে। মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের এটাও অন্যতম একটি সমস্যা।
আজ বারাক ওবামা আরব বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন বটে, কিন্তু ইসরাইলের আগ্রাসী নীতি ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কখনও বন্ধ করতে পারেনি। নিরীহ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করে ইসরাইল মানবতাবিরোধী অপরাধ করলেও হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলী নেতাদের বিচার করা যায়নি কখনো । আরব বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে , কিন্তু তা হতে হবে তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সামনে রেখে। ‘চাপিয়ে দেয়া গণতন্ত্র’ আরব বিশ্বের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। বিমান হামলা চালিয়ে একটি পুতুল সরকার সেখানে বসিয়ে দিয়ে তেল সম্পদকে কবজা করার নাম, আর যাই হোক গণতন্ত্র হতে পারে না।
প্রেসিডেন্ট ওবামা তার ভাষণে ইন্টারনেট বিপ্লবের কথা বলেছেন। বলেছেন ইন্টারনেট সারা পৃথিবীতে মানুষের জানালা খুলে দিয়েছে। সেলফোন ও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক তরুণ সমাজকে যে কোন সমাজের চেয়ে অধিক কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক যে বিপ্লব ঘটাতে পারে, মিসর তার বড় প্রমাণ। আজ আরব বিশ্বে গণতন্ত্রের যে ঢেউ উঠেছে, তাতে এই তরুণ সমাজ পালন করছে একটি বড় ভূমিকা। দুঃখজনক হলেও সত্য, তরুণ সমাজের একটা বড় অংশই সেখানে বেকার। তিউনিসিয়ায় গত ২৭ ডিসেম্বর ফল বিক্রেতা মোহম্মদ বউকুজিজি নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। বউকুজিজি ছিলেন একজন বেকার কম্পিউটার গ্রাজুয়েট। পুরো আরব বিশ্বে এই তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা এখন অনেক। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আলজেরিয়ায় ২৫ বছরের নিচে জনগোষ্ঠীর সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর ৪৭ দশমিক ৫ ভাগ। মৌরিতানিয়ায় এ সংখ্যা ৫৯ দশমিক ৩, মরক্কোয় ৪৭ দশমিক ৭, তিউনিসিয়ায় ৪২ দশমিক ১, লিবিয়ায় ৪৭ দশমিক ৪, মিসরে ৫২ দশমিক ৩, সিরিয়ায় ৫৫ দশমিক ৩, জর্ডানে ৫৪ দশমিক ৩, ইরাকে ৬০ দশমিক ৬, কিংবা সোমালিয়ায় ৬৩ দশমিক ৫। এরা একটি শক্তি। ক্ষমতাসীনদের একটি বড় ব্যর্থতা হচ্ছে এরা এসব তরুণ সমাজকে বুঝতে পারেননি। এরা একটি শক্তি। এরাই আরব বিশ্বে পরিবর্তনটা আনছে। আর প্রেসিডেন্ট ওবামা তার ভাষণে এদের কথাই উল্লেখ করেছেন।
স্পষ্টতই আরব বিশ্ব একটি পরিবর্তনের মুখোমুখি। যুক্তরাষ্ট্র এই পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮৩ সালে গঠিত হয়েছিল National Endowment for Democracy। স্ট্রেট ডিপার্টমেন্ট বছরে ১০০ মিলিয়ন সাহায্য দেয় এই প্রতিষ্ঠানকে। এই সংস্থার মাধ্যমে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মিসরের গণ-অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত দু’টি সংস্থা April 6 movement কিংবা kafya কিংবা বাহরাইনের Center for Human Right-এর নেতৃবৃন্দকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র (নিউইয়র্ক টাইমস ১৪ এপ্রিল, ২০১১)। উদ্দেশ্য একটাই— এ অঞ্চলে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য তরুণ সমাজকে তৈরি করা। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া। গণতান্ত্রিক দুনিয়ার সাথে পরিচিত করান। সমসাময়িক আরব বিশ্বের যে ইতিহাস, তাতে দেখা যায় ১৯৫২ সালে মিসরে রাজতন্ত্র উত্খাতের মধ্যে দিয়ে যে ‘বিপ্লব’-এর সূচনা হয়েছিল, সেটা ছিল পরিবর্তনের প্রথম ধাপ। ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের সাথে কয়েকটি আরব বিশ্বের যুদ্ধ ও তাতে ব্যাপক পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় অধ্যায়ের। তৃতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে ইরানি ইসলামিক বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে। প্রতিটি বিপ্লবই আরব বিশ্বে কিছু না কিছু পরিবর্তন ডেকে এনেছে। এখন তিউনিসিয়া ও মিসরের গণ-অভ্যুত্থান এবং সেখানকার দীর্ঘদিনের সরকারের উত্খাতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে চতুর্থ অধ্যায়। এই যে বিপ্লব, এই বিপ্লব আরব বিশ্বকে কোথায় নিয়ে যায়, সেটাই দেখার বিষয় এখন।
[ পূর্বপ্রকাশ @ দৈনিক ইত্তেফাক ৩০-০৫-২০১১ ]
[ পূর্বপ্রকাশ @ দৈনিক ইত্তেফাক ৩০-০৫-২০১১ ]
0 comments:
Post a Comment