রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ওবামা কি শেষ কথাটা বলে ফেলেছেন?

বারাক ওবামা কি সিরিয়া সম্পর্কে শেষ কথাটা বলে ফেলেছেন? ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আপাতত ‘সিরিয়া আক্রমণে’ না যাওয়ার যে সিদ্ধান্তের কথা তিনি জানিয়েছেন, তাতে করে একটি প্রশ্ন ঘুরেফিরে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে আর তা হচ্ছে যুদ্ধ কি শেষ পর্যন্ত এড়ানো গেল সিরিয়ায়? এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে সিরিয়াসংক্রান্ত ভোটাভুটি পিছিয়ে গেছে এবং পররাষ্ট্র সচিব জন কেরি মিত্রদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার জন্য ইউরোপ সফর করছেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা তার ভাষণে বেশ কিছু কথা বলেছেন। এক. তিনি রাশিয়ার প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন এবং চাচ্ছেন সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের ভান্ডার আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে ছেড়ে দেয়া হোক। দুই. জাতিসংঘের অস্ত্র পরিদর্শকরা নিরাপত্তা পরিষদের কাছে তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করবেন। এ জন্য তিনি অপেক্ষা করবেন। তবে তিনি যে শেষ পর্যন্ত সিরিয়া আক্রমণ করবেন না, তা কিন্তু তিনি বলেননি। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন, সিরিয়ার কাছে যে রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে, তা তারা তাদের নাগরিকদের ওপর ব্যবহার করেছেন! যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে চুপ করে বসে থাকতে পারে না।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গেল সপ্তাহে যুদ্ধের যে আবহ তৈরি হয়েছিল, তা এখন কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছে। কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। সিরিয়া নিজে স্বীকার করেছে, তাদের কাছে রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে এবং দেশটি ওইসব অস্ত্র আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ তথা ধ্বংস করে দিতে রাজি! কিন্তু বিষয়টি খুব সহজ হবে না। সিরিয়ায় যে রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে, তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা কিংবা জাতিসংঘের ওই পরিদর্শন টিমে কারা কারা থাকবেন, এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। কেননা জাতিসংঘের রাসায়নিক অস্ত্র পরিদর্শনের যে টিম রয়েছে, তার সদস্যদের একটা বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। সুতরাং অস্ত্র পরিদর্শন নিয়ে ভবিষ্যতে সিরিয়ার সঙ্গে একটা বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে।

রাশিয়ার ভূমিকাও স্পষ্ট নয়। সিরিয়ায় রাশিয়ার স্বার্থ রয়েছে। তবে ‘আপাতত যুদ্ধ এড়িয়ে’ ওবামা মার্কিন জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছেন। অবশ্য ‘যুদ্ধে’ যাওয়া তার জন্য অত সহজ ছিল না। জনমত তার বিপক্ষে ছিল। উপরন্তু কংগ্রেস ‘যুদ্ধে’ যাওয়ার অনুমতি দিত, এটাও ওবামা নিশ্চিত করতে পারেননি। মার্কিন সমাজে বেকারত্ব, ঋণ ইত্যাদি বেড়ে যাওয়ায় ‘যুদ্ধব্যয়’ বহন করার ক্ষমতা এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির নেই। উপরন্তু সব জনমত উপেক্ষা করে ওবামা যদি যুদ্ধ ঘোষণা করতেন, তাহলেও তিনি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করতেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়া কোনো যুদ্ধ আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ। কেননা, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, এ ধরনের একটি ‘চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ’ আরও বেশি মাত্রায় সহিংসতার জন্ম দেয়। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া এর বড় প্রমাণ।

অধ্যাপক স্টেফান জুনেস তার একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুদ্ধপরবর্তী দেশে একনায়কতন্ত্রের জন্ম হয়। সিরিয়ায় যদি ‘যুদ্ধ’ শুরু হয়ে যেত, তাহলে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সেখানে একত্রিত করত। তারা বাশার আসাদকে সমর্থন করতেন। তাতে প্রচ- এক মার্কিন বিরোধিতার জন্ম হবে, যা ছড়িয়ে যাবে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশে। পশ্চিমা গবেষকরা যুক্তি তুলে ধরে দেখিয়েছেন, এ ধরনের যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতিই হয়েছে বেশি। যুদ্ধ শুরু হলে তা দীর্ঘায়িত হয় (আফগানিস্তান, ইরাক) এবং সামাজিক খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু অধিকার) ব্যয় বরাদ্দ কমে যায়। মার্কিন গবেষকরা দেখিয়েছেন, বাশারের বিকল্প কোনো একক নেতৃত্ব সিরিয়ার বিদ্রোহীরা তৈরি করতে পারেননি। বর্তমানে প্রায় ৮০০ থেকে ১২০০ সশস্ত্র গ্রুপ বিচ্ছিন্নভাবে ‘যুদ্ধ’ করছে সরকারি সৈন্যদের বিরুদ্ধে। এদের এক কাতারে দাঁড় করানো হবে কঠিন কাজ। ফলে ‘দ্বিতীয় আরেকটি সোমালিয়া’র জন্ম হতে পারে আসাদপরবর্তী সিরিয়ায়। সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হলে আল কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলো আরও শক্তিশালী হবে। এরই মধ্যে ‘জাবহাত আল নুসরা’ নামে একটি সিরীয় সংগঠনের নাম পাওয়া গেছে, যাদের সঙ্গে আল কায়দার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ সংগঠনকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে এ সংগঠনটিও আর্থিক ও অস্ত্রশস্ত্র সাহায্য হিসেবে পেয়েছে। আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, তালেবানদের আর্থিক ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। অথচ এক সময় এ তালেবানরাই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল। এর আগে ওবামা ও তার নীতিনির্ধারকরা যুদ্ধের কথা বললেও কীভাবে এখান থেকে বেরিয়ে আসবেন, তার কোনো পরিকল্পনার কথা বলেননি। এ যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ব নতুন করে এক ধরনের ‘প্রক্সিযুদ্ধ’ (যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া আর ইসরাইল বনাম ইরান) প্রত্যক্ষ করতে পারে।

