জগ্লুল
আহ্মেদ চৌধূরী মৃত্যুর খবরটি আমি পেয়েছি ঢাকা শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরে নেমে। আমার পিএইচডি গবেষক জসিম আমাকে যখন মৃত্যু সংবাদটি দিল,
তখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে, আমি আর টকশোতে জগ্লুল ভাইকে আমার সঙ্গে
পাব না। মনে আছে যুক্তরাষ্ট্র আসার আগের দিন রাতে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
সেদিন ছিল ২৮ সেপ্টেম্বর, রোববার। একুশের রাতে আমি আর জগ্লুল ভাই ছিলাম
অতিথি। উপস্থাপক পান্না আর প্রযোজক রবি অনেকটা জোর করেই অনুষ্ঠানটা করলেন।
কেননা পরদিন আমার ফ্লাইট এবং জগ্লুল ভাইও যাবেন আমেরিকাতে মেয়ের কাছে। রবির
রুমে চা পান করতে করতে জগ্লুল ভাইকে আমার ডালাসের নাম্বার দিয়েছিলাম।
বলেছিলাম ফোন করতে। তারপর আমি জানিও না জগ্লুল ভাই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন
কিনা। কাকতালীয়ভাবে প্রযোজক রনিও নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন। আমার সঙ্গে ডালাসে
রনির কথাও হয়েছে। কিন্তু জগ্লুল ভাইয়ের সঙ্গে আর কথা হয়নি।>যুক্তরাষ্ট্রের
রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। ওবামা খুব শিগগিরই কংগ্রেসের সঙ্গে এক
বিতর্কে জড়িয়ে যাবেন। এই ডিসেম্বরেই বাজেট পাস হওয়ার কথা। যুক্তরাষ্ট্র
থেকে ভেবেছি নিশ্চয়ই কোনো চ্যানেল এই বিষয়টি নিয়ে অনুষ্ঠান করবে। তাছাড়া
ওবামা আসছেন ভারতে। সুতরাং একটা প্রোগ্রাম হবে এবং অবধারিতভাবে জগ্লুল ভাই
আমার সঙ্গে থাকবেন। অনেকবার এটা ভেবেছি। কিন্তু জসিম যখন আমাকে দুঃসংবাদটি
দিল, আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। জগ্লুল ভাইয়ের মতো একজন প্রবীণ
সাংবাদিককে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে হবে। এটা তো হত্যাকাণ্ড! এর বিচার কে
করবে? ইতোমধ্যে কতবার আমরা এই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে লিখেছি। কত সহস্রবার
সম্পাদকীয়, উপসম্পাকীয় লেখা হয়েছে। কত শতবার সেমিনার হয়েছে। কিন্তু কেউ
সাহস করে পরিবহন চালকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারল না। মিশুক
মুনীরের মৃত্যুর পর মৌন গণজমায়েত হয়েছে। প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু ঘাতক ওই
ড্রাইভার এখন ‘মুক্ত’। এ দেশের আইন এ দেশের সমাজ ঘাতকদের বিচার করতে
পারেনি। কেননা ঘাতকরা সরকারি নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকে। আইন, বিচার বিভাগ
ঘাতকদের ছুঁতে পারে না। যেখানে মন্ত্রী নিজে বলেন, ‘ড্রাইভাররা গরু-ছাগল
চিনলেই যথেষ্ট। তাদের সড়কে চলাচলের জন্য নির্দেশিকা পড়ার দরকার নেই,’ তখন
ভাবতে কষ্ট লাগে ওই মন্ত্রী দিব্যি&এখনো ক্ষমতায় আছেন! মনে আছে অধ্যাপক
মুনতাসীর মামুন পত্রিকায় ওই মন্ত্রীর কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন রেখেছিলন। তার
পরের খবর অনেকেই স্মরণ করতে পারেন-মামুন ভাইয়ের বিরুদ্ধে জুতা মিছিল
হয়েছিল। জগ্লুল ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে অনেকেই লিখেছেন। কিন্তু তাতে কার কী এসে
যায়মিডিয়া জগতে জনপ্রিয় একটি মুখ জগ্লুল চৌধূরীর মৃত্যু যদি এভাবে হয়
এবং ঘাতককে যদি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো না যায়, তাহলে এর চেয়ে আর
দুঃখজনক কিছু থাকতে পারে না। জগ্লুল ভাইয়ের এমন মুত্যু একেবারে সাদাচোখে
দেখলেও তা মৃত্যু নয়। সে ফ হত্যাকান্ড। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত।
কিন্তু বিচার হবে এই আস্থাটা রাখতে পারছি না। অতীতে কোনো একটি সড়ক
হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি। একটিরও না। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বিচার পাননি তার
