ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর দেশ ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ‘আরব বসন্ত’ তৃতীয় পর্যায় পার করলো। তিউনিসিয়ার বেকার কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট বউকুজিজির আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে যে ‘বিপ্লব’এর শুরু হয়েছিল, সেই ‘বিপ্লব’ একে একে পতন ডেকে আনলো তিউনিসিয়ার বেন আলীর, মিসরের হোসনি মোবারকের ও সর্বশেষ ইয়েমেনের আলী আবদুল্লাহ সালেহের। মধ্যপ্রাচ্য তথা উত্তর আফ্রিকায় যে পরিবর্তনের বাতাস বইছে, তাকে তুলনা করা হচ্ছে ‘প্রাগ বসন্ত’ কিংবা চেকোস্লাভিয়ার ভেলভেট রেভ্যুলেশনের সাথে। প্রাগ বসন্ত সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশ চেকোস্লাভিয়ায় ১৯৬৮ সালে একটি পরিবর্তনের সূূচনা করলেও সমাজতান্ত্রিক সমাজে সেই পরিবর্তন টিকে থাকেনি। সোভিয়েত ট্যাংক সাবেক চেকোস্লাভিয়ার রাজধানী প্রাগে নেমেছিল ও সংস্কারবাদীদের চেক কমিউনিস্ট পার্টি তথা রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে উচ্ছেদ করেছিল। কিন্তু নাট্যকার ভাসলাভ হাভেলের নেতৃত্বে ১৯৮৯ সালে ওই চেকোস্লাভিয়াতেই যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল, তা ছেয়ে গিয়েছিল সমগ্র পূর্ব ইউরোপে। সমাজতন্ত্রের পতন ঘটেছিল। শান্তিপূর্ণ ওই বিপ্লব চিহ্নিত হয়ে আছে, ‘ভেলভেট রেভ্যুলেশন’ হিসেবে। আজ ২২ বছর পর আরব বিশ্বে যে পরিবর্তনের ঢেউ উঠেছে, তাতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পরিবর্তন এসেছে তিউনিসিয়া ও মিসরে। আর এখন পরিবর্তন এলো ইয়েমেনে। লিবিয়া ও সিরিয়ায়ও পরিবর্তনের পথে। লিবিয়ায় গাদ্দাফির পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু যে প্রশ্ন এখন অনেকেই করেন তা হচ্ছে, ‘আরব বসন্ত’ কী ধরনের পরিবর্তন ডেকে আনছে মধ্যপ্রাচ্য তথা উত্তর আফ্রিকায়? ভাসলাভ হাভেল যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তা স্ফুলিঙ্গের মতো সমগ্র পূর্ব ইউরোপে ছড়িয়ে গিয়েছিল। সমাজতান্ত্রিক সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে সেখানে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। গত ২২ বছরে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলেছে। সেখানে নিয়মিতভাবে নির্বাচন হয়। সরকার পরিবর্তন হয় জনগণের ভোটে। গণতান্ত্রিক পার্টিগুলোও বিকাশ লাভ করেছে, যা আগে ছিল না। মানুষ গণতন্ত্রের ফল ভোগ করতে শুরু করেছে। ফ্রিপ্রেস সেখানে। মানুষ সরকারকে সমালোচনা করছে, যা আগে ছিল অকল্পনীয়। পুঁজিবাদনির্ভর অর্থনীতিও সেখানে বিকাশ লাভ করছে। কিন্তু আরব বিশ্বে কী পরিবর্তন আসছে? সেখানে একদলীয় শাসনের পরিবর্তে কী বহুদলীয় গণতন্ত্র বিকশিত হবে? বেন আলী ও তার দল এককভাবে ক্ষমতা পরিচালনা করে গেছেন দীর্ঘ ২৩ বছর। হোসনি মোবারক ও তার দল ক্ষমতায় ছিলেন ৩৫ বছর। আর আবদুল্লাহ সালেহ ছিলেন দীর্ঘ ৩৩ বছর ক্ষমতায়। বেন আলী, হোসনি মোবারক কিংবা আলী আবদুল্লাহ সালেহর শাসন আর যাই হোক গণতন্ত্রসম্মত ছিল না। এখন এদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র কী প্রতিষ্ঠিত হবে?
