৪
নভেম্বর মার্কিন কংগ্রেসের বেশ কটি আসনে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এই নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। টিভি চ্যানেলগুলোতে
আলোচনা হচ্ছে এবং সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে নানা অংক কষা শুরু হয়েছে। এই
নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিরই অংশ। বেশকিছু কারণে এই
নির্বাচনটি এবার গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এ নির্বাচনের ফলাফল ২০১৬ সালে
অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থাৎ ডেমোক্রেটরা
হোয়াইট হাউস হারাবেন কি-না, তা বোঝা যাবে। প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০০৮ সালে
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে হোয়াইট হাউসে আসেন। তিনি ২০১২ সালের
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, এই নির্বাচনে রিপাবলিকান
প্রার্থীরা যদি কংগ্রেসের উভয় হাউসে (সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ)
তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখতে পারেন, তাহলে আগামী দুবছরের জন্য তা
প্রেসিডেন্ট ওবামার জন্য খুব ভালো খবর হবে না। তাকে বারবার রিপাবলিকানদের
চাপের মুখে থাকতে হবে। তৃতীয়ত, ডেমোক্রেটদের পরাজয়ে মার্কিন নীতিতে বেশকিছু
পরিবর্তন আসতে পারে।নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দুবছর পরপর হাউস অব
রিপ্রেজেনটেটিভ অথবা প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অর্থে
২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচনও
অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এখন দুই বছর পর ২০১৪ সালে আবারও প্রতিনিধি পরিষদের
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যদিকে ছয় বছর থাকে একজন সিনেটরের মেয়াদ। তবে
সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিনিধি পরিষদের আসন
সংখ্যা ৪৩৫, আর সিনেটের আসন সংখ্যা ১০০। এই হিসেবে ৪৩৫টি প্রতিনিধি পরিষদের
আসনে এখন নির্বাচন হবে। অন্যদিকে সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৩৩টি আসন,
সেই সঙ্গে আরও ৩টি বিশেষ আসনে (মোট ৩৬টি) নির্বাচন হবে। এই বিশেষ আসন
হাওয়াই, ওকলাহোমা ও সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের। নানা কারণে এই আসন তিনটি
ফাঁকা রয়েছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, সিনেট নির্বাচন এবার ডেমোক্রেটদের জন্য
যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কেননাপ্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের
সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও সিনেটে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। সিনেটে
সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে ডেমোক্রেটদের। বর্তমানে সিনেটে ডেমোক্রেটদের রয়েছে
৫৩টি আসন। দুজন নিরপেক্ষ সিনেটেরও রয়েছেন সিনেটে। তারা ভোটাভুটিতে
প্রেসিডেন্ট ওবামাকে সমর্থন করেন। অর্থাৎ সিনেটে ডেমোক্রেটদের সমর্থনে
রয়েছে ৫৫টি আসন। এখানে রিপাবলিকানরা যদি তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে
না পারেন, তাহলে ওবামাকে তারা চাপের মুখে রাখতে পারবেন না।আগেই উল্লেখ
করেছি, বর্তমানে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটদের প্রতিনিধি পরিষদে কোনো
সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। এখানে রিপাবলিকানদের দখলে রয়েছে ২৩৩টি আসন। আর
ডেমোক্রেটদের রয়েছে ১৯৯টি। ফলে ওবামা সবকিছু কংগ্রেসে পাস করাতে পারেন না।