স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের। পাননি মিশুক মুনীরের পরিবার। পাননি হাজার হাজার
মা-বাবা-ভাই-বোন-স্বামী যাদের এ সমাজ চেনে না। আর বিচার না পাওয়ায় একের পর
এক হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে।>অদক্ষ বাস চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া
যায় না। এদের যারা চালায় তারা অত্যন্ত ক্ষমতাবান। ক্ষমতার সিঁড়িতে এদের
অবস্থান। যখনই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রশ্ন ওঠে, ঠিক তখনই এরা
পরিবহন ধর্মঘট ডাকে। জিম্মি করে ফেলে তারা সাধারণ মানুষদের। এক সময় মানুষ
বাধ্য হয়ে মেনে নেয় এটা নিয়তির বিধান বলে। এক সময় ভুলেও যায়। জগ্লুল ভাই
মিডিয়ার মানুষ। কিন্তু তার পরও মিডিয়া ভুলে যাবে। অথচ মিডিয়া আজ যথেষ্ট
শক্তিশালী। মিডিয়াই ঘাতক বাস চালককে খুঁজে বের করতে পারে। এই ঘটনায় একটা
অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। কিন্তু বিচার হবে তা নিশ্চিত বলতে পারব না। কিংবা
পুলিশ আদৌ কোনো তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে কিনা, সেটাও আমার অজানা। শুধু বলতে
পারি পুলিশি তৎপরতা যথেষ্ট নয়। পুলিশ ইচ্ছে করলে খুঁজে বের করতে পারে।
এটিএন নিউজ, যেখানে অংশ নিতে গিয়ে তিনি না ফেরার জগতে চলে গেলেন, তারাও
পারে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘাতককে খুঁজে বের
করতে। এটিএন নিউজ কী তা করবে? যে যায়, সে চলে যায়। পৃথিবী কারোর জন্য বসে
থাকে না। জগ্লুল ভাই চলে গেছেন। আগের মতোই সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। কোথাও
ছন্দপতন ঘটেনি। কিন্তু সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী যে দিন জগ্লুল ভাই মারা
যান, তার পরের দিনও খোদ ঢাকা শহরে মারা গেছেন আরো দু’ব্যক্তি একইভাবে।
মৃত্যুর এই বিষয়টি যেন স্বাভাবিক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কারো যেন দেখার
কিছু নেই। সংবাদপত্র আমাদের জানাচ্ছে ২০০৯ সাল থেকে এখন অবধি ১০২টি বড় সড়ক
দুর্ঘটনা হয়েছে। আর ২০১০ সালের জুন থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পুলিশ ভাষ্যমতে
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৮ হাজার ২৭০ জন। কিন্তু তার চাইতে অনেক বেশি
মৃত্যুর সংখ্যা দিয়েছে বুয়েটের একটি গবেষণা সংস্থা- তাদের মতে, সড়ক
দুর্ঘটনায় ২০১১ সালে মারা গিয়েছেন ১৮ হাজার মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনায় যারা মারা
যান, অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ আর থানা পুলিশ করে না। ফলে অনেক দুর্ঘটনার খবর
পুলিশ জানে না ও তারা লিপিবদ্ধও করে না।জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর মৃত্যুর
পর সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয় একটি ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই
‘তদন্ত’ কমিটির ‘তদন্ত’ রিপোর্ট কোনোদিনই আলোর মুখ দেখবে না হয়তো। দায়সারা
গোছের ওই তদন্ত কমিটি করা হয় শুধু সান্ত¡না দেয়ার জন্য। এই সব তদন্ত কমিটির
ব্যাপারে কারোরই আগ্রহ থাকে না। যে পরিবার তাদের নিকট আত্মীয়দের
হারিয়েছেন, তাদের তো নয়ই। ফলে কখনোই এ ধরনের কোনো তদন্ত কমিটি সাধারণ
মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। এটা ঠিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব
যাদের ওপর, তারা এক চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। শুধু সড়কে ‘হত্যাকাণ্ডই’
নয় বরং গত কয়েক বছর ঢাকা-শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। দায়িত্বশীলরা
