রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

আওয়ামী লীগের কাছে মানুষ যা প্রত্যাশা করে

এটা নিঃসন্দেহে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আওয়ামী লীগ এক কঠিন সময় পার করছে। দীর্ঘ ৬৫ বছর যে সংগঠনের বয়স, সেই সংগঠনটির সামনে এখন এক কঠিন পরীক্ষা। দশম সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে সম্পন্ন করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি, তা রাজনৈতিক সংকটের কোনো সমাধান দেবে না। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। এর আগে তার প্রতিনিধি হয়ে বাংলাদেশে ঘুরে গেছেন অস্কার ফার্নান্দেজ। দু’-দুবার। কথা ছিল সরকার একটি চিঠি লিখবে। সে চিঠি আর লেখা হয়নি। এখন বান কি মুনও বললেন একটি সমঝোতার কথা। কিন্তু সেই সমঝোতা যে হবে, তা অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে না। সরকারে যে দল থাকে, সেই দলটির দায়িত্ব থাকে অনেক বেশি। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনমনীয় অবস্থান দলটিকে একটি বড় ধরনের প্রশ্নের মাঝে ঠেলে দিয়েছে। এমনকি মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টিও যে আওয়ামী লীগের ওপর সন্তুষ্ট, তা বলা যাবে না।
অনেকগুলো ইস্যুতে আওয়ামী লীগ নিজেদের বিতর্কিত করেছে। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু, ড. ইউনূস ইস্যু, হেফাজতে ইসলামের অবরোধ-সমাবেশে হামলা, মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমানের গ্রেফতার, শেয়ারবাজার ও হলমার্ক-ডেসটিনি কেলেংকারি, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি- এ রকম আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যায়, যেখানে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত দলের জন্য কোনো ভালো সংবাদ বয়ে আনেনি। এমনকি ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া, সাংবাদিক সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ড, বিএনপি অফিসে হামলা কিংবা বিএনপির সমাবেশে গুলি চালানো, র‌্যাবের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমালোচনা দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বারবার বিতর্কিত করেছে। শেয়ারবাজার নিয়ে যে বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়া দরকার ছিল, সরকার তা পারেনি। অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়- গুরুত্বপূর্ণ এ তিনটি মন্ত্রণালয় পরিচালনায় আওয়ামী লীগ কোনো দক্ষ নেতৃত্ব আমাদের উপহার দিতে পারেনি। একাধিক মন্ত্রণালয়ে সুশাসনের অভাব ছিল লক্ষণীয়। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে ‘কালো বিড়াল’ খ্যাত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ ও আবার মন্ত্রিসভায় ফিরে আসা এবং দীর্ঘদিন দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে থেকে যাওয়া জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিলেও তা দল বা সরকারের ভাবমূর্তি উদ্ধারে কোনো সাহায্যে আসেনি। সরকার এককভাবে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংসদ হয়ে পড়েছে অনেকটাই একদলীয়।
আগস্টের শেষদিকে দুই নেত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের ফোনালাপ রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান আলোচিত বিষয় হলেও এর মধ্য দিয়ে যে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে তা হচ্ছে, আমাদের দেশের রাজনীতিকরা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ। তাদের এ ব্যর্থতার ফলে জাতিসংঘ মহাসচিবকে পর্যন্ত ‘হস্তক্ষেপ’ করতে হচ্ছে। জাতিসংঘের মতো একটি বিশ্বসংস্থা আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করবে কিংবা তাদের ‘নির্দেশমতো’ আমাদের রাজনীতিকরা কাজ করবেন, এটা সুস্থ গণতন্ত্র চর্চার পথে একটি অন্তরায়। এটা কখনও কাম্য হতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্য, একটি ন্যূনতম ইস্যুতেও বাংলাদেশের রাজনীতিকরা এক হতে পারছেন না। যদিও তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলেন, তৃতীয় শক্তির ক্ষমতা গ্রহণের বিরুদ্ধে কথা বলেন, কিন্তু গণতন্ত্রের মূল যে কথা- পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখা, এটি তারা নিশ্চিত করতে পারছেন না। স্বাধীনতার ৪২ বছর পার হওয়ার পরও একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজ আমরা আজও বিনির্মাণ করতে পারিনি। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন আমাদের রাজনৈতিক নেতারা। তারপর অনেক সময় পার হয়েছে। কিন্তু সে সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং গণতন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার, সংসদীয় সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি। আমরা একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেও ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো উদ্যোগই সফলতা পায়নি।