মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-এর মতো ভয়ংকর একটি ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে ১২ বছর আগে। আজ সেই ভয়ংকর ঘটনার এক যুগ পূর্ণ হল। সেদিন ছিল মঙ্গলবার। সন্ত্রাসীরা চার চারটি বিমান হাইজ্যাক করেছিল। প্রথম বিমানটি আঘাত করে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রের ১১০ তলা ভবনের ৮০ তলায়। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের সেই বিমানটিতে ছিল ২০ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল। গন্তব্য ক্যালিফোর্নিয়া। এর ঠিক ১৮ মিনিট পর আরও একটি বিমান (ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের) আঘাত করে বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রের দ্বিতীয় ভবনে, ৬০ তলায়। বিশ্ববাসী দেখেছিল, আরও দুটি বিমান একই সঙ্গে হাইজ্যাক হয়েছে। একটি পেন্টাগনে (ওয়াশিংটনে) হামলা চালাল। অপরটি হামলা চালানোর আগেই বিধ্বস্ত হল পেনসেলভেনিয়াতে। ধারণা করা হয়, ওই বিমানের টার্গেট ছিল প্রেসিডেন্ট ভবন হোয়াইট হাউস অথবা কংগ্রেস ভবন ‘ক্যাপিটল হিল’। ইতিহাসের এ জঘন্যতম হামলায় পুরো বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রটি ধসে পড়েছিল। মারা গিয়েছিলেন তিন হাজারের ওপর মানুষ- যারা ওই ভবনে কাজ করতেন এবং উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়ে ৪০০ পুলিশ অফিসারও (যাদের মাঝে ৩৪৩ জন ছিলেন ফায়ার ফাইটার) প্রাণ হারিয়েছিলেন।
৯/১১-এর এ হামলা নানাভাবে চিত্রিত হয়েছে এবং ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তবে এটা স্পষ্ট যে, এ হামলার কারণে মার্কিন সমাজে মুসলমানবিরোধী একটি জনমত তৈরি হয়েছিল এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন আসে। এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে আল-কায়দা নামে একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে এবং এর পরিকল্পনাকারী হিসেবে ওসামা বিন লাদেনকে অভিযুক্ত করা হয়। মূল পরিকল্পনাকারী লাদেনকে আফগানিস্তানে আশ্রয় দেয়া হয়েছে- এটা ছিল যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আফগানিস্তান ‘দখল’ করার একমাত্র যুক্তি। ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংস হওয়ার তিন সপ্তাহ পর ৭ অক্টোবর ইঙ্গ-মার্কিন বিমান হামলা চালানো হল আফগানিস্তানে (অপারেশন এনডুরিং ফ্রিডম)। দখল হয়ে গেল দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র শুরু করল নতুন এক অধ্যায়ের- ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। একের পর এক আক্রান্ত হল মুসলিম দেশগুলো। ২০০৩ সালের মার্চে আক্রান্ত হল ইরাক- অভিযোগ ইরাকের কাছে ডব্লিউএমডি বা মানবজাতি ধ্বংসকারী মারণাস্ত্র রয়েছে। ৪৩ দিনব্যাপী অনবরত বোমাবর্ষণে পতন ঘটল বাগদাদের। কী করুণ সেই ইতিহাস!
