রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্নায়ুযুদ্ধের ছায়া

 এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধের ছায়া পড়তে শুরু করেছে। এক সময় বিশেষ করে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে ইউরোপে স্নায়ুযুদ্ধের বিস্তার লাভ করেছিল। সেই স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। আজ ২১ বছর পর স্নায়ুযুদ্ধের নতুন এক রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। আমার সাম্প্রতিক ভিয়েতনাম সফর, জি-৭ সম্মেলনে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ভূমিকার সমালোচনা, সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত সাংগ্রিলা সংলাপে চীনের হুশিয়ারি এবং সর্বশেষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের সময় ভারতের এনএসজিতে (বিশ্বের পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী) অন্তর্ভুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রমাণ করে নতুন করে এক স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া তথা প্যাসিফিক অঞ্চলে। এখানে স্পষ্টতই চীনের বিরুদ্ধে একটি শক্ত অ্যালায়েন্স গড়ে তুলতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে ভারতকেও পেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে নিঃসন্দেহে এবারকার ভিয়েতনাম সফর ছিল গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের সঙ্গে তার সীমান্তবর্তী অনেকগুলো দেশের (ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, তাইওয়ান) বিরোধ আছে। এমনকি চীনের কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরে তার যুদ্ধজাহাজ পর্যন্ত পাঠিয়েছিল। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের সঙ্গে একটি যৌথ নৌ-মহড়ায়ও অংশ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তার ভিয়েতনাম সফর এবং ভিয়েতনামের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এ কথাই প্রমাণ করে যে, ভিয়েতনামকে যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে ‘তৈরি’ করছে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে স্ট্র্যাটেজি অর্থাৎ চীনের বিরুদ্ধে একটি বলয় তৈরি করা, তাতে ভিয়েতনাম এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম পার্টনার। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে বাদ দিয়ে ভিয়েতনামকে সঙ্গে নিয়ে টিপিপি বা ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি করেছে। ভিয়েতনাম এখন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড পার্টনার। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে শতকরা ১ হাজার ২০০ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৬ সালের মার্চ মাসে রফতানি করেছিল ১ হাজার ৭৩৬ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, অথচ আমদানি করেছিল ৯ হাজার ৯৩১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। আর ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৩০ হাজার ৯২১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার (রফতানি ৭ হাজার ৭১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ৩৭ হাজার ৯৯৩ মিলিয়ন ডলার)। ২০০৭ সালে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। ওবামা নিজেই বলেছিলেন, ভিয়েতনাম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কেন্দ্রবিন্দু। ফলে ওবামার ভিয়েতনাম সফর শুধু সাধারণ একটি সফর ছিল না। একদিকে চীনের বিরুদ্ধে সামরিক ও অর্থনৈতিক বলয় সৃষ্টি করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করছে। আর এ মহাপরিকল্পনার অংশ ছিল ওবামার এ সফর। এখানে বলা ভালো, চীনের বিরুদ্ধে একটি সামরিক বলয় তৈরি করার অংশ হিসেবেই দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনসহ একাধিক দেশের সঙ্গে সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রকে পাঁচটি সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ফিলিপাইন এবং অতি সম্প্রতি ভারত দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের নৌ-ইস্টার্ন কমান্ডের চারটি গাইডেড মিসাইল সজ্জিত যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এ জাহাজগুলো দক্ষিণ চীন সাগর ও উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। এর অর্থ পরিষ্কারÑ এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিরোধী যে নীতি, তাতে ভারতকেও পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে আমরা ভারত মহাসাগরে ভারতীয় নৌ-স্ট্র্যাটেজি নিয়ে লিখেছি। ভারত