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে দেশে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হলেও মাত্র ১৭ বছরের মধ্যে সংবিধানে সংশোধনী এনে তা বাতিল করা হয়। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর একটা বড় অংশ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে থাকলেও আওয়ামী লীগ এককভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে সংবিধানে সংশোধনী আনে। যদিও এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের একটি রায় ছিল। ২০১২ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই প্রধান বিরোধী দল একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে আসছে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে কোনো সমঝোতা হচ্ছে না। ফলে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। আর এ সংকটকে কেন্দ্র করেই বান কি মুন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু এতে করে একটা সমাধান বের হবে, এটা মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন পর্যন্ত সরকার কার্যকর থাকবে। তার এ বক্তব্য বিতর্কের মাত্রা বাড়িয়েছে। কেননা এর আগে ২৫ অক্টোবর সংসদ ভেঙে দেয়ার যে প্রতিশ্র“তি তিনি দিয়েছিলেন, তা ছিল যৌক্তিক। ‘নির্বাচন পর্যন্ত সংসদ কার্যকর থাকলে’ নানা জটিলতা তৈরি হবে। এ সময় পর্যন্ত যারা সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল থাকবেন, তারা নির্বাচনে প্রভাব খাটাবেন। বিশেষ করে যারা সরকারি দলের সংসদ সদস্য হিসেবে থাকবেন, তারা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসনের ওপর প্রভাব খাটাবেন। এতে করে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তাতে করে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে নির্বাচিত এমপিকে অস্বীকার করা কোনোমতেই সম্ভব হয়ে উঠবে না। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে তখন স্থানীয় এমপির ‘চাপ’ অস্বীকার করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
আমরা এর আগে একাধিকবার উল্লেখ করেছিলাম, বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামোয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন নানা কারণে সরকারের ওপর নির্ভরশীল। স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়োগ দেয় সরকার। তাদের ওপর নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্তৃত্ব বা প্রভাব নেই। তারা স্থানীয় প্রশাসনকে কোনো ‘নির্দেশ’ও দিতে পারেন না। আর স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রের জনপ্রশাসন। এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেকে যাবেন। ফলে ওই সময় তার নেতৃত্বাধীন যে সরকার থাকবে, সেই সরকারের অধীনে যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থাকবে, তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা যাবে না। এরই মধ্যে প্রশাসনে ব্যাপকভাবে রাজনীতি ঢুকে গেছে। জনপ্রশাসনে সরকারের সমর্থক কর্মকর্তাদের প্রমোশন দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে যারা সরকারের ঠিক ‘বন্ধু নন’ এমন কর্মকার্তাদের ওএসডি অথবা ছাঁটাই করা হয়েছে। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাঠামোকে এভাবে রেখে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী নিজে ও একাধিক মন্ত্রী প্রায়ই একটা কথা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবেই বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। কিন্তু তারা জানেন না, ভারতের নির্বাচন কমিশন আর বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এক নয়। ভারতের নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে নয়। তারা নির্বাচন পূর্বকালীন তিন মাস যে সাংবিধানিক ক্ষমতা ভোগ করে, আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশনের সেই ক্ষমতা নেই। সরকারের জন্য একটা সুযোগ এসেছিল সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময়। তখন অনেক ধারায় পরিবর্তন আনা হয়। সরকার ইচ্ছা করলে তখন নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত সংবিধানের ধারায় পরিবর্তন এনে নির্বাচন কমিশনকে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন ও স্বাধীন করতে পারত। কিন্তু সরকার তা করেনি। ফলে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।