এই মধ্যবর্তী নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, যদি রিপাবলিকানরা সিনেটে আরও ৬টি আসনে তাদের বিজয় নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে কংগ্রেসের উভয় কক্ষ অর্থাৎ প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ফলে আইন প্রণয়নে তাদের কোনো বাধা আর থাকবে না। প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটদের হলেও তারা প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করতে পারেন তাদের প্রণীত আইনে স্বাক্ষর করতে। এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ওই আইনে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। ভেটো দিতে পারেন। কিন্তু তিনি কবার ভেটো দেবেন? প্রেসিডেন্ট যদি কংগ্রেসের সঙ্গে একটি জটিলতায় জড়িয়ে যান, তাহলে দেশে বড় ধরনের সংকটের জন্ম হবে। গেল বছরের অভিজ্ঞতা অনেকেই স্মরণ করতে পারেন। ২০১৩ সালেও আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। তখন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রতিনিধি পরিষদের দ্বন্দ্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্ভব হয়নি। অনেককে অনির্দিষ্টকালীন ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। অনেক সেবামূলক কর্মকাণ্ড কর্মচারীদের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পার্ক জাদুঘর, দর্শনীয় স্থান, যা ফেডারেল সরকারের আওতায় পরিচালিত হতো, তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেকে সেই চাকরি আর ফিরে পাননি। এখন পরিস্থিতি সেদিকে যাবে কি-না, সেটাই ভাবনার বিষয়।
মার্কিন নির্বাচনের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে তেমন কোনো প্রচারণা দেখা যায় না। আমি টেক্সাস রাজ্যের ডালাসের একটি উপশহর হাইল্যান্ড ভিলেজে থাকছি। এটা মূলত কনজারভেটিভদের এলাকা। টেক্সাস নিয়ন্ত্রণ করে রিপাবলিকানরা। গভর্নর রিক পেরি ও লেফটেন্যান্ট গভর্নর ডেভিড ডিউহাস্ট উভয়ই রিপাবলিকান। প্রতি রাজ্যের মতো টেক্সাস থেকেও দুজন সিনেটর নির্বাচিত। এই দুজন সিনেটর জন করবিন ও টেড ক্রুজ উভয়েই রিপাবলিকান পার্টির সদস্য। প্রতিনিধি পরিষদে ২৪ জন রিপাবলিকান সদস্য আর ১২ জন ডেমোক্রেট সদস্য। এই ৩৬টি আসনেই নির্বাচন হবে। কিন্তু আমি নির্বাচনের কোনো প্রচারণা দেখিনি। ভোটের জন্য কেউ আসেনি। রাজধানী অস্টিনে গিয়েছিলাম গেল সপ্তাহে। কোনো পোস্টার, ফেস্টুন, প্রচারণা চোখে পড়েনি। ৪ তারিখ কোনো ছুটিও থাকবে না। মানুষের কাজের ফাঁকে একসময় গিয়ে ভোট দিয়ে আসবে। বাংলাদেশী আমেরিকানরা মূলত ডেমোক্রেট পার্টির সমর্থক। জিজ্ঞেস করে দেখেছি, তারা ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থীদেরই ভোট দেবেন। তবে প্রচারণা চলে টেলিভিশনে। ওখানে দলকে, প্রার্থীকে বিজ্ঞাপন দিতে হয়। আর ওই বিজ্ঞাপনটাই হচ্ছে তাদের প্রচারণা। তবে প্রতিটি বাড়িতে তারা চিঠি পাঠান। টেক্সাসে রিপাবলিকানরাই বিজয়ী হবে। এটাই সবার ধারণা।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিগত আশির দশকে রিগ্যানের সময় প্রতিনিধি পরিষদ পুরোটা সময়ই ছিল ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণে। রিগ্যানের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টি ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সিনেটে তাদের প্রাধান্য বজায় রেখেছিল। প্রেসিডেন্ট বুশের সময়ে সিনেট ছিল ডেমোক্রেটদের দখলে। বুশ নিজে ছিলেন রিপাবলিকান। এবং মজার ব্যাপার হল, ওই সময় অর্থাৎ ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদও ছিল ডেমোক্রেটদের দখলে। পরিস্থিতি বদলে গেল প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের সময়ে। ক্লিনটনের সময়, ১৯৯৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত, প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট নিয়ন্ত্রণ করেছে রিপাবলিকানরা। অথচ প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন ছিলেন ডেমোক্রেট। আবার প্রেসিডেন্ট বুশের (জুনিয়র) সময়সীমায়ও প্রথমদিকে, ২০০১ থেকে ২০০৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত, প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট নিয়ন্ত্রণ করেছে রিপাবলিকানরা। প্রেসিডেন্ট ওবামার দুই টার্মে (২০০৮ সালে তিনি প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন) দুরকম দৃশ্য দেখা যায়। ২০১২ পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদ ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর প্রথম থেকে (২০০৮ থেকে) এখন পর্যন্ত