রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

প্রধানমন্ত্রীর উক্তি, নিশা দেশাইয়ের সফর ও কিছু প্রশ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ মে সংসদে বলেছেন, এ দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অনেকে খেলতে চাইবে কিন্তু সে খেলা আমি খেলতে দেব না। প্রধানমন্ত্রী যখন এ ধরনের একটি উক্তি করেন তখন নিশা দেশাই বিসওয়াল তার ঢাকা সফর শেষ করেছেন। নিশা দক্ষিণ এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি ঢাকায় এসেছিলেন বিশেষ ‘একটি উদ্দেশ্য’ নিয়ে। তিনি দেখাও করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা ও পরে ইউএসএইডে কর্মরত জুলহাজ মান্নান ও তার ‘বন্ধু’ তনয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিশা দেশাইয়ের ঢাকা সফর সম্পর্কিত। এ ব্যাপারে তিনি মন্তব্যও করেছেন। তার মন্তব্যের মধ্যে অনেকগুলো বিষয় আছে : ১. সন্ত্রাসীগোষ্ঠী যেভাবে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তা অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই; ২. যুক্তরাষ্ট্র জুলহাজ হত্যা তদন্তের শেষ দেখতে চায় এবং ৩. জঙ্গি নির্মূলে বাংলাদেশের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। মোটাদাগে তার বক্তব্যের মধ্য থেকে এই বক্তব্যগুলোই বেরিয়ে এসেছে। এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নিশা দেশাই বিসওয়াল কি কোনো মেসেজ দিয়ে গেলেন? সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে গুপ্ত হত্যা বেড়েছে। আর তাতে সাধারণ মানুষ নন, মূলত আক্রান্ত হচ্ছেন ‘বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি’। যেমন- জুলহাজ-তনয়। এরা দু’জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পক্ষে কথা বলতেন। সমকামী আন্দোলনের মুখপত্র রূপবান পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন জুলহাজ। কিছু দিন আগে একজন পুলিশ আক্রান্ত ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন আশুলিয়ায়। দু’জন বিদেশীকে (তাভেল্লা ও কুনিও হোশি) হত্যা করা হয়েছিল। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করা এমন ব্যক্তিরাও (নিখিল) হত্যার শিকার হয়েছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক (রেজাউল করিম) যিনি ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করতেন না, সংস্কৃতিমনস্ক ছিলেন, তাকেও হত্যা করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আইএস এবং আল কায়দার স্থানীয় শাখার দায় স্বীকারের কাহিনী ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচারিত হয়েছে। তথাকথিত আল কায়দা কিংবা আইএসের জড়িত হওয়ার ‘কাহিনী’ নিয়ে নানা বিতর্ক আছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মানুষ এটা বিশ্বাস করে না। তবে বহির্বিশ্বে বিভ্রান্তি আছে। প্রচারণা আছে। যেভাবে পশ্চিমা গণমাধ্যম বাংলাদেশে আইএস আছে বলে ‘প্রমাণ’ করতে চায়, তা আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী। অনেকটা ‘চাপিয়ে দেয়ার’ মতো বিষয় হয়ে গেছে! আমার নিজের মনেও নানা প্রশ্ন আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে যখন বারবার বলে আসছেন, এ দেশে ‘হোমগ্রোন’ জঙ্গি আছে, অর্থাৎ স্থানীয় জঙ্গি, তখন আরেকজন সিনিয়র মন্ত্রী ভারতের দ্য ‘হিন্দু’ পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কী করে বলেন বাংলাদেশে আফগান ট্রেনিংপ্রাপ্ত ৮ হাজার আল কায়দা জঙ্গি রয়েছে। দুই মন্ত্রী যখন দু’ধরনের বক্তব্য দেন, তখন মানুষের মধ্যে এক ধরনের ‘কনফিউশন’ তৈরি হয়। মানুষ কোনটা বিশ্বাস করবে? বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের তথা আইএসের তথাকথিত উত্থান নিয়ে একটা ‘বক্তব্যই’ থাকা উচিত। বাংলাদেশ সরকার বারবার