রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন কী বার্তা দিয়ে গেল

হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন কী বার্তা দিয়ে গেল? দুই সপ্তাহ পার হয়ে যাওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় এই আন্দোলন নিয়ে মাতামাতি কম দেখছি না। শত শত চ্যানেলের ভিড়ে কোথাও না কোথাও হংকংয়ের এই আন্দোলন ও চীনের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। অনেকেই হংকংয়ের এই আন্দোলন, যা কিনা পরিচিতি পেয়েছে 'অক্যুপাই সেন্ট্রাল' হিসেবে, তার সঙ্গে আরব বসন্তকালে কায়রোয় যে আন্দোলন হয়েছিল, তার একটা মিল খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশে যে 'অক্যুপাই মুভমেন্ট' হয়েছে তার সঙ্গে হংকং অক্যুপাই আন্দোলনের যেমন মিল আছে, তেমনি আছে অমিলও। খোদ নিউ ইয়র্ক শহরে অক্যুপাই ওয়ালস্ট্রিট বড় ধরনের আবেদন সৃষ্টি করতে পারলেও তাতে পরিবর্তন এসেছে অতি সামান্যই। 
মানুষ এখন আর 'অক্যুপাই ওয়ালস্ট্রিট'-এর কথা মনে করে না। এতে মিসরের রাজধানী কায়রোতে যে অক্যুপাই মুভমেন্ট হয়েছিল, তাতে পরিবর্তন এসেছিল। হোসনি মুবারকের পতন, মুরসির উত্থান ও পতন এবং সর্বশেষ মিসির ক্ষমতা করায়ত্ত করার মধ্য দিয়ে আরব বসন্তের নতুন ইতিহাস এখন রচিত হয়েছে। থাইল্যান্ডের অক্যুপাই মুভমেন্টের খবরও আমরা জানি। প্রতিবাদের এটা একটা ধরন। ওই প্রতিবাদ কোথাও কোথাও সরকারের পতন ঘটিয়েছে, এটা সত্য। তবে সাধারণ মানুষ এ ক্ষেত্রে উপকৃত হয়েছে খুবই কম। অনেক ক্ষেত্রেই একটি বিশেষ শ্রেণি এই আন্দোলন থেকে ফায়দা উঠিয়েছে। মিসরে সাধারণ মানুষ এই অক্যুপাই মুভমেন্ট থেকে যেমন উপকৃত হয়নি, ঠিক তেমনি ইউক্রেন কিংবা থাইল্যান্ডের মানুষের জন্যও তা কোনো মঙ্গল বয়ে আনেনি। পাকিস্তানে ইসলামাবাদে অতি সম্প্রতি এক ধরনের অক্যুপাই মুভমেন্ট আমরা লক্ষ করেছি, কিন্তু তাতে সরকারের পতন হয়নি। এমনই এক প্রেক্ষাপটে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি হংকংয়ে অক্যুপাই সেন্ট্রাল। তবে অক্যুপাই সেন্ট্রালের সঙ্গে অন্যান্য অক্যুপাই মুভমেন্টের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেননা অক্যুপাই সেন্ট্রাল হংকংয়ে সরকার পরিবর্তনের কোনো আন্দোলন নয়। বরং বলা যেতে পারে, এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে এক ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার। আরো বেশি গণতন্ত্র। ২০১৭ সালে হংকংয়ে প্রধান প্রশাসনিক পদের জন্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৯৭ সালে হংকং চীনের অন্তর্ভুক্ত হলেও হংকং তার অর্থনৈতিক স্বাতন্ত্র্য এখনো বজায় রেখেছে। অর্থাৎ এখানে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা বহাল রয়েছে। তবে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব এখনো চীনের হাতে। অর্থাৎ চীন এখানে একজন প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে থাকে। ওই প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ চীনের প্রতি দায়বদ্ধ। সমস্যাটা তৈরি হয়েছে এখানেই। হংকংয়ের গণতন্ত্রকামীরা চাচ্ছে এখানে পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন সম্পন্ন হোক। অর্থাৎ 'এক মাথা এক ভোট' ভিত্তিতে দলগতভাবে এখানে নির্বাচন হবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিরা হংকংয়ের প্রশাসন পরিচালনা করবেন। এ ক্ষেত্রে চীন যে সংস্কারের কথা বলেছে (প্রধান প্রশাসনিক ব্যক্তির নির্বাচন), সেখানে দলগতভাবে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। চীনা কর্তৃপক্ষ একটি তালিকা তৈরি করে দেবে এবং জনগণ ওই তালিকা থেকে একজনকে বেছে নেবে। চীনা কর্তৃপক্ষের এই প্রস্তাব গণতন্ত্রকামীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তারা মধ্য হংকংয়ের সংকক এলাকা দখল করে নিয়ে অক্যুপাই মুভমেন্টের জন্ম দিয়েছে।
হংকংয়ের অক্যুপাই মুভমেন্টের ইতিহাস খুঁজে দেখা গেছে এই আন্দোলন তরুণদের দ্বারা পরিচালিত হলেও এর তাত্ত্বিক হচ্ছেন অধ্যাপক বেনই তাই নামে এক ব্যক্তি। তিনি হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর কম্পারেটিভ অ্যান্ড পাবলিক ল-এর আইনের অধ্যাপক। তিনি দুই বছর আগে তত্ত্বগতভাবে এ ধরনের একটি আন্দোলনের কথা বলেন। অহিংস পদ্ধতিতে, অনেকটা গান্ধীবাদী নীতির আলোকে তিনি হংকংয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাঁর এই গান্ধীবাদী নীতি অনুসরণ করেই তরুণরা, যাদের বেশির ভাগই ছাত্র, এই অক্যুপাই মুভমেন্টের জন্ম দিয়েছে। হংকংয়ের ফেডারেশন অব স্টুডেন্টস এই আন্দোলনে নিজেদের জড়িত করেছে। আর মজার ব্যাপার, এর নেতৃত্বে রয়েছে ১৭ বছরের এক যুবক, যার নাম জসুয়া ওং। জসুয়া ওং নিজে ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে।