সিনেট ডেমোক্রেটদের দখলে। কিন্তু ২০১২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদ চলে গেছে রিপাবলিকানদের দখলে। এ কারণেই চলতি ২০১৪-এর মধ্যবর্তী নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ক্লিনটনের সময়কার পরিস্থিতির মতো, যখন কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ করেছে বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি। একই পরিস্থিতির আশংকা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। অর্থাৎ ডেমোক্রেটদের দখলে থাকছে প্রেসিডেন্সি। কিন্তু কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ করবে বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি।
আমাদের দেশের মতো নির্বাচনে ওবামার দল যদি হেরেও যায়, তাহলেও প্রেসিডেন্ট ওবামার পদত্যাগের কোনো সুযোগ নেই। অথবা তাকে পদত্যাগ করানো যাবে না। তবে প্রশাসন পরিচালনায় তিনি সমস্যায় পড়বেন। এবং তাকে রিপাবলিকানদের সমর্থন নিয়েই প্রশাসন পরিচালনা করতে হবে। রিপাবলিকানরা তাদের পছন্দমতো বিল কংগ্রেসে পাস করতে পারবেন বটে; কিন্তু প্রেসিডেন্ট তাতে ভেটো দিতে পারবেন। অন্যদিকে ওবামার অনেক ইচ্ছার বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে না, কারণ তাতে রিপাবলিকানদের সমর্থন নাও থাকতে পারে। তবে এখানে আমাদের দেশের সঙ্গে একটি পার্থক্য উল্লেখ করা যায়। দলীয়ভাবে সংসদে আমাদের দেশে ভোট হয়। অর্থাৎ দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই সংসদ সদস্যরা ভোটাভুটিতে অংশ নেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তারা যেতে পারেন না। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসে সবসময় দলীয়ভাবে ভোট হয়, এটা বলা যাবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো একজন সদস্য দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সরকারকে অথবা বিরোধী দলকে সমর্থন করতে পারেন। তাতে তার সদস্যপদ চলে যায় না আমাদের দেশের মতো। আরও একটা কথা বলি- কোনো একটা দলের কোনো রাজ্য শাখা (যেমন টেক্সাস রিপাবলিকান শাখা) দলের মূল শাখার কোনো সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আলাদাভাবেও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বেশ কবছর আগে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে আমরা বাংলাদেশের কজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যের সাংবিধানিক কর্মপদ্ধতি দেখেছিলাম। তখন সুযোগ হয়েছিল স্থানীয় সিনেটর থেকে শুরু করে সব দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার। তারা তখন আমাকে অকপটে বলেছিলেন সে কথা। অর্থাৎ তারা স্বাধীন। যে কোনো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেন। গত দুবছরের কংগ্রেসের কার্যপদ্ধতি যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখা যাবে কোনো কোনো রিপাবলিকান সিনেটর বা কংগ্রেস সদস্য প্রেসিডেন্ট ওবামার কোনো কোনো নীতি সমর্থন করেছেন। এটাই মার্কিন গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি একটি বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। দেখা গেছে ওই রাজ্যের বাইরে থেকে বিভিন্ন সূত্র হতে অর্থ আসছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কোনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে অর্থ ব্যয় করছে। ফলে একটা প্রশ্ন উঠেছে যে, এই অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারটি কতটুকু যুক্তিযুক্ত এবং যারা অর্থ ব্যয় করলেন, তারা কোন স্বার্থে ওই অর্থ ব্যয় করলেন। টাইম সাময়িকী তাদের ৩ নভেম্বরের সংখ্যায় এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, নর্থ ক্যারোলিনা ও কেন্টাকি রাজ্যের সিনেট নির্বাচনে ১০০ মিলিয়ন ডলারের উপরে খরচ হয়েছে। অর্থাৎ একটি স্থানীয় নির্বাচনে বাংলাদেশী টাকায় খরচ হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা! মজার কথা, এই অর্থ কিন্তু প্রার্থী বহন করে না। বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থা এ অর্থ ব্যয় করে। টাইমের দেয়া