রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ যুদ্ধ

যখন আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছে (অক্টোবর ২০১৪) ঠিক তখনই সিরিয়া-ইরাকে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের ওপর বিমান হামলার নির্দেশ দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা উপসাগরীয় অঞ্চলে ‘চতুর্থ যুদ্ধ’ শুরু করলেন। এই বিমান হামলার ফলে সিরিয়ার কুর্দি অঞ্চলের কোবানি শহর ইসলামি জঙ্গিদের হাতে পতন ঘটেনি, এটা সত্য। কিন্তু মার্কিন তথা মিত্রবাহিনীর বিমান হামলা ইতোমধ্যেই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পাঠক স্মরণ করতে পারেন, ৯/১১-এর ঘটনাবলির রেশ ধরে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান আক্রমণ করেছিল। তখন অভিযোগ ছিল আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন মোল্লাহ ওমরের (আফগানিস্তানের তালেবান নেতা) আশ্রয়ে রয়েছে। তার পরের ইতিহাস সবাই জানেন। তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধে ‘পরাজিত’ হয়ে মার্কিন বাহিনী (সেই সঙ্গে সব ন্যাটোভুক্ত দেশের সেনাবাহিনী) এখন ‘ভদ্রভাবে’ আফগানিস্তান ত্যাগ করছে! কিন্তু এই দীর্ঘ ১৩ বছরে আফগানিস্তান পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। দৃশ্যপটে এখন আর বিন লাদেন নেই। এখন দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়েছেন ‘আরেক মোল্লাহ’ আবু বকর আল বুগদাদি। দৃশ্যপটে এখন আর আল কায়েদা নেই। তার জায়গায় এসেছে ইসলামিক স্টেট। এই ইসলামিক স্টেট বা আইএসের জঙ্গিরা তখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ইরাক আর সিরিয়াজুড়ে রয়েছে তাদের বিশাল জঙ্গি নেটওয়ার্ক। এরা এই অঞ্চলে একটি ‘জিহাদি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই জিহাদি রাষ্ট্রের স্বরূপ কী হবে, তার কিছু কিছু আলামত আমরা ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছি। কিন্তু যে প্রশ্নটি এখন অনেকেই করেন, তা হচ্ছে ইসলামিক জঙ্গিদের উৎখাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু সফল হবে? নাকি আরেকটি ব্যর্থতা যোগ হবে ওবামা প্রশাসনের খাতায়? ১৯৯০ সালে প্রথম ইরাক যুদ্ধ। ২০০৩ সালে দ্বিতীয় ইরাক যুদ্ধ (সাদ্দাম হত্যা) আর ২০১১ সালে লিবিয়ায় তৃতীয় যুদ্ধের পর এখন সিরিয়া-ইরাকে চতুর্থ আরেকটি যুদ্ধের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সম্পৃক্ত করল। এর শেষ কোথায় কেউ বলতে পারে না। বলা ভালো উপসাগরীয় রাজনীতিতে আইএসের নাম শোনা যায় ২০১৩ সালে। তখন এর নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট। ওই এলাকার ঐতিহাসিক নাম লেভান্ট। জঙ্গিরা তখন এই নামটি ধারণ করে। পরে তা পরিবর্তন করে। তবে ১৯৯১ সালে জামাত আল তওহিদ ওয়াল জিহাদ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে মূলত এটি সংগঠিত হয়েছিল। পরে ‘আল কায়েদা ইন ইরাক’ নাম ধারণ করে। এই সংগঠনটি মূলত সুন্নিনির্ভর ও ইরাকের সুন্নিপ্রধান এলাকায় এদের প্রভাব বেশি। ২০০৬ সালে ইরাকে সুন্নি প্রভাবাধীন মুজাহিদিন শূরা কাউন্সিলে সংগঠনটি যোগ দেয়। ২০১৩ সালে সারা বিশ্ব প্রথমবারের মতো আবু বকর বুগদাদির নাম জানতে পারে। তবে ২৯ জুন (২০১৪) বুগদাদি একটি খেলাফতের ডাক দিলে সংগঠনটি ব্যাপক পরিচিতি পায়। তখন সংগঠনটি নতুন নাম ধারণ করে আইএস বা ইসলামিক স্টেট। আল কায়েদার সঙ্গে সংগঠনটির সম্পর্ক কী এটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বলা হচ্ছে, ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে আল কায়েদা আইএসের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। কেন সম্পর্ক ছিন্ন করেছেÑ এটা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে। কেউ বলার চেষ্টা করছেন আইএসের নৃশংসতা এর বড় কারণ। কেউ বলছেন, জিহাদি নেতৃত্ব কার হাতে থাকবেÑ এ জন্যই বিরোধের জন্ম হয়েছে। এদের রাজনীতি মূলত জিহাদি, সালাফি ও ওয়াহাবি মতবাদ দ্বারা পরিচালিত হয়। আল কায়েদা জিহাদি ও ওয়াহাবি