কাবুল দখল করার পর যেমন ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, ঠিক তেমনি বাগদাদেও পাওয়া যায়নি ডব্লিউএমডি বা মারণাস্ত্র। ২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট বুশ নিজে তা স্বীকারও করেন। আফগানিস্তানে হামলা করে যেমন মোল্লা ওমরের নেতৃত্বাধীন তালেবান সরকারকে উৎখাত করা হয়, ঠিক তেমনি বাগদাদে উৎখাত হন সাদ্দাম হোসেন। কিন্তু এ ‘যুদ্ধের’ পরিণতিতে, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা অনুযায়ী, ইরাকে মারা যায় ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। আর যুদ্ধের জন্য খরচ হয়েছিল কত? আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বছরে খরচ করেছিল ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলার। এর বাইরে আফগানিস্তানের যুদ্ধের জন্য ব্যয় করেছে ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার (১ হাজার বিলিয়নে ১ ট্রিলিয়ন)। আর ইরাক যুদ্ধে তাদের খরচ হয়েছিল ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার। এ অর্থের জোগান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের করদাতারা। এ বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দিতে গিয়ে সেখানে সামাজিক খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু, ফুড স্টাম্প ইত্যাদি) ব্যয় বরাদ্দ কমেছে। কিন্তু তারপরও ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ থেমে থাকেনি। ২০১১ সালে আক্রান্ত হল লিবিয়া। ইঙ্গ-মার্কিন বিমান হামলা চালানো হল ত্রিপোলিতে। এক সময় পতন ঘটল গাদ্দাফির। সেখানে অবশ্য ইরাক ও আফগানিস্তানের মতো স্থলপথে সেনাবাহিনী পাঠায়নি যুক্তরাষ্ট্র। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’। সেই ‘অপরাধ’ জাতিসংঘ কর্তৃক প্রমাণিত হওয়ার আগেই বাগদাদের মতো বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হয় ত্রিপোলিকে। সাদ্দামের মতো গাদ্দাফিকেও হত্যা করা হয়।
আজ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ক্ষেত্রেও এমনটি হতে যাচ্ছে। গৃহযুদ্ধ সিরিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। সিরিয়া আক্রমণের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদন না দিলেও এ হামলা এখন সময়ের ব্যাপার। বাশারের পরিণতি যে গাদ্দাফি আর সাদ্দাম হোসেনের মতো হবে, সেটাও এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বাশারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে- রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে মানুষ হত্যা- এর সত্যতাও কোনো দিন খুঁজে পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ। তবে বাস্তবতা এটাই, যুক্তরাষ্ট্র নিজ জনগোষ্ঠীর মতামত তথা বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করেই সিরিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৯/১১-এর ঘটনার ১২ বছর পর যে প্রশ্নটি এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে তা হচ্ছে, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র শেষ কোথায়? সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ এ ‘যুদ্ধ’ শুরু করলেও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া বারাক ওবামা দৃশ্যত এ ‘যুদ্ধ’ অব্যাহত রেখেছেন। আর এ যুদ্ধের পুরোটাই পরিচালিত হচ্ছে মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে। একটি ‘মুসলিম বিদ্বেষী’ মনোভাবের যে জন্ম হয়েছিল তা কমেছে, এটি মনে করারও কোনো কারণ নেই। ২০০৯ সালের কায়রো ভাষণে বারাক ওবামা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ‘নতুন এক সম্পর্ক’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু দেখা গেল, বাস্তব ক্ষেত্রে তিনি মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধেই এক ধরনের ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছেন। নিঃসন্দেহে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়। ৯/১১-এর ঘটনা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, বরং অপরাধযোগ্য। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার করা উচিত ছিল। সাদ্দাম হোসেন, গাদ্দাফি কিংবা বাশারের এ আদালতেই বিচার হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। জাতিসংঘ সনদে কোনো দেশ অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যদি কোনো দেশ মানবতাবিরোধী অপরাধ (যেমন অভিযোগ উঠেছে আসাদের বিরুদ্ধে) করে, তাহলে আন্তর্জাতিক আদালত ও আন্তর্জাতিক আইনে তার বিচার হতে পারে। যেমনটি হয়েছিল পানামার শাসক জেনারেল নরিয়েগার ক্ষেত্রে। কিংবা সার্ব যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে। লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট টেইলারেরও বিচার হয়েছে এ আদালতে। এখন হতে যাচ্ছে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট কেনিয়াত্তার বিচার। যুক্তরাষ্ট্র এ আইন সবার ক্ষেত্রে একইভাবে প্রযোজ্য করল না। মুসলিম দেশগুলোর ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ওবামা তার কায়রো ভাষণে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন, তা এখন ‘মৃত’। বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীর আস্থা তিনি অর্জন করতে পারেননি।
প্রশ্ন করা যেতে পারে, ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ পরিচালনা করে লাভ কার হল? ক্ষতি কার হল? প্রথমত, যুদ্ধের একটা বড় অংশের খরচ জোগাতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। এতে করে সেখানকার সামাজিক খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার এখন ৭ শতাংশেরও ওপরে। ২০ মিলিয়ন (২ কোটি) মানুষের চাকরি নেই। ৪৯ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী জানে না পরের বেলার খাদ্য কোত্থেকে আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ঋণের পরিমাণ এখন ৭০ ট্রিলিয়ন ডলার (সান্টিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমস হেমিলটনের মতে), যা আগে ধারণা করা হতো ১৬.৯ ট্রিলিয়ন ডলার। আর ছাত্রদের ঋণ নেয়ার (গ্রাজুয়েশন করার ঋণ) পরিমাণ গত ১০ বছরে বেড়েছে ৪ গুণ। যুদ্ধের পেছনে এত খরচ না হলে সেই অর্থ সামাজিক খাতে ব্যয় করা যেত। দ্বিতীয়ত, বলা হচ্ছে ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধেই এ যুদ্ধ। বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আরব বিশ্বের সরকার উৎখাত আন্দোলনে (ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া) আল-কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো তৎপর। আর দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যেমন সিরিয়ার জাবহাত উল নুসরা, ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া, আহরার আল শাম, লিওয়া আল তাওহিদ কিংবা লিবিয়ায় আল জামআ আল মুকাতিলা বি লিবিয়া ও লিবিয়ান ইসলামিক ফাইটিং গ্র“প- এরা সবাই অস্ত্র ও আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছে তুরস্ক তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। মনে থাকার কথা, এক সময় সোভিয়েত সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের তৈরি করেছিল। তৃতীয়ত, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ পরিচালনা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘ড্রোন’ বিমান হামলা পরিচালনা করছে পাকিস্তান ও ইয়েমেনের মতো দেশে। এতে করে এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী একটা জনমত তৈরি হয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর শতকরা ৭৫ ভাগ যুক্তরাষ্ট্রকে শত্র“ মনে করে। অব্যাহত ড্রোন হামলার কারণে পাকিস্তানে ‘লস্কর-ই তৈয়্যেবা’র মতো জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয়েছে। লিবিয়ায় এসব জঙ্গি সংগঠনের হাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রাণ হারিয়েছেন। ইরাকে এরা আত্মঘাতী বোমা সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। আর সিরিয়ায় বিদ্রোহী বাহিনী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত আলেপ্পো শহরের একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে জাবহাত উল নুসরা ফ্রন্ট। অর্থাৎ মুসলিম বিশ্বে আল কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর তৎপরতা কমেনি, বরং বেড়েছে। চতুর্থত, এ ‘যুদ্ধ’ পরিচালনা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা মার্কিন নাগরিকদের অধিকার খর্ব করছে। যেমন উল্লেখ করা যেতে পারে ফরেন ইনটেলিজেন্স সারভাইলেন্স অ্যাক্ট, ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশন অ্যাক্ট ইত্যাদির কথা। শত শত ই-মেল, ফ্যাক্স, ফোনালাপ এখন সরকারি নজরদারিতে রয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা কঠিন।