রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন পথে

সম্প্রতি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে একজন সিনিয়র মন্ত্রীর মন্তব্য ও প্রধানমন্ত্রীর উক্তি একটি প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে, যা হল- এ দুই দেশের সম্পর্ক কি তলানিতে গিয়ে পৌঁছল? এমন কথাও বলা হচ্ছে কোনো কোনো মহল থেকে যে, বাংলাদেশ কি আবারও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের মানসিকতায় চলে গেল? যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিল। তখন বাংলাদেশ তার মিত্র খুঁজেছিল ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে। আজ এত বছর পর প্রধানমন্ত্রীর সেই ১৯৭১ সালের কথা স্মরণ করা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করা সেই সন্দেহকে আবার উসকে দিল যে, বাংলাদেশ বুঝি ভারত-রাশিয়া অক্ষে ফিরে যাচ্ছে! সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। জিএসপি সুবিধা বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে। এরপর একজন সিনিয়র মন্ত্রী যখন বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে কাজের মেয়ে মর্জিনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা বিসওয়ালকে দুআনার মন্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের মনোভাব বুঝতে কষ্ট হয় না। এরপর গত ৫ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কয়েকটি নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পাশে না থাকলে বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশটি বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু তাতে সার্বভৌম বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থেমে থাকেনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের নির্দেশেই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করেছিল। শুধু তাই নয়। যুক্তরাষ্ট্র ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যাতে না হয়, সেজন্য সব রকম চেষ্টা করেছে বলেও দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধান; ধরে নেয়া হয় তার মন্তব্য সরকারেরই বক্তব্য। সুতরাং পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন মন্তব্য করেন, তখন এটাকে গুরুত্ব না দিয়ে পারা যায় না। দুটি বিষয়ই বেশ স্পর্শকাতর। তবে নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে বলেই তিনি ওই মন্তব্য করেছেন। না হলে এরকম কোনো মন্তব্য তিনি করতে পারতেন না। কিন্তু যুগান্তর আমাদের জানাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে যুগান্তর এ সংবাদটি পরিবেশন করে।প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের পেছনে সত্যতা যাই থাকুক, এ ধরনের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা দিতে বাধ্য। দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয়েরই স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশের যেমন স্বার্থ রয়েছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও এ সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়।বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক চুক্তি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে একটি চুক্তির কথা উল্লেখ করা যায়। এটি হচ্ছে টিকফা। গত ২৫ নভেম্বর (২০১৩) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এ নিয়ে তখন প্রশ্নও উঠেছিল। বলা হয়েছিল, নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে এ চুক্তিটি না করিয়ে সরকার ভুল করেছে। এমনকি সংসদেও পরে চুক্তি নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি এবং কোনো আলোচনাও কখনও হয়নি। তবে টিকফা নিয়ে এখনও প্রশ্ন আছে। টিকফা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থীÑ এমন প্রশ্ন উঠেছিল বাম রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে। সিপিবি ও বাসদ ঢাকায় ওই চুক্তির প্রতিবাদে একটি বিক্ষোভ মিছিলও করেছিল। কিন্তু সরকারের শরিক দুটি বাম দল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি টিকফার বিরোধিতা করেনি। তাদের কোনো মন্তব্য আমার চোখে পড়েনি। চুক্তিটি সম্পর্কে আমরা যা জানতে পেরেছি তা হচ্ছে, এতে ১৬টি অনুচ্ছেদ আর ৭টি আর্টিকেল রয়েছে। প্রায় ৪২টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এরকম চুক্তি রয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আমাদের জানিয়েছেন। অন্যদিক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনা জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৫০টি দেশের এ রকম চুক্তি রয়েছে। তবে চুক্তির নামকরণের ব্যাপারে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। শুরুতে চুক্তির সঙ্গে এগ্রিমেন্ট শব্দটি থাকলেও বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা উঠায়, ফ্রেমওয়ার্ক শব্দটি বদলে ফোরাম শব্দটি যুক্ত করা হয়। বিভিন্ন মহল থেকে চুক্তিটির সঙ্গে জিএসপির একটা যোগসূত্র আছে বলা হলেও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের জানিয়েছিলেন, টিকফার সঙ্গে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের কোনো যোগসূত্র