রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ভারতের বিধান সভার নির্বাচন ও আমাদের শঙ্কার কারণ


ভিারতের পাঁচটি রাজ্যের বিধান সভার নির্বাচন হয়ে গেল। এ নির্বাচনে পশ্চিম বাংলায় মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল আসনে বিজয়ী হয়ে আরও পাঁচ বছরের জন্য থেকে গেল। আসামে বড় পরিবর্তন হয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিনের কংগ্রেস শাসনের অবসান হয়েছে। বিজেপি বিজয়ী হয়ে সবাইকে অবাক করেছে। বিজেপি এখন সেখানে রাজ্য সরকার গঠন করবে। কেরালায় বামফ্রন্ট আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। তামিলনাড়–তেও ফিরে এসেছে জয়ললিতার নেতৃত্বাধীন এআইএডিএমকে দল। জয়ললিতা আবারও মুখ্যমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। আর পদুচেরিতে কংগ্রেস বিজয়ী হয়েছে। এ নির্বাচন কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ’র সরকার পরিচালনায় কোনো পরিবর্তন ডেকে আনবে না। তবে অনেকগুলো ‘মেসেজ’ অন্তত দিল। প্রথমত, বেশ কিছু দিন ধরে ভারতীয় রাজনীতিতে আঞ্চলিক দলগুলো যেভাবে শক্তিশালী হচ্ছে, সে ট্রেন্ডই বজায় থাকল। পশ্চিম বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের বিশাল বিজয় (২০১১ সালের বিধান সভার নির্বাচনের চেয়ে আরও ৩০টি আসন বেশি এবার) নয়াদিল্লির ওপর মমতার ‘চাপ’ আরও বাড়বে। মোদি আরও বেশি করে উপলব্ধি করবেন যে, তার মমতাকে আরও বেশি প্রয়োজন রয়েছে। দ্বিতীয়ত, আসামে বিজেপির বিজয় নিঃসন্দেহে নরেন্দ্র মোদির হাতকে আরও শক্তিশালী করবে। তৃতীয়ত, জাতীয় কংগ্রেসের ভারতব্যাপী যে গ্রহণযোগ্যতা তা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ‘রাহুল গান্ধী ম্যাজিক’ কোনো কাজ করছে না। এ মুহূর্তে ভারতের ২৯টি রাজ্যের মাঝে মাত্র ৫টিতে কংগ্রেস সরকারে আছে। ২০১৭-১৮ সময়সীমায় বিধান সভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মণিপুর, হিমাচল, কর্নাটক, মেঘালয় ও মিজোরামে। এসব রাজ্যে কংগ্রেস কী ফল করে, তা দেখার বিষয়। তবে সোনিয়া গান্ধীর ওপর চাপ বাড়ছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে সামনে নিয়ে আসতে। রাহুলের চেয়ে প্রিয়াঙ্কা ‘ভোট ক্যাচার’। অনেকে এরই মধ্যে ভাবতে শুরু করেছেন, প্রিয়াঙ্কার মাঝে একজন ‘ভাবি ইন্দিরা গান্ধী’ রয়েছে। কগ্রেস তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে প্রিয়াঙ্কাকে নেতৃত্বের গাড়িতে নিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ নির্বাচনের ফলাফলের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। দুইটি কারণে এর গুরুত্ব বেড়েছে। এক. পশ্চিম বাংলায় মমতার আগামী পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় থেকে যাওয়া একটি সম্ভাবনার সৃষ্টি করল যে, এবার হয়তো মমতা তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে তার সম্মতি দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আগামীতে একটি তিস্তা চুক্তি হতে পারে। দুই. আসামে বিজেপির বিজয় ও সেখানে সরকার গঠন আমাদের জন্য একটা দুশ্চিন্তার কারণ। যদিও মমতা ব্যানার্জি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা আমাদের আশাবাদী করলেও আসামের হবু মুখ্যমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা আমাদের জন্য অনেক চিন্তার কারণ। মমতা যেখানে বলেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ নেবেন, সেখানে আসামের হবু মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেন ভিন্ন কথা। সোনোয়াল বিজয়ী হওয়ার পরপরই তথাকথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ২ বছরের মধ্যেই এ সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন, যা বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায়ও ছাপা হয়েছে। সোনোয়াল একথাও জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং সীমান্তকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য দুই বছরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। তিনি এরই মাঝে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার কাজটি সম্পন্ন করবেন। তিনি আসামের প্রতিটি নাগরিককে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) আওতায় আনবেন বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাও আমাদের জন্য আরেক চিন্তার কারণ। এর ফলে মুসলমানরা শুধু শুধু টার্গেট এবং হেনস্তার শিকার হবেন। বলা ভালো, আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৬৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। মমতা ব্যানার্জি সর্বানন্দ সোনোয়ালের মতো কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য রাখেননি, এটা সত্য। কিন্তু এটাও সত্য, মমতা ব্যানার্জিকে বিশ্বাস করা যায় না। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে নীতিগতভাবে রাজি হলেও শুধু মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে চুক্তিটি হয়নি। নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় তিনি তার সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন। আগেও এসেছিলেন একবার। বলেছিলেন, তার ওপর আস্থা রাখতে। তখন সংবাদপত্রে বলা হয়েছিল, পশ্চিম বাংলায় বিধানসভার নির্বাচনের (উত্তরবঙ্গ) কারণে তিনি কোনো চুক্তিতে যেতে রাজি হচ্ছেন না। কেননা, এতে করে বিজেপি এটাকে ইস্যু বানিয়ে ফেলতে পারে। তাই নির্বাচনের পর প্রশ্ন এখন বাংলাদেশের অনেকের কাছেÑ মমতা কী এখন রাজি হবেন একটি চুক্তি করতে? রুদ্র কমিশনের সুপারিশমালা তার কাছে আছে। এ কমিশনটি তিনিই করেছিলেন। অধ্যাপক কল্যাণ রুদ্র তার সুপারিশে উল্লেখ করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের চাহিদা মিটিয়েও বাংলাদেশকে তিস্তার ৫০ ভাগ পানি দেয়া সম্ভব। তিনি এমন মতামতও দিয়েছিলেন, ‘ম্যানেজমেন্ট প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে তিস্তার পানি মজুদ করা যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রণব কুমারও তার সঙ্গে একমত হয়েছিলেন বলে কলকাতার পত্রিকাগুলো আমাদের জানিয়েছিল। তবে যতদূর জানা যায়, মমতা ব্যানার্জি রুদ্র কমিশনের ব্যাপারে খুশি ছিলেন না। যে কারণে রুদ্র কমিশনের রিপোর্টটি তিনি প্রকাশ করেননি। এখন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি রুদ্র কমিশনের সুপারিশকে বিবেচনায় নেবেন কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন এখন। তবে এটাও সত্য, তার কাছে পশ্চিম বাংলার স্বার্থ আগে। কেন্দ্র তাকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে যেতে পারবে না। এক্ষেত্রে তিনি মোদির সঙ্গে একটি ‘সমঝোতায়’ যেতে পারেন। যেমনটি একটি সমঝোতায় তিনি স্থল সীমান্ত চুক্তি সমর্থন করেছিলেন। রাজ্যসভায় তৃণমূল সমর্থন না করলে বিলটি পাস হতো না। কেন্দ্র থেকে তার আর্থিক সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার। নরেন্দ্র মোদি এ আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টিকে তার স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। মমতা ঢাকায় আসার ব্যাপারেও সেই মানসিকতা কাজ করেছিল। নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল কানেকটিভিটির প্রশ্নটি। তিনি ভারতের এক অঞ্চলকে অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চেয়েছেন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে। আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গÑ এ তিনটি রাজ্য এ প্রক্রিয়ায় জড়িত। মোদি এজন্যই চেয়েছিলেন, এ তিন রাজ্যের তিন মুখ্যমন্ত্রী ঢাকায় যাবেন। তাই মমতা এসেছিলেন। তিস্তা এখানে প্রাধান্য ছিল না। অনেক পরিকল্পনা মমতা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না, যদি না কেন্দ্র আর্থিকভাবে তাকে সাহায্য করে। তখন সামনে নির্বাচন ছিল। মমতা তাই ঝুঁকিটি নিতে চাননি। নির্বাচনের আগে কেন্দ্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই’র একটি চাপও ছিল মমতার ওপর। সারদা কেলেঙ্কারি, তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওপর সিবিআই’র নজরদারি ছিল বেশি। ফলে এ ‘চাপ’কে অনেকটা নিউট্রাল করতে তিনি মোদির সঙ্গে ঢাকায় আসতে রাজি হয়েছিলেন, কোনো চুক্তি করতে নয়। এখন মমতা ব্যানার্জি পুনরায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে যোগ দিতেও পারেন! অমিত শাহের গলায় সেই সুর। এক সময় তিনি এ জোটে ছিলেন। কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী ছিলেন। আবার বেরিয়েও এসেছিলেন। এখন পশ্চিমবঙ্গে তার বিজয় নিশ্চিত হয়েছে এবং সব কেলেঙ্কারি থেকে ‘মুক্ত’ হতে তিনি যদি আবারও এনডিএ জোটে ফিরে যান, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই! তার ওপর আস্থা রাখা কঠিন। যতদূর জানা যায়, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ঢাকায় আসেননি তার একটাই কারণ। আর তা হচ্ছে, মমতাকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র এককভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করতে চাচ্ছিল, যা মমতার মনঃপূত হয়নি। ভারতের সংবিধানে রাজ্য সরকারের কিছুটা অধিকার স্বীকৃত। রাজ্য সরকারকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র