বলা ভালো, যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চলে সামরিক হস্তক্ষেপের ইতিহাস রয়েছে। অতীতে ১৯৯১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি বহুজাতিক বাহিনী ইরাকি বাহিনীর কুয়েত দখল থেকে মুক্ত করেছিল। ২০০৩ সালে ইরাকের কাছে মানব বিধ্বংসী মারণাস্ত্র রয়েছে, এ অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বাগদাদে মিসাইল হামলা চালিয়ে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করেছিল। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল ২০১১ সালে লিবিয়ায়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ‘মানবতা রক্ষায়’ হস্তক্ষেপ করেছিল এবং গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। এ ক্ষেত্রে ১৯৯১ সালে কুয়েতকে ইরাকি দখলমুক্ত করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের সাহায্য নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০০৩ ও ২০১১ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরাক ও লিবিয়ায় সামরিক আগ্রাসন চালাতে কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। সিরিয়ার ক্ষেত্রেও তেমনটি হতে পারে। লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে উৎখাতের ব্যাপারে ব্যবহৃত হয়েছিল ‘Humanitarian Intervention’-এর তত্ত্বটি। আর এবার ব্যবহৃত হতে পারে ‘Responsibility to Protect’ তত্ত্বটি। এর মূল কথা হচ্ছে, মানবতা রক্ষায় বিশ্বশক্তির দায়িত্ব। যেহেতু অভিযোগ, সিরিয়ায় সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে (?), সেহেতু সাধারণ মানুষকে রক্ষায় পশ্চিমা শক্তির দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবেই এ সামরিক হস্তক্ষেপ হতে পারে আগামীতে!

এখানে বলা ভালো, সিরিয়ার ঘটনাবলি সে দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। জাতিসংঘের চার্টারে উল্লেখ করা আছে, একটি দেশ অপর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যদি এমন কোনো ঘটনার জন্ম হয় যে, সেখানে স্থিতিশীলতা ও গণহত্যা রোধে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে, তাহলে কাজটি করতে হবে নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। ইরাকের ক্ষেত্রে (২০০৩) কিংবা লিবিয়ার ক্ষেত্রেও (২০১১) এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়নি নিরাপত্তা পরিষদ। সিরিয়ার ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা পরিষদ এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে এটাও সত্য, আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনে ‘Responsibility to Protect’-এর একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। তবে এ ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি এবং এটা কোনো আন্তর্জাতিক আইনও নয়। এর অর্থ হচ্ছে সিরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক আগ্রাসন আন্তর্জাতিক আইন অনুমোদন করে না। যুদ্ধ, সামরিক হস্তক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে অধ্যাপক গ্লেন্ননের (Glennon) একটি বই রয়েছে Limits of Law, Prerogatives of Power। ওই গ্রন্থে গ্লেন্নন উল্লেখ করেছেন, এ ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ।

বিশ্বশক্তি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে তার স্বার্থ রয়েছে, সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপ করে। ‘মানবিক কারণে হস্তক্ষেপ’ কিংবা ‘মানবতা রক্ষায় দায়িত্বশীলতা’র যে যুক্তি সামরিক হস্তক্ষেপের প্রেক্ষাপট তৈরি করে, আফ্রিকায় বুরুন্ডি-রুয়ান্ডায় গণহত্যা বন্ধে কিংবা কসোভো ও ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডা-বুরুন্ডিতে হুতু-তুতসি দ্বন্দ্ব ও গণহত্যায় কয়েক লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। কসোভোতে ১৯১৯ সালে সার্বিয়ার জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানের একপর্যায়ে শেষের দিকে ন্যাটোর বিমান বহর সার্বিয়ার সেনা ঘাঁটির ওপর বিমান হামলা চালালেও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এ সঙ্কটে হস্তক্ষেপ করেনি। আজ সিরিয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তা করতে পারে। কেননা এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রয়েছে।