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ পরিচালনা করতে গিয়ে কোটি কোটি ডলার খরচ করছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যে কমেছে, বাস্তবতা তা বলে না। এতে করে একদিকে অবশ্য খুশি হয়েছে ব্যবসায়ীরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক ও লিবিয়া পুনর্গঠনের নামে মার্কিন কোম্পানিগুলো এখন এসব দেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে। অতিরিক্ত তেল উত্তোলন করে পুনর্গঠনের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। তেলের দামও আর কমেনি। ব্যারেল প্রতি এখন মূল্য ১১২ ডলার, যুদ্ধের আগে এক সময় যা ছিল ৬০ ডলারের কাছাকাছি। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ। তাদের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। মার্কিন জনগণ যখন ৯/১১-এর যুগপূর্তি পালন করছে, ঠিক তার আগে আগস্টে আমি গিয়েছিলাম বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের ধসে যাওয়া ভবন দুটি দেখতে। ২০০২ সালে যখন একবার এখানে এসেছিলাম, তখন পুরো এলাকাটি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল। আজ ১০ বছর পর গিয়ে দেখলাম সেখানে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ ভবন। এক সময় এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘ফ্রিডম টাওয়ার’। এখন বলা হচ্ছে, ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’। ৭২ ভেসেই স্ট্রিটে বিধ্বস্ত হওয়া ভবনের পাশেই এ নতুন বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। নতুন ভবন তৈরিতে ব্যয় হবে ৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। ১ হাজার ৭৭৬ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট এ ভবনে থাকবে ১০৪টি তলা। ফেব্র“য়ারিতে (২০১৪) এটি চালু হবে। এখানেও ব্যবসা! আমি ও আমার ছাত্র কালাম চাঁদা দিয়ে সেখানে ঢুকলাম। প্রবেশপত্রে লেখা আছে চাঁদা ছাড়াই প্রবেশ করা যাবে, অথচ চাঁদা দিতে বাধ্য করা হল পরোক্ষভাবে। এটা এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। শত শত লোক প্রতিদিন এখানে আসে। নিউজার্সি ও ম্যানহাটন সরাসরি ট্রেনও চালু হতে যাচ্ছে। ব্যবসা আর কাকে বলে! অংক করে বলে দেয়া যায় কতদিন লাগবে এই ৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার তুলতে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ৯/১১-এর যুগপূর্তি পালন করছে এমন এক সময় যখন যুক্তরাষ্ট্র আরও একটা ‘যুদ্ধের’ জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এবারের ‘যুদ্ধ’টাও একটি মুসলমান প্রধান দেশ সিরিয়ার বিরুদ্ধে। সিরিয়া সরকার অভিযুক্ত হয়েছে তার নিজ জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে। ৯/১১-এর ঘটনা মার্কিন জাতিকে একত্রিত করেছিল, ঐক্যবদ্ধ করেছিল- যা ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধে’ যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্ব থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দূর করা সম্ভব হয়নি।
৯/১১-এর এ হামলা নানাভাবে চিত্রিত হয়েছে এবং ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তবে এটা স্পষ্ট যে, এ হামলার কারণে মার্কিন সমাজে মুসলমানবিরোধী একটি জনমত তৈরি হয়েছিল এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন আসে। এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে আল-কায়দা নামে একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে এবং এর পরিকল্পনাকারী হিসেবে ওসামা বিন লাদেনকে অভিযুক্ত করা হয়। মূল পরিকল্পনাকারী লাদেনকে আফগানিস্তানে আশ্রয় দেয়া হয়েছে- এটা ছিল যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আফগানিস্তান ‘দখল’ করার একমাত্র যুক্তি। ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংস হওয়ার তিন সপ্তাহ পর ৭ অক্টোবর ইঙ্গ-মার্কিন বিমান হামলা চালানো হল আফগানিস্তানে (অপারেশন এনডুরিং ফ্রিডম)। দখল হয়ে গেল দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র শুরু করল নতুন এক অধ্যায়ের- ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। একের পর এক আক্রান্ত হল মুসলিম দেশগুলো। ২০০৩ সালের মার্চে আক্রান্ত হল ইরাক- অভিযোগ ইরাকের কাছে ডব্লিউএমডি বা মানবজাতি ধ্বংসকারী মারণাস্ত্র রয়েছে। ৪৩ দিনব্যাপী অনবরত বোমাবর্ষণে পতন ঘটল বাগদাদের। কী করুণ সেই ইতিহাস!