এই যখন পরিস্থিতি, তখন মরক্কো থেকে এসেছে একটি আশাব্যাঞ্জক খবর। বাদশাহ মুহম্মদ-৬ সেখানে সংস্কারের কথা বলেছেন। জনগণের ভোটে তিনি সেখানে পরিবর্তন আনতে চান। তরুণ এই রাজা ক্ষমতায় আছেন ১৯৯৯ সাল থেকে। তুলনামূলক বিচারে আরব বিশ্বের অন্য দেশগুলোর চেয়ে মরক্কোর অবস্থা অনেক ভালো। গণতন্ত্র ইনডেক্সে ১৬৭টি দেশের মাঝে মরক্কোর অবস্থান ১১৬। আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ১৯৬টি দেশের মাঝে দেশটির অবস্থান ১৪৬। এখন গণভোটে সংবিধান যদি পরিবর্তন আনা হয় এবং সেখানে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে আরব বিশ্বের রাজনীতির জন্য তা হবে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সম্ভবত, বাদশাহ মুহম্মদ পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছেন। তাই আগেভাগেই তিনি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন, এখন দেখতে হবে তিনি কতটুকু আন্তরিক। তবে একটা ভালো দিক হচ্ছে, মরক্কোতে বড় ধরনের কোনো গণঅভ্যুত্থানের এখনো সৃষ্টি হয়নি। মিসর কিংবা সিরিয়ার মতো পরিস্থিতি সেখানে এখনো সৃষ্টি হয়নি। তার আগেই বাদশাহ মুহম্মদ-৬ সংস্কারের উদ্যোগ নিলেন। তিনি নিজের কিছু ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চান।
আরব বসন্তকে সামনে রেখে এখন অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। এক. লিবিয়া ইরাকের মতো পরিস্থিতি বরণ করবে কি না? অর্থাত্ বিদেশি শক্তি সেখানে অবতরণ করবে কি না? ২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী অবতরণ করেছিল এবং সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। এখন লিবিয়ার পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সেখানে গৃহযুদ্ধ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র তথা ইউরোপীয় শক্তিগুলোর বোমাবর্ষণের পরও মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে উত্খাত করা সম্ভব হয়নি। তিনি ক্ষমতায় আছেন দীর্ঘ ৪১ বছর। এই দীর্ঘ ৪১ বছরে তিনি লিবিয়ায় নতুন ধরনের এক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্ম দিয়েছেন। সেখানে কোনো সংবিধান নেই। গাদ্দাফি রাষ্ট্রের কোনো পদে অধিষ্ঠিত নেই। তাকে অভিহিত করা হয় ‘বিপ্লবের নেতা’ হিসেবে আর এই যুক্তিটিই তিনি দেখাচ্ছেন যে তিনি কার কাছে পদত্যাগ করবেন। তিনি তো কোনো রাষ্ট্রীয় পদে নেই। কার্যত, লিবিয়া এখন ভাগ হয়ে গেছে। রাজধানী লিবিয়া ও এর আশপাশের অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে গাদ্দাফি ও তার অনুগত বাহিনী। অন্যদিকে, পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্রোহীরা। তেলসমৃদ্ধ বেনগাজিকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিদ্রোহীদের আন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন। অনেক আরব রাষ্ট্র ও অন্তর্বর্তী প্রশাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিদ্রোহীরা অর্থ ও অস্ত্র সংকটে আছে। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে লিবিয়ায় যুদ্ধ চললেও গাদ্দাফিকে উত্খাত করা সম্ভব হয়নি। এরই মাঝে আফ্রিকান ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল সার্বিয়া সফর করেছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। এরই মাঝে গাদ্দাফিপুত্র সাইফ আল-ইসলাম নির্বাচনের একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে হেরে গেলে গাদ্দাফি পদত্যাগ করবেন। কিন্তু বিদ্রোহীরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবে রাজি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, গাদ্দাফিকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। তাই লিবিয়ার পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বলা কঠিন। ভয়ের কারণ হচ্ছে, গাদ্দাফি ইতিমধ্যে তার অস্ত্রভাণ্ডার খুলে দিয়েছেন। ধারণা করছি, এই অস্ত্র চলে গেছে ইসলামি জঙ্গি গ্রুপগুলোর হাতে, যারা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘শত্রু’ মনে করে। দুটি গ্রুপের কথা জানা যায়, তাদের সাথে আল-কায়েদার সম্পর্ক রয়েছে। এ দুটি সংগঠন হচ্ছে-Al jamaa al Muqatilah bi libya এবং Libya Islamic Fighting Grop (LIFG)। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যে ক’টি সংগঠনকে আল-কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত বলে চিহ্নিত করেছিল, তার মাঝে LIFG আছে। এরা যদি সত্যি সত্যি অস্ত্র পেয়ে থাকে, তাহলে তা এ অঞ্চলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই লিবিয়ার ভবিষ্যত্ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। দুই. সিরিয়ার পরিস্থিতিও দিনে দিনে ঘোলাটে হচ্ছে। সেনাবাহিনী এখনো প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদকে সমর্থন করে যাচ্ছে, যিনি ক্ষমতায় আছেন ২০০০ সাল থেকে। তার ছোট ভাই সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কমান্ডার। বিদ্রোহীরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর জিসার আল-শুখোর ও মারাত আল-লুমান দখল করে নিলেও সেনারা তা পুনর্দখল করেছে। গৃহযুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছেন এবং লক্ষাধিক মানুষ দেশান্তরিত হয়ে সীমান্তবর্তী তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য। সিরিয়া সংকটে তুরস্ক একটি ভূমিকা পালন করতে পারে। তুরস্কের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঘিরে যে সিরীয় শহর, সেখানে বিদ্রোহীদের ঘাঁটি গড়ে তুলতে পারে, যা কি না হতে পারে ‘লিবিয়ার বেনগাজী’। তিন. ‘আরব বসন্ত’ মিসর ও তিউনিসিয়ায় সরকার পরিবর্তন করেছে। কিন্তু সরকারের চরিত্রের আদৌ কোনো পরিবর্তন ঘটায়নি। পুরনো কাঠামো রয়ে গেছে। সেনাবাহিনী দুটি দেশেই পর্দার অন্তরালে থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছে। দুটি দেশেই ইসলামিক শক্তিগুলো নতুন উদ্যোমে আত্মপ্রকাশ করেছে। মিসরে দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ ছিল ইসলামিক ব্রাদারহুড পার্টি। তারা এখন ইসলামিক ফ্রিডম ও জাস্টিস পার্টি নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, তারা পুরনো দল wafd পার্টির সাথে নির্বাচনী ঐক্য করেছে। আগামী জুলাইয়ে সেখানে সংসদ নির্বাচন। ধারণা করা হচ্ছে, এই ঐক্যজোট নির্বাচনে ভালো করবে। ইতিমধ্যে সংবিধান প্রণয়নেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নতুন সংবিধানে সেনাবাহিনী তাদের প্রতিনিধিত্বে নিশ্চিত করতে চায়। বর্তমান যে সামরিক জান্তা ক্ষমতা পরিচালনা করছে, তারা চাচ্ছেন, নয়া সংবিধানে সেনাবাহিনীর একটা প্রতিনিধিত্ব থাকুক। শেষ পর্যন্ত সংবিধান প্রণয়ন কমিটি এই চাপ উপেক্ষা করতে পারবে কি না এটা দেখার বিষয়। চার. আরব বিশ্বের তরুণ সমাজ এই ‘বিপ্লব’কে সম্পন্ন করেছে। কিন্তু নতুন যে সংস্কৃতি বিকশিত হচ্ছে, তাতে তাদের কোনো স্বীকৃতি বা ভূমিকা নেই। ফলে এদের আশা ভঙ্গ হয়েছে এবং তাদের যদি আবার রাজপথে আন্দোলনে নিয়ে আসে, আমি অবাক হব না। এই তরুণ সমাজ আরব বিশ্বে একটি শক্তি। আলজেরিয়ায় মোট জনগোষ্ঠীর মাঝে শতকরা ৪৬ ভাগ হচ্ছে তরুণ, তিউনিসিয়ায় ২৭ ভাগ, লিবিয়ায় ৪০ ভাগ, মিসরে ২৬ ভাগ, সিরিয়ায় ২০ ভাগ, জর্ডানে ৩৯ ভাগ, বাহরাইনে ২৫ ভাগ, আর মরক্কোতে ১৬ ভাগ। এই শক্তিকে অস্বীকার করা যাবে না। পাঁচ. আরব বিশ্বে গোষ্ঠীতন্ত্র একটি ফ্যাক্টর। দেখা গেছে, নিজস্ব গোষ্ঠী তথা গোত্রের লোকদের নিয়েই ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। গাদ্দাফির পেছনে আছে তার গোত্রের লোকেরা। সিরিয়ার ‘আলাবি’ গোষ্ঠী প্রেসিডেন্ট বাসারের ক্ষমতার অন্যতম উত্স। তিউনিসিয়ায় ক্ষমতাচ্যুত বেন আলী তার পরিবার ও গোত্রের লোকদের নিয়ে একটা ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি করেছিলেন। বাহরাইনে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ; কিন্তু