রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বারো বছর.

আগামী ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর ১২ বছর পার করবে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তথাকথিত এক সন্ত্রাসী হামলায় নিউইয়র্কের বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ‘টুইন টাওয়ার’ ধসে পড়েছিল। হাইজ্যাক করা দুটো বিমান আছড়ে পড়েছিল ভবন দুটোর ওপর। কয়েক মিনিটের মধ্যে ভবন দুটো গলে পরিণত হয়েছিল ধ্বংসস্তূপে। ওই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন তিন হাজার মানুষ, যাদের মাঝে বাংলাদেশী ছিলেন ১৪ জন। ওই সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল আল কায়দা আর ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে। তার পরের কাহিনী সবার জানা। লাদেনকে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার আশ্রয় দিয়েছে, এই অভিযোগ তুলে আফগানিস্তানে ইঙ্গ-মার্কিন বিমান হামলা চালিয়ে উৎখাত করা হলো তালেবান সরকারকে। দখল করে নেয়া হলো দেশটি। তারপর ২০০৩ সালে ইরাকের কাছে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে দখল করা হলো ইরাক। এর ঠিক আট বছর পর একই প্রক্রিয়ায় সাদ্দাম হোসেনের মতো উৎখাত করা হলো লিবিয়ার গাদ্দাফিকে। কোনো একটি ক্ষেত্রেও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন নেয়া হয়নি। মূলত ‘টুইন টাওয়ার’-এর ঘটনাবলির পর মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলোতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নামে এক ধরনের ‘যুদ্ধ’ পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র! সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ এই ‘যুদ্ধ’ শুরু করলেও, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও এই ‘যুদ্ধ’ অব্যাহত রাখছেন। বারাক ওবামাই লিবিয়ায় বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর আজ বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে সিরিয়ায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি কংগ্রেসের সমর্থন চেয়েছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, এই সমর্থন তিনি পাবেন। তিনি লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিরোধিতা করতে গিয়ে যাদের হাতে অস্ত্রশস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন, তাদের মাঝে আল কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনও রয়েছে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে সিরিয়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো অস্ত্র ও অর্থ পৌঁছে যাচ্ছে আল কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর কাছে। যুক্তরাষ্ট্র আজও আল কায়দার বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’-এর কথা বলে। অথচ বাস্তবে সেই আল কায়দাকেই তারা প্রমোট করছে। সিরিয়ার ক্ষেত্রেও এ কথাটা প্রমাণিত হলো।

এটা সত্য, এখন অব্দি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়া আক্রমণের নির্দেশ দেননি। আক্রমণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিলেও নানা কারণে তিনি কিছুটা সময় নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ‘যুদ্ধ’ শুরু করার একমাত্র অধিকার দেয়া হয়েছে কংগ্রেসকে। প্রেসিডেন্ট এককভাবে যুদ্ধ শুরু করতে পারেন না। তবে এটাও সত্য, ২০১১ সালে লিবিয়া আক্রমণের সময় ওবামা একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কংগ্রেসের সমর্থন তিনি তখন নেননি। এবারে প্রস্তুতিটা চূড়ান্তই ছিল। সবাই যখন অপেক্ষা করছিল প্রেসিডেন্টের নির্দেশের, তখন প্রেসিডেন্ট কিছুটা সময় নিলেন। এর কারণ একাধিক। প্রথমত, কংগ্রেসের সদস্যদের একটি চিঠি। ১১৬ জন কংগ্রেস সদস্য প্রেসিডেন্টকে একটি চিঠি লিখে কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া যুদ্ধ শুরু না করার অনুরোধ করেছেন। একই সঙ্গে সিনেটের সভাপতিও একটি চিঠি দিয়েছিলেন যুদ্ধ শুরু না করার জন্য। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাজ্যের সমর্থন তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন। শেষ মুহূর্তে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হাউস অব কমনসে সিরিয়া প্রশ্নে ভোটাভুটিতে হেরে গেছেন। ব্রিটেনের সমর্থন ওবামা পাবেন না। ব্রিটেনের বিরোধী দল সিরিয়া আক্রমণের বিপক্ষে। তৃতীয়ত, ওবামা চাচ্ছেন সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের ব্যাপারে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা কী সিদ্ধান্ত দেন, তা দেখার। একই সঙ্গে ওবামা চাচ্ছেন নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়া আক্রমণের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি সিরিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। চুতর্থত, বিশ্ব আসরে দুটি বড় শক্তি রাশিয়া ও চীন সিরিয়া আক্রমণের বিরুদ্ধে। এমনিতেই বেশ ক’টি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। সিরিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত দিয়ে ওবামা চাচ্ছেন না রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি হোক। পঞ্চমত, মার্কিন জনমত ও মার্কিন অর্থনীতিও যুদ্ধের পক্ষে নয়।