তা আর যেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। অসহায় মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার
করছেন শুধু সড়কেই। এ নিয়ে ট্রাফিক বিভাগ হাজারটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও,
ফলাফল শূন্য। এই যানজটের একটা বড় কারণ হচ্ছে বেপরোয়া বাস চালকদের যত্রতত্র
গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো। এমনকি বড় বড় সড়কগুলোতে মানুষ হাত তুলে গাড়ি
থামাচ্ছে। তারপর নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ড না থাকা সত্ত্বেও যাত্রীরা বাস
থামিয়ে নেমে যাচ্ছে। এ জন্য বাসের হেলপারটা যতটুকু দায়ী, তার চাইতে দায়ী কম
নন যাত্রীরা। তারা নিয়ম-শৃঙ্খলার তোয়াক্কা করছেন না। হাজারটা প্রতিবেদনে
যানজটের কারণ হিসেবে এই বিষয়টি উল্লেখ করলেও, বাসস্ট্যান্ড ছাড়া বাস বা
মিনিবাসের যেখানে সেখানে থামানো বন্ধ করা যাচ্ছে না। ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ মনে
হয় হাল ছেড়ে দিয়েছে। যতদিন না যাত্রীদের নির্দিষ্ট স্থান থেকে বাসে উঠতে
বাধ্য করা যাবে, ততদিন পর্যন্ত সড়কে এই যানজট থাকবেই। ঢাকা মেট্রোপলিটন
পুলিশ গত বেশ কিছুদিন ধরে সাধারণ পথচারীদের অবৈধ রাস্তা পার, ফুটপাত
ব্যবহার না করে রাস্তা দিয়ে চলাচল কিংবা ওভারব্রিজ ব্যবহার না করায় দ্রুত
ফাইনের ব্যবস্থা করছে। এটা নিঃসন্দেহে এ প্রশংসার দাবিদার। তবে এই
প্রক্রিয়া সারা বছর চালু রাখতে হবে। এতে পথচারীদের মাঝে এক ধরনের ভয় ও আইন
মেনে চলার প্রবণতা কাজ করবে। এক সময় পুলিশের ভয়েই হোক অথবা ফাইনের ভয়েই হোক
নিয়মানুযায়ী চলাচল করবে। এখন পুলিশ যদি বাস ও মিনিবাস চালকদের ব্যাপারে এ
ধরনের একটি উদ্যোগ নেয়, আমার বিশ্বাস এতে বেপরোয়া চালকরাও এক ধরনের ভয়ের
মাঝে থাকবে এবং সেই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনাও হ্রাস পাবে।
ঢাকায় প্রচুর মানুষ
বেড়েছে। প্রশাসনের একটা বড় ব্যর্থতা যে, সরকার ঢাকার রাজপথ নিয়ন্ত্রণে
আনতে পারছে না। গাড়ি চালকদের একাধিকবার জরিমানা করে ও সতর্কবাণী জারি করা
সত্ত্বেও তাদের কোনো অবস্থাতেই নিয়মের মধ্যে আনা যাচ্ছে না। মহাসড়কের
অবস্থা আরো খারাপ। বাস চালকদের মাঝে সড়কে দ্রুত চলার প্রতিযোগিতা হাজারটা
দুর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আমরা বারবার বলে আসছি সড়ক ও মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের
টহল বাড়ানোর কথা। কিন্তু তা হয়নি। কাগজ-কলামে হাইওয়ে পুলিশের অস্তিত্ব
রয়েছে বটে। কিন্তু তাদের কোন ভূমিকা নেই। তারা কোথায় ডিউটি করেন, এটা একটা
প্রশ্ন বটে। মহাসড়কে কোথাও কোথাও সিসিক্যামেরা বসানো, স্পিডব্রেকারের
সংখ্যা বাড়ানো, কত মাইল স্পিডে গাড়ি চালানো যাবে, তা নির্দিষ্ট করে দেয়া
ইত্যাদি বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশকে পরামর্শ দেয়া হলেও, সুনির্দিষ্টভাবে পুলিশ
একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বলা যাবে না। এসব পরামর্শ কাগজ-কলামেই থেকে
গেছে। বিদেশের উদাহরণ আমরা দেব না। মেক্সিকোর মতো দেশেও আমি দেখে এসেছি
সেখানে নির্দিষ্ট স্পিডেই গাড়ি চালাতে হয়। স্পিড কেউ বাড়ায় না টহলরত
পুলিশের ভয়ে। আমাদের এখানে মহাসড়কে টহল পুলিশ দেখি না। ঢাকা-সাভার
মানিকগঞ্জ মহাসড়কে প্রায়শই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু তারপরও হাইওয়ে
পুলিশের টহল বাড়েনি। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের জনবল সংকটের প্রশ্ন তোলা হয়।
এই প্রশ্নও অবান্তর। যে জনবল আছে, এর সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমেই
সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।জগ্লুল ভাইয়ের সঙ্গে
আমার সম্পর্কের ইতিহাস প্রায় ৩০ বছরের। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র থাকা অবস্থাতেই
যখন লেখালেখি করতাম, তখন থেকেই তার সঙ্গে পরিচয়। আরেকটি সম্পর্কও ছিল।
তিনি ও তার স্ত্রী উভয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের
ছাত্র ছিলেন, যেখান থেকে আমিও পাস করেছি। তার স্ত্রীও খুব সম্ভবত সহযোগী
অধ্যাপক পদে থেকেই অবসরে গিয়েছিলেন। প্রেসক্লাবে কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে
তার সঙ্গে আমার আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হতো। আমি
আন্তর্জাতিক রাজনীতির অনেক জটিল বিষয়, তত্ত্বের বিষয়ে সাধারণ পাঠকদের কাছে
সাধারণভাবেই উপস্থাপন করতাম। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ওপর আমার নিজের লেখা বেশ
কটি বইও রয়েছে। জগ্লুল ভাই এ সবের প্রশংসা করতেন। কোনো একটি লেখার সূত্র
ধরেই বিষয়ের গভীরে যেতে চাইতেন আমার সঙ্গে আলাপচারিতায়।আগ্রহ ছিল
তার বেশি। আমি তাকে বিভিন্ন জার্নালের কথা বলতাম, যেখানে ভালো মূল্যায়ন
পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক রাজনীতির। তিনি সেসব পড়তেন। বয়স খুব একটা না হলেও
কিছুটা দুর্বল তাকে আমি দেখেছি সাম্প্রতিক সময়গুলোতে। বোধকরি তিনি
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। তবে মানুষের আয়ু বেড়েছে। ৬৫ বছর বয়স কোনো
অবস্থাতেই বেশি বয়স বলা যাবে না। মানুষের জন্ম হয় মৃত্যুর জন্যই। কিন্তু এ
কেমন মৃত্যু? বাস চালকদের বেপরোয়া ড্রাইভিং এর কারণে তার মতো একজন মানুষকে
না-ফেরার দেশে নিয়ে গেল। আমি জানি এই মৃত্যু আমাদের সচেতন করবে না। রাষ্ট্র
আরো সচেতন হবে না। মানুষ কিংবা যারা প্রশাসন চালান, তারা এক সময় ভুলে
যাবেন। এটাই বোধকরি নির্মম সত্য যে পেছনের ঘটনাবলি আমরা মনে রাখি না। তবুও
আবারো অনুরোধটি রাখতে চাই-যনবাহন চালকদের নিয়ন্ত্রণ করা হোক। বেপরোয়া
চালকদের দ্রুত আইনে বিচার এবং লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা করা হোক। যে কোনো
দুর্ঘটনাকে (সড়কে) হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে দ্রুত আইনে এর সব রকম
ব্যবস্থা করা হোক। আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ করে সড়কে এবং মহাসড়কে
শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হোক। প্রয়োজনে সংসদে আইন পাস করা হোক। এই দাবিগুলো খুব
বেশি নয়। যারা পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি করেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করা
হোক। চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হোক। পুরনো মিনিবাস সড়ক
থেকে তুলে ফেলা হোক। আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হোক। ঢাকায় রাস্তা
বাড়েনি। এখন আর বাড়ানো যাবে বলেও মনে হয় না। কিন্তু গাড়ি বেড়েছে প্রচুর।
গাড়ি চলাচলে যদি নিয়ন্ত্রণ থাকে, তাহলে যানজট কমানো সম্ভব।সড়ক
দুর্ঘটনায় জগ্লুল ভাইয়ের মৃত্যু সর্বশেষ মৃত্যু এটা আমি বলতে চাই না।
কিন্তু সবার মৃত্যুই যেন স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এ
প্রত্যাশা তো আমি করতেই পারি। যাদের
স্বেচ্ছাচারিতা-অদক্ষতা-অযোগ্যতা-উন্মত্ততার কারণে অহরহ প্রাণ ঝরে যাচ্ছে
তাদের যদি কঠোর দণ্ড নিশ্চিত করা না যায় তাহলে এমন
অনাকাক্সিক্ষত-অনভিপ্রেত-মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সরকারকে এসবের
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতেই হবে।
Daily Manobkontho
04.12.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment