রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাংলাদেশে আইএস বিতর্ক ও আমাদের শঙ্কা


বাংলাদেশে আইএস বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন ঢাকা ঘুরে গেলেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ কিংবা ‘সন্ত্রাসীগোষ্ঠী যেখানে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করছে তা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই’—নিশা দেশাইয়ের এ ধরনের বক্তব্যের পরও আইএস নিয়ে বাংলাদেশের প্রশ্ন রয়েই গেল। তথাকথিত আইএস বা আল-কায়েদার হাতে মারা গিয়েছিলেন নিখিল জোয়ার্দার। দর্জি। ধর্মীয়ভাবে সনাতন ধর্মের অনুসারী। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করার অভিযোগে ২০১২ সালে তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিল। তিনি জেলও খেটেছিলেন ২২৪ দিন। এটাই কি ‘অপরাধ’ যে তিনি মহানবী সম্পর্কে কটূক্তি করেছিলেন! যথারীতি SITE ইন্টেলিজেন্স আমাদের জানাচ্ছে, আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে! এই আইএস নিয়ে মহাবিতর্ক এখন বাংলাদেশে। এর আগে একই কায়দায় খুন হন কলাবাগানের বাসিন্দা ও ইউএসএইডে কর্মরত জুলহাজ ও তাঁর ‘বন্ধু’ তনয়। তাঁদের ‘অপরাধ’ কী? জুলহাজ সমকামীদের পত্রিকা ‘রূপবান’ সম্পাদনা করতেন এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকারের পক্ষে কথা বলতেন। এটাই কি ‘অপরাধ’? এর একটি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া আমরা দেখেছি। শুধু মার্কিন রাষ্ট্রদূতই নন, স্বয়ং কেরি ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বক্তব্যটি ছিল স্পষ্ট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে আইএস আছে এ কথা সরকারকে বিশ্বাস করতে হবে।’ এটাই হচ্ছে মোদ্দাকথা—যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশে আইএস আছে এবং সরকার যেন তা স্বীকার করে নেয়। বাংলাদেশে আইএস নেই—এ কথা বারবার বলে আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পুলিশপ্রধানও বললেন, ‘পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশকে ইরাক-সিরিয়া বানাতে চায়।’ বাংলাদেশে আইএস বিতর্কটা সাম্প্রতিক সময়ের। আর আইএসের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও ম্যাগাজিন ‘দাবিগ’-এ এ-সংক্রান্ত খবর খুব কমই ছাপা হয়েছে। অভিজিৎ, খিজির খান, দীপন, অনন্ত, কোনিও হোশি, রেজাউল করিম, নীলাদ্রি, তাবেল্লা আর সর্বশেষ জুলহাজ, তনয় ও নিখিল। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পরপরই খুব দ্রুততার সঙ্গে সাইট ইন্টেলিজেন্সে খবরটি প্রকাশ করা হয়েছে। সাইট কোনো গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান নয়, যা গবেষকরা তাঁদের গবেষণার কাজে ব্যবহার করেন। এটা এমন এক প্রতিষ্ঠান, যারা ইসলামিক উগ্রপন্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং তা বিবিএস প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘বিক্রি’ করে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এর বড় ‘ক্রেতা’। এর যিনি পরিচালক (রিটা কাট্জ), তিনি একসময় ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদে কাজ করতেন। প্রতিষ্ঠানটি মোসাদের অর্থে পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন আছে। এ প্রশ্ন আছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও। কোনো একটি হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে আইএসের স্থানীয় জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার খবর স্থানীয়ভাবে প্রচার করা হয়নি। আমার নিজের মনেও নানা প্রশ্ন আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই যখন বারবার বলে আসছেন যে এ দেশে ‘হোমগ্রোন’ জঙ্গি আছে, অর্থাৎ স্থানীয় জঙ্গি, তখন আরেকজন সিনিয়র মন্ত্রী ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কী করে বলেন, বাংলাদেশে আফগান ট্রেনিংপ্রাপ্ত আট হাজার আল-কায়েদা জঙ্গি রয়েছে! এতে দুই মন্ত্রী যখন দুই ধরনের ও পরস্পর বিপরীতমুখী বক্তব্য দেন তখন মানুষের মধ্যে এক ধরনের ‘কনফিউশন’ তৈরি হয়। মানুষ এখন কোনটা