যারা আন্তর্জাতিক রাজনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা ওয়াশিংটনে অবস্থিত একটি গবেষণা সংস্থা The Project for the New American Century কর্তৃক (১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত) প্রকাশিত গবেষণাপ্রবন্ধ Global US Empire : Rebuilding America’s Defence-Strategy, Forces Resources for a new Century পড়ে দেখতে পারেন।

ওবামা নিজে বলেছেন, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বিমান হামলা ‘সীমিত’ সময়ের জন্য পরিচালিত হবে। সমঝোতা ব্যর্থ হলে এ বিমান হামলা আগামীতে পরিচালিত হবে সিরিয়ার সেনা ঘাঁটিকে কেন্দ্র করে এবং তা সীমাবদ্ধ থাকবে কয়েকদিন মাত্র। এ হামলার উদ্দেশ্য হবে সিরিয়ার সরকারকে বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ‘শাস্তি’ দেয়া। এতে করে বাশার কতটুকু ‘শাস্তি’ পাবেন, তা এক ভিন্ন প্রশ্ন। এ হামলা নিঃসন্দেহে বিদ্রোহী সেনাবাহিনীকে উৎসাহ জোগাবে। এমনকি এ বিমান হামলা যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে প্রেসিডেন্ট বাশারের ক্ষমতাচ্যুতিও বিচিত্র কিছু নয়। তবে এ হামলা সিরিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যে নানা জটিলতা ও সঙ্কট তৈরি করতে পারে। এ যুদ্ধ শুধু যে সিরিয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তা নয়। বরং এ যুদ্ধে লেবানন ও তুরস্ক জড়িয়ে পড়তে পারে। এতে করে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে সিরিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার শরণার্থীর মাঝে। বর্তমানে শরণার্থীদের যে সংখ্যা পাওয়া গেছে, তা অনেকটা এ রকমÑ তুরস্ক ৪ লাখ, লেবানন ৭ লাখ, বেক্কা উপত্যকায় ২ লাখ ৪০ হাজার, বৈরুত ১ লাখ ৬০ হাজার, ইরাক ১ লাখ ৫০ হাজার, জর্ডান ৫ লাখ ও মিসরে ১ লাখ ১০ হাজার। এ শরণার্থীরা একটা বড় সমস্যা তৈরি করবে আগামীতে। এরই সঙ্গে সিরিয়া জাতিগতভাবে ভাগ হয়ে যেতে পারে। সাবেক যুগোসøাভিয়ার মতো পরিস্থিতি বরণ করতে পারে সিরিয়া। তাই নয়, সিরিয়ায় আক্রমণ আগামীতে ইরানে সম্ভাব্য হামলায় মার্কিন নীতিনির্ধারকদের উৎসাহ জোগাতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ধরনের একটি হামলায় ইসরাইল খুশি হবে সবচেয়ে বেশি। ইসরাইলের স্বার্থ এতে করে রক্ষিত হবে। বলা ভালো, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে ইসরাইল আতঙ্কিত। একই সঙ্গে সিরিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো নয় ইসরাইলের। একটা ভয় হচ্ছে, এ হামলার কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো। বাশারের অবর্তমানে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়বে বিদ্রোহীরা। আর তাতে করে সুবিধা নেবে আল কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আল বুসরা ফ্রন্ট ও ইসলামিক স্টেট অব ইরাক সংগঠন দুটি। এরা এরই মধ্যে সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকায় তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এ হামলা এ দুটি সংগঠনের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। গাদ্দাফিপরবর্তী লিবিয়া ও সাদ্দামপরবর্তী ইরাকে এরকমটি আমরা লক্ষ্য করেছি।

সিরিয়ায় হামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিঃসন্দেহে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওবামা। তবে এটাই তার শেষ কথা নয়। মার্কিন প্রশাসনে যুদ্ধবাজরা আছেন। তারা যুদ্ধ চান। ইসরাইলি লবিও একটি যুদ্ধ চায়। আজ তাই প্রেসিডেন্ট আসাদের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকবে বিশ্ব। আসাদ যদি টালবাহানা করেন, যদি রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করতে গড়িমসি করেন, তাহলে একটি অনিবার্য হামলাকে তিনি এড়াতে পারবেন না। ভূমধ্যসাগরে মার্কিন রণতরীগুলো এখনও আছে। জেনেভায় সিরিয়াসংক্রান্ত অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ আলোচনা শুরু হয়েছে। আসাদ সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তবে যুদ্ধ শুরু না করার ব্যাপারে শেষ কথাটি ওবামা বলে ফেলেছেন কিনা, তা দেখার জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

হিউস্টন, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ড. তারেক শামসুর রেহমান : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলাম লেখক
দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
tsrahmanbd@yahoo.com - See more at: http://www.alokitobangladesh.com/editorial/2013/09/18/23177#sthash.85P86RJU.dpuf

0 comments:

Post a Comment