এককভাবে কোনো চুক্তি করতে পারে না। ঢাকা সফরের আগে মোদি তাকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি ঢাকায় তিস্তার ব্যাপারে কোনো চুক্তি করবেন না এবং তিস্তার ব্যাপারে ঢাকার সঙ্গে কোনো কথা হবে না। যদি কথা বলতেই হয়, এ ব্যাপারে মমতাই কথা বলবেন। মমতা কথা বলেছিলেন। কূটনৈতিক ভাষায় বলেছিলেন তার ওপর আস্থা রাখতে। বাংলাদেশের মানুষ আস্থা রেখেছিল। এখন নির্বাচন শেষ হয়েছে এবং মমতা বিজয়ী হয়েছেন। তিনি আগামী ৫ বছরের জন্য জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছেন। বিহারে নীতিশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে (বিহারের রাজধানী পাটনায়) তিনি যোগ দিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন একটা মহাজোট গঠনের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে তার কোনো সহাবস্থান হয়নি। জাতীয় কংগ্রেস ঐক্য করেছিল বামফ্রন্টের সঙ্গে। তার জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে ঐক্য না করা কেন্দ্রে মোদি সরকারকে খুশি করে থাকবে। ফলে মমতা যদি না চান, তাহলে তিস্তার পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে মোদি সরকার তাকে চাপ দেবে না। আমাদের জন্য তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। আন্তর্জাতিক আইন আমাদের পক্ষে। ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের অধিকার স্বীকৃত। ভারত (এক্ষেত্রে পশ্চিম বাংলা) পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিতে পারে না। পশ্চিম বাংলা তাই করছে। ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পানিশূন্য হচ্ছে। উল্লেখ্য, তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। সিকিম হয়ে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ারের সমভূমি দিয়ে চিলাহাটি থেকে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার উত্তর খড়িবাড়ির কাছে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। ছাতনাই থেকে এ নদী নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের সদর, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারীতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ডিমলা থেকে চিলমারীÑ এ নদীর বাংলাদেশ অংশের মোট ক্যাচমেন্ট এরিয়া প্রায় ১ হাজার ৭১৯ বর্গকিলোমিটার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনে শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ ও ৩৯ ভাগ ভারত এবং ২৫ ভাগ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত তিস্তার পানি প্রবাহের পরিমাণ বা কোন জায়গায় পানি ভাগাভাগি হবে, এরকম কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিস্তার পানির ৮০ ভাগ দুই দেশের মধ্যে বণ্টন করে বাকি ২০ ভাগ নদীর জন্য রেখে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারত সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উল্টো তিস্তার কমান্ড এরিয়া তাদের বেশি, এ দাবি তুলে বাংলাদেশ তিস্তার পানির সমানভাগ পেতে পারে নাÑ এ দাবি উপস্থাপন করেছিল। এরপর আর তিস্তার পানি বণ্টনের জট খোলেনি। এখানে বলা ভালো, বাংলাদেশ উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার ৩৫টি উপজেলায় তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে বর্ষা মৌসুমে সম্পূরক ও শুষ্ক মৌসুমে সেচ দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৭৯ সালের আগস্টে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের প্রথম ফেজ কাজের উদ্বোধন করে। এরপর ভারত ১৯৮৫ সালে তিস্তার উৎসমুখে এবং তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উজানে গজলডোবা নামক স্থানে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণ করে। এর ফলে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পটি সেচ প্রদানে অকার্যকর হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই তিস্তার পানিবণ্টনের দাবি করলেও শুধু মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে এ চুক্তিটি হয়নি। এখন তিস্তার সঙ্গে যোগ হলো আসামে সীমান্ত ‘সিল’ করে দেয়ার ঘোষণা। দুইটি বিষয়ই আমাদের জন্য স্পর্শকাতর। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে। এ সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের অনেক ‘দাবি’ মেনে নিয়েছে। এখন যদি তিস্তার পানি চুক্তি না হয়, যদি আসামে মুসলমানরা নিগৃহীত হন, তাহলে তা দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটাতে বাধ্য।
Daily Alokito Bangladesh
29.05.16

0 comments:

Post a Comment