আইএস থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে। সেটাই সঠিক। কেন না আইএস তাদের স্ট্র্যাটেজিতে কখনও ব্যক্তিকে টার্গেট করে না। প্যারিস, ব্রাসেলস কিংবা জাকার্তায় আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংগঠন যে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছিল, তাতে ‘সন্ত্রাস সৃষ্টি’ করাই ছিল মুখ্য, ব্যক্তিকে টার্গেট করে তারা হামলা চালায়নি। অনেক ক্ষেত্রেই তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে একসঙ্গে অনেকগুলো স্থানে হামলা চালিয়েছে। বাংলাদেশে কোনো একটি হামলার ক্ষেত্রেও এমনটি হয়নি। আইএসের মুখপত্র ‘দাবিক’-এ অতিসম্প্রতি জনৈক শেখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে, যাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে আইএসের প্রধান হিসেবে। এটা যে একটা ভুয়া নাম, এটা সবাই স্বীকার করে। ফলে আজ যখন পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশে আইএস আছে, এই স্বীকারোক্তি আদায় করে নিতে চায়, তখন প্রশ্ন উঠবেই। আইএস আছে, এই যুক্তি তুলে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এক ‘যুদ্ধ’র সূচনা করেছে অনেক দেশেই। মধ্যপ্রাচ্যের পর তাদের দৃষ্টি এখন আফ্রিকার দিকে। দক্ষিণ এশিয়াও তাদের নজরে আছে। আমার বিবেচনায় তিনটি বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ, যা পরোক্ষভাবে নিশা দেশাইয়ের ঢাকা সফরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশে তথাকথিত জঙ্গি উত্থানকে কেন্দ্র করে এই তিনটি বিষয় এখন আবর্তিত হচ্ছে। ১. বাংলাদেশ ‘সোফা’ ও ‘আকসা’ চুক্তি করুক; ২. বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিক এবং ৩. জঙ্গি দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে একটি ‘যৌথ টিম’ গঠন করুক। সোফা বা ‘স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস অ্যাগ্রিমেন্ট’-সংক্রান্ত চুক্তি করার দাবি অনেক পুরনো। যুক্তরাষ্ট্র অনেক দেশের সঙ্গেই এ ধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ। এটা এক ধরনের সামরিক চুক্তিও বটে। অন্যদিকে ‘আকসা’ বা ‘অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট’ চুক্তির প্রস্তাব অতিসাম্প্রতিক সময়ের। দুটি চুক্তিরই বিশেষ ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ধরনের চুক্তির ফলে বাংলাদেশে সীমিত কিছুসংখ্যক মার্কিন সেনার স্থায়ী-অস্থায়ী উপস্থিতি নিশ্চিত হবে। এদের বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার ব্যাপারে কোনো ভিসা লাগবে না। বাংলাদেশে উপস্থিতকালে তারা যদি কোনো অপরাধ সংঘটিত করে থাকে, তাদের বাংলাদেশী আইনে বিচার করা যাবে না। গুরুতর ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধের জন্য তাদের কাউকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে তুলে দেয়াও যাবে না। চুক্তিবলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশের সামুদ্রিক বন্দরে ‘প্রোটোকল’ সুবিধা পাবে। জ্বালানি গ্রহণ করতে পারবে। এ চুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশ তার আপত্তি অব্যাহত রেখেছে। এখন তথাকথিত জঙ্গি দমনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে এসব চুক্তি স্বাক্ষর করতে ‘চাপ’ দিতে পারে। ‘দ্য গ্লোবাল কোয়ালিশন টু কাউন্টার আইএসআইএল’ নিয়েও কথা আছে। ৫৮ দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এবং আইএসবিরোধী এই জোটে বাংলাদেশ এখনও যোগ দেয়নি, যদিও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এটি মূলত ইউরোপীয় জোট। তবে কাতার, আরব আমিরাত, তুরস্ক, ওমান, সৌদি আরবের মতো দেশ আছে। ভারত কিংবা পাকিস্তান এ জোটে নেই। অন্যদিকে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ‘ইসলামিক মিলিটারি