তথ্যমতে, আলাস্কা ও আইওয়া রাজ্যে মাথাপিছু (ভোটার) ব্যয় হয়েছে (নির্বাচনী প্রচারণায়) ১১ ডলার। টিভিতে বিজ্ঞাপন বাবদ এ অর্থ ব্যয় হয়েছে। আরও কিছু পরিসংখ্যান দিয়েছে সাময়িকীটি। ১৯৮৪ সালে যেখানে নির্বাচনী প্রচারণায় খরচ হয়েছিল ৪০০ মিলিয়ন, সেখানে ২০১২ সালে খরচ হয়েছে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। তুলনামূলক বিচারে দেখা যায়, ১৯৮৪ সালে মাথাপিছু স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়েছে ১৭০০ ডলার, ২০১২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮৯০০ ডলার। জিডিপির পরিমাণ বেড়েছে ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার (১৯৮৪) থেকে ১৬ ট্রিলিয়ন ডলারে (২০১২)। এই অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি ২০১০ সালে সুপ্রিমকোর্টের একটি রায়ে অনুমোদিত হয়েছে। এজন্যই বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ধনীদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। সিনেটর আর কংগ্রেস সদস্যরা এক একজন বিলিওনিয়ার। এবং ব্যবসায়ীরা এদের পেছনে অর্থ ব্যয় করে। পরে সুবিধা আদায় করে নেয় ৪ নভেম্বরের পর মার্কিন রাজনীতিতে কী পরিবর্তন আসবে, এ মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে অনেকেই মনে করছেন, ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকানদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাদের স্বার্থেই তারা তা করবেন। ট্যাক্স রিফর্ম হবে, তাতে উভয় দলের সম্মতি থাকবে। গ্যাস রফতানিতেও উভয়ের সম্মতি থাকবে। তবে রিপাবলিকানদের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই বলেন, যদি কংগ্রেস সত্যি সত্যিই রিপাবলিকানদের হাতে চলে যায়, তাহলে তারা ওবামার প্রতিটি সিদ্ধান্তে ভেটো দেবেন। তারা গেলবারের মতো (ফিসক্যাল ক্লিফ) সরকারের সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেবেন। ইমিগ্রেশন রিফর্ম প্রক্রিয়া আটকে দেবেন রিপাবলিকানরা। ওবামার স্বাস্থ্যসেবার পরিকল্পনাও আটকে যেতে পারে। দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ওবামা চাপের মুখে থাকবেন, যদি কংগ্রেস তার হাতছাড়া হয়ে যায়। একটি উপসাগরীয় অঞ্চলে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার বিস্তৃতি রোধে ওবামার সিদ্ধান্ত। ওবামা আইএসের ইসলামী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে শুধু বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। স্থলবাহিনী অথবা মেরিন সেনা সেখানে এখনও পাঠাননি। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এখনও শুরু হয়নি। কিন্তু রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু করতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে যুদ্ধ শুরু করার অধিকার দেয়া হয়েছে কংগ্রেসকে।ইবোলা রোগের বিস্তার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনা এখন কমে আসছে। ওবামা লাইবেরিয়াতে মার্কিন সৈন্য পাঠানোর কথা বলেছেন। সেখানে ইবোলার বিস্তার যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে লক্ষ্যে সেনারা কাজ করবে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আসা নাগরিকদের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। রিপাবলিকানরা কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ করলে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ব্যাপারটি কিছুদিনের জন্য স্থগিত বা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়া এটি করেছে। তবে বলাই যায়, ওবামার পররাষ্ট্রনীতিতে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। এখন দেখার পালা এই পরিবর্তনটি কেমন হয়।হাইল্যান্ড ভিলেজ, ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র Daily Jugantor 03.11.14
