কেমন হবে ২০১৫ সালের বিশ্ব রাজনীতি? বিশ্ব রাজনীতিতে ২০১৪ সালে অনেকগুলো
ঘটনা ঘটেছে, যার রেশ ২০১৫ সালে বিশ্ব রাজনীতিতেও অনুভূত হবে। ২০১৪ সালে
বিশ্ব রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ঘটনার একটি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে
ইরাক-সিরিয়ায় কট্টরপন্থী ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্ট্রেটের উত্থান ও
এদের সন্ত্রাসী কর্মকা-। এক সময় সারা বিশ্বে ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদা
একটা ভয়ের আবহ সৃষ্টি করেছিল। আল কায়েদার সন্ত্রাসী কর্মকা-কে কেন্দ্র করে
যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ যুদ্ধের কর্মসূচি গ্রহণ
করেছিল। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে
পাওয়া ও তাকে হত্যা করার পর যুক্তরাষ্ট্র তার ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’
কর্মসূচি পরিত্যাগ করেনি। বরং নতুন করে ‘ইসলামিক স্টেট’র উত্থান
যুক্তরাষ্ট্রকে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে আরও বেশি করে জড়িত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র
সেখানে সরাসরি সেনাবাহিনী না পাঠালেও ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের ওপর
বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র
সেখানে বেশ কটি আরব দেশের সমন্বয়ে একটি কোয়ালিশন বাহিনী গঠন করেছে। ২০১৫
সালেও এদের তৎপরতা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে আরও উত্তপ্ত করবে। এটা বলা
প্রয়োজন যে, জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের উত্থান পুরো মধ্যপ্রাচ্যের
রাজনীতিকে বদলে দিয়েছে। এক সময় মনে করা হয়েছিল সিরিয়ায় আসাদের দিন বোধহয়
ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু ইসলামিক স্টেটের উত্থানকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের এখন
প্রয়োজন আসাদকে। শুধু তাই নয়, ইরানের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের
কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এক সময় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা
বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আতঙ্ক ছিল বেশি। সেই ইরান এখন
এদের ‘মিত্র’। ইরানি বিমান আইএস বা ইসলামিক স্টেটের ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ
করেছে, এমন সংবাদও পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এতে করে সরাসরিভাবে না হলেও
পরোক্ষভাবে ইরান আইএসবিরোধী জোটে নিজেদের শরিক করল। ফলে ইরানের পারমাণবিক
কর্মসূচি বিতর্ক আপাতত চাপা পড়ে গেল! তবে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন আছে
এবং এই প্রশ্নগুলো ২০১৫ সালে বারবার আলোচিত হতে থাকবে। বিশেষ করে সিরিয়া কী
‘আরেকটি লেবাননে’ পরিণত হবে, নাকি সিরিয়ার এক অংশ দখল করে নেবে আইএসের
জঙ্গিরাÑ এ প্রশ্ন আলোচিত হবে। এ নিয়ে রাশিয়ার ভূমিকা কী হবে, সেদিকেও
দৃষ্টি থাকবে অনেকের। আসাদ আপাতত টিকে গেছেন। কিন্তু কতদিনের জন্য সে
প্রশ্ন থাকবেই। একটি প্রশ্ন পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, তা হচ্ছে
যদি আসাদকে সরে যেতে হয় তাহলে আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় কারা ক্ষমতাসীন হচ্ছেন?
সেখানে আদৌ জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে কি না, এদিকে দৃষ্টি
থাকবে অনেকের। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের চরিত্র পর্যবেক্ষণ করে দুটি মন্তব্য করা
যায়। এক. সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ সিরিয়াকে আরেকটি লেবাননে পরিণত করতে পারে। দুই.