অ্যালায়েন্স টু ফাইট টেররিজম’-এ বাংলাদেশ যোগ দিয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি আরও জোরালো হয়েছে তাদের জোটে যোগ দিতে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিলে আমি অবাক হব না। তথাকথিত ‘নাইন-ইলেভেন’-এর পর যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করলে পৃথিবীর অনেক দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর জন্ম হয়, যারা স্ব স্ব দেশের প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে। উত্তর নাইজেরিয়াতে ২০০২ সালে ‘বোকো হারাম’ (আসল নাম ‘দ্য পিপল অব দ্য সুন্নিস প্রিয়েচিং অ্যান্ড জিহাদ’) নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয়েছিল, যারা এখন মালি, নাইজার, সাদ, ক্যামেরুনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ‘অপারেট’ করছে। নাইজেরিয়ার শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকলেও এই সেনাবাহিনী ‘বোকো হারাম’ দমনে ব্যস্ত। মিসরে জন্ম হয়েছে ‘আনসার বায়াত আল মাকডিস’। সিরিয়ায় রয়েছে নুসরা ফ্রন্ট। ইয়েমেনে রয়েছে আল কায়দার উপস্থিতি। এসব সংগঠনের অনেকটি আইএসের প্রতি ইতিমধ্যে আনুগত্য প্রকাশ করেছে। ইন্দোনেশিয়ায় ‘কাতিবা নুসানতারা’ আইএসের আনুগত্য স্বীকার করেছে এবং জানুয়ারিতে জাকার্তায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। আফ্রিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো একটি কমান্ড প্রতিষ্ঠা করেছে (AFRICOM)। আফ্রিকায় রয়েছে (নাইজার) ইউরেনিয়ামের মতো প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। যার অনেকটাই অনাবিষ্কৃত। মার্কিন কনট্রাকটরদের আগ্রহ এখানে বিশাল। ২৮টি আফ্রিকান দেশে US-African Command (AFRICMN) রয়েছে। এর বাইরে FINTLOCK of US Training Exercise Africa নামে যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীকে জঙ্গি দমনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। শুধু তাই নয়। ২৮টি দেশে Trans Sahara Counter Terrorism Partnership কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১৩০০ মার্কিন সৈন্য এখন নিয়োজিত রয়েছে। পাঠক লক্ষ্য করবেন লিবিয়াকে বলা হয় ‘গেটওয়ে টু আফ্রিকা’। অর্থাৎ এখান থেকে আফ্রিকাতে যাওয়া যায়। ফলে এখানে যদি (লিবিয়া) একটি বন্ধুপ্রতিম সরকার থাকে, তাহলে এখান থেকে আফ্রিকা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তখন বাংলাদেশে কী একটি ‘ক্ষেত্র’ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে, যাতে করে বাংলাদেশকে মার্কিন সামরিক প্রভাব বলয়ে আনা যায়? বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক। ভারত মহাসাগরে ক্রমান্বয়ে বৃহৎ শক্তিগুলোর এক ধরনের ‘প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র’ সৃষ্টি হয়েছে। ভারত মহাসাগরে এবং মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলে চীনের সামরিক উপস্থিতি বাড়ছে। যুগান্তরে প্রকাশিত একাধিক প্রবন্ধে আমি বিষয়টা স্পষ্ট করেছি। চীনের এক ধরনের জ্বালানি ক্ষুধার কারণে, দক্ষিণ চীন সাগর রুটের গুরুত্বের কারণে এবং একই সঙ্গে মালাক্কা প্রণালীর গুরুত্ব চীনকে এ অঞ্চলে তার উপস্থিতি বাড়াতে উৎসাহিত করেছে। চীনের আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ পরিবাহিত হয় গালফ অব এডেন এবং মালাক্কা প্রণালী দিয়ে। সৌদি আরবে (২২ ভাগ) এবং ইরান (১২ ভাগ) থেকে চীন সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করে। এর বাইরে লিবিয়া, কুয়েত, ইরাক ও ওমান থেকে ৪ ভাগ হারে তেল আমদানি করে চীন। তাই খুব সঙ্গত কারণেই ভারত মহাসাগরে চীন তার নৌবাহিনীর উপস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করেছে। পাঠকদের আরও একটি তথ্য দেই। চীন জিবুতিতে এই