সরকারের কাছে সুযোগ ছিল নির্বাচনকালীন একটি সরকারের রূপরেখা (তত্ত্বাবধায়কের পরিবর্তে) সংবিধানে সংযোজিত করার কিংবা ‘নির্বাচিত ব্যক্তিদের’ দিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের কাঠামো সংসদে উপস্থাপন করার, যা উচ্চ আদালতের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা সংক্রান্ত রায়ে উল্লেখ করা হয়েছিল। ড. ইউনূস ইস্যুতে সরকারের অবস্থান (রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তার বিচার দাবি করেছেন দলের নীতিনির্ধারকদের একজন) দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে দলটির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেনি। শীর্ষ পর্যায় থেকে নিু পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীদের দুর্নীতি আন্তর্জাতিক আসরেও সুশাসনের প্রশ্নে সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে। অভিজ্ঞ রাজনীতিক ‘কালো বিড়াল’ খ্যাত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের প্রতি অন্যায় করেছেন। তার কারণে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়েছে। সুরঞ্জিত বাবু নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিসভায় রেখে সাধারণ মানুষের সেন্টিমেন্টের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছেন।
নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার নামই গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে এককভাবে নির্বাচন করা, বিরোধী দলের নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে দমননীতি অব্যাহত রাখা, দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি না দিয়ে পুরস্কৃত করা, তথাকথিত তৃতীয় শক্তির ক্ষমতা গ্রহণের কথা বলে মূল সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া- এসব আর যাই হোক, গণতন্ত্র হতে পারে না। গণতন্ত্রের অপর নাম পরমতসহিষ্ণুতা। অপর পক্ষকে গ্রহণযোগ্যতায় নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার নামই গণতন্ত্র। সম্ভবত এ কারণেই বলা হয়, বিরোধী দল সরকারেরই একটা অংশ। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্রের এ স্পিরিটের প্রতিফলন দেখিনি আমরা। যেখানে বিরোধী দলকে নিয়ে সরকারের কাজ করার কথা, সেখানে সরকার কর্তৃক বিরোধী দলকে ‘ধ্বংস’ করার চেষ্টাই আমরা দেখেছি। সরকারের শেষ সময় এসে নির্বাচন কমিশন যখন বিএনএফ নামে একটি সংগঠনকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিতে উদ্যোগী হয়, তখন সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয় বৈকি! বিএনপির ধানের শীষের পরিবর্তে বিএনএফ যখন গমের শীষ প্রতীকের জন্য আবেদন করে, তখনও ইসি থাকে নির্বিকার!
বান কি মুনের সর্বশেষ উদ্যোগও তাই যখন ব্যর্থ হওয়ার পথে(?), তখন এ প্রশ্নটাই সামনে চলে আসে যে, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যদি এককভাবে নির্বাচন করে (সংবিধান অনুযায়ী যা বাধ্যতামূলক), তাহলে ইতিহাস আওয়ামী লীগকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে? ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। সংসদ বয়কটের ‘কালচার’ শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ, যা আজ এক ‘সংসদীয় ব্যাধি’তে পরিণত হয়েছে। এক-এগারোর ঘটনার আগে ‘লগি-বৈঠার’ আন্দোলন কিংবা পরে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকারের সব কর্মকাণ্ডকে সমর্থনের ঘোষণার পরও এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল। কারণ মানুষ একটি পরিবর্তন চেয়েছিল। আজ তাই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, আওয়ামী লীগ জনমানুষের সেই প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে? সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন হোক, কিন্তু তা যেন হয় গ্রহণযোগ্য। একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের আওতায় নির্বাচনের আয়োজন করা এখনও সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী যদি জানিয়ে দেন, তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন না, তাহলে জাতি এ বড় সংকট থেকে মুক্তি পাবে। এ ক্ষেত্রে সংসদের নির্বাচিত একজন ব্যক্তিকে (যিনি বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন) অথবা সংসদের বাইরে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে (যিনি উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদে আসবেন) সরকারপ্রধানের দায়িত্ব দেয়া সম্ভব। একটি ‘এলডার্স কাউন্সিল’ গঠন করেও সমস্যার সমাধান করা যায়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একটি দলের কাছ থেকে মানুষ এমনটাই প্রত্যাশা করে।
৬ সেপ্টেম্বর, দৈনিক যুগান্তর।
অস্টিন, টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র
ড. তারেক শামসুর রেহমান : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com

0 comments:

Post a Comment