রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

পানি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক


ভারত নিজেদের খরাকবলিত এলাকাগুলোতে পানির চাহিদা মেটাতে নদীর গতিপথ বদলে দেওয়া পরিকল্পনা কার্যকর করতে যাচ্ছে। এটা কার্যকর করতে গঙ্গা (পদ্মা) ও ব্রহ্মপুত্রের পানি সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে ভারত। ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী উমা ভারতী গত মাসে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, ভারতের ইন্টার লিংকিং রিভার্স বা আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে পানি সরিয়ে নেওয়ার জন্য ৩০টি লিংক পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে যেকোনো সময় একটি লিংক পানি সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করবে। উমা ভারতী বিবিসিকে আরো জানিয়েছেন, আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প হচ্ছে তাঁদের অন্যতম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। উমা ভারতী জানিয়েছেন, ৩০টির মধ্যে বর্তমানে পাঁচটি লিংক নিয়ে তাঁরা এগিয়ে যাচ্ছেন। যেকোনো সময় উত্তর ও মধ্য প্রদেশের মধ্যকার কেন-বেতওয়া লিংক উদ্বোধন করা হবে। উমা ভারতীর এই বক্তব্য আমাদের জন্য অনেক চিন্তার কারণ। কেননা আন্তনদী সংযোগ নিয়ে বাংলাদেশের অনেক উৎকণ্ঠা আছে। ভারত আন্তনদী সংযোগের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে নিলে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নদ-নদীতে কোনো পানি থাকবে না। বাংলাদেশ প্রথম থেকেই আন্তনদী সংযোগের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। গত বছরের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় যে ৬৫ দফাসংবলিত যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেখানে ২১ নম্বর দফায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছিল যে ভারত আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের ব্যাপারে এমন কিছু করবে না, যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়। এখন উমা ভারতীর বিবিসিকে দেওয়া বক্তব্য কি ওই প্রতিশ্রুতিকে ভঙ্গ করল না? যৌথ ঘোষণায় যখন কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তখন তা রক্ষা করার দায়িত্ব ওই রাষ্ট্রের। ভারতের এই ‘আচরণ’ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় এবং তা দুই দেশের সম্পর্ককে একটি বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেবে। বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা এর ব্যাখ্যা চাইবে। কিন্তু শুধু ‘ব্যাখ্যা চাওয়া’ই যথেষ্ট নয়। এখানে বলা ভালো, খোদ ভারতেই এই আন্তনদী সংযোগ নিয়ে বিতর্ক আছে। ভারতের পরিবেশবাদীরা প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছেন। এ নিয়ে তাঁরা সেখানে আন্দোলন পর্যন্ত করেছেন। এখানে বলা ভালো, ভারতে আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প অর্থাৎ হিমালয় অঞ্চল থেকে উত্পন্ন নদীগুলোর পানি ৩০ খালের মাধ্যমে ভারতের খরাপীড়িত দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার এই যে মহাপরিকল্পনা, তার ইতিহাস অনেক পুরনো। ১৯৮০ সালে এই পরিকল্পনার কথা প্রথম জানা যায় এবং ২০০২ সালে বিজেপি নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরে বিচারপতি এস এইচ কাপাডিয়ার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভিমত দেন যে  পরিকল্পনাটি ভালো। তাই এটি বাস্তবায়ন এবং একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে তা মনিটর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁরা। হাইকোর্ট ৩৫ বছরের পরিবর্তে ১০ বছরের মধ্যে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেছে, ভারতের পরিবেশবাদীদের অনেকেই এই মতামতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। ভারতে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত পরিবেশবিদ বন্দনা সিভা বিজনেস টুডের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে (১৩ মার্চ ২০১৪) মন্তব্য করেছিলেন, আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক ব্যবস্থার নামান্তর মাত্র। তিনি আরো মন্তব্য করেছিলেন এভাবে, ‘It has no hydrological or ecological soundness and is just part or the corruption and construction package that has ruined India’s ecosystem and life support base. This is the same lobby that aggravated the Uttarkhand disaster with its hydrological projects.’ আন্তর্জাতিক পরিসরে পরিবেশ, পানি ব্যবস্থাপনা কিংবা জীববৈচিত্র্য নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, বন্দনা সিভা তাঁদের অন্যতম। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি আমাদের জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে মোট যে খরচ ধরা হয়েছে অর্থাৎ ৫৬০ হাজার কোটি রুপি, তা ভারতের জিডিপির ২৫ শতাংশ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে দাতাগোষ্ঠী থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হবে এবং ভারতে যাদের আয় ৪০০ থেকে ৮০০ ডলারের মধ্যে, তাদের প্রত্যেকের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ১১২ ডলার। বন্দনা জানিয়েছেন, তিনি নিজে কেন-বেতওয়ার (Ken-Betwar) এবং সারদা-যমুনা (Sharda-Jamuna) আন্তনদী সংযোগ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাতে তিনি দেখতে পেয়েছেন খরাপীড়িত এলাকায় পানি নিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর যে কথা বলা হয়, তা সত্য নয়। আমরা আরেকজন ভারতীয় পরিবেশবিদ রাজেন্দ্র সিংয়ের কথা উল্লেখ করতে পারি। রাজেন্দ্র সিং ২০০১ সালে বিখ্যাত ম্যাগসেসাই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। আর ২০১৫ সালে তিনি পেয়েছেন ‘পানির নোবেল পুরস্কার’ হিসেবে খ্যাত ‘স্টকহোম ওয়াটার প্রাইজ’। ভারতে তিনি Water Man of India হিসেবে খ্যাত। বোঝাই যায় তাঁর কর্মকাণ্ড পানি নিয়ে। আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের ব্যাপারে ভারতীয় দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে (১০ জুন ২০১৫) বলেছেন, ‘This will be disastrous for my country. It will displace a lot of people and cause undesirable effects, with floods in one side and drought on the other. River are not like roads. They have own gene pool and own life. Linkage of rivers will lead to privatisation of water resources.’ যে কথাটা বন্দনা সিভা বলেছেন, অনেকটা সেই সুরেই কথা বলেছেন ভারতের ‘ওয়াটার ম্যান’ রাজেন্দ্র সিং। এখানে যে একটা ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি কাজ করে অর্থাৎ ভারতের করপোরেট জগতের বাসিন্দারা যে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন চাচ্ছে, এটাই মোদ্দাকথা। এখানে খরাপীড়িত এলাকায় পানির প্রবাহ বাড়ানোর বিষয়টি মুখ্য নয়। পানির প্রবাহ না বাড়িয়েও খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প যে অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য, তা স্বীকার করেছেন ভারতের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সদস্য ড. মিহির শাহ। তিনি গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এই প্রকল্পের ব্যাপারে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছিলেন (ইকোনমিক টাইমস, ৭ মার্চ ২০১৩)। ভারতের Working Group or Sustainable Ground Water Management-এর পরিচালক পিএস ভিজয়শংকর (P.S. Vijashankar) একটি সেমিনারে আসামের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলেছিলেন, আসামে প্রচুর ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-উপরিভাগে পানি রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-বরাক অববাহিকায় মাথাপিছু পানির ব্যবহার সর্বোচ্চ ১৪০৫৭ কিউবিক মিটার। মাত্র এক ভাগ ভূ-উপরিভাগের (Surface Water) পানি ব্যবহৃত হয়, অথচ ৬৬ ভাগ পানি ব্যবহার করা সম্ভব। সারা ভারতে ভূ-গর্ভস্থ পানির মাত্র তিন ভাগ ব্যবহৃত হয়, অথচ ৩৫ ভাগ পানি রয়ে যায় অব্যবহৃত। এই পানি ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এখানে বলা ভালো, প্রস্তাবিত এই আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পে যেসব রাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে আসাম, সিকিম ও কেরালা এর বিরোধিতা করেছে। শুধু তামিলনাড়ু এর পক্ষে।
বলা হয়, ভারতের খরা এলাকার জন্য পানি দরকার। কিন্তু এক নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে খালের মাধ্যমে অন্য এলাকায় (দক্ষিণে) নিয়ে যাওয়া কোনো সমাধান নয়। ভারতের ভাকরা বাঁধ নিয়ে একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছিল পাঞ্জাব ও হরিয়ানা প্রদেশের জন্য ভাকরা থেকে পাওয়া পানি নয়, বরং ভূ-গর্ভস্থ পানি ও উন্নত কৃষিব্যবস্থা বেশি জরুরি। পাঞ্জাবের মোট ২০ শতাংশ এবং হরিয়ানার ৩১ শতাংশ চাষযোগ্য জমি বাঁধ নিয়ন্ত্রিত। এমনকি ৫০ বছর পর আজও সেখানকার বাস্তুহারা মানুষ কঠোর সংগ্রাম করে যাচ্ছে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুর জন্য। ওই গবেষণার ফলাফলই বলে দিচ্ছে নর্মদা বাঁধের উচ্চতা না বাড়িয়ে কিভাবে আরো বেশি পানি ও বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে। সে বিষয়ে মাথা ঘামানো দরকার। নর্মদা বাঁধসংলগ্ন অঞ্চলের বাস্তুহারা ৫০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কিভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে গুজরাট, মধ্য প্রদেশ ও মহারাষ্ট্র, যখন কিনা ওই সব রাজ্যে বাড়তি কোনো জমি নেই তাদের পুনর্বাসনের জন্য? তিহরি বাঁধের শিকার হয়েছে যারা, তারাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার। কেননা না ইউপি, না কেন্দ্র সরকার—কোনোরূপ সহানুভূতি নিয়ে এগিয়ে এসেছিল তাদের সাহায্যার্থে। এখন আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প যে শুধু বাংলাদেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তা নয়। বরং খোদ ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু ভারতের নীতিনির্ধারকরা এটা বিবেচনায় নিচ্ছেন না।