এই মধ্যবর্তী নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, যদি রিপাবলিকানরা সিনেটে আরও ৬টি আসনে তাদের বিজয় নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে কংগ্রেসের উভয় কক্ষ অর্থাৎ প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ফলে আইন প্রণয়নে তাদের কোনো বাধা আর থাকবে না। প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটদের হলেও তারা প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করতে পারেন তাদের প্রণীত আইনে স্বাক্ষর করতে। এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ওই আইনে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। ভেটো দিতে পারেন। কিন্তু তিনি কবার ভেটো দেবেন? প্রেসিডেন্ট যদি কংগ্রেসের সঙ্গে একটি জটিলতায় জড়িয়ে যান, তাহলে দেশে বড় ধরনের সংকটের জন্ম হবে। গেল বছরের অভিজ্ঞতা অনেকেই স্মরণ করতে পারেন। ২০১৩ সালেও আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। তখন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রতিনিধি পরিষদের দ্বন্দ্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্ভব হয়নি। অনেককে অনির্দিষ্টকালীন ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। অনেক সেবামূলক কর্মকাণ্ড কর্মচারীদের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পার্ক জাদুঘর, দর্শনীয় স্থান, যা ফেডারেল সরকারের আওতায় পরিচালিত হতো, তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেকে সেই চাকরি আর ফিরে পাননি। এখন পরিস্থিতি সেদিকে যাবে কি-না, সেটাই ভাবনার বিষয়।
মার্কিন নির্বাচনের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে তেমন কোনো প্রচারণা দেখা যায় না। আমি টেক্সাস রাজ্যের ডালাসের একটি উপশহর হাইল্যান্ড ভিলেজে থাকছি। এটা মূলত কনজারভেটিভদের এলাকা। টেক্সাস নিয়ন্ত্রণ করে রিপাবলিকানরা। গভর্নর রিক পেরি ও লেফটেন্যান্ট গভর্নর ডেভিড ডিউহাস্ট উভয়ই রিপাবলিকান। প্রতি রাজ্যের মতো টেক্সাস থেকেও দুজন সিনেটর নির্বাচিত। এই দুজন সিনেটর জন করবিন ও টেড ক্রুজ উভয়েই রিপাবলিকান পার্টির সদস্য। প্রতিনিধি পরিষদে ২৪ জন রিপাবলিকান সদস্য আর ১২ জন ডেমোক্রেট সদস্য। এই ৩৬টি আসনেই নির্বাচন হবে। কিন্তু আমি নির্বাচনের কোনো প্রচারণা দেখিনি। ভোটের জন্য কেউ আসেনি। রাজধানী অস্টিনে গিয়েছিলাম গেল সপ্তাহে। কোনো পোস্টার, ফেস্টুন, প্রচারণা চোখে পড়েনি। ৪ তারিখ কোনো ছুটিও থাকবে না। মানুষের কাজের ফাঁকে একসময় গিয়ে ভোট দিয়ে আসবে। বাংলাদেশী আমেরিকানরা মূলত ডেমোক্রেট পার্টির সমর্থক। জিজ্ঞেস করে দেখেছি, তারা ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থীদেরই ভোট দেবেন। তবে প্রচারণা চলে টেলিভিশনে। ওখানে দলকে, প্রার্থীকে বিজ্ঞাপন দিতে হয়। আর ওই বিজ্ঞাপনটাই হচ্ছে তাদের প্রচারণা। তবে প্রতিটি বাড়িতে তারা চিঠি পাঠান। টেক্সাসে রিপাবলিকানরাই বিজয়ী হবে। এটাই সবার ধারণা।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিগত আশির দশকে রিগ্যানের সময় প্রতিনিধি পরিষদ পুরোটা সময়ই ছিল ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণে। রিগ্যানের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টি ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সিনেটে তাদের প্রাধান্য বজায় রেখেছিল। প্রেসিডেন্ট বুশের সময়ে সিনেট ছিল ডেমোক্রেটদের দখলে। বুশ নিজে ছিলেন রিপাবলিকান। এবং মজার ব্যাপার হল, ওই সময় অর্থাৎ ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদও ছিল ডেমোক্রেটদের দখলে। পরিস্থিতি বদলে গেল প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের সময়ে। ক্লিনটনের সময়, ১৯৯৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত, প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট নিয়ন্ত্রণ করেছে রিপাবলিকানরা। অথচ প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন ছিলেন ডেমোক্রেট। আবার প্রেসিডেন্ট বুশের (জুনিয়র) সময়সীমায়ও প্রথমদিকে, ২০০১ থেকে ২০০৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত, প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট নিয়ন্ত্রণ করেছে রিপাবলিকানরা। প্রেসিডেন্ট ওবামার দুই টার্মে (২০০৮ সালে তিনি প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন) দুরকম