আইএস
বা ইসলামিক স্টেট আর ‘এবোলা’ নিয়ে বড় ধরনের সংকটে রয়েছে মার্কিনি প্রশাসন।
ওবামা প্রশাসন এর আগে এত বড় সংকটে অতীতে কখনো পড়েনি। সিরিয়া ও ইরাকে
ইসলামি স্টেটের ব্যানারে ইসলামি জঙ্গিদের উত্থান ঠেকাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে
ওবামা প্রশাসন। ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের ঠেকাতে ২০টি দেশের অংশগ্রহণে
একটি কোয়ালিশন গঠন করলেও এখন অবধি সেখানে কোনো স্থল সেনাবাহিনী পাঠায়নি
যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এটা বারবার বলা হচ্ছে এবং ইরাক থেকে দাবি জানানো হচ্ছে
যে সেখানে স্থল সেনাবাহিনী অথবা মেরিন সেনা পাঠানো হোক। গত ৮ আগস্ট থেকে
মার্কিন যুদ্ধ বিমান ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু
করলেও ইসলামিক জঙ্গিদের তৎপরতা বন্ধ করা যায়নি। বরং জঙ্গিরা ইরাকের প্রায়
কাছাকাছি এলাকায় চলে এসেছে। ইরাকের আবু খরবাইক শহরের নিয়ন্ত্রণভার চলে গেছে
জঙ্গিদের হাতে। ইরাকের অনেক তেল উৎপাদন ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণভার এখন
জঙ্গিদের হাতে। ওই তেল বিক্রি করে জঙ্গিরা এখন শক্তিশালী হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছে। জঙ্গিদের এইউত্থান ওবামা
প্রশাসনের জন্য চিন্তার একটা বড় কারণ। তাদের ভয় ইরাককে নিয়ে। এমনিতেই ইরাকে
একটি নড়বড়ে সরকার গঠিত হয়েছে। মালিকির পতন ও হায়দার আবাদির নেতৃত্বে
সেখানে একটি সরকার গঠিত হলেও ওই সরকার ইরাকের প্রতিটি অঞ্চলের ওপর কর্তৃত্ব
বজায় রেখেছে, এটি বলা যাবে না। সিয়া, সুন্নি ও কুর্দিদের মধ্যে একটা
সমঝোতা হয়েছে বটে, কিন্তু এই সমঝোতা ভেঙে পড়তে পারে। সরকারের পতন ঘটতে
পারে। এখন ভয়টা হচ্ছে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের হাতে যদি ইরাক সরকারের পতন
ঘটে। তাহলে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের দৃশ্যপটকে বদলে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সেটা হবে একটা বড় পরাজয়। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইরাকি
সেনাবাহিনী গঠন ও প্রশিক্ষণের জন্য ২৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে ফেলেছে। মার্কিন
কংগ্রেসের চাপের মুখে এখন আছেন ওবামা। অন্যদিকে জঙ্গিদের এই উত্থান
পরোক্ষাভাবে আমাদের ক্ষমতাকে আরো দীর্ঘায়িত করেছে। এর আগে মার্কিন কংগ্রেস
সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আসাদবিরোধী ফোর্সকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার।
কুর্দিদেরও সমর্থন করেছিল ওবামা প্রশাসন। এখন দেখা গেল আসাদবিরোধী এই ফোর্স
আর আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে না। বরং ওই ফোর্স ইসলামিক জঙ্গিদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এতে করে সুবিধা পাচ্ছেন আসাদ স্বয়ং। এটা ওবামা
প্রশাসনের জন্য বড় ব্যর্থতা যে সিরিয়ায় ইসলামিক জঙ্গিদের ব্যাপারে কোনো
স্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে পারেনি ওবামা প্রশাসন।
মধ্যপ্রাচ্য প্রশ্নে ইসলামিক জঙ্গিদের উত্থান যখন ওবামা প্রশাসনকে একটি বড় ধরনের বিতর্কের মাঝে ফেলে দিয়েছে, ঠিক তখন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস শহরে, যেখানে আমি বর্তমানে বসবাস করি, সেখানে ‘এবোলা’ রোগের বিস্তার ঘটায়, ওবামা প্রশাসন আরো বিতর্কের মাঝে পড়েছে। বলা হচ্ছে, ওবামা প্রশাসন জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এই ‘এবোলো’ রোগটির উৎপত্তি লাইবেরিয়ায়। একজন লাইবেরিয়ান নাগরিক ডানকান এই রোগটি শরীরে বহন করে ডালাসে আসেন। তার চিকিৎসা ঠিকমতো হয়নি। তিনি মারা গেছেন প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে দুজন নার্সের শরীরে, যারা ডানকানের দেখাশোনায় নিয়োজিত ছিলেন। এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে যে, প্রায় দুশ’ ব্যক্তির ওপর, যারা ডালাস ও এর আশপাশ এলাকায় বসবাস করেন, তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিনই মানুষ আতঙ্কে থাকে ‘এবোলো’ আরো ছড়িয়ে পড়ল কিনা, তা জানার জন্য। শুধু