সুন্নি সম্প্রদায় সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়েও সেখানে ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছেন। বাহরাইনের শাসক হামাদ বিন ইসা আল-খলিফার (১৯৯৯ সাল থেকে যিনি ক্ষমতায়) বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিল, তা দমন করতে উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের উদ্যোগে সৌদি সেনাবাহিনী বাহরাইনে প্রবেশ করেছিল এবং আন্দোলন নস্যাত্ করে দিয়েছিল। এটা একটা নতুন উপাদান। ইয়েমেনেও এই কাউন্সিল উদ্যোগ নিচ্ছে। এখানেও উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল সেনাবাহিনী পাঠাতে পারে। স্পষ্টতই আরব বিশ্ব একটা সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের উত্খাত করে সেখানে আদৌ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে কি না-সেটা একটা বড় প্রশ্ন এখন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত ১৯ মে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আরব বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে সাহায্য, সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দিলেও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যে শক্তিশালী হয়েছে তা বলা যাবে না। লিবিয়ার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ, সিরিয়ায় সেনাবাহিনীর শাসনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন, ইয়েমেনে আল-কায়েদা গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত একটি জঙ্গিগোষ্ঠী কর্তৃক সমগ্র উপকূলবর্তী শহর জিনজিবার দখল প্রমাণ করে এ অঞ্চলে সত্যিকারার্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে পরিবর্তন আসছে। খুব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে আরব বিশ্বের সমাজ। ক্ষমতাসীনরাও কিছু কিছু ছাড় দিচ্ছেন। নতুন সংবিধান, নয়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নতুন নতুন শক্তির উদ্ভব হচ্ছে। এরাই আগামী দিনের আরব বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।
[লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়]
tcrahmanbd@yahoo.com
আরব বিশ্বের রাজনীতি কোন পথে
লেখক: ড. তারেক শামসুর রেহমান
দৈনিক ইত্তেফাক
রবি, ১৯ জুন ২০১১, ৫ আষাঢ় ১৪১৮
ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর দেশ ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ‘আরব বসন্ত’ তৃতীয় পর্যায় পার করলো। তিউনিসিয়ার বেকার কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট বউকুজিজির আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে যে ‘বিপ্লব’এর শুরু হয়েছিল, সেই ‘বিপ্লব’ একে একে পতন ডেকে আনলো তিউনিসিয়ার বেন আলীর, মিসরের হোসনি মোবারকের ও সর্বশেষ ইয়েমেনের আলী আবদুল্লাহ সালেহের। মধ্যপ্রাচ্য তথা উত্তর আফ্রিকায় যে পরিবর্তনের বাতাস বইছে, তাকে তুলনা করা হচ্ছে ‘প্রাগ বসন্ত’ কিংবা চেকোস্লাভিয়ার ভেলভেট রেভ্যুলেশনের সাথে। প্রাগ বসন্ত সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশ চেকোস্লাভিয়ায় ১৯৬৮ সালে একটি পরিবর্তনের সূূচনা করলেও সমাজতান্ত্রিক সমাজে সেই পরিবর্তন টিকে থাকেনি। সোভিয়েত ট্যাংক সাবেক চেকোস্লাভিয়ার রাজধানী প্রাগে নেমেছিল ও সংস্কারবাদীদের চেক কমিউনিস্ট পার্টি তথা রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে উচ্ছেদ করেছিল। কিন্তু নাট্যকার ভাসলাভ হাভেলের নেতৃত্বে ১৯৮৯ সালে ওই চেকোস্লাভিয়াতেই যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল, তা ছেয়ে গিয়েছিল সমগ্র পূর্ব ইউরোপে। সমাজতন্ত্রের পতন ঘটেছিল। শান্তিপূর্ণ ওই বিপ্লব চিহ্নিত হয়ে আছে, ‘ভেলভেট রেভ্যুলেশন’ হিসেবে। আজ ২২ বছর পর আরব বিশ্বে যে পরিবর্তনের ঢেউ উঠেছে, তাতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পরিবর্তন