রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ নাকি নির্বাচনী ষড়যন্ত্র?

যুক্তরাষ্ট্রে অরল্যান্ডোর সমকামী ক্লাবে হত্যাকাণ্ডের রেশ এখনও ফুরিয়ে যায়নি। প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায়, টিভি চ্যানেলগুলোতে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রায় প্রতিটি দেশ থেকে সমবেদনার বার্তা পাঠানো হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজে ছুটে গেছেন অরল্যান্ডোতে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দু’জনই- হিলারি ক্লিনটন আর রোনাল্ড ট্রাম্প এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেছেন। বলা হচ্ছে, সমসাময়িক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একদিনে একটি ঘটনায় ৪৯ জন মানুষের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আগে আর কখনও ঘটেনি। ঘুরেফিরে আবারও এসেছে ৯/১১-এর ঘটনার প্রসঙ্গ। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসবাদীরা নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারে হাইজ্যাক করা প্লেন বিধ্বস্ত করিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। সন্ত্রাসবাদীদের প্রায় সবাই ছিলেন সৌদি নাগরিক ও মুসলমান। এরপর কেটে গেছে ১৪ বছর। বিশ্বজুড়ে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করলেও আজও সেই যুদ্ধের শেষ হয়নি। ঠিক এমনই একটি সময়ে ঘটল অরল্যান্ডোর হত্যাকাণ্ডটি। সবচেয়ে বড় কথা, ওমর মতিন, যে একাই এ হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করেছে, সে পুলিশের হাতে নিহত হওয়ার আগে ৯১১-এ জরুরি বার্তা পাঠিয়ে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছিল। আর এ প্রসঙ্গটিই এখন মার্কিন মিডিয়ায় ঘুরেফিরে আসছে- আইএস এ হামলার সঙ্গে জড়িত! অরল্যান্ডো হামলাকে পুঁজি করে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও সরব হয়েছেন। তিনি আবারও বলেছেন, মুসলমানদের জন্য মার্কিন অভিবাসনের দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। এর আগেও তিনি এ ধরনের দাবি তুলে বিতর্কিত হয়েছিলেন। এখন সামনে নির্বাচন। বাকি আছে মাত্র ৪ মাস। আবারও তিনি ইসলাম ধর্ম ও মুসলমান-বিদ্বেষী বক্তব্য রাখলেন। অরল্যান্ডো হত্যাকাণ্ডের পর মুসলমানদের ওপর পরোক্ষ নজরদারি বাড়ছে। এখন রমজানের সময়। আমি এখন যে এলাকায় রয়েছি, ডালাসের পশ এলাকা হিসেবে পরিচিত হাইল্যান্ডের ভিলেজে মুসলমানরা (বিভিন্ন দেশের) সাধারণত মসজিদে গিয়ে রোজা ভাঙেন, দল বেঁধে ইফতার করেন এবং দীর্ঘসময় সেখানে কোরআন পাঠে অংশ নেন। সেদিন হঠাৎ করেই দেখলাম মসজিদে পুলিশ। কড়া পাহারা। এটা শুধু মুসল্লিদের পাহারার জন্য কিনা তার কোনো জবাব নেই। দু’-একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে যখন গেছি, তখন লক্ষ করেছি মানুষ আড়চোখে তাকায়। ৯/১১-পরবর্তী সময়ের মতো পরিস্থিতি ফিরে এলো কি-না বলতে পারব না। কিন্তু স্থানীয় মুসলমানরা এক ধরনের অস্বস্তিতে থাকছেন। আগে আমি এমনটি দেখিনি। এটা সত্য, ওমর মতিন এককভাবেই এ হামলা চালিয়েছে। তবে তার সঙ্গে আইএস জঙ্গিদের সম্পর্ক ছিল কিনা কিংবা আইএস তাকে ব্যবহার করেছিল কিনা, সে প্রশ্ন হয়তো আগামী দিনে বের হবে। তবে অনেক ঘটনার খবর আমরা পাচ্ছি, যাতে করে এ হত্যাকাণ্ডটি বুঝতে সহজ হবে। এক. এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর এ ক্লাবটিতে মতিন নিয়মিত যেত। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর মাত্র ৯ দিন আগে সে ১২০০ ডলারের বিনিময়ে একটি এআর-১৫ রাইফেল কেনে, যা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। মার্কিন আইনে যে কেউ (তার বিরুদ্ধে যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ না থাকে) এ ধরনের রাইফেল কিনতে পারে। ওমর তা-ই কিনেছিল। দুই. ওমর মতিন নিজেও সমকামী ছিল। তার সাবেক স্ত্রী ব্রাজিল টিভিকে এ কথা বলেছেন। ওই ক্লাবে তার দু-একজন ‘বন্ধু’ ছিল, তারাও এটা স্বীকার করেছে। ফলে ধর্মীয় মতাদর্শের (ইসলাম সমকামিতা অনুমোদন করে না) কারণে সে সমকামী ক্লাবে হামলা চালিয়েছে- এই যুক্তি ধোপে টেকে না। তিন. এর আগে দু-দুবার এফবিআই তার সন্ত্রাসী কানেকশন নিয়ে তদন্ত করেছিল। কিন্তু তদন্তে কিছু অর্থাৎ জঙ্গি কানেকশন প্রমাণিত হয়নি। আর এফবিআইয়ের ছাড়পত্র ছিল বলেই সে এআর-১৫ রাইফেল কিনতে পেরেছিল। সাধারণত এফবিআইয়ের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া এ ধরনের অস্ত্র কেনা যায় না। চার. ওমর মতিন উগ্র মেজাজি, বদরাগি ছিল। কিন্তু প্রচণ্ড ধর্মীয় মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ ছিল, এমনটা জানা যায়নি। তার সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল একটিই কারণে- তার বদমেজাজ। সে স্ত্রীকে নিয়মিত পেটাত। তার সাবেক স্ত্রী বা তার বাবা যেসব সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তাতে তারা তার জঙ্গি কানেকশন নিয়ে কোনো কথা বলেননি। ফলে একটা প্রশ্ন থাকলই যে, এ হামলায় আদৌ আইএসের কোনো ইন্ধন ছিল কিনা? বলা ভালো, ওমর মতিন পারিবারিকভাবে আফগান সংস্কৃতির ধারক হলেও সে যুক্তরাষ্ট্রেই জন্মগ্রহণ করে। তবে তার বাবা-মা আফগানিস্তান থেকে এসেছিলেন। তার সাবেক স্ত্রীও ছিলেন আফগান-আমেরিকান। চার. সে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করত। যে কোম্পানিতে সে চাকরি করত, তার মালিক ইহুদি। ফলে একটা ইসরাইলি কানেকশনের সম্ভাবনা থেকেই গেল। পাঁচ. ওমর মতিন কি মানসিক রোগী ছিল? অন্তত তার সাবেক স্ত্রী সিতোরা ইউসুফীর একটি বক্তব্য এ ধরনের একটি সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। সিতোরা বলেছেন, মতিন মানসিকভাবে অস্থির প্রকৃতির মানুষ ছিল। সে অসুস্থ ও এক ধরনের ভয়ের মধ্যে থাকত সব সময়। তবে একজন মানসিক রোগী হিসেবে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন কিনা, তা জানা যায়নি। তার সাবেক স্ত্রী এবং তার বাবাও এ প্রসঙ্গে কিছু বলেননি। অরল্যান্ডো হত্যাকাণ্ডের পেছনে মতিনের যে ‘উদ্দেশ্যই’ কাজ করে থাকুক না কেন, এখানে নতুন করে একটি মুসলমান-বিদ্বেষী জনমত গড়ে উঠছে। ওবামা এ ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করলেও তিনি তার বক্তৃতায় ‘র‌্যাডিক্যাল ইসলামের’ কথা কেন বলেননি, এটা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ওবামার সমালোচনা করেছেন। ওবামা নিজে এবং ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনও এ ঘটনায় মুসলমান সম্প্রদায়কে অভিযুক্ত করেননি। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটল এমন এক সময় যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র ৪ মাস। নভেম্বরে সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এটা যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থিতা ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে। তারপরও দু’জন প্রার্থীর কিছু নির্বাচনী প্রচারণা বাকি রয়েছে। ট্রাম্প এসব প্রচারণায় তার আগের বক্তব্যের ব্যাপারে আরও সোচ্চার হচ্ছেন। অর্থাৎ আমেরিকায় মুসলমানদের ঢুকতে না দেয়া এবং এই দেশে মুসলমান হিসেবে যারা অভিবাসী হয়েছিলেন, তাদের বের করে দেয়া। ফলে যারা ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে’ বিশ্বাস করেন, তারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মার্কিন নির্বাচনের একটা যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন! প্রায় প্রতিটি জনমতে যখন হিলারি ক্লিনটনের সম্ভাব্য বিজয়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন ৯/১১-এর মতো একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জনমত ট্রাম্পের পক্ষে নেয়ার এটি কোনো ষড়যন্ত্র কিনা! যদিও ৯/১১-এর পরিস্থিতির সঙ্গে অরল্যান্ডো হত্যাকাণ্ডকে মেলানো যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অতীতে কখনও একসঙ্গে একই ঘটনায় একদিনে এত মানুষকে হত্যা করা হয়নি। অরল্যান্ডো হত্যাকাণ্ডের প্রায় কাছাকাছি সময়ে প্যারিসে একটি ছোট্ট সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় একজন পুলিশ অফিসার ও তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। এবং আইএস এ হত্যাকাণ্ডের দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেছে। আইএস সাধারণত ব্যক্তিকে টার্গেট করে না। কিন্তু এবার করল। আইএস ব্যাপক হত্যাকাণ্ড একসঙ্গে সংঘটিত করে। অতীতে প্যারিস ও ব্রাসেলসে তারা তা-ই করেছিল। আমি এই প্রথম দেখলাম আইএস ব্যক্তিকে টার্গেট করেছে। এবং তাদের স্বীকারোক্তিও আছে। ফলে মুসলিম-বিদ্বেষীরা প্যারিস আর অরল্যান্ডোর ঘটনাকে এক করে দেখতে চাইবে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান-বিদ্বেষী মনোভাবকে উসকে দেয়া। এটা একটা সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন এখন। কারণ হিলারি বিজয়ী হলে মুসলিম-বিদ্বেষী মনোভাব চাপা পড়ে যাবে। একটি ‘মহল’ চাচ্ছে ট্রাম্পকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে। গেল সপ্তাহে অন্তত তিনটি জনমত জরিপে হিলারি ক্লিনটনকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। ফক্স নিউজ জরিপে হিলারি এগিয়ে আছেন ৩ পয়েন্টের ব্যবধানে। রয়টার্সের জরিপে হিলারি এগিয়ে আছেন ৮ পয়েন্টের ব্যবধানে। আর কুইনিপিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপে বলা হয়েছে ৪ পয়েন্টে এগিয়ে থাকার কথা। ফলে ট্রাম্প শিবিরে একটি আতংক আছে। তারা যে একটি সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করবেন না, তা বলা যাবে না। ওমর মতিন কি তাহলে কোনো ‘শক্তি’ দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়েছিল? তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিষয়টি জানতেন। যখন মতিন এআর-১৫ রাইফেল কিনতে গিয়েছিল, তখন তার স্ত্রীও তার সঙ্গে ছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেন না কেন? মতিন যে নিরাপত্তা সংস্থায় (৪েঝ) কাজ করত, তারা যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির হয়ে কাজ করে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে কাজ করা এক ব্যক্তি, যাকে এফবিআই দু’দুবার ‘ক্লিয়ার’ করেছে, তার পক্ষে একা কী করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব? বাস্তবতা হচ্ছে, ওই ঘটনায় পুলিশ তাকে হত্যা করে। ফলে পুরো ঘটনা কোনোদিনও জানা যাবে না। ৯/১১ নিয়ে যে এক ধরনের ধোঁয়াশা আছে, অরল্যান্ডোর ঘটনা নিয়েও এক ধরনের ধোঁয়াশা থেকে যাবে। মানুষ প্রকৃত সত্য জানতে পারবে না। তবে ষড়যন্ত্রকারীরা কতটুকু সফল হতে পারবে, সেটাই প্রশ্ন এখন। অরল্যান্ডোর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও যে প্রশ্নটি জড়িয়ে আছে তা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র কেনার ব্যাপারে কোনো কড়াকড়ি ব্যবস্থা আরোপ করা উচিত কি-না? কারণ যে কেউ এ ধরনের অস্ত্র কিনতে পারে, যদি তার কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকে। দামও যে খুব বেশি, তাও নয়। এক তথ্য মতে যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৫০ লাখ এআর-১৫ রাইফেল সাধারণ মানুষের কাছে আছে। এসব রাইফেল কি নিজেদের রক্ষার কাজেই সব সময় ব্যবহার হয়? নিশ্চয়ই না। এসব অস্ত্র মানুষ হত্যায় ব্যবহৃত হয়, যেমনটি ব্যবহার করেছে মতিন অরল্যান্ডোতে। অস্ত্রবাজদের হাতে বছরে মারা যান প্রায় ১৩ হাজার নিরীহ মানুষ। অরল্যান্ডোর হত্যাকাণ্ডের পর নতুন করে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি উঠে এসেছে। ওবামা নিজে এটি চান। হিলারি ক্লিনটন নিজেও বলেছেন, তিনিও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চান। কংগ্রেসেও বিষয়টি উঠেছে। কিন্তু অস্ত্র ব্যবসায়ীদের লবি এত শক্তিশালী যে তারা কংগ্রেসম্যানদের নিয়ন্ত্রণ করেন। ফলে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন চালু হবে কিংবা অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, এ বিশ্বাস রাখতে পারছি না। অরল্যান্ডো হত্যাকাণ্ড একটি দুঃখজনক ঘটনা। কোনো সভ্য দেশে এভাবে এত মানুষকে হত্যা করা হয় না। দুঃখজনক হলেও সত্য, সারা বিশ্বে আইএসের উত্থান যখন মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একটা ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি করেছে, তখন একজন মুসলমান ওমর মতিন কর্তৃক এত মানুষ হত্যা এবং নিজেকে আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করা, আবার নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানবিরোধী একটা শক্ত মনোভাবের জন্ম দেবে। ৯/১১-এর ঘটনাবলীর পর মুসলমানরা যখন ধীরে ধীরে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পেরেছে, ঠিক তখনই ঘটল অরল্যান্ডোর ঘটনা। সামনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনে নির্বাচকমণ্ডলীকে যে এ ‘সেন্টিমেন্ট’ প্রভাবিত করবে, এটাই স্বাভাবিক। তারপরও কথা থেকে যায়- ‘মুসলমানবিরোধী’ এ মনোভাবকে পুঁজি করে ট্রাম্প যদি নির্বাচনে বিজয়ী হন (?), তাহলে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হবে একটি দুঃখজনক ঘটনা। এতে করে বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ইমেজ সংকটের মুখোমুখি হবে। যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়বে। আর নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হবে। সুতরাং অরল্যান্ডোর ঘটনাবলী দ্রুত মানুষ ভুলে যাবে, এটা মনে করার কারণ নেই। ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র Daily Jugantor 19.06.16

0 comments:

Post a Comment