দৃশ্য দেখা যায়। ২০১২ পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদ ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর প্রথম থেকে (২০০৮ থেকে) এখন পর্যন্ত সিনেট ডেমোক্রেটদের দখলে। কিন্তু ২০১২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদ চলে গেছে রিপাবলিকানদের দখলে। এ কারণেই চলতি ২০১৪-এর মধ্যবর্তী নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ক্লিনটনের সময়কার পরিস্থিতির মতো, যখন কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ করেছে বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি। একই পরিস্থিতির আশংকা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। অর্থাৎ ডেমোক্রেটদের দখলে থাকছে প্রেসিডেন্সি। কিন্তু কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ করবে বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি।
আমাদের দেশের মতো নির্বাচনে ওবামার দল যদি হেরেও যায়, তাহলেও প্রেসিডেন্ট ওবামার পদত্যাগের কোনো সুযোগ নেই। অথবা তাকে পদত্যাগ করানো যাবে না। তবে প্রশাসন পরিচালনায় তিনি সমস্যায় পড়বেন। এবং তাকে রিপাবলিকানদের সমর্থন নিয়েই প্রশাসন পরিচালনা করতে হবে। রিপাবলিকানরা তাদের পছন্দমতো বিল কংগ্রেসে পাস করতে পারবেন বটে; কিন্তু প্রেসিডেন্ট তাতে ভেটো দিতে পারবেন। অন্যদিকে ওবামার অনেক ইচ্ছার বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে না, কারণ তাতে রিপাবলিকানদের সমর্থন নাও থাকতে পারে। তবে এখানে আমাদের দেশের সঙ্গে একটি পার্থক্য উল্লেখ করা যায়। দলীয়ভাবে সংসদে আমাদের দেশে ভোট হয়। অর্থাৎ দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই সংসদ সদস্যরা ভোটাভুটিতে অংশ নেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তারা যেতে পারেন না। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসে সবসময় দলীয়ভাবে ভোট হয়, এটা বলা যাবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো একজন সদস্য দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সরকারকে অথবা বিরোধী দলকে সমর্থন করতে পারেন। তাতে তার সদস্যপদ চলে যায় না আমাদের দেশের মতো। আরও একটা কথা বলি- কোনো একটা দলের কোনো রাজ্য শাখা (যেমন টেক্সাস রিপাবলিকান শাখা) দলের মূল শাখার কোনো সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আলাদাভাবেও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বেশ কবছর আগে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে আমরা বাংলাদেশের কজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যের সাংবিধানিক কর্মপদ্ধতি দেখেছিলাম। তখন সুযোগ হয়েছিল স্থানীয় সিনেটর থেকে শুরু করে সব দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার। তারা তখন আমাকে অকপটে বলেছিলেন সে কথা। অর্থাৎ তারা স্বাধীন। যে কোনো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেন। গত দুবছরের কংগ্রেসের কার্যপদ্ধতি যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখা যাবে কোনো কোনো রিপাবলিকান সিনেটর বা কংগ্রেস সদস্য প্রেসিডেন্ট ওবামার কোনো কোনো নীতি সমর্থন করেছেন। এটাই মার্কিন গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি একটি বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। দেখা গেছে ওই রাজ্যের বাইরে থেকে বিভিন্ন সূত্র হতে অর্থ আসছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কোনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে অর্থ ব্যয় করছে। ফলে একটা প্রশ্ন উঠেছে যে, এই অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারটি কতটুকু যুক্তিযুক্ত এবং যারা অর্থ ব্যয় করলেন, তারা কোন স্বার্থে ওই অর্থ ব্যয় করলেন। টাইম সাময়িকী তাদের ৩ নভেম্বরের সংখ্যায় এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, নর্থ ক্যারোলিনা ও কেন্টাকি রাজ্যের সিনেট নির্বাচনে ১০০ মিলিয়ন ডলারের উপরে খরচ হয়েছে। অর্থাৎ একটি স্থানীয় নির্বাচনে বাংলাদেশী টাকায় খরচ হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা! মজার কথা, এই অর্থ কিন্তু প্রার্থী বহন করে না। বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থা এ অর্থ ব্যয় করে। টাইমের দেয়া তথ্যমতে, আলাস্কা ও আইওয়া রাজ্যে মাথাপিছু (ভোটার) ব্যয় হয়েছে (নির্বাচনী প্রচারণায়) ১১ ডলার। টিভিতে বিজ্ঞাপন বাবদ এ অর্থ ব্যয় হয়েছে। আরও কিছু পরিসংখ্যান দিয়েছে সাময়িকীটি। ১৯৮৪ সালে যেখানে নির্বাচনী প্রচারণায় খরচ হয়েছিল ৪০০ মিলিয়ন, সেখানে ২০১২ সালে খরচ হয়েছে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। তুলনামূলক বিচারে দেখা যায়, ১৯৮৪ সালে মাথাপিছু স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়েছে ১৭০০ ডলার, ২০১২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮৯০০ ডলার। জিডিপির পরিমাণ বেড়েছে ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার (১৯৮৪) থেকে ১৬ ট্রিলিয়ন ডলারে (২০১২)। এই অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি ২০১০ সালে সুপ্রিমকোর্টের একটি রায়ে অনুমোদিত হয়েছে। এজন্যই বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ধনীদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। সিনেটর আর কংগ্রেস সদস্যরা এক একজন বিলিওনিয়ার। এবং ব্যবসায়ীরা এদের পেছনে অর্থ ব্যয় করে। পরে সুবিধা আদায় করে নেয় ৪ নভেম্বরের পর মার্কিন রাজনীতিতে কী পরিবর্তন আসবে, এ মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে অনেকেই মনে করছেন, ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকানদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাদের স্বার্থেই তারা তা করবেন। ট্যাক্স রিফর্ম হবে, তাতে উভয় দলের সম্মতি থাকবে। গ্যাস রফতানিতেও উভয়ের সম্মতি থাকবে। তবে রিপাবলিকানদের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই বলেন, যদি কংগ্রেস সত্যি সত্যিই রিপাবলিকানদের হাতে চলে যায়, তাহলে তারা ওবামার প্রতিটি সিদ্ধান্তে ভেটো দেবেন। তারা গেলবারের মতো (ফিসক্যাল ক্লিফ) সরকারের সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেবেন। ইমিগ্রেশন রিফর্ম প্রক্রিয়া আটকে দেবেন রিপাবলিকানরা। ওবামার স্বাস্থ্যসেবার পরিকল্পনাও আটকে যেতে পারে। দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ওবামা চাপের মুখে থাকবেন, যদি কংগ্রেস তার হাতছাড়া হয়ে যায়। একটি উপসাগরীয় অঞ্চলে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার বিস্তৃতি রোধে ওবামার সিদ্ধান্ত। ওবামা আইএসের ইসলামী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে শুধু বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। স্থলবাহিনী অথবা মেরিন সেনা সেখানে এখনও পাঠাননি। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এখনও শুরু হয়নি। কিন্তু রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু করতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে যুদ্ধ শুরু করার অধিকার দেয়া হয়েছে কংগ্রেসকে।ইবোলা রোগের বিস্তার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনা এখন কমে আসছে। ওবামা লাইবেরিয়াতে মার্কিন সৈন্য পাঠানোর কথা বলেছেন। সেখানে ইবোলার বিস্তার যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে লক্ষ্যে সেনারা কাজ করবে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আসা নাগরিকদের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। রিপাবলিকানরা কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ করলে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ব্যাপারটি কিছুদিনের জন্য স্থগিত বা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়া এটি করেছে। তবে বলাই যায়, ওবামার পররাষ্ট্রনীতিতে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। এখন দেখার পালা এই পরিবর্তনটি কেমন হয়।হাইল্যান্ড ভিলেজ, ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র Daily Jugantor 03.11.14
0 comments:
Post a Comment