যুক্তরাষ্ট্রের
কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়ে গেল ৪ নভেম্বর। একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি।
দুপুরে টেক্সাসের ডালাসের হাইল্যান্ড ভিলেজ উপশহরের একটি ভোট কেন্দ্র।
হেরিটেজ এলিমেন্টারি স্কুলে এই ভোট কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়েছে। এই স্কুলটি
আমাদের দেশের প্রাইমারি স্কুলের মতো। পঞ্চম গ্রেড পর্যন্ত বাচ্চারা এখানে
পড়ে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠলেই চলে যায় মিডেল স্কুলে। স্কুলের আশপাশে কোনো
প্রচারণা নেই। প্রার্থীদের কোনো এজেন্টও নেই। কেউ একজন এলেন না ভোটের জন্য।
আমাকে যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি বাংলাদেশি-আমেরিকান ভোটার। আমি ভোটার নই,
দর্শক। দুপুরে আমার মতো দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তিকে দেখলাম না উৎসাহী হয়ে ভোট
কেন্দ্রে যেতে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আমেরিকান নাগরিকদের আগ্রহ কম। এটা নিয়ে
দীর্ঘদিনই বিতর্ক হচ্ছে। আমেরিকার গণতন্ত্র নিয়ে আমরা প্রশংসা করি।
হাজারটা উদাহরণ দিই। কিন্তু ভোট কেন্দ্রে উপস্থিতির হার কম। যদিও এখানে
পোস্টাল ব্যালটেরও সুযোগ আছে। মানুষ কাজ করে। ভোটের জন্য এখানে কোনো ছুটি
থাকে না। যারা কাজ করেন, তারা কাজ ফাঁকি দিয়ে অথবা ছুটি নিয়ে ভোট দিতে যান
না। কাজ শেষে ভোট দিতে যান। এ জন্য কোনো কোনো ভোট কেন্দ্র সন্ধ্যা ৭টা অথবা
৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মানুষ তার কাজ শেষে ভোট দিয়ে বাড়ি যায় অথবা যারা
এই বিড়ম্বনা এড়াতে চান, তারা আগেই ভোট দিয়ে দেন পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে। শুধু
হেরিটেজ এলিমেন্টারি স্কুলেই যে ভোটারদের উপস্থিতি কম, তা নয়। বরং প্রতিটি
ভোট কেন্দ্রেরই মোটামুটি একই চিত্র দেখা যায়। হেরিটেজ এলিমেন্টারি স্কুলের
প্রবেশ মুখে দুটি পোস্টার দেখলাম মাত্র। দু’জন প্রার্থীর। ছোট একটি কাগজে
দিকনির্দেশনা দেয়া কোথায় ভোট হচ্ছে। কোনো জটলা নেই। কোনো হৈহল্লা নেই।
ভোটের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির সংখ্যাও কম। সাধারণত বাসায় বাসায় ভোটার
নম্বরের কাগজপত্র পাঠানো হয়। না পেলেও সমস্যা নেই। নিজের আইডি দেখে ভোট
দেয়া যায়। দু’ভাবে ভোট দেয়া যায়। ইলেক্ট্রনিক ভোট অথবা সাধারণ ভোট।
ইলেক্ট্রনিক ভোট ও বোতাম টিপে ভোট দিতে হয়। আরো একটা কথা। শুধু কংগ্রেস
সদস্য বা সিনেটর নির্বাচনের জন্যই ভোট হয়নি এবার। জনগণ ভোট দিয়েছে রাজ্যের
বিভিন্ন শীর্ষ প্রশাসনিক পদে কাদের বসানো হবে, তাদের জন্যও। কি অদ্ভুত
জিনিস, যিনি হাইল্যান্ড ভিলেজ শহরের পুলিশ প্রধান হবেন কিংবা পরিবেশ
বিভাগের প্রধান হবেন, তাকে ভোট দিল জনগণ। অর্থাৎ ওইসব পদ আমলাপ্রধান নয়,
আমাদের দেশের মতো। এখানে জনগণ তাদের নির্বাচিত করে। ফলে এক ধরনের দায়বদ্ধতা
থাকে। এরা অর্থাৎ শহরপ্রধানরা মাসে একবার সভা করেন। সমস্যার কথা শোনেন।
নাগরিকরা সরাসরি প্রশ্ন করেন। এটাই আমেরিকার গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এটা কি
বাংলাদেশে সম্ভব? খোদ জনগণের প্রতিনিধি, অর্থাৎ এমপিদেরই তো পায় না মানুষ।
ভোটের সময়ই দেখা পেল। এরপর তো আর পাওয়া যায় না। যিনি শহরের সব স্কুলের
প্রধান। তিনিও মিটিং করেন অভিভাবকদের নিয়ে। বাচ্চাদের স্কুলগুলোও দেখেছি
এটা বাংলাদেশে চিন্তা করাও যায় না। এর মধ্য দিয়েই এক ধরনের দায়বদ্ধতা তৈরি
হয়। বলা ভালো এবারে নির্বাচন হয়ে গেল ৪৩৫ আসনবিশিষ্ট প্রতিনিধি পরিষদের সব
আসনে। আর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে। সিনেট সদস্যরা ৬ বছরের জন্য নির্বাচিত
হন। আর প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা ২ বছরের জন্য।কিন্তু নির্বাচন