প্রথমবারের মতো তাদের একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে। বছরে এ জন্য চীন জিবুতি সরকারকে দেবে ২০ মিলিয়ন ডলার। শুধু তাই নয়, প্রায় ১২ বিলিয়ন অর্থ ব্যয় করে চীন জিবুতিতে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে। সমুদ্র থেকে বালি উত্তোলন করে এ বন্দরটি তৈরি করা হবে। দক্ষিণ চীন সাগরেও চীন সমুদ্র থেকে বালি উত্তোলন করে কৃত্রিম একটি দ্বীপ তৈরি করেছে। ফলে ভারত মহাসাগর ও মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলে চীনের এই তৎপরতা যুক্তরাষ্ট্র যে খুব ভালো চোখে দেখবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তার পাশে চাইছে। চীনকে এক ধরনের ঘিরে ফেলার নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়কার কথাই মনে করিয়ে দেয়। ওই সময় টার্গেট ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। তাকে ঘিরে ফেলার নীতি নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ফেলতে সময় নিয়েছিল ৪৫ বছর। আজ দৃশ্যপটে রয়েছে চীন। চীন আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বড় অর্থনীতির দেশ। ২০২৫ সালের আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে টপকিয়ে এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে চীন। সুতরাং চীনকে ভেঙে কয়েক টুকরা করার স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করা হয়েছে। চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট। আর বাংলাদেশ হচ্ছে চীনের নিকট প্রতিবেশী। সুতরাং বাংলাদেশ যে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের চিন্তায় থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশকে ‘ব্যবহার’ করে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ব্যাপারে তাদের নীতি আরও সম্প্রসারণ করতে পারে। আর তাই জঙ্গি কার্ড যে ব্যবহৃত হবে, এটাই স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্র এই ‘জঙ্গি কার্ড’ ব্যবহার করেই বাংলাদেশে ঘাঁটি গাঁড়তে চাইছে! বাংলাদেশকে তাই সতর্ক হতে হবে। কোনো ‘শক্তির’ প্ররোচনায় পা দেয়া ঠিক হবে না। বৃহৎ শক্তির প্রভাব বলয়ের বাইরে থেকে বাংলাদেশকে তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে হবে। এ জন্য যা প্রয়োজন তা হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। পরস্পরের প্রতি দোষারোপ যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তা থেকে সুবিধা নেবে তৃতীয় পক্ষ। জঙ্গিবাদ আজ বৈশ্বিক সমস্যা। এ সমস্যার ছিটেফোঁটা বাংলাদেশে লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর জন্য বৈদেশিক সহযোগিতার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। পুলিশ বিভাগে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গঠিত হয়েছে। এখন দরকার এদের প্রশিক্ষণ দেয়া, শক্তিশালী করা। এ ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা ব্যক্তিরা অন্য বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবেন না, কাজও করবেন না। সাইট ইন্টেলিজেন্সের নামে বাংলাদেশে আইএস আছে, এটা প্রচার করে একটা পক্ষ সুবিধা নিচ্ছে। তাদের ‘তৈরি ফাঁদে’ আমরা পা দিতে পারি না। যত ‘চাপ’ই আসুক না কেন, বাংলাদেশ স্বউদ্যোগেই জঙ্গিদের দমন করতে পারবে। তাই নিশা দেশাইয়ের সফরের মধ্য দিয়ে তিনি যে মেসেজই দিয়ে যান না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ উগ্র ধর্মান্ধদের কোনোদিন সমর্থন করেনি। আগামীতেও করবে না। এ ক্ষেত্রে জঙ্গি দমনে কোনো বৃহৎ শক্তির সঙ্গে আমাদের জড়িত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আফগানিস্তান আর ইরাকের দৃষ্টান্ত আমাদের সম্মুখে আছে। আমরা যেন তা ভুলে না যাই।
Daily Jugantor
09.05.16

0 comments:

Post a Comment