এখানে আরো একটা কথা বলা প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পটি অবৈধ। আন্তর্জাতিক আইনবিশারদ অধ্যাপক ওপেনহেইম বলেছেন, কোনো রাষ্ট্রকে নিজ ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক অবস্থা এমনভাবে পরিবর্তন করতে দেওয়া যাবে না, যার ফলে তা প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক অবস্থার কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করে। এ আলোকেই আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পটি অবৈধ। যখন কোনো রাষ্ট্র একটি অভিন্ন সম্পত্তির উন্নতি, পরিবর্তন বা ধ্বংস সাধনের জন্য কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে তখন ওই রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে কিছু নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়। আন্তর্জাতিক আইন আরো বেশি সুনির্দিষ্ট, যখন তা আন্তর্জাতিক নদী সম্পর্কিত হয়। আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের সব কটি নদীই আন্তর্জাতিক নদী। তাই এসব নদীর একতরফা পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পানি প্রত্যাহার আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য। আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহারসংক্রান্ত ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক আইন সমিতির হেলসিংকি নীতিমালার ৪ ও ৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র, অভিন্ন নদীগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় নেবে। তা অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি না করেই হতে হবে। কিন্তু ভারতের এই উদ্যোগে একটা বিষয় সুস্পষ্ট যে ভারত বাংলাদেশের ওপর এ প্রকল্পের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবেই উপেক্ষা করছে।
হেলসিংকি নীতিমালার অনুচ্ছেদ ২৯-এ বলা হয়েছে, এক অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র অপর অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্রকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিষ্কাশন অববাহিকার পানি ব্যবহারের ব্যাপারে কৃত পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করবে। ১৯৯২ সালের ডাবলিন নীতিমালার (আন্তর্জাতিক নদী ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত) ২ নম্বর নীতিতে বলা হয়েছে, পানি উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সবার অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। কিন্তু আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভারত একটি অস্বচ্ছ ও স্বেচ্ছাচারমূলক পদ্ধতিতে অগ্রসর হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জলপ্রবাহ কনভেনশনটি গ্রহণ করা হয়। এই কনভেনশনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কনভেনশনের ৬ অনুচ্ছেদে যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতার ব্যবহার নির্দিষ্টকরণে কতগুলো শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতার ব্যবহার নির্ধারণে এ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সব কটি শর্তকে একই সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে এবং সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বিবদমান দেশগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে একটি ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। জলপ্রবাহ কনভেনশনে উল্লিখিত নীতিমালার আলোকে ভারতে প্রস্তাবিত নদী সংযোগ প্রকল্পকে বিচার করলে দেখা যাবে ভারত সুস্পষ্টভাবে কনভেনশনে বিধিবদ্ধ প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করছে। এমনকি জলাভূমিবিষয়ক রামসার কনভেনশনের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলো পরস্পর পরামর্শ করবে এবং একই সঙ্গে জলাভূমির ও সেখানকার উদ্ভিদ ও প্রাণীগুলোর সংরক্ষণের স্বার্থে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নীতিমালা এবং বিধিবিধান প্রণয়ন করবে। কিন্তু আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জলাভূমিগুলোকে ধ্বংস করার নামান্তর, যা কিনা রামসার কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির ৯ অনুচ্ছেদের কথাও উল্লেখ করতে পারি। যেখানে ওই অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘উভয় পক্ষ সমতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং পারস্পরিক ক্ষতি না করার নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, সেখানে আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করা হলে, তা হবে উক্ত চুক্তির বাধ্যবাধকতা ও অঙ্গীকারের চরম লঙ্ঘন।’
এখন উমা ভারতীর বক্তব্যকে আমরা কিভাবে নেব? উমা ভারতী নিশ্চয়ই তাঁর ব্যক্তিগত মত দেননি। তিনি সরকারের সিদ্ধান্তের কথাই বিবিসিকে জানিয়েছেন। এখন ভারত সরকার যখন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে যাচ্ছে তখন স্পষ্টতই তা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে এবং মোদির ঢাকা সফরের সময় স্বাক্ষরিত যৌথ ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে অতিদ্রুত বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করা।
Daily Kalerkontho
13.06.16

0 comments:

Post a Comment