এসেছে তিউনিসিয়া ও মিসরে। আর এখন পরিবর্তন এলো ইয়েমেনে। লিবিয়া ও সিরিয়ায়ও পরিবর্তনের পথে। লিবিয়ায় গাদ্দাফির পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু যে প্রশ্ন এখন অনেকেই করেন তা হচ্ছে, ‘আরব বসন্ত’ কী ধরনের পরিবর্তন ডেকে আনছে মধ্যপ্রাচ্য তথা উত্তর আফ্রিকায়? ভাসলাভ হাভেল যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তা স্ফুলিঙ্গের মতো সমগ্র পূর্ব ইউরোপে ছড়িয়ে গিয়েছিল। সমাজতান্ত্রিক সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে সেখানে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। গত ২২ বছরে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলেছে। সেখানে নিয়মিতভাবে নির্বাচন হয়। সরকার পরিবর্তন হয় জনগণের ভোটে। গণতান্ত্রিক পার্টিগুলোও বিকাশ লাভ করেছে, যা আগে ছিল না। মানুষ গণতন্ত্রের ফল ভোগ করতে শুরু করেছে। ফ্রিপ্রেস সেখানে। মানুষ সরকারকে সমালোচনা করছে, যা আগে ছিল অকল্পনীয়। পুঁজিবাদনির্ভর অর্থনীতিও সেখানে বিকাশ লাভ করছে। কিন্তু আরব বিশ্বে কী পরিবর্তন আসছে? সেখানে একদলীয় শাসনের পরিবর্তে কী বহুদলীয় গণতন্ত্র বিকশিত হবে? বেন আলী ও তার দল এককভাবে ক্ষমতা পরিচালনা করে গেছেন দীর্ঘ ২৩ বছর। হোসনি মোবারক ও তার দল ক্ষমতায় ছিলেন ৩৫ বছর। আর আবদুল্লাহ সালেহ ছিলেন দীর্ঘ ৩৩ বছর ক্ষমতায়। বেন আলী, হোসনি মোবারক কিংবা আলী আবদুল্লাহ সালেহর শাসন আর যাই হোক গণতন্ত্রসম্মত ছিল না। এখন এদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র কী প্রতিষ্ঠিত হবে?
এই যখন পরিস্থিতি, তখন মরক্কো থেকে এসেছে একটি আশাব্যাঞ্জক খবর। বাদশাহ মুহম্মদ-৬ সেখানে সংস্কারের কথা বলেছেন। জনগণের ভোটে তিনি সেখানে পরিবর্তন আনতে চান। তরুণ এই রাজা ক্ষমতায় আছেন ১৯৯৯ সাল থেকে। তুলনামূলক বিচারে আরব বিশ্বের অন্য দেশগুলোর চেয়ে মরক্কোর অবস্থা অনেক ভালো। গণতন্ত্র ইনডেক্সে ১৬৭টি দেশের মাঝে মরক্কোর অবস্থান ১১৬। আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ১৯৬টি দেশের মাঝে দেশটির অবস্থান ১৪৬। এখন গণভোটে সংবিধান যদি পরিবর্তন আনা হয় এবং সেখানে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে আরব বিশ্বের রাজনীতির জন্য তা হবে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সম্ভবত, বাদশাহ মুহম্মদ পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছেন। তাই আগেভাগেই তিনি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন, এখন দেখতে হবে তিনি কতটুকু আন্তরিক। তবে একটা ভালো দিক হচ্ছে, মরক্কোতে বড় ধরনের কোনো গণঅভ্যুত্থানের এখনো সৃষ্টি হয়নি। মিসর কিংবা সিরিয়ার মতো পরিস্থিতি সেখানে এখনো সৃষ্টি হয়নি। তার আগেই বাদশাহ মুহম্মদ-৬ সংস্কারের উদ্যোগ নিলেন। তিনি নিজের কিছু ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চান।
আরব বসন্তকে সামনে রেখে এখন অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। এক. লিবিয়া ইরাকের মতো পরিস্থিতি বরণ করবে কি না? অর্থাত্ বিদেশি শক্তি সেখানে অবতরণ করবে কি না? ২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী অবতরণ করেছিল এবং সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। এখন লিবিয়ার পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সেখানে গৃহযুদ্ধ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র তথা ইউরোপীয় শক্তিগুলোর বোমাবর্ষণের পরও মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে উত্খাত করা সম্ভব হয়নি। তিনি ক্ষমতায় আছেন দীর্ঘ ৪১ বছর। এই দীর্ঘ ৪১ বছরে তিনি লিবিয়ায় নতুন ধরনের এক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্ম দিয়েছেন। সেখানে কোনো সংবিধান নেই। গাদ্দাফি রাষ্ট্রের কোনো পদে অধিষ্ঠিত নেই। তাকে অভিহিত করা হয় ‘বিপ্লবের নেতা’ হিসেবে আর এই যুক্তিটিই