এমনিতেই আফগানিস্তানে এবং ইরাক-লিবিয়া যুদ্ধে মার্কিন অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে সত্য, কিন্তু সিরিয়া যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত নয় মার্কিন অর্থনীতি। মার্কিন সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ডেমপসে স্বীকার করেছেন, প্রতি মাসে এক বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হলে। তাই ওবামা প্রশাসন কিছুটা পিছিয়ে এসেছে। কিন্তু যুদ্ধে তাকে যেতেই হবে। যুদ্ধ শুরু করা ও দীর্ঘস্থায়ী করার মধ্য দিয়েই মার্কিন অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব ফিরে আসে। যুদ্ধের সঙ্গে মার্কিন অর্থনীতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যুদ্ধ যদি শুরু না হয়, তাহলে মার্কিন অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব আসবে না। কেননা মার্কিনি তৈরি কোনো পণ্য এখন আর বিশ্ববাজারে দাঁড়াতে পারে না। সহজলভ্য চীনা পণ্যে খোদ মার্কিন বাজার এখন সয়লাব। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সটাইল সারা বিশ্ব কর্তৃত্ব করত। এখন চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ আর ল্যাতিন আমেরিকার তৈরি পোশাকের সহজলভ্যতার কারণে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই নিজেদের তৈরি পোশাক পাওয়া যায় না। তাই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে চাই যুদ্ধ। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা। যেমনটি আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম ইরাকে। ইরাক যুদ্ধের পর ইরাক পুনর্গঠনের নামে আমেরিকান কোম্পানিগুলো সেখানে এককভাবে কাজ পেয়েছে। আর ইরাকের মালিকি সরকার তেল বিক্রি করে মার্কিনি কোম্পানিগুলোর দেনা পরিশোধ করেছে। এতে করে একদিকে মার্কিনি কোম্পানিগুলোর অর্জিত অর্থ মার্কিন বাজারে প্রবেশ করেছে, যা অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখেছিল। এখন ইরাকের পুনর্গঠন এক রকম শেষ। সেনাবাহিনী সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে অনেক আগেই। এমনকি ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকেও সব সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সচল হবে কীভাবে? তাই একটি যুদ্ধ চাই।

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলে আসছে প্রায় ২৯ মাস ধরে। সিরিয়ায় বাশারবিরোধী একটি রাজনৈতিক মোর্চা তথা প্রবাসী সরকার গঠন করা, বিদ্রোহী সেনাবাহিনী গঠন ও তাদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র স্বয়ং। এটা কোনো রাখঢাকের বিষয় ছিল না। কিন্তু এই যুদ্ধ সিরিয়ার অর্থনীতিকে পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। যে সিরিয়া ছিল খাদ্যে ও উৎপাদিত পণ্যে স্বয়ংসম্পন্ন একটা দেশ, সেই দেশটি এখন খাদ্য ও পণ্য আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বেকার সমস্যা যেখানে যুদ্ধের আগে তেমন একটা ছিল না, এখন তা শতকরা ৬০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। যেখানে যুদ্ধের আগে তেল উৎপাদিত হতো দৈনিক ৩ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল প্রতি দিন, সেখানে এখন উৎপাদিত হয় মাত্র ২০ হাজার ব্যারেল। শুধু তেল উৎপাদনেই ক্ষতির পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন ডলার। সিরিয়ার মুদ্রার (পাউন্ড) ব্যাপক দরপতন হয়েছে। আগে ডলারে পাওয়া যেত ৪৭ পাউন্ড, এখন ২৫০ পাউন্ডে পাওয়া যায় ১ ডলার। জনসংখ্যার শতকরা ৭৯ ভাগ গরিব হয়ে গেছে যুদ্ধের কারণে। অথচ যুদ্ধের আগে গরিব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এক ভাগেরও কম ছিল। স্বাস্থ্যসেবা পরিপূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। দেশের ৭৫টি হাসপাতালের মাঝে এখন চলছে মাত্র ৩০টি। এক সময় সরকার জ্বালানি তেল ও খাদ্যে সাবসিডি দিত, যার পরিমাণ ছিল বছরে ৬ মিলিয়ন ইউরো। এখন তা শূন্যের কোটায়। যুদ্ধের আগে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৮ মিলিয়ন ডলার। এখন তা এক রকম শূন্য (ইকোনমিস্ট, ১০ এপ্রিল, ২০১৩)। তাই যুদ্ধ না হলে, এখানে মার্কিন কনট্রাক্টররা আসবেন না, তেল উৎপাদন বাড়ানো যাবে না। ‘আরেকটি ইরাক’ও তৈরি হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি বহুজাতিক বাহিনী ইরাকি বাহিনীর কুয়েত দখল থেকে মুক্ত করেছিল। ২০০৩ সালে ইরাকের কাছে মানব বিধ্বংসী মারণাস্ত্র রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বাগদাদে মিসাইল হামলা চালিয়ে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করেছিল। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল ২০১১ সালে লিবিয়ায়। এবার যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ‘মানবতা রক্ষায়’ হস্তক্ষেপ করেছিল এবং গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। এক্ষেত্রে ১৯৯১ সালে কুয়েতকে ইরাকি দখলমুক্ত করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের সাহায্য নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০০৩ ও ২০১১ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরাক ও লিবিয়ায় সামরিক আগ্রাসন চালাতে কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। এবারের ক্ষেত্রেও তেমনটি হতে যাচ্ছে। লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে উৎখাতের ব্যাপারে ব্যবহৃত হয়েছিল ‘ঐঁসধহঃধরধহ ওহঃবৎাবহঃরড়হ’-এর তত্ত্বটি। আর এবারে ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে ‘জবংঢ়ড়হংরনরষরঃু ঃড় চৎড়ঃবপঃ’ তত্ত্বটি। এর মূল কথা হচ্ছে মানবতা রক্ষায় বিশ্বশক্তির দায়িত্ব।

