রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ফোন -সংলাপ ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি

বাংলাদেশের রাজনীতি যখন ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তখন দুটি সংবাদ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মাঝে যথেষ্ট আলোড়ন তুলেছে। এর একটি হচ্ছে মোবাইল ফোনে এরশাদ ও বেগম জিয়ার মতবিনিময়। বান কি মুনের ফোনালাপের পরও নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে জট খুলেছে বলে মনে হয় না। সরকার এখনো আগের অবস্থানে আছে নির্বাচনকালীন একটি সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত হবে। প্রয়োজনে বিএনপি সেই সরকারে যোগ দিতে পারে! প্রধানমন্ত্রী পুনরায় বিএনপিকে সংসদে যোগ দিয়ে কোনো প্রস্তাব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আর বিএনপি তার আগের অবস্থান ধরে রেখেছে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, যারা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবে। গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে রূপরেখা সচিব সভায় উপস্থাপন করেছেন তা বিরোধী জোট তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই রূপরেখা সংকট আরো প্রকট করবে বলেই মনে হয়। বান কি মুনের ফোনালাপের পরও দুটি বড় দল তার অবস্থান পরিবর্তন করেনি। এমনি এক পরিস্থিতিতে বেগম জিয়া-এরশাদ ফোনালাপ সরকারের জন্য যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বেগম জিয়ার সঙ্গে ফোনালাপে এরশাদ স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি আর মহাজোটে থাকছেন না। তার দল এককভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। বেগম জিয়া এরশাদকে ১৮ দলীয় জোটে যোগ দেয়ারও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে এরশাদ তার প্রতিশ্রুতি কতটুকু রক্ষা করবেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেক দিন থেকেই তিনি বলে আসছেন যে, তিনি মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসবেন। তার ‘সেই সময়’ এখনো আসেনি। আদৌ আসবেন কি-না সে প্রশ্ন থেকেই যায়। রাজনীতি সচেতনরা মনে করেন, এরশাদকে নিয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তিনি দুটি বড় দলের কাছে শতকরা একশ’ ভাগ বিশ্বাসযোগ্য নন। তিনি একেক সময় একেক কথা বলেন। বেগম জিয়ার সঙ্গে যে কথা বলেছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হলে তার ঠিক উল্টো কথাটাও তিনি বলতে পারেন। তবে এটা ঠিক এরশাদকে নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকবে। অক্টোবরের ২৫ তারিখ প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তার সর্বশেষ বক্তব্য থেকে এটা মনে করা স্বাভাবিক যে, তিনি তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সংসদ থাকবে, এমন কথাই তিনি বলেছেন। তার এই মন্তব্য সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়ার ওপর একটি কালো দাগ ফেলবে। এরশাদ নাকি এও বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে তিনি রাজি আছেন। এই বক্তব্য আরেকটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করল।
নিঃসন্দেহে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আওয়ামী লীগ এক কঠিন সময় পার করছে। দীর্ঘ ৬৫ বছর যে সংগঠনটির রাজনৈতিক বয়স, সেই সংগঠনটি এখন এক কঠিন সময় পার করছে। দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি, হবে না, হলে কোন সরকার পদ্ধতির আওতায় অনুষ্ঠিত হবে, এ প্রশ্নের মুখোমুখি আজ দলটি। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশের ওপর অসন্তুষ্ট। এর আগে তার প্রতিনিধি হয়ে বাংলাদেশ ঘুরে গিয়েছিলেন অস্কার ফার্নান্দেজ। দু-দুবার। কথা ছিল সরকার একটি চিঠি লিখবে। সে চিঠি আর লেখা হয়নি। এখন বান কি মুনও বললেন একটি সমঝোতার কথা। কিন্তু সেই সমঝোতা যে হবে অবস্থাদৃষ্টে তা মনে হচ্ছে না। ২ সেপ্টেম্বর সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সমঝোতার পথে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সরকারে যখন কোনো দল থাকে, তখন দলটির দায়িত্ব থাকে অনেক বেশি। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনমনীয় অবস্থান দলটিকে একটি বড় ধরনের প্রশ্নের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এমনকি মহাজোটের অন্যান্য শরিক দলও যে আওয়ামী লীগের ওপর সন্তুষ্ট তা বলা যাবে না। অনেক ইস্যুতে আওয়ামী লীগ নিজেদের বিতর্কিত করেছে। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু, ড. ইউনূস ইস্যু, হেফাজতে ইসলামের অবরোধ-জমায়াতে হামলা, মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমানের গ্রেফতার, শেয়ারবাজার, হলমার্ক-ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি এ রকম অনেক দৃষ্টান্ত দেখা যায়, যেখানে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদের সিদ্ধান্ত দলের জন্য কোনো ভালো সংবাদ বয়ে আনেনি। এমনকি ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, বিএনপি অফিসে হামলা চালানো কিংবা বিএনপি-জামায়াতের মিছিলে গুলি চালানো, র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমালোচনাও দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বারবার বিতর্কিত করেছে। শেয়ারবাজার নিয়ে যে বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়া দরকার ছিল, সরকার তা পারেনি। অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয় পরিচালনায় আওয়ামী লীগ কোনো দক্ষ নেতৃত্ব আমাদের উপহার দিতে পারেনি। একাধিক মন্ত্রণালয়ে সুশাসনের অভাব ছিল লক্ষণীয়। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে ‘কালো বিড়াল’খ্যাত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ ও পুনরায় মন্ত্রিসভায় ফিরে আসা এবং দীর্ঘদিন দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে থেকে যাওয়া জনমানুষে নানা প্রশ্নের জন্ম দিলেও সরকারপ্রধানের একক সিদ্ধান্ত, সরকারের ভাবমূর্তি উদ্ধারে কোনো সাহায্য করেনি। সরকার ‘এককভাবে’ একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংসদ হয়ে পড়েছে অনেকটা একদলীয়।
বান কি মুনের সর্বশেষ উদ্যোগও তাই যখন ব্যর্থ হওয়ার পথে (?), তখন এ প্রশ্নটাই সামনে চলে আসে যে, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যদি এককভাবে নির্বাচন করে (সংবিধান অনুযায়ী যা বাধ্যতামূলক), তাহলে ইতিহাস আওয়ামী লীগকে কিভাবে মূল্যায়ন করবে? ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। সংসদ বয়কটের ‘কালচার’ শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ, যা আজ এক ‘সংসদীয় ব্যাধি’তে পরিণত হয়েছে। ‘এক-এগারো’র ঘটনার আগে ‘লগি-বৈঠার’ আন্দোলন কিংবা পরে ‘মইনউদ্দীন-ফখরুদ্দিনের’ সরকারের সব কর্মকাণ্ডকে সমর্থনের ঘোষণার পরও এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল। কেননা মানুষ একটি পরিবর্তন চেয়েছিল। আজ তাই প্রশ্নটা ওঠা স্বাভাবিক যে, আওয়ামী লীগ জনমানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে কতটুকু পেরেছে? সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন হোক, কিন্তু তা যেন হয় গ্রহণযোগ্য। একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের আওতায় নির্বাচন আয়োজন করা এখনো সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী যদি জানিয়ে দেন তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেবেন না, তাহলে জাতি বড় সংকট থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু সেটি হবে এ বিশ্বাসটা রাখতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী দুটি কথা প্রায়ই বলেন, একটি হচ্ছে তার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে তারা আজীবন থাকার চেষ্টা করবে?
প্রথম ক্ষেত্রে তিনি কথাটা মিথ্যা বলেননি। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে তিনি তার পরিবার সদস্যদের সবাইকে হারিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়। তারপরও সব কিছু ভুলে গিয়ে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। দীর্ঘদিন তিনি দলীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রাজনীতি থেকে অবসরে যাবেন, এমন সম্ভাবনাও তার নেই। তিনি ভালো করেই জানেন মধ্য আশির দশকে তিনি নয়াদিল্লি থেকে ফিরে এসে যদি দলের দায়িত্ব গ্রহণ না করতেন, তাহলে দল একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে যেত। বাহ্যত দল তো দু’ভাগে ভাগ হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশও নিয়েছিল। এক ভাগ ছিল মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে আর অপর ভাগ ছিল আব্দুল মালেক উকিলের নেতৃত্বে। তিনি দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন বিধায় দলের ঐক্য টিকে আছে। জাতি তাকে সুযোগ দিয়েছে। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তাতে তিনি সফলও হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজিত হয়েছিল। কিন্তু তিনি ক্ষমতাসীন হয়ে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের উদ্যোগ নিলেন, তা জনসমর্থন পায়নি। তার কাছে সুযোগ ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে। আর এটা করলে তিনি ইতিহাসে নাম লেখাতে পারতেন। জাতি তাকে দু’বার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নামের ওপর কতটুকু বিচার করেছেন তার বিবেচিত হবে আগামী দিনগুলোতে। ‘আজীবন তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে’ বলে তিনি যা