তিনি দেখাচ্ছেন যে তিনি কার কাছে পদত্যাগ করবেন। তিনি তো কোনো রাষ্ট্রীয় পদে নেই। কার্যত, লিবিয়া এখন ভাগ হয়ে গেছে। রাজধানী লিবিয়া ও এর আশপাশের অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে গাদ্দাফি ও তার অনুগত বাহিনী। অন্যদিকে, পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্রোহীরা। তেলসমৃদ্ধ বেনগাজিকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিদ্রোহীদের আন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন। অনেক আরব রাষ্ট্র ও অন্তর্বর্তী প্রশাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিদ্রোহীরা অর্থ ও অস্ত্র সংকটে আছে। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে লিবিয়ায় যুদ্ধ চললেও গাদ্দাফিকে উত্খাত করা সম্ভব হয়নি। এরই মাঝে আফ্রিকান ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল সার্বিয়া সফর করেছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। এরই মাঝে গাদ্দাফিপুত্র সাইফ আল-ইসলাম নির্বাচনের একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে হেরে গেলে গাদ্দাফি পদত্যাগ করবেন। কিন্তু বিদ্রোহীরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবে রাজি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, গাদ্দাফিকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। তাই লিবিয়ার পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বলা কঠিন। ভয়ের কারণ হচ্ছে, গাদ্দাফি ইতিমধ্যে তার অস্ত্রভাণ্ডার খুলে দিয়েছেন। ধারণা করছি, এই অস্ত্র চলে গেছে ইসলামি জঙ্গি গ্রুপগুলোর হাতে, যারা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘শত্রু’ মনে করে। দুটি গ্রুপের কথা জানা যায়, তাদের সাথে আল-কায়েদার সম্পর্ক রয়েছে। এ দুটি সংগঠন হচ্ছে-Al jamaa al Muqatilah bi libya এবং Libya Islamic Fighting Grop (LIFG)। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যে ক’টি সংগঠনকে আল-কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত বলে চিহ্নিত করেছিল, তার মাঝে LIFG আছে। এরা যদি সত্যি সত্যি অস্ত্র পেয়ে থাকে, তাহলে তা এ অঞ্চলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই লিবিয়ার ভবিষ্যত্ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। দুই. সিরিয়ার পরিস্থিতিও দিনে দিনে ঘোলাটে হচ্ছে। সেনাবাহিনী এখনো প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদকে সমর্থন করে যাচ্ছে, যিনি ক্ষমতায় আছেন ২০০০ সাল থেকে। তার ছোট ভাই সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কমান্ডার। বিদ্রোহীরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর জিসার আল-শুখোর ও মারাত আল-লুমান দখল করে নিলেও সেনারা তা পুনর্দখল করেছে। গৃহযুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছেন এবং লক্ষাধিক মানুষ দেশান্তরিত হয়ে সীমান্তবর্তী তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য। সিরিয়া সংকটে তুরস্ক একটি ভূমিকা পালন করতে পারে। তুরস্কের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঘিরে যে সিরীয় শহর, সেখানে বিদ্রোহীদের ঘাঁটি গড়ে তুলতে পারে, যা কি না হতে পারে ‘লিবিয়ার বেনগাজী’। তিন. ‘আরব বসন্ত’ মিসর ও তিউনিসিয়ায় সরকার পরিবর্তন করেছে। কিন্তু সরকারের চরিত্রের আদৌ কোনো পরিবর্তন ঘটায়নি। পুরনো কাঠামো রয়ে গেছে। সেনাবাহিনী দুটি দেশেই পর্দার অন্তরালে থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছে। দুটি দেশেই ইসলামিক শক্তিগুলো নতুন উদ্যোমে আত্মপ্রকাশ করেছে। মিসরে দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ ছিল ইসলামিক ব্রাদারহুড পার্টি। তারা এখন ইসলামিক ফ্রিডম ও জাস্টিস পার্টি নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, তারা পুরনো দল wafd পার্টির সাথে নির্বাচনী