নেই। বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধার দাবি অব্যাহত রাখবে, এমনটিই জানিয়েছেন বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তবে বিষয়টির যে খুব সহসাই সমাধান হবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ বেশ কজন সিনেটর এক চিঠিতে জিএসপি সুবিধা স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছিলেন। তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন এমনটি আমাদের জানা নেই। ইতিমধ্যে দুদেশের মাঝে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ধরনের শীতলতা আসায় জিএসপির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র নমনীয় হবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। ফলে বাংলাদেশী পণ্য, বিশেষ করে আরএমজি পণ্য জিএসপি সুবিধা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবে।এখানে বলা ভালো, ২০১৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র কিছু পণ্যের যে শুল্কমুক্ত সুবিধা (জিএসপি) বাংলাদেশকে দিত, তা স্থগিত করে। স্থগিত করার পেছনে মূল কারণটি ছিল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমমান নিশ্চিত করায় ব্যর্থতা। আশুলিয়ায় শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে না পারা, তৈরি পোশাক শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা না করার ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্র অসন্তুষ্ট ছিল। ফলে এক পর্যায়ে কংগ্রেস সদস্যদের চাপের মুখে জিএসপি সুবিধা স্থগিত হয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশ সরকারের একটা প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায় যে, টিকফা চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেবে। প্রকৃতপক্ষে এর সঙ্গে টিকফা চুক্তির কোনো যোগসূত্র নেই। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেলেও তাতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাড়বে না। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তৈরি পোশাকে জিএসপি সুবিধা চেয়ে আসছে। কিন্তু তৈরি পোশাকে আমাদের কোনো জিএসপি সুবিধা নেই। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পণ্যের বাজার হচ্ছে ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের। এর মাঝে মাত্র ০.৫ ভাগ পণ্য এ শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত। এর পরিমাণ মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন ডলার কর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখনও তার পণ্য নিয়ে টিকে আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয় যেসব বাংলাদেশী পণ্যে তার মধ্যে রয়েছে তামাক, সিরামিক, ফার্নিচার, প্লাস্টিক, খেলনা ইত্যাদি। এসব পণ্যের খুব কমই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করে। তৈরি পোশাকে বাংলাদেশী রফতানিকারকরা শতকরা ১৫ ভাগ হারে শুল্ক পরিশোধ করে বাজার ধরে রেখেছে। অথচ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দোহা চুক্তি অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে তার পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা দিচ্ছে না। এ সুবিধা উন্নত রাষ্ট্রগুলো পায়। তৈরি পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দোহা চুক্তি লংঘন করেছে। সুতরাং তৈরি পোশাকে আমরা যদি শুল্কমুক্ত সুবিধা না পাই, তাহলে জিএসপি সুবিধা রফতানির ক্ষেত্রে কোনো বড় অবদান রাখতে পারবে না। আজ যদি জিএসপি সুবিধার আশ্বাসে আমরা টিকফা করে থাকি, তাতে আমাদের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। টিকফার সঙ্গে তাই জিএসপি সুবিধাকে মেলানো যাবে না। জিএসপি সুবিধা একটি ভিন্ন বিষয়।এখন যে প্রশ্নটি অনেকে করার চেষ্টা করেন তা হচ্ছে, টিকফা স্বাক্ষর করে আমরা কতটুকু উপকৃত হলাম? টিকফা স্বাক্ষরিত হওয়ায় দেশে মার্কিন বিনিয়োগ বাড়বে, এটা সত্য কথা। এতে করে আমাদের বাজার, সেবা খাত উন্মুক্ত হয়ে যাবে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য। ব্যাপক প্রাইভেটাইজেশন ঘটবে, তাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যক্তিগত খাত। টিকফার ৫ ও ১৯ ধারা মতে, উভয় দেশ (বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র) বাণিজ্যে বেশ নমনীয় নীতি গ্রহণ করবে এবং ব্যাপক বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করবে। ৮নং ধারায় ব্যাপক ব্যক্তিগত খাত প্রসারের কথা বলা হয়েছে। এ ধারায় একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমিশন গঠন করার কথাও আছে। এদের কাজ হবে ব্যক্তিগত খাত কীভাবে আরও বিকশিত করা যায়, সে ব্যাপারে উভয় সরকারকে উপদেশ দেয়া। ৯নং ধারায় বলা আছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে; কিন্তু উৎপাদন খাতে জড়াবে না। অর্থাৎ কোনো পণ্য উৎপাদন করবে না। এখানে সমস্যা হবে অনেকগুলো। এক. যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানিগুলো বিনিয়োগ করবে (বিশেষ করে সেবা খাতে) এবং ওই সব কোম্পানিকে ট্যাক্স সুবিধা দিতে হবে। আইনে যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, তাহলে বাংলাদেশকে সেই আইন সংশোধন করতে হবে। ফলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা মার খাবে। তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। দুই. চুক্তির ফলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে নিরাপত্তা দিতে বাধ্য থাকবে। জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর ব্যবহার, টেলি কমিউনিকেশন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় এসব খাতে সরকারি বিনিয়োগ কমে যাবে। ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিক্ষা খাতে সরকারি বিনিয়োগ কমে গেলে এ খাত পণ্যে পরিণত হবে। বিনামূল্যের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। এতে করে শিক্ষা ক্ষেত্রে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হওয়ার আশংকা রয়েছে। যারা ধনী তারা শিক্ষা গ্রহণ করবে, আর যারা গরিব তারা শিক্ষা, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। একই কথা প্রযোজ্য স্বাস্থ্যখাতের ক্ষেত্রেও। এ খাতে খরচ বেড়ে যাবে। এসব সেবামূলক খাত থেকে সাধারণ মানুষ যে সেবা পেত, তা ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসবে। সেবার জন্য সাধারণ মানুষকে তখন বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানির দাম বেড়ে যাবে। সাধারণ গ্রাহককে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাস কিনতে হবে। সরকারি ভর্তুকির কোনো সুযোগ থাকবে না। তবে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকবে কৃষি ও আইটি সেক্টর। কৃষিতে যে সরকার ভর্তুকি দেয়, তা আর দিতে পারবে না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দোহা চুক্তিতে বলা হয়েছিল, স্বল্পোন্নত দেশগুলো কৃষিতে ৫ ভাগের বেশি ভর্তুকি দিতে পারবে না। টিকফার ১৮নং ধারায় বলা হয়েছে, কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র নিজে কৃষিতে ভর্তুকি দেয় ৯ ভাগ। এখন বাংলাদেশে কৃষি সেক্টরে ভর্তুকি কমানো হলে কৃষিতে মারাÍক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। কৃষক উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে কৃষি উৎপাদন, বিশেষ করে চাল উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে।সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ যে চুক্তি করেছে তাতে দেশের প্রাপ্তি খুব বেশি নয়। তারপরও বাংলাদেশ এ চুক্তি করেছে। ফলে যেহেতু বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন স্বার্থ রয়েছে, সেহেতু মন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পর সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটবে, এটা আমি মনে করি না। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে, এ ধরনের মন্তব্য অনাকাক্সিক্ষত। বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে কাজের মেয়ে মর্জিনা বলা কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী। একজন সিনিয়র মন্ত্রী হলেন রোল মডেল; তিনি যদি কর্মীদের মতো আচরণ করেন, তাহলে তা মন্ত্রী পদের প্রতি অসম্মান করা হয় বৈকি। মজিনার বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। সেক্ষেত্রে কূটনৈতিক চ্যানেলেই এর প্রতিবাদ হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। সেটাই কূটনৈতিক শিষ্টাচার। ঠিক তেমনি নিশা দেশাইকে দুআনার মন্ত্রী বলাও দুঃখজনক। আমরা ভুলে যাই এ ধরনের মন্তব্য দূতাবাসগুলো খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। তবে সেই সঙ্গে এটাও ঠিক, বিদেশী দাতাগোষ্ঠী অকারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে বারবার মন্তব্য করছে। এটা শোভন নয়। তবে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। আমরা নিশ্চয়ই তথাকথিত টুয়েস ডে গ্র“পের কথা মনে করতে পারি। আসলে আমরাই কি বিদেশীদের আমাদের রাজনীতিতে নাক গলানোর সুযোগ করে দিইনি? আমরা কি অতীতে চিঠি লিখে সাহায্য বন্ধ করতে বলিনি? দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা সুযোগ পায় বলেই বারবার মন্তব্য করে।আরও একটা কথা। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পর এটা ভাবা ঠিক হবে না যে, বাংলাদেশ সেই একাত্তর সালের মানসিকতায় ফিরে যাচ্ছে। সেই সুযোগও নেই। রাশিয়া এখনও বিশ্ব শক্তিতে পরিণত হতে পারেনি, যেমনটি পেরেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। তার অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল। ফলে বাংলাদেশের উন্নয়নে রাশিয়ার মডেল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বাংলাদেশ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়ে রাশিয়া থেকে অস্ত্র কিনছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, বাংলাদেশ রাশিয়ার ব্লকে চলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী ও একজন মন্ত্রীর বক্তব্যের রেশ ধরে দুদেশের মাঝে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উষ্ণতা কিছুটা হ্রাস পেলেও সম্পর্কের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্বার্থ রয়েছে। দু-একটি মন্তব্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সে স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবে না। Daily Jugantor 11.12.14

1 comments:

  1. অসাধারন, খুব ভালো লাগলো। অনেক দিন পর এমন কিছু পড়ার সুযোগ হল। আশা করি এমন অনেক লেখা আমরা পাবো আপনার কাছ থেকে।

    ReplyDelete