সিরিয়ায় ইসলামি জঙ্গিদের প্রভাব বাড়তে পারে। তবে সিরিয়ার রাজনীতিতে আগামী
দিনগুলোতে তুরস্কের একটি বড় ভূমিকা থাকবে। ২০১৫ সালের রাজনীতিতে
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের দিকেও দৃষ্টি থাকবে অনেকের। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি
নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বিগ্নতা ও একটি সমঝোতা প্রত্যাশিত হলেও ২০১৫ সালে
বড় ধরনের একটি বিতর্কের মুখোমুখিও হতে পারে বিশ্ব। এই মুহূর্তে ইরানের
পারমাণবিক প্রকল্পে ইসরায়েলি বিমান হামলার সম্ভাবনা না থাকলেও ইরানের
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।
জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট ওবামা দ্বিতীয়বারের মতো কংগ্রেসের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যেতে পারেন। তার প্রশাসন নতুন একজন দেশরক্ষা সচিব পাবে। তবে এতে করে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। মার্কিন প্রশাসনে ব্যক্তির পরিবর্তন ঘটলেও নীতির কোনো পরিবর্তন হয় না। এ ক্ষেত্রে দেশরক্ষামন্ত্রী চাগেলের পরিবর্তে কার্টার দায়িত্ব পেলেও মার্কিন নীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তবে ২০১৫ সাল ওবামার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৩ সালের মাঝামাঝি থেকে। ওবামার জন্য তাই যা গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে সেখানে বিকল্প একটি বাহিনী রেখে যাওয়া। এটা অনেকটা নিশ্চিত আফগানিস্তান থেকে মার্কিন তথা ন্যাটোর সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হলে আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চল তালেবানদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। নয়া প্রেসিডেন্ট আশরাফ আলী শুধু কাবুলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বেন। তালেবানের সঙ্গে আলোচনাও ফলপ্রসূ হয়নি। ওবামা প্রশাসন মুসলিম দেশগুলোর সমন্বয়ে বিকল্প একটি বাহিনী গঠন করার উদ্যোগ নিতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, আফগানিস্তানে এখনো যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। মধ্য এশিয়ায় তার উপস্থিতি নিশ্চিত করার স্বার্থে আফগানিস্তানে তাদের ‘টোকেন’ উপস্থিতিও থাকবে। ২০১৫-পরবর্তী আফগান রাজনীতিতে ভারতেরও একটা বড় ভূমিকা থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের যে ‘সামরিক ঐক্য’ গড়ে উঠেছে, তা ২০১৪-পরবর্তী আফগানিস্তানে একটা ভূমিকা পালন করতে পারে। দ্বিতীয়ত, ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে রাশিয়ার পুতিন প্রশাসনের সম্পর্কের দিকেও অনেকের দৃষ্টি থাকবে। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে নৌ উপস্থিতি বাড়ানোর কথা বলেছিল। এতে পরোক্ষভাবে চিনের ওপর ‘চাপ’ সৃষ্টি করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে রাশিয়ান স্ট্রিট বাড়ানোর কথা বলেছে রাশিয়া। ২০১৫ সালে দুই পরাশক্তির এই অঞ্চলে উপস্থিতি লক্ষ করা যাবে। তৃতীয়ত, চিনের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়, ২০১৫ সালে সে ব্যাপারেও পর্যবেক্ষকদের লক্ষ্য থাকবে। এটা বলা যায়, ক্রেমলিনে পুনরায় পুতিনের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব আসরে রাশিয়ার তৎপরতা বেড়েছে। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জ করেই ডিসেম্বরের (২০১৪) প্রথমদিকে পুতিন ভারত সফর করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের ১৬টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এই চুক্তির আওতায় রাশিয়া ভারতে ১০টি পরমাণু চুল্লি নির্মাণ করবে। এছাড়া ভারত ৭১ এমআইএল এমআই-১৭ হেলিকপ্টার ও ৯৭০ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন কিনবে। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া ভারতের সঙ্গে তাদের যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক ছিল, তা দৃঢ় করল। রাশিয়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে একটি ইউরো-এশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে। অনেকটা ইইউ অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন মডেলে। ইতোমধ্যে কাজাকিস্তান ও বেলারুশকে নিয়ে রাশিয়া একটি কাস্টমস ইউনিয়ন গঠন করেছে। রাশিয়া চাচ্ছে এই কাস্টমস ইউনিয়নে ইউক্রেন, কিরঘিজস্তান ও তাজিকিস্তান যোগ দিক। ২০১৫ সালে রাশিয়া এ লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। একই সঙ্গে সামরিক