ঐক্য করেছে। আগামী জুলাইয়ে সেখানে সংসদ নির্বাচন। ধারণা করা হচ্ছে, এই ঐক্যজোট নির্বাচনে ভালো করবে। ইতিমধ্যে সংবিধান প্রণয়নেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নতুন সংবিধানে সেনাবাহিনী তাদের প্রতিনিধিত্বে নিশ্চিত করতে চায়। বর্তমান যে সামরিক জান্তা ক্ষমতা পরিচালনা করছে, তারা চাচ্ছেন, নয়া সংবিধানে সেনাবাহিনীর একটা প্রতিনিধিত্ব থাকুক। শেষ পর্যন্ত সংবিধান প্রণয়ন কমিটি এই চাপ উপেক্ষা করতে পারবে কি না এটা দেখার বিষয়। চার. আরব বিশ্বের তরুণ সমাজ এই ‘বিপ্লব’কে সম্পন্ন করেছে। কিন্তু নতুন যে সংস্কৃতি বিকশিত হচ্ছে, তাতে তাদের কোনো স্বীকৃতি বা ভূমিকা নেই। ফলে এদের আশা ভঙ্গ হয়েছে এবং তাদের যদি আবার রাজপথে আন্দোলনে নিয়ে আসে, আমি অবাক হব না। এই তরুণ সমাজ আরব বিশ্বে একটি শক্তি। আলজেরিয়ায় মোট জনগোষ্ঠীর মাঝে শতকরা ৪৬ ভাগ হচ্ছে তরুণ, তিউনিসিয়ায় ২৭ ভাগ, লিবিয়ায় ৪০ ভাগ, মিসরে ২৬ ভাগ, সিরিয়ায় ২০ ভাগ, জর্ডানে ৩৯ ভাগ, বাহরাইনে ২৫ ভাগ, আর মরক্কোতে ১৬ ভাগ। এই শক্তিকে অস্বীকার করা যাবে না। পাঁচ. আরব বিশ্বে গোষ্ঠীতন্ত্র একটি ফ্যাক্টর। দেখা গেছে, নিজস্ব গোষ্ঠী তথা গোত্রের লোকদের নিয়েই ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। গাদ্দাফির পেছনে আছে তার গোত্রের লোকেরা। সিরিয়ার ‘আলাবি’ গোষ্ঠী প্রেসিডেন্ট বাসারের ক্ষমতার অন্যতম উত্স। তিউনিসিয়ায় ক্ষমতাচ্যুত বেন আলী তার পরিবার ও গোত্রের লোকদের নিয়ে একটা ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি করেছিলেন। বাহরাইনে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ; কিন্তু সুন্নি সম্প্রদায় সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়েও সেখানে ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছেন। বাহরাইনের শাসক হামাদ বিন ইসা আল-খলিফার (১৯৯৯ সাল থেকে যিনি ক্ষমতায়) বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিল, তা দমন করতে উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের উদ্যোগে সৌদি সেনাবাহিনী বাহরাইনে প্রবেশ করেছিল এবং আন্দোলন নস্যাত্ করে দিয়েছিল। এটা একটা নতুন উপাদান। ইয়েমেনেও এই কাউন্সিল উদ্যোগ নিচ্ছে। এখানেও উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল সেনাবাহিনী পাঠাতে পারে। স্পষ্টতই আরব বিশ্ব একটা সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের উত্খাত করে সেখানে আদৌ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে কি না-সেটা একটা বড় প্রশ্ন এখন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত ১৯ মে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আরব বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে সাহায্য, সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দিলেও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যে শক্তিশালী হয়েছে তা বলা যাবে না। লিবিয়ার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ, সিরিয়ায় সেনাবাহিনীর শাসনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন, ইয়েমেনে আল-কায়েদা গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত একটি জঙ্গিগোষ্ঠী কর্তৃক সমগ্র উপকূলবর্তী শহর জিনজিবার দখল প্রমাণ করে এ অঞ্চলে সত্যিকারার্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে পরিবর্তন আসছে। খুব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে আরব বিশ্বের সমাজ। ক্ষমতাসীনরাও কিছু কিছু ছাড় দিচ্ছেন। নতুন সংবিধান, নয়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নতুন নতুন শক্তির উদ্ভব হচ্ছে। এরাই আগামী দিনের আরব বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।
[লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়]
tcrahmanbd@yahoo.com
0 comments:
Post a Comment