তাই নয়, এ ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতেও ডালাসের নার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। তারা নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলেছে। আরো খারাপ খবর হচ্ছে সেখান থেকেও ‘এবোলো’ আক্রান্ত একজন নার্সের সংবাদ এসেছে। ওই নার্সও লাইবেরিয়া থেকে এসেছিলেন। সতর্কতা জারি করা হয়েছে ইউরোপের প্রায় প্রতিটি বড় বড় শহরে। হাসপাতালগুলো বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। টিভি সংবাদে দেখা যায় কি ভাবে সেবিকারা বিশেষ ধরনের পোশাক পরে হাসপাতালে কাজ করছেন। ‘এবোলো’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যখন হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক তখনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আগামী ২ মাসে ১০ হাজার ‘এবোলো’ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায়, বিশেষ করে লাইবেরিয়া, সিয়েরা, লিওন এসব দেশে এই রোগে মারা গেছেন ৯ হাজার ব্যক্তি। এর সংখ্যা হয়তো আরো বেশি হতে পারে। পুরো তথ্য সেখান থেকে আসছে না।
এখন খোদ যুক্তরাষ্ট্রে ‘এবোলো’ বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ায় অনেক প্রশ্ন এখন উঠেছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টি নিয়ে কি ভাবছেন, আমরা জানি না। তবে বাংলাদেশের মতো জনবহুল একটি দেশ একটি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এখন। সাধারণত ধনী দেশগুলোতে এ ধরনের ছোঁয়াচে রোগের জন্ম ও বিস্তার ঘটে কম। এ ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পশ্চিম আফ্রিকায় প্রথমে আক্রান্ত হন এবং আক্রান্ত হয়ে ইউরোপে বা আমেরিকাতে আসেন। প্রথমে ডাক্তাররা তা বুঝতে পারেন না বা রোগীরা তাদের ভ্রমণসংক্রান্ত বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষপকে তা অবহিতও করেন না। থমাস ডানকান ও মিস রামোসের (স্পেন)-এর ক্ষেত্রে এ রকমটি হয়েছিল। কম উন্নত দেশে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা পর্যাপ্ত নয় কিংবা এ ধরনের রোগ নিয়ে গবেষণা কম হয়, প্রতিরোধের কোনো ওষুধও প্রস্তুতিও তেমন থাকে না, সেসব দেশে এসব রোগের বিস্তার ঘটে দ্রুত। বাংলাদেশকে নিয়ে তাই চিন্তার কারণ রয়েছে যথেষ্ট। সাধারণত পশ্চিম আফ্রিকা থেকে যারা আসেন, তারাই এই রোগের জীবাণু বহন করেন। বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা পশ্চিম আফ্রিকাতে ছিলেন বা এখনো আছেন। তারা ফিরে আসছেন। ফলে তারা যে জীবাণুটি বহন করছেন না, তা পরীক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। করাও হয় না। উপরন্তু বাংলাদেশে এখন অনেক বিদেশি কাজ করেন, বসবাস করেন, যারা পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক অথবা ওইসব দেশ থেকে সরাসরি এসেছেন। ঢাকায় তাদের পরীক্ষা করা হয় না। অনতিবিলম্বে শাহজালাল বিমানবন্দরে একটি মনিটরিং সেন্টার স্থাপন করা উচিত। প্রাথমিকভাবে কোনো জ্বর নিয়ে কেউ আসছেন কিনা, তা পরীক্ষা করা জরুরি। লাখ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক এখন বিদেশে কাজ করেন। সেখানে পশ্চিম আফ্রিকার নাগরিকদের সঙ্গে তাদের এক সঙ্গে কাজ করতে হয়। এর ফলে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন এবং ওই রোগের জীবাণুটি বহন করে দেশে আসতে পারেন। সুতরাং প্রাথমিক পরীক্ষাটা জরুরি। সাধারণত ‘এবোলো’ আক্রান্তরা খুব জ্বর নিয়ে (প্রায় ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) আসেন। তাদের বমি ও সর্দিজ্বর থাকে। ডাক্তাররা এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকস ওষুধ দেন। ডানকানের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছিল। তিনি লাইবেরিয়ার নাগরিক। ডালাসে তার বান্ধবী স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। তিনি বান্ধবীকে বিয়ে করার জন্যই এসেছিলেন। হাসপাতালে তিনি তথ্য গোপন করেছিলেন যে তিনি তিন দিন আগে লাইবেরিয়া থেকে এসেছিলেন। তথ্য গোপন না করলে তিনি বেঁচে যেতে পারতেন। অ্যান্টিবায়োটিকস ওষুধ তাকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আরো ৩ দিন পর তাকে অচৈতন্য অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। ৮ অক্টোবর তিনি মারা যান। বাংলাদেশে সর্দিকাশি অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। কোনো প্রবাসীর ক্ষেত্রে এ রকমটি হলে দ্রুত তার উন্নতি স্বাস্থ্যসেবা নেয়া প্রয়োজন।