বলেন, তার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। আমাদের মতো দেশে কিছুদিনের জন্য আরো তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকা উচিত। বর্তমান যে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, তাতে একটি অগণতান্ত্রিক সরকার কিংবা একটি অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকার কোনো সুযোগ নেই। তারা থাকতে চাইলেও থাকতে পারবে না। তাই ভালো হতো যদি তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ত্রুটিগুলো সারিয়ে তুলে নতুন একটি নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা আমাদের উপহার দিতেন। জাতি তো তার কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা করেছিল। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তার কাছ থেকে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তিনিই পারতেন রাজনীতিতে সংস্কার আনতে।
নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার নামই গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে এককভাবে নির্বাচন করা, বিরোধী দলের নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে দমননীতি অব্যাহত রাখা, দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি না দিয়ে পুরস্কৃত করা, তথাকথিত ‘তৃতীয় শক্তির ক্ষমতা গ্রহণের’ কথা বলে মূল সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া এসব আর যাই হোক গণতন্ত্র হতে পারে না। গণতন্ত্রের অপর নাম হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। অপর পক্ষকে গ্রহণযোগ্যতায় নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার নামই হচ্ছে গণতন্ত্র। সম্ভবত এ কারণেই বলা হয় বিরোধী দল সরকারেরই একটা অংশ। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্রের এই স্পিরিটকে প্রতিফলিত হতে দেখিনি আমরা। যেখানে বিরোধী দলকে নিয়ে সরকারের কাজ করার কথা, সেখানে সরকারকে বিরোধী দলকে ‘ধ্বংস’ করতে আমরা দেখেছি। সরকারের শেষ সময়ে এসে যে সংকটের মুখোমুখি, তার সমাধান সরকারকেই করতে হবে। আজকে এরশাদের মতো ব্যক্তিত্ব যদি ১৮ দলে যোগ দেন, তাতে আমি অবাক হব না। কেননা রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। যেখানে তার স্বার্থ রয়েছে, এরশাদ সাহেব সেখানে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। এরশাদের জাতীয় পার্টি আর বেগম জিয়ার বিএনপির মাঝে রাজনীতিগতভাবে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। উভয় দলই ইসলামিক মূল্যবোধ ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। সুতরাং ঐক্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে এই ঐক্য যদি আদৌ হয়ও তাতে রাজনীতিতে কতটুকু গুণগত পরিবর্তন আসবে বলা মুশকিল।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে বিষয়টি মুখ্য হওয়া উচিত তা হচ্ছে সুশাসনের নিশ্চয়তা। রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাট হবে অথচ এর সুষ্ঠু বিচার হবে না, এটা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। মানুষ ভোট দিয়ে নয়া নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে একটা পরিবর্তন চেয়েছে। কিন্তু এই পরিবর্তনের নাম রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় নয়, লুটপাট নয়। হলমার্ক, শেয়ারবাজার, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়ার ব্যর্থতা আমাদের দেশে সুশাসনের অভাবকেই প্রমাণ করে। আর একটা দেশে যদি সুশাসন না থাকে, তাহলে সেই দেশ এক সময় পরিণত হয় একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে। মুক্তিযুদ্ধ ও লাখ লাখ জীবনের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে রাষ্ট্রটির জন্ম, সেই রাষ্ট্রটি রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতার কারণে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে তা আমরা কেউ চাই না। প্রধানমন্ত্রী আবারো জনগণের কাছে ভোট চেয়েছেন। এটাই হলো আসল কথা। জনগণের কাছেই যেতে হবে। জনগণই সরকারের মূল্যায়ন করবে। আর এ জন্য প্রয়োজন নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রী যদি সেই নির্বাচনকালীন সরকারের নেতৃত্বে দেন, তাহলে সেই সরকার নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। আজ তাই সত্যিকার অর্থেই আওয়ামী লীগ একটি কঠিন সময় পার করছে। তাদের যে কোনো সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন জাতিকে একটি সংকট থেকে মুক্তি দেবে, অন্যদিকে সেই সিদ্ধান্তটি যদি সঠিক না হয়, তাহলে তা জাতিকে অনেক পিছিয়ে দেবে। মানুষের প্রত্যাশা এটাই শেখ হাসিনা চূড়ান্ত বিচারে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নেবেন।
অস্ট্রিন, টেস্কাস, ৩০ আগস্ট, ২০১৩
 মানবকন্ঠ ০৭.০৯.২০১৩

0 comments:

Post a Comment