জোট ঈঝঞঙ (ঈড়ষষবপঃরাব ঝবপঁৎরঃু ঃরবধঃরু ড়ৎমধহরুধঃরড়হ)-এর ব্যাপারেও আগ্রহ থাকবে অনেকের। ঈঝঞঙ মূলত একটি সামরিক জোট। রাশিয়ার উদ্যোগে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে নিয়েই এই ঈঝঞঙ গঠিত হয়েছে। স্পষ্টতই রাশিয়া ঈঝঞঙ-এর মাধ্যমে ডধৎংযধি ঞৎবধঃু ড়ৎমধহধুধঃরড়হ (গঠিত ১৯৫৫)-এর পুনর্জীবন করতে চাচ্ছে। একই সঙ্গে ঝঈঙ বা সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের কথাও উল্লেখ করা যায়। চিন সামরিক জোট ঝঈঙ-এর সদস্য। একই সঙ্গে মধ্য এশিয়ার মুসলিমপ্রধান দেশগুলোও এর সদস্য। দুটো কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ আছে এ অঞ্চলে। এক. মধ্য এশিয়ার জ্বালানিসম্পদ। দুই. এ অঞ্চলে আল কায়েদা তথা ইসলামিক জঙ্গিদের উত্থান। এ অঞ্চলজুড়ে রয়েছে চিনেরও ঐতিহাসিক সম্পর্ক। তাই চিনের স্বার্থ অনেক বেশি। এ অঞ্চল থেকে চিন গ্যাস আমদানি করছে। মধ্য এশিয়ার গ্যাস অন্যত্র রপ্তানি করতে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বড় বিনিয়োগ রয়েছে এ অঞ্চলে। ফলে এ অঞ্চলজুড়ে ২০১৫ সালে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ করা যাবে। এখানে আরও একটা কথা উল্লেখ করা যায়। চিনে রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন এসেছে। ২০১৩ সালের মার্চে শি জিনপিং রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন লিকে কিয়াং। শি জিনপিং বেশ কিছুদিন ক্ষমতায় থাকবেন। তিনি আগামী দশকে চিনকে নেতৃত্ব দেবেন। তিনি আধুনিকমনস্ক একজন নেতা। তিনি চিনে কতটুকু সংস্কার আনেন, সেটাও দেখার বিষয়। বিশ্ব রাজনীতির অনেক কিছুই এখন চিনা নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে। কেননা অর্থনৈতিক মন্দার কবল থেকে বিশ্ব এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নে মন্দাভাবা এখনো বিরাজ করছে। গ্রিস তার সংকট থেকে পুরোপুরিভাবে বের হয়ে আসতে পারেনি।
ভারতে নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে মোদির নেতৃত্বে সেখানে একটি সরকার গঠিত হয়েছে। নয়া সরকারের কর্মকা- এখনো কোনো বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম না দিলেও এটা বোঝা যাচ্ছে, নয়া সরকার দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক ধরনের ‘ব্যালান্স’ করে চলেছে। একই সঙ্গে চিনা প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের মধ্য দিয়ে মোদি সরকারের ব্যাপারে বড় শক্তিগুলোর আগ্রহ যে বেশি তা আবারও প্রমাণিত হলো। মোদি গেল সেপ্টেম্বরে (২০১৪) ওয়াশিংটনে ওবামার সঙ্গে বৈঠক করেছেন আর ওবামা জানুয়ারিতে (২০১৫) ভারত আসছেন এবং ‘রিপাবলিকান ডে’র অনুষ্ঠানে (২৫ জানুয়ারি) প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এটা নিঃসন্দেহে বহির্বিশ্বে মোদি সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে। এখন দেখার বিষয়, দুই পরাশক্তির সঙ্গে ব্যালান্স করে মোদি সরকার কীভাবে তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করে।২০১৫ সালে ইউক্রেন-রাশিয়া পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য থাকবে অনেকের। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তি ও পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। এ ঘটনায় রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে এ অঞ্চলের উত্তেজনা থামানো যায়নি। ইউক্রেন এক ধরনের ‘রাশিয়ান আগ্রাসনের’ মুখোমুখি রয়েছে। এতে করে ২০১৫ সালে ইউক্রেন যদি ন্যাটোতে যোগ দেয়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। রাশিয়া এটাকে দেখবে তাদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ হিসেবে। ফলে ২০১৫ সালে ইউক্রেন পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি থাকবে অনেকের। ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ব্যাপক হারে ‘ইবোলা’ মহামারী ছড়িয়ে পড়ায় তা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। একই সঙ্গে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে সিআইএ কর্তৃক ব্যাপক নির্যাতনের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনেরও অভিযোগ ওঠে। এই দুটো ঘটনা ২০১৫ সালেও আলোচিত হতে থাকবে। গণতন্ত্রের জন্য ২০১৪ সাল তেমন সুখবর ছিল না। থাইল্যান্ডে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়লেও পাকিস্তানে ইমরান খানের আন্দোলনের মুখে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের আশঙ্কা থাকলেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়নি। ২০১৫ সালে বেশ কয়েকটি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ২০১৪ সালের মতো ২০১৫ সালেও উত্তেজনা থাকবে এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য ২০১৫ সালের জন্য কোনো ভালো সংবাদ অপেক্ষা করছে না। Daily Amader Somoy 15.12.14
জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট ওবামা দ্বিতীয়বারের মতো কংগ্রেসের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যেতে পারেন। তার প্রশাসন নতুন একজন দেশরক্ষা সচিব পাবে। তবে এতে করে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। মার্কিন প্রশাসনে ব্যক্তির পরিবর্তন ঘটলেও নীতির কোনো পরিবর্তন হয় না। এ ক্ষেত্রে দেশরক্ষামন্ত্রী চাগেলের পরিবর্তে কার্টার দায়িত্ব পেলেও মার্কিন নীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তবে ২০১৫ সাল ওবামার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৩ সালের মাঝামাঝি থেকে। ওবামার জন্য তাই যা গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে সেখানে বিকল্প একটি বাহিনী রেখে যাওয়া। এটা অনেকটা নিশ্চিত আফগানিস্তান থেকে মার্কিন তথা ন্যাটোর সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হলে আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চল তালেবানদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। নয়া প্রেসিডেন্ট আশরাফ আলী শুধু কাবুলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বেন। তালেবানের সঙ্গে আলোচনাও ফলপ্রসূ হয়নি। ওবামা প্রশাসন মুসলিম দেশগুলোর সমন্বয়ে বিকল্প একটি বাহিনী গঠন করার উদ্যোগ নিতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, আফগানিস্তানে এখনো যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। মধ্য এশিয়ায় তার উপস্থিতি নিশ্চিত করার স্বার্থে আফগানিস্তানে তাদের ‘টোকেন’ উপস্থিতিও থাকবে। ২০১৫-পরবর্তী আফগান রাজনীতিতে ভারতেরও একটা বড় ভূমিকা থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের যে ‘সামরিক ঐক্য’ গড়ে উঠেছে, তা ২০১৪-পরবর্তী আফগানিস্তানে একটা ভূমিকা পালন করতে পারে। দ্বিতীয়ত, ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে রাশিয়ার পুতিন প্রশাসনের সম্পর্কের দিকেও অনেকের দৃষ্টি থাকবে। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে নৌ উপস্থিতি বাড়ানোর কথা বলেছিল। এতে পরোক্ষভাবে চিনের ওপর ‘চাপ’ সৃষ্টি করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে রাশিয়ান স্ট্রিট বাড়ানোর কথা বলেছে রাশিয়া। ২০১৫ সালে দুই পরাশক্তির এই অঞ্চলে উপস্থিতি লক্ষ করা যাবে। তৃতীয়ত, চিনের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়, ২০১৫ সালে সে ব্যাপারেও পর্যবেক্ষকদের লক্ষ্য থাকবে। এটা বলা যায়, ক্রেমলিনে পুনরায় পুতিনের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব আসরে রাশিয়ার তৎপরতা বেড়েছে। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জ করেই ডিসেম্বরের (২০১৪) প্রথমদিকে পুতিন ভারত সফর করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের ১৬টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এই চুক্তির আওতায় রাশিয়া ভারতে ১০টি পরমাণু চুল্লি নির্মাণ করবে। এছাড়া ভারত ৭১ এমআইএল এমআই-১৭ হেলিকপ্টার ও ৯৭০ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন কিনবে। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া ভারতের সঙ্গে তাদের যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক ছিল, তা দৃঢ় করল। রাশিয়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে একটি ইউরো-এশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে। অনেকটা ইইউ অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন মডেলে। ইতোমধ্যে কাজাকিস্তান ও বেলারুশকে নিয়ে রাশিয়া একটি কাস্টমস ইউনিয়ন গঠন করেছে। রাশিয়া চাচ্ছে এই কাস্টমস ইউনিয়নে ইউক্রেন, কিরঘিজস্তান ও তাজিকিস্তান যোগ দিক। ২০১৫ সালে রাশিয়া এ লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। একই সঙ্গে সামরিক জোট ঈঝঞঙ (ঈড়ষষবপঃরাব ঝবপঁৎরঃু ঃরবধঃরু ড়ৎমধহরুধঃরড়হ)-এর ব্যাপারেও আগ্রহ থাকবে অনেকের। ঈঝঞঙ মূলত একটি সামরিক জোট। রাশিয়ার উদ্যোগে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে নিয়েই এই ঈঝঞঙ গঠিত হয়েছে। স্পষ্টতই রাশিয়া ঈঝঞঙ-এর মাধ্যমে ডধৎংযধি ঞৎবধঃু ড়ৎমধহধুধঃরড়হ (গঠিত ১৯৫৫)-এর