মার্কিন প্রশাসন যে ‘এবোলো’ আর আইএসের উত্থান নিয়ে বড় ধরনের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে আছে, তা পত্রপত্রিকা দেখলেই বোঝা যায়। ডানকানের মৃত্যুর দু’সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। কিন্তু ‘এবোলো’ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। ইতোমধ্যে আক্রান্ত নার্স নীনা ফমকে একটি বিশেষ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সিএনএন তা ‘লাইভ’ সম্প্রচার করেছে। এ থেকেই ‘এবোলার’ গুরুত্বটি বোঝা যায়। প্রেসিডেন্ট ওবামা ইতোমধ্যে একজন ‘এবোলা জার’-এর নাম ঘোষণা করেছেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে ‘এবোলা’সংক্রান্ত সব বিষয় দেখাশোনা করবেন। তার নিযুক্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেননা তার কোনো মেডিকেল ডিগ্রি নেই। একই সঙ্গে তিনি লাইবেরিয়াতে ৩০০ মার্কিন সেনা পাঠানোর কথাও বলেছেন, যারা সেখানে ‘এবোলো’ নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। ‘এবোলো’ কত বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে, তা মার্কিন প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। কেননা জঙ্গিরা এ ধরনের জীবাণু জনবসতি এলাকায় ছড়িয়ে দিয়ে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ ঘটাতে পারে। ডানকানের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি তেমন ছিল না। এদিকে ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের উত্থান ও মার্কিন জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এই ‘যুদ্ধ’ পরিচালনা করা নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক-আফগান যুদ্ধে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করলেও মার্কিন নাগরিকদের সবার নূ০্যনতম চাকরি নিশ্চিত করতে পারেনি। তরুণ প্রজšে§র একটা বড় অংশ এখন বেকার। তারা গ্রাজুয়েশন শেষ করে অপেক্ষা করছেন চাকরির জন্য। কিন্তু চাকরি পাচ্ছেন না। ওবামার স্বাস্থ্যসেবা তাকে আরো বিতর্কিত করেছে। অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে ছাঁটাই হয়েছে। বেতন দিতে না পারায় বন্ধ হয়ে গেছে অনেক সরকারি সেবা। এমনি এক পরিস্থিতিতে আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে ‘যুদ্ধে’ জড়িয়ে যাওয়ার অর্থ, সরকারি ব্যয় এর ওপর চাপ বাড়ানো। যুদ্ধের পেছনে খরচ বেড়ে গেলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিশুদের জন্য অনেক সেবা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক পর্যবেক্ষকই বলছেন ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যে ‘যুদ্ধ’ তার শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রতিদিনের ‘যুদ্ধে’ সেখানে খরচ হচ্ছে কয়েক লাখ ডলার। ওবামা নতুন করে এই ‘যুদ্ধ’ শুরু করায় বিতর্কে জড়িয়েছেন। ২০১৬ সালে এখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। হিলারি ক্লিনটন প্রতিযোগিতায় আছেন। তবে ডেমোক্র্যাটদের অবস্থান ভালো, তা বলা যাবে না। ওবামার ব্যর্থতা রিপাবলিকানদের যদি ক্ষমতায় নিয়ে আসে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র Daiy Manobkontho 27 October 2014