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্য কোনো সুফল বয়ে আনেনি। তার দল ডেমোক্র্যাটিক
পার্টি হেরে গেছে নির্বাচনে। ফলে প্রশাসন পরিচালনা করা তার জন্য একটি
সমস্যা হবে। তিনি চাইলেও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারবেন না রিপাবলিকানদের
বিরোধিতার মুখে। ডিসেম্বরে বাজেট পাস করতে হবে। যুদ্ধের খরচ মেটানোর জন্য
তিনি কংগ্রেসের কাছে অতিরিক্ত টাকা চেয়েছেন। কংগ্রেস এই অর্থ ছাড় নাও করতে
পারে। ইতোমধ্য অবৈধ অভিবাসী ও ইরানের সঙ্গে একটি সমঝোতার প্রশ্নে তিনি
রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। ফলে জটিলতা থাকলই। গত
প্রায় দু’মাস যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে দেখেছি অনেক সাধারণ আমেরিকান
ওবামার কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে বাংলাদেশি-আমেরিকানরা বরাবরই
ডেমোক্র্যাটদের সমর্থক। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে অনেক বাঙালিকে
দেখেছি, তারা ভোট দিতে যাননি। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনেকেরই কোনো আগ্রহ
দেখিনি। অনেক আমেরিকানও ভোট দেননি। আমি যে এলাকাতে থাকি, এটা মোটামুটি
শিক্ষিত এলাকা। অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা আইটি বিশেষজ্ঞ। আলাপ
করে দেখেছি অনেকেই ভোট দিতে যাননি।মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যবর্তী
নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি ছিল এবার অন্যতম একটা আলোচিত বিষয়। এই কালো
টাকাকে এরা বলছে ‘ডার্ক মানি।’ ৪ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে এই কালো
টাকা ব্যয় করা হয়েছে প্রধানত রিপাবলিকান প্রার্থীরা কীভাবে বিজয়ী হবেন সে
জন্য। নির্বাচনী প্রচারণায়, বিশেষ করে দলীয়ভাবে অপর পক্ষকে (এ ক্ষেত্রে
ডেমোক্র্যাটদের) হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যই এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রেসপনসিভ পলিটিকস তাদের
গবেষণায় এই কালো টাকার একটি হিসাব দিয়েছে। তারা জানিয়েছে মধ্যবর্তী এই
নির্বাচনে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। শুধু নেতিবাচক
প্রচারণার কাজে বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ
বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। চিন্তা করা যায়! তাও আবার পুরো
নির্বাচনের জন্য নয়। মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ সিনেট আসন ও পুরো প্রতিনিধি
পরিষদের আসনের জন্য। ২০০৮ সালে কালো টাকা খরচের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৫১
বিলিয়ন আর ২০১০ সালে ছিল ৩ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন। ২০১২ সালেও প্রায় ৪ বিলিয়ন
ডলার খরচ হয়েছিল। কিভাবে খরচ হয় এ টাকা? মূলত টিভি বিজ্ঞাপন বাবদ, বিল
বোর্ড নির্মাণ বাবদ অর্থাৎ প্রচারণার কাজেই এ টাকা ব্যবহৃত হয়। এ ক্ষেত্রে
এক দল অপর দলের বিভিন্ন সমালোচনা করে টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়। এটা বৈধ।
প্রার্থীর ব্যক্তিগত চরিত্র কিংবা কর্মকাণ্ড স্থান পায় কম। সেন্টার ফর
রেসপনসিভ পলিটিক্স তাদের গবেষণায় দেখিয়েছে কীভাবে নেতিবাচক প্রচারণা বৃদ্ধি
পাচ্ছে। ২০১০ সালের সিনেট নির্বাচনে ইতিবাচক প্রচারণা ছিল ৪৩ দশমিক ১ ভাগ
আর নেতিবাচক প্রচারণা ছিল ৪৩ দশমিক ৭ ভাগ। ২০১৪ সালে তা বেড়েছে যথাক্রমে ২৭
দশমিক ৫ ভাগ ও ৫৫ ভাগ। অর্থাৎ নেতিবাচক প্রচারণা বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনি
প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচনে ২৭ দশমিক ৬ ভাগ (২০১০) থেকে বেড়েছে ৪১ দশমিক ৪
ভাগ (২০১৪)। ইতিবাচক প্রচারণা ছিল ৫২ (২০১০) ও ৪৭ দশমিক ৬ ভাগ (২০১৪)।
গভর্নর পদে নির্বাচনে এই নেতিবাচক প্রচারণা বেড়েছে ৩৩ ভাগ (২০১০) থেকে ৪৭
দশমিক ৮ ভাগ (২০১৪)। সুতরাং বোঝাই যায় এই নেতিবাচক প্রচারণা এবার
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কীভাবে প্রভাব ফেলেছে। এখানে বলা ভালো,
বিভিন্ন বেসরকরি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এই নেতিবাচক প্রচারণায় টাকা দিয়ে
থাকে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স ৩১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার,
ক্রসরোড সিপিএস ২৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন, লীগ অব কনজারভেটিভ ভোটারস ৯ দশমিক ৪
মিলিয়ন, ন্যাশনাল রাইফেলস অ্যাসোসিয়েশন ৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার ইত্যাদি।
দেখা গেছে, এসব সংগঠনের মূল টার্গেট হচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা এবং তাদের
প্রচারণার অর্থ হচ্ছে রিপাবলিকান প্রার্থীদের কংগ্রেসের উভয় কক্ষে বিজয়ী
করানো। ফলাফলে দেখা গেছে এই কালো টাকার প্রভাবে রিপাবলিকান প্রার্থীরা
বিজয়ী হয়েছেন। ৪ নভেম্বরের (২০১৪) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই মধ্যবর্তী
নির্বাচন অনেক গুরুত্ব বহন করে। এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর মার্কিন
রাজনীতির অনেক কিছু নির্ভর করছে। বিশেষ করে ২০১৬ সালে এখানে প্রেসিডেন্ট
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের ফলাফল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব
বিস্তার করতে পারে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের (২০১২)
দু’বছর পর কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিনেটের তিন
ভাগের এক ভাগ আসনের আর হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের পুরো আসনে নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিনেট সদস্যরা ৬ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে বেশ
কয়েকটি রাজ্যের গভর্নর, কিছু রাজ্যের কংগ্রেসের, কোনো কোনো শহরের মেয়রের
নির্বাচনও একই সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৪ নভেম্বর মোট ৪৭১টি আসনে নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ছিল হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের ৪৩৫টি আসন ও
সিনেটের ৩৬টি আসন। একই সঙ্গে প্রায় ৪৮টি গভর্নর পদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত
হলো। এর আগে প্রেসিডেন্ট ওবামার ডেমোক্র্যাটিক দলের নিয়ন্ত্রণে ছিল সিনেট।
১০০ সিনেট সিটের ৫৩টি আসন ছিল ডেমোক্র্যাটদের। এখন তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে
৪৫-এ। রিপাবলিকানদের হাতে এখন ৫২টি আসন। দু’জন রয়েছেন নিরপেক্ষ। অন্যদিকে
৪৩৫ আসনের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে রিপাবলিকানদের দখলে ছিল ২৩৩টি আসন (এখন
২৪৩) আর ডেমোক্র্যাটদের ছিল ১৯৯ আসন (এখন ১৭৯)। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই
আসন বিন্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। অতীতে কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে নানা
জটিলতায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। গেল বছর ‘শাট ডাউন’-এর মতো
ঘটনাও ঘটেছিল। বর্তমানে দুটি ইস্যুতে (এবোলা ও আইএসের উত্থান) ওবামা বিপদে
আছেন। এখন কংগ্রেসে তার সমর্থন না থাকলে আগামীতে তার সরকার পরিচালনায়
সমস্যা হবে। বুশের সময় সিনেট ছিল ডেমোক্র্যাট পার্টির দখলে। বুশ নিজে ছিলেন
রিপাবলিকান পার্টির সদস্য। মজার ব্যাপার, ওই সময় অর্থাৎ ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫
সাল পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদও ছিল ডেমোক্র্যাটদের দখলে। পরিস্থিতি বদলে গেল
প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের সময়। ক্লিনটনের সময় ১৯৯৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত
প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট নিয়ন্ত্রণ করেছে রিপাবলিকানরা অথচ প্রেসিডেন্ট
ক্লিনটন ছিলেন ডেমোক্র্যাট। আবার প্রেসিডেন্ট বুশের (জুনিয়র) সময়সীমায়ও
প্রথম দিকে ২০০১ থেকে ২০০৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট
নিয়ন্ত্রণ করেছে রিপাবলিকানরা। প্রেসিডেন্ট ওবামার দু’টার্মে (২০০৮ সালে
তিনি প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন) দু’রকম দৃশ্য দেখা যায়। ২০১২ সাল
পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদে তার দল ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর প্রথম
থেকে (২০০৮ থেকে) এখন অব্দি সিনেট ডেমোক্র্যাটদের দখলে। কিন্তু ২০১২ সালের
মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদ চলে যায় রিপাবলিকানদের দখলে। ফলে চলতি
২০১৪-এর মধ্যবর্তী নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ক্লিনটনের সময়কার
পরিস্থিতির মতো (যখন কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ করেছে বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি)।
একটি পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। অর্থাৎ
ডেমোক্র্যাটদের দখলে থাকছে প্রেসিডেন্সি। কিন্তু কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ করবে
বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি। ফলে আগামী ২ বছর ওবামাকে নানা ঝামেলা পোহাতে
হবে।
নির্বাচনে ওবামার দল হেরে গেল বটে, কিন্তু তাতে প্রেসিডেন্ট ওবামার পদত্যাগের কোনো সুযোগ নেই অথবা তাকে পদত্যাগ করানোও যাবে না। তবে প্রশাসন পরিচালনায় তিনি সমস্যায় পড়বেন এবং তাকে রিপাবলিকানদের সমর্থন নিয়েই প্রশাসন পরিচালনা করতে হবে। রিপাবলিকানরা তাদের পছন্দমতো বিল কংগ্রেসে পাস করতে পারবেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তাতে ‘ভেটো’ দিতে পারবেন। অন্যদিকে ওবামার অনেক ইচ্ছার বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে না, কেননা তাতে রিপাবলিকানদের সমর্থন থাকবে না। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা এখন নানা অঙ্ক কষতে শুরু করেছেন। রিপাবলিকানরা এখন ইরাক-সিরিয়ায় আমেরিকান মেরিন সেনা পাঠাবে, যা ওবামা পাঠাননি। রিপালিকানরা মধ্যপ্রাচ্যের ৫টি দেশকে, বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়াকে ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিতে পারে। ইরানের সঙ্গে কোনো সমঝোতার সম্ভাবনা নেই। যুদ্ধে এখন প্রতিদিন খরচ হচ্ছে ৩ লাখ ডলার। এ জন্য জনগণকে ট্যাক্স দিতে হবে অতিরিক্ত। রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে এই বিল অনুমোদন করবে। সামাজিক খাত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বাস্থ্য খাত সংকুচিত হবে। কর্পোরেট হাউসগুলোর সুবিধা আরো বাড়বে। কারণ তারাই রিপাবলিকানদের ক্ষমতায় এনেছে। রিপাবলিকানরা তাদের স্বার্থ দেখবে। ধনীরা আরো ধনী হবে। গরিবরা আরো গরিব হবে। নতুন চাকরির বাজার সৃষ্টি হবে না। যে ৮০ লাখ বেকার হয়েছিল অতীতে, এই সংখ্যা আরো বাড়বে। নয়া গ্রাজুয়েটরা চাকরি পাবে না। ছাত্ররা সরকারের কাছ থেকে যে আর্থিক সহযোগিতা পায় (গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার জন্য এবং যা পরে তাদের চাকরি পেয়ে পরিশোধ করতে হয়) তাতে স্থবিরতা আসবে। নতুন করে কোনো ঋণ দেয়া হবে না। এই ঋণের পরিমাণ এখন ১ ট্রিলিয়ন ডলার। একটি রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস ‘অফ শোর ড্রিলিং’-এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য এই ‘অফ শোর ড্রিলিং’ পরিবেশবাদীদের হতাশ করবে। বিশ্বব্যাপী কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাসের যে দাবি (যুক্তরাষ্ট্র বড় কার্বন নিংসরকারী দেশ), তা থেকে পিছিয়ে আসবে যুক্তরাষ্ট্র। বৈদেশিক সাহায্য ও সুযোগ-সুবিধা হ্রাস পাবে। ইমিগ্রেটদের জন্য কোনো ভালো খবর থাকবে না আগামী দিনগুলোতে। একটি নির্বাচন হয়েছে। আমার সুযোগ হয়েছে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে সত্য, কিন্তু সাধারণ মানুষের হতাশা আরো বেড়েছে। তবে একটা কথা সত্য, মানুষ এখানে পরিবর্তন চেয়েছে। সেই পরিবর্তনটি হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ধনীদের রাষ্ট্র এবং ধনীরাই যে প্রশাসন পরিচালনা করে, এটা আবারো প্রমাণিত হলো।
হাইল্যান্ড ভিলেজ, ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র Daily Manob Kontho 23.11.14
নির্বাচনে ওবামার দল হেরে গেল বটে, কিন্তু তাতে প্রেসিডেন্ট ওবামার পদত্যাগের কোনো সুযোগ নেই অথবা তাকে পদত্যাগ করানোও যাবে না। তবে প্রশাসন পরিচালনায় তিনি সমস্যায় পড়বেন এবং তাকে রিপাবলিকানদের সমর্থন নিয়েই প্রশাসন পরিচালনা করতে হবে। রিপাবলিকানরা তাদের পছন্দমতো বিল কংগ্রেসে পাস করতে পারবেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তাতে ‘ভেটো’ দিতে পারবেন। অন্যদিকে ওবামার অনেক ইচ্ছার বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে না, কেননা তাতে রিপাবলিকানদের সমর্থন থাকবে না। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা এখন নানা অঙ্ক কষতে শুরু করেছেন। রিপাবলিকানরা এখন ইরাক-সিরিয়ায় আমেরিকান মেরিন সেনা পাঠাবে, যা ওবামা পাঠাননি। রিপালিকানরা মধ্যপ্রাচ্যের ৫টি দেশকে, বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়াকে ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিতে পারে। ইরানের সঙ্গে কোনো সমঝোতার সম্ভাবনা নেই। যুদ্ধে এখন প্রতিদিন খরচ হচ্ছে ৩ লাখ ডলার। এ জন্য জনগণকে ট্যাক্স দিতে হবে অতিরিক্ত। রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে এই বিল অনুমোদন করবে। সামাজিক খাত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বাস্থ্য খাত সংকুচিত হবে। কর্পোরেট হাউসগুলোর সুবিধা আরো বাড়বে। কারণ তারাই রিপাবলিকানদের ক্ষমতায় এনেছে। রিপাবলিকানরা তাদের স্বার্থ দেখবে। ধনীরা আরো ধনী হবে। গরিবরা আরো গরিব হবে। নতুন চাকরির বাজার সৃষ্টি হবে না। যে ৮০ লাখ বেকার হয়েছিল অতীতে, এই সংখ্যা আরো বাড়বে। নয়া গ্রাজুয়েটরা চাকরি পাবে না। ছাত্ররা সরকারের কাছ থেকে যে আর্থিক সহযোগিতা পায় (গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার জন্য এবং যা পরে তাদের চাকরি পেয়ে পরিশোধ করতে হয়) তাতে স্থবিরতা আসবে। নতুন করে কোনো ঋণ দেয়া হবে না। এই ঋণের পরিমাণ এখন ১ ট্রিলিয়ন ডলার। একটি রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস ‘অফ শোর ড্রিলিং’-এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য এই ‘অফ শোর ড্রিলিং’ পরিবেশবাদীদের হতাশ করবে। বিশ্বব্যাপী কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাসের যে দাবি (যুক্তরাষ্ট্র বড় কার্বন নিংসরকারী দেশ), তা থেকে পিছিয়ে আসবে যুক্তরাষ্ট্র। বৈদেশিক সাহায্য ও সুযোগ-সুবিধা হ্রাস পাবে। ইমিগ্রেটদের জন্য কোনো ভালো খবর থাকবে না আগামী দিনগুলোতে। একটি নির্বাচন হয়েছে। আমার সুযোগ হয়েছে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে সত্য, কিন্তু সাধারণ মানুষের হতাশা আরো বেড়েছে। তবে একটা কথা সত্য, মানুষ এখানে পরিবর্তন চেয়েছে। সেই পরিবর্তনটি হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ধনীদের রাষ্ট্র এবং ধনীরাই যে প্রশাসন পরিচালনা করে, এটা আবারো প্রমাণিত হলো।
হাইল্যান্ড ভিলেজ, ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র Daily Manob Kontho 23.11.14
0 comments:
Post a Comment