পুনর্জীবন করতে চাচ্ছে। একই সঙ্গে ঝঈঙ বা সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের কথাও উল্লেখ করা যায়। চিন সামরিক জোট ঝঈঙ-এর সদস্য। একই সঙ্গে মধ্য এশিয়ার মুসলিমপ্রধান দেশগুলোও এর সদস্য। দুটো কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ আছে এ অঞ্চলে। এক. মধ্য এশিয়ার জ্বালানিসম্পদ। দুই. এ অঞ্চলে আল কায়েদা তথা ইসলামিক জঙ্গিদের উত্থান। এ অঞ্চলজুড়ে রয়েছে চিনেরও ঐতিহাসিক সম্পর্ক। তাই চিনের স্বার্থ অনেক বেশি। এ অঞ্চল থেকে চিন গ্যাস আমদানি করছে। মধ্য এশিয়ার গ্যাস অন্যত্র রপ্তানি করতে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বড় বিনিয়োগ রয়েছে এ অঞ্চলে। ফলে এ অঞ্চলজুড়ে ২০১৫ সালে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ করা যাবে। এখানে আরও একটা কথা উল্লেখ করা যায়। চিনে রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন এসেছে। ২০১৩ সালের মার্চে শি জিনপিং রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন লিকে কিয়াং। শি জিনপিং বেশ কিছুদিন ক্ষমতায় থাকবেন। তিনি আগামী দশকে চিনকে নেতৃত্ব দেবেন। তিনি আধুনিকমনস্ক একজন নেতা। তিনি চিনে কতটুকু সংস্কার আনেন, সেটাও দেখার বিষয়। বিশ্ব রাজনীতির অনেক কিছুই এখন চিনা নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে। কেননা অর্থনৈতিক মন্দার কবল থেকে বিশ্ব এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নে মন্দাভাবা এখনো বিরাজ করছে। গ্রিস তার সংকট থেকে পুরোপুরিভাবে বের হয়ে আসতে পারেনি।
ভারতে নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে মোদির নেতৃত্বে সেখানে একটি সরকার গঠিত হয়েছে। নয়া সরকারের কর্মকা- এখনো কোনো বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম না দিলেও এটা বোঝা যাচ্ছে, নয়া সরকার দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক ধরনের ‘ব্যালান্স’ করে চলেছে। একই সঙ্গে চিনা প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের মধ্য দিয়ে মোদি সরকারের ব্যাপারে বড় শক্তিগুলোর আগ্রহ যে বেশি তা আবারও প্রমাণিত হলো। মোদি গেল সেপ্টেম্বরে (২০১৪) ওয়াশিংটনে ওবামার সঙ্গে বৈঠক করেছেন আর ওবামা জানুয়ারিতে (২০১৫) ভারত আসছেন এবং ‘রিপাবলিকান ডে’র অনুষ্ঠানে (২৫ জানুয়ারি) প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এটা নিঃসন্দেহে বহির্বিশ্বে মোদি সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে। এখন দেখার বিষয়, দুই পরাশক্তির সঙ্গে ব্যালান্স করে মোদি সরকার কীভাবে তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করে।২০১৫ সালে ইউক্রেন-রাশিয়া পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য থাকবে অনেকের। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তি ও পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। এ ঘটনায় রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে এ অঞ্চলের উত্তেজনা থামানো যায়নি। ইউক্রেন এক ধরনের ‘রাশিয়ান আগ্রাসনের’ মুখোমুখি রয়েছে। এতে করে ২০১৫ সালে ইউক্রেন যদি ন্যাটোতে যোগ দেয়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। রাশিয়া এটাকে দেখবে তাদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ হিসেবে। ফলে ২০১৫ সালে ইউক্রেন পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি থাকবে অনেকের। ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ব্যাপক হারে ‘ইবোলা’ মহামারী ছড়িয়ে পড়ায় তা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। একই সঙ্গে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে সিআইএ কর্তৃক ব্যাপক নির্যাতনের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনেরও অভিযোগ ওঠে। এই দুটো ঘটনা ২০১৫ সালেও আলোচিত হতে থাকবে। গণতন্ত্রের জন্য ২০১৪ সাল তেমন সুখবর ছিল না। থাইল্যান্ডে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়লেও পাকিস্তানে ইমরান খানের আন্দোলনের মুখে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের আশঙ্কা থাকলেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়নি। ২০১৫ সালে বেশ কয়েকটি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ২০১৪ সালের মতো ২০১৫ সালেও উত্তেজনা থাকবে এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য ২০১৫ সালের জন্য কোনো ভালো সংবাদ অপেক্ষা করছে না। Daily Amader Somoy 15.12.14
0 comments:
Post a Comment