মধ্যপ্রাচ্য প্রশ্নে ইসলামিক জঙ্গিদের উত্থান যখন ওবামা প্রশাসনকে একটি বড় ধরনের বিতর্কের মাঝে ফেলে দিয়েছে, ঠিক তখন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস শহরে, যেখানে আমি বর্তমানে বসবাস করি, সেখানে ‘এবোলা’ রোগের বিস্তার ঘটায়, ওবামা প্রশাসন আরো বিতর্কের মাঝে পড়েছে। বলা হচ্ছে, ওবামা প্রশাসন জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এই ‘এবোলো’ রোগটির উৎপত্তি লাইবেরিয়ায়। একজন লাইবেরিয়ান নাগরিক ডানকান এই রোগটি শরীরে বহন করে ডালাসে আসেন। তার চিকিৎসা ঠিকমতো হয়নি। তিনি মারা গেছেন প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে দুজন নার্সের শরীরে, যারা ডানকানের দেখাশোনায় নিয়োজিত ছিলেন। এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে যে, প্রায় দুশ’ ব্যক্তির ওপর, যারা ডালাস ও এর আশপাশ এলাকায় বসবাস করেন, তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিনই মানুষ আতঙ্কে থাকে ‘এবোলো’ আরো ছড়িয়ে পড়ল কিনা, তা জানার জন্য। শুধু তাই নয়, এ ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতেও ডালাসের নার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। তারা নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলেছে। আরো খারাপ খবর হচ্ছে সেখান থেকেও ‘এবোলো’ আক্রান্ত একজন নার্সের সংবাদ এসেছে। ওই নার্সও লাইবেরিয়া থেকে এসেছিলেন। সতর্কতা জারি করা হয়েছে ইউরোপের প্রায় প্রতিটি বড় বড় শহরে। হাসপাতালগুলো বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। টিভি সংবাদে দেখা যায় কি ভাবে সেবিকারা বিশেষ ধরনের পোশাক পরে হাসপাতালে কাজ করছেন। ‘এবোলো’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যখন হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক তখনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আগামী ২ মাসে ১০ হাজার ‘এবোলো’ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে পশ্চিম আফ্রিকায়, বিশেষ করে লাইবেরিয়া, সিয়েরা, লিওন এসব দেশে এই রোগে মারা গেছেন ৯ হাজার ব্যক্তি। এর সংখ্যা হয়তো আরো বেশি হতে পারে। পুরো তথ্য সেখান থেকে আসছে না।
এখন খোদ যুক্তরাষ্ট্রে ‘এবোলো’ বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ায় অনেক প্রশ্ন এখন উঠেছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টি নিয়ে কি ভাবছেন, আমরা জানি না। তবে বাংলাদেশের মতো জনবহুল একটি দেশ একটি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এখন। সাধারণত ধনী দেশগুলোতে এ ধরনের ছোঁয়াচে রোগের জন্ম ও বিস্তার ঘটে কম। এ ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পশ্চিম আফ্রিকায় প্রথমে আক্রান্ত হন এবং আক্রান্ত হয়ে ইউরোপে বা আমেরিকাতে আসেন। প্রথমে ডাক্তাররা তা বুঝতে পারেন না বা রোগীরা তাদের ভ্রমণসংক্রান্ত বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষপকে তা অবহিতও করেন না। থমাস ডানকান ও মিস রামোসের (স্পেন)-এর ক্ষেত্রে এ রকমটি হয়েছিল। কম উন্নত দেশে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা পর্যাপ্ত নয় কিংবা এ ধরনের রোগ নিয়ে গবেষণা কম হয়, প্রতিরোধের কোনো ওষুধও প্রস্তুতিও তেমন থাকে না, সেসব দেশে এসব রোগের বিস্তার ঘটে দ্রুত। বাংলাদেশকে নিয়ে তাই চিন্তার কারণ রয়েছে যথেষ্ট। সাধারণত পশ্চিম আফ্রিকা থেকে যারা আসেন, তারাই এই রোগের জীবাণু বহন করেন। বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা পশ্চিম আফ্রিকাতে ছিলেন বা এখনো আছেন। তারা ফিরে আসছেন। ফলে তারা যে জীবাণুটি বহন করছেন না, তা পরীক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। করাও হয় না। উপরন্তু বাংলাদেশে এখন অনেক বিদেশি কাজ করেন, বসবাস করেন, যারা পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক অথবা ওইসব দেশ থেকে সরাসরি এসেছেন। ঢাকায় তাদের পরীক্ষা করা হয় না। অনতিবিলম্বে শাহজালাল বিমানবন্দরে একটি মনিটরিং সেন্টার স্থাপন করা উচিত। প্রাথমিকভাবে কোনো জ্বর নিয়ে কেউ আসছেন কিনা, তা পরীক্ষা করা জরুরি। লাখ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক এখন বিদেশে কাজ করেন। সেখানে পশ্চিম আফ্রিকার নাগরিকদের সঙ্গে তাদের এক সঙ্গে কাজ করতে হয়। এর ফলে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন এবং ওই রোগের জীবাণুটি বহন করে দেশে আসতে পারেন। সুতরাং প্রাথমিক পরীক্ষাটা জরুরি। সাধারণত ‘এবোলো’ আক্রান্তরা খুব জ্বর নিয়ে (প্রায় ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) আসেন। তাদের বমি ও সর্দিজ্বর থাকে। ডাক্তাররা এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকস ওষুধ দেন। ডানকানের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছিল। তিনি লাইবেরিয়ার নাগরিক। ডালাসে তার বান্ধবী স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। তিনি বান্ধবীকে বিয়ে করার জন্যই এসেছিলেন। হাসপাতালে তিনি তথ্য গোপন করেছিলেন যে তিনি তিন দিন আগে লাইবেরিয়া থেকে এসেছিলেন। তথ্য গোপন না করলে তিনি বেঁচে যেতে পারতেন। অ্যান্টিবায়োটিকস ওষুধ তাকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আরো ৩ দিন পর তাকে অচৈতন্য অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। ৮ অক্টোবর তিনি মারা যান। বাংলাদেশে সর্দিকাশি অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। কোনো প্রবাসীর ক্ষেত্রে এ রকমটি হলে দ্রুত তার উন্নতি স্বাস্থ্যসেবা নেয়া প্রয়োজন।
মার্কিন প্রশাসন যে ‘এবোলো’ আর আইএসের উত্থান নিয়ে বড় ধরনের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে আছে, তা পত্রপত্রিকা দেখলেই বোঝা যায়। ডানকানের মৃত্যুর দু’সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। কিন্তু ‘এবোলো’ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। ইতোমধ্যে আক্রান্ত নার্স নীনা ফমকে একটি বিশেষ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সিএনএন তা ‘লাইভ’ সম্প্রচার করেছে। এ থেকেই ‘এবোলার’ গুরুত্বটি বোঝা যায়। প্রেসিডেন্ট ওবামা ইতোমধ্যে একজন ‘এবোলা জার’-এর নাম ঘোষণা করেছেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে ‘এবোলা’সংক্রান্ত সব বিষয় দেখাশোনা করবেন। তার নিযুক্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেননা তার কোনো মেডিকেল ডিগ্রি নেই। একই সঙ্গে তিনি লাইবেরিয়াতে ৩০০ মার্কিন সেনা পাঠানোর কথাও বলেছেন, যারা সেখানে ‘এবোলো’ নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। ‘এবোলো’ কত বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে, তা মার্কিন প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। কেননা জঙ্গিরা এ ধরনের জীবাণু জনবসতি এলাকায় ছড়িয়ে দিয়ে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ ঘটাতে পারে। ডানকানের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি তেমন ছিল না। এদিকে ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের উত্থান ও মার্কিন জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এই ‘যুদ্ধ’ পরিচালনা করা নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক-আফগান যুদ্ধে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করলেও মার্কিন নাগরিকদের সবার নূ০্যনতম চাকরি নিশ্চিত করতে পারেনি। তরুণ প্রজšে§র একটা বড় অংশ এখন বেকার। তারা গ্রাজুয়েশন শেষ করে অপেক্ষা করছেন চাকরির জন্য। কিন্তু চাকরি পাচ্ছেন না। ওবামার স্বাস্থ্যসেবা তাকে আরো বিতর্কিত করেছে। অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে ছাঁটাই হয়েছে। বেতন দিতে না পারায় বন্ধ হয়ে গেছে অনেক সরকারি সেবা। এমনি এক পরিস্থিতিতে আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে ‘যুদ্ধে’ জড়িয়ে যাওয়ার অর্থ, সরকারি ব্যয় এর ওপর চাপ বাড়ানো। যুদ্ধের পেছনে খরচ বেড়ে গেলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিশুদের জন্য অনেক সেবা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক পর্যবেক্ষকই বলছেন ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যে ‘যুদ্ধ’ তার শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রতিদিনের ‘যুদ্ধে’ সেখানে খরচ হচ্ছে কয়েক লাখ ডলার। ওবামা নতুন করে এই ‘যুদ্ধ’ শুরু করায় বিতর্কে জড়িয়েছেন। ২০১৬ সালে এখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। হিলারি ক্লিনটন প্রতিযোগিতায় আছেন। তবে ডেমোক্র্যাটদের অবস্থান ভালো, তা বলা যাবে না। ওবামার ব্যর্থতা রিপাবলিকানদের যদি ক্ষমতায় নিয়ে আসে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র Daiy Manobkontho 27 October 2014
0 comments:
Post a Comment