কাবুল দখল করার পর যেমন ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, ঠিক তেমনি বাগদাদেও পাওয়া যায়নি ডব্লিউএমডি বা মারণাস্ত্র। ২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট বুশ নিজে তা স্বীকারও করেন। আফগানিস্তানে হামলা করে যেমন মোল্লা ওমরের নেতৃত্বাধীন তালেবান সরকারকে উৎখাত করা হয়, ঠিক তেমনি বাগদাদে উৎখাত হন সাদ্দাম হোসেন। কিন্তু এ ‘যুদ্ধের’ পরিণতিতে, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা অনুযায়ী, ইরাকে মারা যায় ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। আর যুদ্ধের জন্য খরচ হয়েছিল কত? আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বছরে খরচ করেছিল ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলার। এর বাইরে আফগানিস্তানের যুদ্ধের জন্য ব্যয় করেছে ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার (১ হাজার বিলিয়নে ১ ট্রিলিয়ন)। আর ইরাক যুদ্ধে তাদের খরচ হয়েছিল ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার। এ অর্থের জোগান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের করদাতারা। এ বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দিতে গিয়ে সেখানে সামাজিক খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু, ফুড স্টাম্প ইত্যাদি) ব্যয় বরাদ্দ কমেছে। কিন্তু তারপরও ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ থেমে থাকেনি। ২০১১ সালে আক্রান্ত হল লিবিয়া। ইঙ্গ-মার্কিন বিমান হামলা চালানো হল ত্রিপোলিতে। এক সময় পতন ঘটল গাদ্দাফির। সেখানে অবশ্য ইরাক ও আফগানিস্তানের মতো স্থলপথে সেনাবাহিনী পাঠায়নি যুক্তরাষ্ট্র। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’। সেই ‘অপরাধ’ জাতিসংঘ কর্তৃক প্রমাণিত হওয়ার আগেই বাগদাদের মতো বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হয় ত্রিপোলিকে। সাদ্দামের মতো গাদ্দাফিকেও হত্যা করা হয়।
আজ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ক্ষেত্রেও এমনটি হতে যাচ্ছে। গৃহযুদ্ধ সিরিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। সিরিয়া আক্রমণের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদন না দিলেও এ হামলা এখন সময়ের ব্যাপার। বাশারের পরিণতি যে গাদ্দাফি আর সাদ্দাম হোসেনের মতো হবে, সেটাও এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বাশারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে- রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে মানুষ হত্যা- এর সত্যতাও কোনো দিন খুঁজে পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ। তবে বাস্তবতা এটাই, যুক্তরাষ্ট্র নিজ জনগোষ্ঠীর মতামত তথা বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করেই সিরিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৯/১১-এর ঘটনার ১২ বছর পর যে প্রশ্নটি এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে তা হচ্ছে, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র শেষ কোথায়? সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ এ ‘যুদ্ধ’ শুরু করলেও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া বারাক ওবামা দৃশ্যত এ ‘যুদ্ধ’ অব্যাহত রেখেছেন। আর এ যুদ্ধের পুরোটাই পরিচালিত হচ্ছে মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে। একটি ‘মুসলিম বিদ্বেষী’ মনোভাবের যে জন্ম হয়েছিল তা কমেছে, এটি মনে করারও কোনো কারণ নেই। ২০০৯ সালের কায়রো ভাষণে বারাক ওবামা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ‘নতুন এক সম্পর্ক’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু দেখা গেল, বাস্তব ক্ষেত্রে তিনি মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধেই এক ধরনের ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছেন। নিঃসন্দেহে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়। ৯/১১-এর ঘটনা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, বরং অপরাধযোগ্য। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার করা উচিত ছিল। সাদ্দাম হোসেন, গাদ্দাফি কিংবা বাশারের এ আদালতেই বিচার হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। জাতিসংঘ সনদে কোনো দেশ অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যদি কোনো দেশ মানবতাবিরোধী অপরাধ (যেমন অভিযোগ উঠেছে আসাদের বিরুদ্ধে) করে, তাহলে আন্তর্জাতিক আদালত ও আন্তর্জাতিক আইনে তার বিচার হতে পারে। যেমনটি হয়েছিল পানামার শাসক জেনারেল নরিয়েগার ক্ষেত্রে। কিংবা সার্ব যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে। লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট টেইলারেরও বিচার হয়েছে এ আদালতে। এখন হতে যাচ্ছে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট কেনিয়াত্তার বিচার। যুক্তরাষ্ট্র এ আইন সবার ক্ষেত্রে একইভাবে প্রযোজ্য করল না। মুসলিম দেশগুলোর ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ওবামা তার কায়রো ভাষণে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন, তা এখন ‘মৃত’। বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীর আস্থা তিনি অর্জন করতে পারেননি।
প্রশ্ন করা যেতে পারে, ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ পরিচালনা করে লাভ কার হল? ক্ষতি কার হল? প্রথমত, যুদ্ধের একটা বড় অংশের খরচ জোগাতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। এতে করে সেখানকার সামাজিক খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার এখন ৭ শতাংশেরও ওপরে। ২০ মিলিয়ন (২ কোটি) মানুষের চাকরি নেই। ৪৯ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী জানে না পরের বেলার খাদ্য কোত্থেকে আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ঋণের পরিমাণ এখন ৭০ ট্রিলিয়ন ডলার (সান্টিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমস হেমিলটনের মতে), যা আগে ধারণা করা হতো ১৬.৯ ট্রিলিয়ন ডলার। আর ছাত্রদের ঋণ নেয়ার (গ্রাজুয়েশন করার ঋণ) পরিমাণ গত ১০ বছরে বেড়েছে ৪ গুণ। যুদ্ধের পেছনে এত খরচ না হলে সেই অর্থ সামাজিক খাতে ব্যয় করা যেত। দ্বিতীয়ত, বলা হচ্ছে ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধেই এ যুদ্ধ। বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আরব বিশ্বের সরকার উৎখাত আন্দোলনে (ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া) আল-কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো তৎপর। আর দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যেমন সিরিয়ার জাবহাত উল নুসরা, ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া, আহরার আল শাম, লিওয়া আল তাওহিদ কিংবা লিবিয়ায় আল জামআ আল মুকাতিলা বি লিবিয়া ও লিবিয়ান ইসলামিক ফাইটিং গ্র“প- এরা সবাই অস্ত্র ও আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছে তুরস্ক তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। মনে থাকার কথা, এক সময় সোভিয়েত সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের তৈরি করেছিল। তৃতীয়ত, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ পরিচালনা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘ড্রোন’ বিমান হামলা পরিচালনা করছে পাকিস্তান ও ইয়েমেনের মতো দেশে। এতে করে এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী একটা জনমত তৈরি হয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর শতকরা ৭৫ ভাগ যুক্তরাষ্ট্রকে শত্র“ মনে করে। অব্যাহত ড্রোন হামলার কারণে পাকিস্তানে ‘লস্কর-ই তৈয়্যেবা’র মতো জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয়েছে। লিবিয়ায় এসব জঙ্গি সংগঠনের হাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রাণ হারিয়েছেন। ইরাকে এরা আত্মঘাতী বোমা সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। আর সিরিয়ায় বিদ্রোহী বাহিনী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত আলেপ্পো শহরের একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে জাবহাত উল নুসরা ফ্রন্ট। অর্থাৎ মুসলিম বিশ্বে আল কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর তৎপরতা কমেনি, বরং বেড়েছে। চতুর্থত, এ ‘যুদ্ধ’ পরিচালনা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা মার্কিন নাগরিকদের অধিকার খর্ব করছে। যেমন উল্লেখ করা যেতে পারে ফরেন ইনটেলিজেন্স সারভাইলেন্স অ্যাক্ট, ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশন অ্যাক্ট ইত্যাদির কথা। শত শত ই-মেল, ফ্যাক্স, ফোনালাপ এখন সরকারি নজরদারিতে রয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা কঠিন।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ পরিচালনা করতে গিয়ে কোটি কোটি ডলার খরচ করছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যে কমেছে, বাস্তবতা তা বলে না। এতে করে একদিকে অবশ্য খুশি হয়েছে ব্যবসায়ীরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক ও লিবিয়া পুনর্গঠনের নামে মার্কিন কোম্পানিগুলো এখন এসব দেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে। অতিরিক্ত তেল উত্তোলন করে পুনর্গঠনের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। তেলের দামও আর কমেনি। ব্যারেল প্রতি এখন মূল্য ১১২ ডলার, যুদ্ধের আগে এক সময় যা ছিল ৬০ ডলারের কাছাকাছি। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ। তাদের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। মার্কিন জনগণ যখন ৯/১১-এর যুগপূর্তি পালন করছে, ঠিক তার আগে আগস্টে আমি গিয়েছিলাম বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের ধসে যাওয়া ভবন দুটি দেখতে। ২০০২ সালে যখন একবার এখানে এসেছিলাম, তখন পুরো এলাকাটি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল। আজ ১০ বছর পর গিয়ে দেখলাম সেখানে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ ভবন। এক সময় এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘ফ্রিডম টাওয়ার’। এখন বলা হচ্ছে, ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’। ৭২ ভেসেই স্ট্রিটে বিধ্বস্ত হওয়া ভবনের পাশেই এ নতুন বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। নতুন ভবন তৈরিতে ব্যয় হবে ৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। ১ হাজার ৭৭৬ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট এ ভবনে থাকবে ১০৪টি তলা। ফেব্র“য়ারিতে (২০১৪) এটি চালু হবে। এখানেও ব্যবসা! আমি ও আমার ছাত্র কালাম চাঁদা দিয়ে সেখানে ঢুকলাম। প্রবেশপত্রে লেখা আছে চাঁদা ছাড়াই প্রবেশ করা যাবে, অথচ চাঁদা দিতে বাধ্য করা হল পরোক্ষভাবে। এটা এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। শত শত লোক প্রতিদিন এখানে আসে। নিউজার্সি ও ম্যানহাটন সরাসরি ট্রেনও চালু হতে যাচ্ছে। ব্যবসা আর কাকে বলে! অংক করে বলে দেয়া যায় কতদিন লাগবে এই ৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার তুলতে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ৯/১১-এর যুগপূর্তি পালন করছে এমন এক সময় যখন যুক্তরাষ্ট্র আরও একটা ‘যুদ্ধের’ জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এবারের ‘যুদ্ধ’টাও একটি মুসলমান প্রধান দেশ সিরিয়ার বিরুদ্ধে। সিরিয়া সরকার অভিযুক্ত হয়েছে তার নিজ জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে। ৯/১১-এর ঘটনা মার্কিন জাতিকে একত্রিত করেছিল, ঐক্যবদ্ধ করেছিল- যা ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধে’ যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্ব থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দূর করা সম্ভব হয়নি।
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩, দৈনিক যুগান্তর।
হাইল্যান্ড ভিলেজ, টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র
ড. তারেক শামসুর রেহমান : অধ্যাপক,
হাইল্যান্ড ভিলেজ, টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র
ড. তারেক শামসুর রেহমান : অধ্যাপক,
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
tsrahmanbd@yahoo.com
http://www.jugantor.com/window/2013/09/11/
0 comments:
Post a Comment