মতবাদ অনুসরণ করলেও খেলাফতের কথা বলেনি কখনো। আইএস খেলাফতের কথা বলেছে। আর বুগদাদি নিজেকে খলিফা বা আমিরুল মুমেনিন হিসেবে ঘোষণা করেছেন, যা আল কায়েদার নেতা লাদেন বা জাওয়াহিরি নিজেকে ঘোষণা করেননি। তবে এটা বলতেই হবে, আইএসের নৃশংসতা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। একাধিক মার্কিন সংবাদকর্মীর গলা কেটে হত্যা করে তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়ে একটি ভয়ের আবহ তৈরি করেছে আইএস। অতি সম্প্রতি কোবানিতে যুদ্ধরত এক কুর্দি তরুণী যোদ্ধার গলা কেটে জনৈক আইএস যোদ্ধার উল্লসিত ছবিও ইন্টারনেটে প্রকাশ পেয়েছে। আল কায়েদা তার শত্রুদের হত্যা করত কিন্তু এভাবে গলা কেটে হত্যা করত না। তবে আইএসের উত্থান অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রথম প্রশ্ন কোন শক্তি আইএসকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে? যতদূর জানা যায়, আইএসের যোদ্ধারা প্রতি মাসে বেতন পান। অর্থের পরিমাণটা নেহাত কম নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই অর্থ কোত্থেকে এসেছে? শুধু দখলকৃত অঞ্চলের (তিকরিত, মাসুল) তেল বিক্রি করে এই অর্থ জোগান দেওয়া কি সম্ভব? অস্ত্রই বা আসছে কোত্থেকে! কারা অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে? দ্বিতীয় প্রশ্ন আইএসের যোদ্ধারা ইতোমধ্যে দক্ষ একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছে। এদের কারা প্রশিক্ষণ দিল? তৃতীয় প্রশ্ন কে এই আবু বকর বুগদাদি? কারা তাকে সামনে নিয়ে এল? বিশ্বব্যাপী আল কায়েদা স্বীকৃত। এখন বিকল্প আরেকটি ফোর্স তৈরি করে কোনো ‘শক্তি’ কী চাচ্ছে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে? যদি মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা বজায় থাকে, তাহলে তা তো মার্কিন অর্থনীতির চাঙ্গাভাব বজায় রাখতে সাহায্য করবে। কারণ মার্কিন অর্থনীতি তো ‘যুদ্ধ অর্থনীতি’। যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। অস্ত্র বিক্রি বাড়ে। ব্যবসা বৃদ্ধি পায় যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলে। ইরাক এর বড় প্রমাণ। এ ধরনের হাজারটা প্রশ্ন এখন উঠেছে এবং রাজনৈতিক প-িতরা এসব প্রশ্নের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবেন। পরিস্থিতি এখন যেদিকেই গড়াক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি আফগানিস্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছে সিরিয়ায়। এই মুহূর্তে এটা স্পষ্ট নয়Ñ যুক্তরাষ্ট্র শুধু বিমান হামলা চালিয়েই তাদের কর্মতৎপরতা সীমাবদ্ধ রাখবে, নাকি একই সঙ্গে স্থলবাহিনীও পাঠাবে, যেটা তারা পাঠিয়েছিল আফগানিস্তানে। একটা মিত্রবাহিনী ইতোমধ্যে গঠন করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত ২২টি রাষ্ট্র ওই বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। কোনো কোনো রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিমান হামলায় যোগও দিচ্ছে। এখন অবধি যুক্তরাষ্ট্র সেখানে মেরিন সেনা পাঠায়নি। স্থানীয় উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো চাচ্ছে শুধু বিমান হামলা নয়, বরং মেরিন সেনাও সেখানে পাঠানো হোক। এখানে বলা ভালো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল ইসলামিক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশও যোগ দিক। বাংলাদেশ এই প্রস্তাবে তার সম্মতি জানায়নি। যদিও এ অঞ্চলে জঙ্গি রাজনীতি বিস্তারের ঝুঁকি রয়েছে। আল কায়েদা নেতা জাওয়াহিরি গত মাসে একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আল কায়েদার শাখা প্রতিষ্ঠা করার কথা ঘোষণা করেছেন। এমনি এক পরিস্থিতিতে যেখানে এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে বাংলাদেশ আইএসের বিরুদ্ধে কোন অ্যালায়েন্সে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানাল। এখানে বাংলাদেশের এই নীতি অনেকটা ভারতীয় নীতিরই অনুসরণ মাত্র। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটন সফর করে গেছেন। ওবামা-মোদি আলোচনায় ওবামাও মোদিকে এই অ্যালায়েন্সে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মোদির সমর্থন ওবামা পাননি। এখন বাংলাদেশও আপত্তি করল। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। তাতেও বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। আইএসের জঙ্গি উত্থানকে ঠেকাতে মার্কিন অবস্থানকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। ইসলামিক জঙ্গিবাদ যে শুধু আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে বিঘিœত করছে, তা নয়। বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছেÑ মার্কিনি এই মূল্যায়নের সঙ্গে ওবামা প্রশাসন মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকেও সম্পর্কিত করতে চায়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক মুসলিম রাষ্ট্রই ওবামার ডাকে সাড়া দেয়নি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘চতুর্থ যুদ্ধ’ কীভাবে শেষ হবে কিংবা আইএসকে পরিপূর্ণভাবে উৎখাত করা সম্ভব হবে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন, ১৯৯০ সালের ২ আগস্ট ইরাক কুয়েত দখল করে নিলে কুয়েত মুক্ত করার লক্ষ্যেই জাতিসংঘের উদ্যোগে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে একটি বহুজাতিক বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’ নামে পরিচালিত ওই অভিযান যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়েছিল এবং কুয়েত শত্রুমুক্ত হয়েছিল। সেটা ছিল উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রথম যুদ্ধ’। ‘দ্বিতীয় যুদ্ধ’ শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালের ২০ মার্চ। লক্ষ ছিল একটাইÑ ইরাক আক্রমণ করে ইরাককে সাদ্দামমুক্ত করা। অভিযোগ ছিল ইরাকের কাছে অত্যাধুনিক মরণাস্ত্র রয়েছে, যা ওই অঞ্চল ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। এই অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের অনুমতি ছাড়াই ইরাক আক্রমণ করল। সাদ্দাম হোসেন উৎখাতই নয়, বরং সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করা হলো। অথচ ইরাকের কাছে কোনো অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। ‘দ্বিতীয় যুদ্ধ’ দীর্ঘস্থায়ী হয় ৮ বছর। ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ইরাক থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ততদিনে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এই যুদ্ধ ঘোষণার কোনো অনুমতি ছিল না কংগ্রেসের। ওই যুদ্ধে শুধু কোয়ালিশন বাহিনীর সৈনিকের মৃত্যু সংখ্যা ছিল সরকারিভাবে ৪৮০৯ জন, যার মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সংখ্যা ছিল ৪৪৮১ জন। আর আহত হয়েছিল ৩২২২৬ জন। এ ক্ষেত্রে ইরাকি বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে একা যুক্তরাষ্ট্র ব্যয় করেছে ৬ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। চিন্তা করা যায়? অথচ মার্কিন সমাজে বেকারত্ব রয়েছে। বৈষম্য রয়েছে। উচ্চশিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সীমিত। এই বিপুল ব্যয় এসব সামাজিক এ যুদ্ধে ন্যাটো একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিল। আর তাতে অংশ নিয়েছিল ১৯টি রাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ওবামা, যিনি শান্তির জন্য ২০০৮ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, তিনি যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। কর্নেল গাদ্দাফির মৃত্যু ও ন্যাটোর বিমান হামলা বন্ধ কিংবা সেখানে একটি তথাকথিত সরকার গঠন করার পরও স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। লিবিয়া এখন অস্ত্রবাজদের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। অস্ত্রবাজরা এখন রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। ‘মানবতার নামে সামরিক হস্তক্ষেপ’-এর যুক্তি তুলে ধরে সেখানে সামরিক হামলা চালিয়ে দেশটি ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু শান্তি আসেনি।