এখানে একটা কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। পৃথিবীর সেরা কয়টি দেশে যেখানে অক্যুপাই মুভমেন্ট পরিচালিত হয়েছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওই সব মুভমেন্টকে উসকে দিয়েছে। অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে। এমনকি আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্ব দেবেন তাঁদের দুই বছর আগে থেকে ওয়াশিংটনে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ পর্যন্ত দিয়েছে। মিসর এর বড় প্রমাণ। মিসরে 'এপ্রিল ৬ মুভমেন্ট' কিংবা অন্যতম নেতৃত্বদানকারী আসমা মাহফুজরা ওয়াশিংটনে তথাকথিত গণতান্ত্রিক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন। হংকংয়ের ক্ষেত্রেও আমরা এমনটা লক্ষ করেছি। ইউক্রেনেও যুক্তরাষ্ট্র এমনটি করেছিল। ইউক্রেনে যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাশিয়া সমর্থিত প্রেসিডেন্টের পতন ঘটেছিল (ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ), ওই আন্দোলনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ছিল ছয় বিলিয়ন ডলার। কেন যুক্তরাষ্ট্র এই অর্থ ব্যয় করেছে, এটা বর্তমান পরিস্থিতি দেখেই বোঝা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যভুক্ত করা ও ন্যাটোর সদস্য হিসেবে ইউক্রেনে তথা রাশিয়ার সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েন করা। অর্থাৎ রাশিয়াকে ঘিরে ফেলার এক সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। এ জন্য দরকার ছিল ইউক্রেনে রুশপন্থী প্রেসিডেন্টের অপসারণ। সেই কাজটি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমনকি ২০১৪ সালে সেখানে যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, তাতে বিজয়ী হয়েছেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পোরোসেঙ্কো। পোরোসেঙ্কো ২০০৬ সাল থেকে সিআইএর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে আসছেন। সিআইএই তাঁকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে পোরোসেঙ্কো একটি প্রো-আমেরিকান নীতি গ্রহণ করবেন। সেখানে অর্থাৎ ইউক্রেনে মার্কিনি বিনিয়োগ বাড়বে এবং ইউক্রেনের জ্বালানি সম্পদের নিয়ন্ত্রণভার ধীরে ধীরে চলে যাবে মার্কিনি বহুজাতিক সংস্থাগুলোর হাতে। একসময় তারা নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইবে রাশিয়া তথা মধ্য এশিয়ার জ্বালানি সম্পদের। পুতিন এটা যে বোঝেন না তা নয়। তাই ইউক্রেন সংকটের গভীরতা সেখানে বাড়ছে। ইউক্রেনের একটি অঞ্চলে রাশিয়ার মদদে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। ওই অঞ্চল ক্রিমিয়ার মতোই রাশিয়ার অংশ হতে চায়। ফলে খুব সহজেই ইউক্রেন সংকটের সমাধান হবে- এটা মনে হয় না।
চীনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের যে স্ট্র্যাটেজি, তারই অংশ হিসেবে জন্ম হয়েছে হংকং অক্যুপাই সেন্ট্রাল আন্দোলনের। চীনকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। হংকংয়ের তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলন ওই পরিকল্পনার একটি অংশ মাত্র। যুক্তরাষ্ট্র এনডিআই বা 'ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি' নামক সংস্থার মাধ্যমে হংকংয়ের গণতন্ত্রকামীদের প্রশিক্ষণ ও অর্থায়ন করেছে। অধ্যাপক বেনই তাইকে তারাই তৈরি করেছে এবং অধ্যাপক তাইকে সামনে রেখেই গঠন করা হয়েছে 'সেন্টার ফর কম্পারেটিভ অ্যান্ড পাবলিক ল' নামের একটি থিংক ট্যাংক, একটি গবেষণা সংস্থা। এনডিআইয়ের অর্থায়নে হংকংয়ে মার্টিন লির নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। মার্টিন লি নিজে ২০১৪ সালে ও অধ্যাপক তাই ওয়াশিংটন সফর করেছেন একাধিকবার। শুধু তা-ই নয়, হংকংয়ে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু এবং গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানে যে রেফারেন্ডাম বা গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল, তারও অর্থায়ন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। হংকংয়ের সাত লাখ ৮০ হাজার মানুষ (পাঁচ ভাগের এক ভাগ) ওই গণভোটে অংশ নিয়েছিল। মিসরেও যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের গণভোটের আয়োজন করেছিল। লক্ষ করলে দেখা যাবে ইউএসএইডের হংকংয়ে সাহায্যের পরিমাণও বেড়েছিল। উদ্দেশ্য, মূল চীনে এই আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে দেওয়া এবং চূড়ান্ত বিচারে চীনা সরকারের পতন ঘটানো। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে যুক্তরাষ্ট্র হংকংয়ে গণতন্ত্র চায় বটে(?), কিন্তু সেখানকার জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। হংকংয়ে ঘণ্টাপ্রতি যে বেতন দেওয়া হয় (৩ দশমিক ৬০ ডলার), তা যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের গড় বেতনের অর্ধেক। শুধু তা-ই নয়, হংকংয়ে জীবনযাত্রার খরচ এত বেশি যে অনেককে খরচ মেটানোর জন্য দুটি চাকরি পর্যন্ত করতে হয়। গণতন্ত্র সেখানে সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটাতে পারবে না। গণতন্ত্র বোধ করি হংকংয়ের সমস্যার কোনো সমাধান বয়ে আনতে পারবে না। সুতরাং হংকংয়ের এই আন্দোলন কি আদৌ কোনো প্রভাব ফেলবে? প্রথমত, গণতান্ত্রিক সমাজ বলতে আমরা যা বুঝি, সেই সংস্কৃতি হংকংয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। চীনা নেতৃত্ব এটা মানবে না। কেননা এতে চীনের অন্যান্য অঞ্চলে এই আন্দোলনের প্রভাব পড়তে পারে। তবে ২০১৭ সালে হংকংয়ের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা নির্বাচনের ব্যাপারে আরো কিছুটা ছাড় দিতে পারে চীন। প্রার্থীদের যে তালিকা চীন অনুমোদন করবে, সেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, হংকংয়ের বিকল্প হিসেবে সাংহাই, শেন ঝেন কিংবা গুয়াং ঝো এখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। হংকংয়ের পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এখন আর সাধারণ চীনাদের আকৃষ্ট করে না। বরং শেন ঝেন কিংবা গুয়াং ঝোর মতো এলাকায় 'নতুন অর্থনৈতিক জোন' গঠিত হয়েছে, যেখানে জীবনযাত্রায় একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। মানুষের আয় বেড়েছে। জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। তৃতীয়ত, চীনা নেতৃত্ব চীনের অর্থনীতিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। ২০৫০ সালের মধ্যেই চীন হবে বিশ্বের প্রথম অর্থনীতি। ফলে সব ধরনের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে চীনা নেতৃত্ব সজাগ রয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং অত্যন্ত প্রাগম্যাটিক। তিনি চীনা অর্থনীতিকে আরো উন্মুক্ত করে দেবেন। জাতীয় স্বার্থকে তিনি গুরুত্ব দেবেন। 'মার্কিনি ষড়যন্ত্র' সম্পর্কেও তিনি ও তাঁর পলিটব্যুরোর সদস্যরা সচেতন। চীনা অর্থনৈতিক কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে টিপিপি (ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ) চুক্তি করতে চাচ্ছে, তাতে চীনকে রাখা হয়নি। এটা চীনবিরোধী একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। চীনা নেতৃত্ব এটা বোঝে। তাই চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বে জন্ম হতে যাচ্ছে একটি 'নয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা', যা পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আঘাত করবে। জন্ম দেবে বিকল্প একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার। এ লক্ষ্যেই ২০১৬ সালে ব্রিকস ব্যাংক আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। তাই হংকংয়ের তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলন যে পরোক্ষভাবে চীনা নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার শামিল, এটা চীনা নেতারা উপলব্ধি করেছেন। চীনে পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র বিনির্মাণ সম্ভব নয়। চীন গণতন্ত্রের জন্য উপযুক্তও নয়। চীনে তথাকথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ চীনা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সেখানেই লুকায়িত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এখন চাচ্ছে চীনও একাধিক চীনা রাষ্ট্রে বিভক্ত হোক। তবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও চীনা সেনাবাহিনী এখনো পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। চীনা সেনাবাহিনী এখনো পার্টির নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। ফলে চীনে হংকংয়ের মতো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে অদূর ভবিষ্যতে চীনে একটি 'সিঙ্গাপুর মডেল'-এর জন্ম হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। চীন এখন আর ধ্রুপদী মার্ঙ্বাদ দ্বারা পরিচালিত হয় না। তারা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত খাতের বিকাশ ঘটিয়ে 'সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি' নামে নতুন এক অর্থনীতি চালু করেছে। এর ফলও তারা পেয়েছে। চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বড় অর্থনীতি। সুতরাং হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন হংকংয়ের ব্যাপারে চীনা নীতিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনবে- এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।
লেখক : অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

0 comments:

Post a Comment