বিশ্বাস করবে? বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের তথা আইএসের তথাকথিত উত্থান নিয়ে একটা ‘বক্তব্য’ই থাকা উচিত। বাংলাদেশ সরকার বারবার আইএসের থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে। সেটাই সঠিক। কেননা আইএস তাদের স্ট্র্যাটেজিতে কখনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে না। প্যারিস, ব্রাসেলস কিংবা জাকার্তায় আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংগঠন যে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছিল, তাতে ‘সন্ত্রাস সৃষ্টি’ করাই ছিল মুখ্য, ব্যক্তিকে টার্গেট করে তারা হামলা চালায়নি। অনেক ক্ষেত্রেই তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে একসঙ্গে অনেক স্থানে হামলা চালিয়েছে। বাংলাদেশে কোনো একটি ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি। আইএসের মুখপত্র ‘দাবিগ’-এ অতি সম্প্রতি জনৈক শেখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে, যাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে আইএসের প্রধান হিসেবে। এটা যে একটা ভুয়া নাম, এটা সবাই স্বীকার করে। ফলে আজ যখন পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশে আইএস আছে, এই স্বীকারোক্তি আদায় করে নিতে চায় তখন প্রশ্ন উঠবেই। আইএস আছে, এই যুক্তি তুলে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এক ‘যুদ্ধ’-এর সূচনা করেছে অনেক দেশেই। মধ্যপ্রাচ্যের পর তাদের দৃষ্টি এখন আফ্রিকার দিকে। দক্ষিণ এশিয়াও তাদের নজরে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প মিডিয়ার যাঁরা পাঠক, তাঁরা দেখেছেন বিভিন্ন গবেষক তথ্য-উপাত্ত সহকারে দেখিয়েছেন করপোরেট হাউসগুলোর স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধ’ পরিচালনা করে। David Vine তাঁর গ্রন্থ Base Nation : How Us Military Bases Abroad Harm America and the World-এ উল্লেখ করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব সেনা ছাউনি রয়েছে, তা পরিচালনা কিংবা মেইনটেন করতে শুধু ২০১৪ সালেই খরচ হয়েছে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার (আফগানিস্তান ও ইরাকসহ)। এর বাইরে রয়েছে যুদ্ধ খরচ ও বেতন-ভাতাদি। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজীবী নাগরিকদের কাছ থেকেই এ টাকা নেওয়া হয়, যার পরিমাণ জনপ্রতি বছরে ১০ থেকে ৪০ হাজার ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে ৯-১১-এর ঘটনার সঙ্গে (টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনা) যে টাকার খেলা জড়িত, তার প্রমাণও আছে। একটি নয়, একাধিক গবেষণা প্রবন্ধে ও গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে এই টুইন টাওয়ার হামলায় কারা সুবিধা পেয়েছে। টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর গ্রাউন্ড জিরোকে (যেখানে টুইন টাওয়ার ছিল) কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য। ২০১৪ সালে আমি গ্রাউন্ড জিরোতে দেখে এসেছি সেখানে দাঁড়িয়ে গেছে সুউচ্চ নতুন একটি ভবন। আর এই ভবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে বিশাল এক বাণিজ্য। করপোরেট হাউসগুলোর ব্যবসা সেখানে রমরমা। আফগান যুদ্ধ শুরু করার পর সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের খরচের পরিমাণ ছয় ট্রিলিয়ন ডলারের ওপরে (এক হাজার বিলিয়নে এক ট্রিলিয়ন)। আর এ থেকে ব্যবসা করেছে মার্কিন কন্ট্রাক্টররা। কিন্তু শান্তি ও স্থিতিশীলতা আফগানিস্তানে ফিরে আসেনি। পাঠক, ইরাকের কথা স্মরণ করতে পারেন। ইরাক আক্রমণের (২০০৩) আগে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। প্রতিটি ইরাকিকে খাদ্যের নিশ্চয়তা দেবেন। কার্যত ইরাক এখন ভেঙে যাওয়ার মুখে। জঙ্গিবাদ, আইএসের উত্থান ইরাককে কার্যত একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। কিন্তু ইরাকের অবকাঠামো নির্মাণে যে বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে, তা পেয়েছে শুধু মার্কিন কন্ট্রাক্টররা (বেকটেল গ্রুপের কথা পাঠক স্মরণ করতে পারেন, যার চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি)। ইরাক অতিরিক্ত তেল উত্তোলন করে ‘বিল’ মিটিয়েছে। লিবিয়ার কথা একইভাবে উল্লেখ করা যায়। ওবামা অনেকটা বুশকে অনুসরণ করে লিবিয়ায় বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই লিবিয়ায় আজ কার্যত কোনো সরকার নেই। জঙ্গিরা (আইএস) এখন লিবিয়ার একটি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। তথাকথিত নাইন-ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলে পৃথিবীর অনেক দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর জন্ম হয়, যারা নিজ নিজ দেশের প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে। উত্তর নাইজেরিয়ায় ২০০২ সালে বোকো হারাম (আসল নাম ‘দ্য পিপলস অব দ্য সুন্নিস প্রিয়েচিং অ্যান্ড জিহাদ) নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয়েছিল, যারা এখন মালি, নাইজার, চাদ, ক্যামেরুনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ‘অপারেট’ করছে। নাইজেরিয়ার শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকলেও এই সেনাবাহিনী বোকো হারাম দমনে ব্যস্ত। মিসরে জন্ম হয়েছে ‘আনসার বায়াত আল মাকডিস’। সিরিয়ায় রয়েছে বুশরা ফ্রন্ট। ইয়েমেনে রয়েছে আল-কায়েদার উপস্থিতি। এসব সংগঠনের অনেকেই আইএসের প্রতি এরই মধ্যে আনুগত্য প্রকাশ করেছে। ইন্দোনেশিয়ায় ‘কাতিবা বুসানতারা’ আইএসের আনুগত্য স্বীকার করেছে এবং জানুয়ারিতে জাকার্তায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো একটি কমান্ড প্রতিষ্ঠা করেছে (AFRICOM)। আফ্রিকায় রয়েছে (নাইজার) ইউরোপিয়ানের মতো প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ, যার অনেকটাই অনাবিষ্কৃত। মার্কিন কন্ট্রাক্টরদের আগ্রহ এখানে বিশাল। ২৮টি আফ্রিকান দেশে টঝ-অভত্রপধহ ঈড়সসধহফ (AFRICOM) রয়েছে। এর বাইরে FINTLOCK of US Training Exercise Africa নামে যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীকে জঙ্গি দমনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। শুধু তা-ই নয়, ২৮টি দেশে Trans Sahara Counter Terrorism Partnership কর্মসূচির আওতায় প্রায় এক হাজার ৩০০ মার্কিন সৈন্য এখন নিয়োজিত রয়েছে। পাঠক লক্ষ করবেন, লিবিয়াকে বলা হয় ‘গেটওয়ে টু আফ্রিকা’। অর্থাৎ এখান থেকে আফ্রিকায় যাওয়া যায়। ফলে এখানে যদি (লিবিয়া) একটি বন্ধুপ্রতিম সরকার থাকে, তাহলে এখান থেকে আফ্রিকা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করা সম্ভব। এ কথাগুলো কাদের উদ্দেশে হচ্ছে? ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ যুদ্ধের নামে যুক্তরাষ্ট্র একক কর্তৃত্ব করতে চায় এবং প্রতিটি দেশ থেকে ‘সুবিধা’ আদায় করে নিতে চায়। যাঁরা অধ্যাপক Michel Chossudovsky-র বহুল আলোচিত গ্রন্থ America’s War on Terrorism পড়েছেন, তাঁরা দেখেছেন অধ্যাপক চসুডোভস্কি তথ্য-উপাত্তসহ দেখিয়েছেন, কারা টুইন টাওয়ার হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আসল উদ্দেশ্য কী। অধ্যাপক চসুডোভস্কি কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক। কানাডায় থাকেন এবং সেখানে একটি গবেষণা কেন্দ্র পরিচালনা করেন। তাঁর মূল্যায়ন হচ্ছে, ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের যত বেশি ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে লাভ হয়েছে অনেক বেশি। তাই আজ যখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, জন কেরি কিংবা অ্যান্টনি ব্লিংকেন (ডেপুটি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বাংলাদেশে আইএস আছে বলে দাবি করেন এবং বাংলাদেশকে তা স্বীকার করতে বলেন, তখন স্পষ্টতই ওপরে উল্লিখিত তথ্যগুলো সামনে চলে আসে। বাংলাদেশে ‘হোমগ্রোন’ জঙ্গি আছে। সরকার জননিরাপত্তার প্রতি খুব বেশি সজাগ নয়। কিন্তু যে প্রশ্নটি আমাকে ভাবিত করে, তা হচ্ছে বার্নিকাটের সঙ্গে আলোচনা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেন, ‘সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সেল গঠন করবে’—এর অর্থ কী? ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী যে অভিযান, তাতে কি বাংলাদেশ অংশ নিতে যাচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ‘দ্য গ্লোবাল কোয়ালিশন টু কাউন্টার আইএসআইএল’, তাতে কি বাংলাদেশ যোগ দেবে তখন? বাংলাদেশ সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে যোগ দিয়েছিল (ইসলামিক মিলিটারি অ্যালায়েন্স টু ফাইট টেররিজম)। কিন্তু বাংলাদেশ মার্কিন জোটে যোগ দেয়নি। ৫৯টি দেশ মার্কিন জোটে যোগ দিয়েছে। অনেক ইউরোপীয় দেশ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ এই জোটে যোগ দিলেও বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা ভারতও এর সদস্য নয়। যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন থেকেই চাচ্ছে বাংলাদেশ ‘সোফা’ (States of Forces Agreement) ও ‘আকসা’ (Acquisition of Cross Servicing Agreement) চুক্তিতে যোগ দিক। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত মার্কিনি ‘চাপ’ উপেক্ষা করে আসছে। বাংলাদেশ যদি এই চুক্তিতে রাজি হয়, তাহলে বিনা ভিসায় মার্কিন সেনা সদস্যরা বাংলাদেশে আসতে পারবে, অবস্থান গ্রহণ করতে পারবে এবং তারা যদি কোনো ‘অন্যায়’ করে তাদের বাংলাদেশি আইন কিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সোপর্দ করা যাবে না। তবে বাংলাদেশ এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারি সংলাপ চুক্তি ও TICFA চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এখন তথাকথিত আইএসের উপস্থিতিকে (?) স্বীকার করে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি চাচ্ছে বাংলাদেশকে তাদের সামরিক বলয়ে নিয়ে যেতে? এগুলো স্পষ্টতই স্পেসেকুলেশন। ধারণা মাত্র। এর সঙ্গে বাস্তবতা কতটুকু, তা হয়তো এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। আগামী দিনগুলোই প্রমাণ করবে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন নীতি কোন পর্যায়ে উপনীত হবে। যুক্তরাষ্ট্র কী চায়, তা তখন স্পষ্ট হবে। তাই বলে সাম্প্রতিককালে যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার সঙ্গে কারা জড়িত, এটা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের মোটিভ এখন পর্যন্ত উদ্ঘাটিত হয়নি। পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার এই ব্যর্থতা আমাদের জন্য কোনো ভালো খবর নয়। বাংলাদেশে আইএস আছে কি নেই, আমার কাছে এই বিতর্ক মূল্যহীন। কেননা প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই আমাদের জন্য খারাপ সংবাদ। এই সংবাদগুলো বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। আমাদের দূতাবাসগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত আমাদের দূতাবাস এসব হত্যাকাণ্ডের ‘সঠিক ব্যাখ্যা’ মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরতে পারেনি। সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে জন কেরির মতো ব্যক্তিত্ব প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করার সৎসাহস পেতেন না। বাংলাদেশে স্থানীয় জঙ্গি আছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারাই জড়িত। আমি এসব হত্যাকাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলব না। বাংলাদেশকে এরা অস্থির করতে চায়। এখন আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে দ্রুত হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা, তাদের যদি রাজনৈতিক চরিত্র থাকে, তা-ও বলা এবং দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। পুলিশ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পুলিশি প্রহরা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা কোনো সমাধান নয়। সবাইকে পুলিশি নিরাপত্তা রাষ্ট্রের চরিত্রকে বদলে দিতে পারে। জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে হলে প্রয়োজন সব দল ও মতের ঐক্য এবং সেই সঙ্গে জনসচেতনতা। জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করার মধ্য দিয়েই আমরা পারি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে। Daily Kaler Kontho 15,05.16

0 comments:

Post a Comment