যেহেতু সিরিয়ায় সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে(?), সেহেতু সাধারণ মানুষকে রক্ষায় পশ্চিমা শক্তি দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবেই এই সামরিক হস্তক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে! এখানে বলা ভালো, সিরিয়ার ঘটনাবলি সে দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। জাতিসংঘের চার্টারে উল্লেখ করা আছে, একটি দেশ অপর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যদি এমন কোনো ঘটনার জন্ম হয় যে, সেখানে স্থিতিশীলতা ও গণহত্যা রোধে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে, তাহলে কাজটি করতে হবে নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। ইরাকের (২০০৩) ক্ষেত্রে কিংবা লিবিয়ার ক্ষেত্রেও (২০১১) এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়নি নিরাপত্তা পরিষদ। সিরিয়ার ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা পরিষদ এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে এটাও সত্য, আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনে ‘জবংঢ়ড়হংরনরষরঃু ঃড় চৎড়ঃবপঃ’-এর একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। তবে এ ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি এবং এটা কোনো আন্তর্জাতিক আইনও নয়।

এর অর্থ হচ্ছে সিরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক আগ্রাসন আন্তর্জাতিক আইন অনুমোদন করে না। তবে ওবামাকে শেষ পর্যন্ত সিরিয়ায় আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দিতে হবে! মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ী, ইসরাইলি লবির চাপ রয়েছে। তবে পরিস্থিতি এবার ভিন্ন। এই যুদ্ধ শুধু আর সিরিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। আঞ্চলিক শক্তিগুলো, এমনকি বৃহৎ শক্তিগুলোর জড়িয়ে পড়াও বিচিত্র কিছু নয়। তেলের জন্য ইরাকে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বুশ। তিনি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ওয়াদা করেছিলেন, প্রতিটি ইরাকিকে তিনি খাদ্য, বাসস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবেন। দীর্ঘ ১০ বছর পার হওয়ার পরও ইরাকিরা সেই নিরাপত্তা পায়নি। সেই তেলের কারণেই লিবিয়ায় বিমান আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিলেন ওবামা। কিন্তু লিবিয়ায় মানবাধিকার নিশ্চিত করা যায়নি। বরং সেখানে মৃত্যুর হার বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র যেখানেই তথাকথিত সন্ত্রাস দমনের নামে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে, সেখানেই হস্তক্ষেপ পরবর্তী সময়ে মৃত্যুর হার বেড়েছে। সাধারণ মানুষ, যাদের মাঝে শিশু ও মহিলাদের সংখ্যা বেশি, তারাই বেশি মারা গেছেন। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া এর বড় প্রমাণ। আজ তাই সিরিয়ায় হামলা চালানোর যে নির্দেশ প্রেসিডেন্ট দিতে যাচ্ছেন, তাতে করে একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে যাচ্ছে সিরিয়ায়। এরই মধ্যে প্রায় ২০ লাখ মানুষ দেশান্তরিত হয়েছে। তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন সন্নিহিত বিভিন্ন দেশের শরণার্থী শিবিরে।

যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নামে নিজেরাই সারা বিশ্বে এক ধরনের সন্ত্রাসকে উসকে দিচ্ছে। একটি দেশের সরকার উৎখাতের সিদ্ধান্ত সে দেশের জনগণকে না দিয়ে, নিজেরাই সামরিক শক্তি বলে ওই সরকারকে উৎখাত করছে। এক্ষেত্রে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেও তারা দ্বিধা করছে না। এটাই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নীতি। মুখে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর কথা বললেও, প্রকারান্তরে সন্ত্রাসকে তারাই জিইয়ে রাখছে। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর বর্ষপূর্তি ও সিরিয়া আক্রমণের পূর্বাহ্নে এ কথাটাই মনে পড়ে গেল আবার।
টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
ড. তারেক শামসুর রেহমান 
অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলাম লেখক
tsrahmanbd@yahoo.com
দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
www.alokitobangladesh.com/editorial/2013/09/10

0 comments:

Post a Comment