এখন ওবামা আরও একটি ভুল করতে যাচ্ছেন। তিনি লিবিয়ার মতোই সিরিয়ায় ইসলামিক জঙ্গিদের ওপর বোমা হামলার নির্দেশ দিয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলে ‘চতুর্থ যুদ্ধ’ শুরু করেছেন। ইরাক যুদ্ধের সময় বুশ ছিলেন ক্ষমতায়। ওবামার মতো তিনিও সংবিধান লংঘন করেছেন। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের আর্টিকেল ১, সেকশন ৮-এ বলা আছে, যুদ্ধ ঘোষণা কিংবা শুরু করার অধিকার কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের কোনো অধিকার নেই। প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ শুরু করতে পারেন না। কিন্তু ওবামা লিবিয়ার ব্যাপারেও সংবিধান লংঘন করেছিলেন। আর এখন সিরিয়ার ব্যাপারেও করলেন। তবে সিরিয়া ইরাক বা লিবিয়ার মতো নয়। ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধাদের পরাজিত করা অত সহজ হবে না। সিআইএর হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে ইসলামিক স্টেট বাহিনীর। মূলত ইরাকের সুন্নিদের নিয়েই এই বাহিনী গঠিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে আরও প্রায় ১৫ হাজার সেনা এই বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। এরা ইতোমধ্যে একটি দক্ষ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সাদ্দামের সেনাবাহিনীর অনেক জেনারেল এই বাহিনীর সঙ্গে জড়িত। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে বলা যায়, আইএস যেসব এলাকা ‘স্বাধীন’ করেছে সেখানে নিজস্ব প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। একটি সরকারও আছে। আছে মন্ত্রিপরিষদ। ধর্মীয় পুলিশ বাহিনীও রয়েছে সৌদি আরবের মতো। তাদের কাজ হচ্ছে আজানের সময় সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ও ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী জনসাধারণ পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা দেখা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। যতদূর জানা যায়, আবু বকর বুগদাদির দুজন ডেপুটি রয়েছেনÑ একজন ইরাকের জন্য, অপরজন সিরিয়ার জন্য। বেশ কিছু তেলক্ষেত্র (ইরাকের) এখন এদের দখলে। এই তেল বিক্রির অর্থ এখন তাদের আয়ের অন্যতম উৎস। প্রতিদিন তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ২৬ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলিত হয়। কালোবাজারে এর মূল্য দেড় থেকে ২ মিলিয়ন ডলার। প্রতিদিন এই অর্থ জমা হচ্ছে ইসলামিক স্টেটের ফান্ডে। আফগানিস্তানের মতোই যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘চতুর্থ যুদ্ধ’ দীর্ঘায়িত হবে। এই যুদ্ধ অনেকগুলো সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। এক. আগামীতে ইরাক ভেঙে যাবে এবং শিয়া নিয়ন্ত্রিত একটি ক্ষুদ্র ইরাকের জন্ম হবে। দুই. সুন্নিদের নেতৃত্বাধীন একটি ‘জিহাদি রাষ্ট্র’-এর জন্ম হবে এবং এই অঞ্চলে একটি দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতা বিরাজ করবে। এই ‘জিহাদি রাষ্ট্র’ এ অঞ্চলের অন্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য একটি হুমকি হয়ে দেখা দেবে। তিন. সিরিয়া ভেঙে যাবে। একটা অংশ যুক্ত হবে এই ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে। চার. একটি স্বাধীন কুর্দিরাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করবে। এই সম্ভাবনাগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হবে এবং চূড়ান্ত বিচারে লাভবান হবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র লাভবান হয়নি। ইরাক যুদ্ধে লাভবান হয়েছে মার্কিন কনট্রাক্টররা, ক্ষতি হয়েছে রাষ্ট্রের। ঠিক তেমনি সিরিয়া যুদ্ধে প্রতিদিন ১০ লাখ ডলার ক্ষতির মধ্য দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু লাভবান হয়, সেটিই দেখার বিষয় এখন। Daily Amader Somoy 31.10.14

0 comments:

Post a Comment