এ অঞ্চলে অন্যতম নৌশক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর তারই অংশ হিসেবেই ভারত এ প্রথমবারের মতো তাদের ইস্টার্ন কমান্ডের চারটি যুুদ্ধজাহাজকে এ অঞ্চলে মোতায়েন করল। যদিও দক্ষিণ চীন সাগরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে ভারতের স্বার্থ রয়েছে। ভারত ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তি করে এ অঞ্চলে তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এখন ভিয়েতনামের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ৩২০ কোটি ডলারের ছয়টি ইলেকট্রিক সাবমেরিন বিক্রির যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত এ অঞ্চলে নতুন করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দেবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ায় স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে দক্ষিণ কোরিয়া এ সিদ্ধান্তটি নিল। তবে চীনে আধা ঘণ্টারও কম সময়ে আঘাত হানতে সক্ষম এমন হাইপারসনিক গ্লিড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও মোতায়েন করা হয় সেখানে। চীন বিষয়গুলোকে খুব সহজভাবে দেখছে না। এতে করে এ অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বাড়বে। সর্বশেষ ওবামার সফর এতে একটি নতুন মাত্রা এনে দেবে। এখানে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। দক্ষিণ চীন সাগরের স্ট্র্যাটেজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। আগামী দিনে এ অঞ্চলের রাজনীতির উত্থান-পতন বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। প্রায় ৩৫ লাখ বর্গকিলোমিটারজুড়ে রয়েছে চীন সাগরের বিস্তৃতি। এ অঞ্চলটি চীনের মূল ভূখ-ের দক্ষিণে, ফিলিপাইনের পশ্চিমে, মালয়েশিয়ার উত্তরে, ব্রুনাইয়ের উত্তর-পশ্চিমে, ইন্দোনেশিয়ার উত্তর এবং ভিয়েতনামের পূর্বে অবস্থিত। এ অঞ্চলের গুরুত্ব বেড়েছে এ কারণে যে, দক্ষিণে চীন সাগরে প্রায় ২৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রয়েছে এবং গ্যাস রয়েছে ২৫ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ঘনমিটার থেকে ৫৬ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ঘনমিটার। চীনের প্রচুর ‘জ্বালানি সুধা’ রয়েছে। চীনের অর্থনীতিকে সঠিক পথে চলতে প্রচুর জ্বালানি দরকার। এক্ষেত্রে এ অঞ্চলে যদি চীনের কর্তৃত্ব থাকে, তাহলে চীন তার জ্বালানি চাহিদা এখান থেকে মেটাতে পারবে। এ সমুদ্রপথটি পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত সমুদ্রপথ। এ কারণে এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে। পৃথিবীর সমুদ্রপথে যত বাণিজ্য হয়, তার এক-তৃতীয়াংশ হয় এ পথে। চীন জাপান, কোরিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ায় যাওয়ার বাণিজ্যিক রুট হিসেবে এ পথকে ব্যবহার করে। দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত স্প্রাটলি, প্যারাসেল ও টনকিন উপসাগরে অবস্থিত কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে আশপাশের দেশ বিশেষ করে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনস, তাইওয়ান ও মালয়েশিয়ার সঙ্গেই চীনের বিরোধ। সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ অঞ্চলের অর্থাৎ দক্ষিণ চীন সাগরের গুরুত্ব বেড়েছে একাধিক কারণে। শুধু চীনকে ‘ঘিরে ফেলা’ কিংবা চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে একটি ‘ঐক্য’ করার পাশাপাশি জাপানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকির মোকাবিলা করা, এ সাগর দিয়ে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করার ব্যাপারে মার্কিনি স্বার্থ রয়েছে। এর উপরে রয়েছে এ এলাকার তেল ও গ্যাস সম্পদের ওপর মার্কিনি বহুজাতিক কোম্পানির লোলুপ দৃষ্টি। ফলে এ অঞ্চলটি যে আগামী দিনের প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব ও প্রভাব বলয় বৃদ্ধি করতে আজ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, জাপান, এমনকি ভারতও তৎপর। যুক্তরাষ্ট্র এ দেশগুলোকে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করছে। এটি বিশ্বের বড় সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটের একটি। বিশ্ববাণিজ্যের ৩২ ভাগ এ পথ দিয়ে প্রবাহিত হয়। চীনের মূল ভূখ-ের সঙ্গে এটি সংযুক্ত নয়। মূল ভূখ- থেকে ১ হাজার নটিক্যাল দূরে এ দ্বীপগুলো অবস্থিত। জাপান এ রুটকে ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল আমদানি করে এবং ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যিক রুট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। জাপান এ দ্বীপগুলোর নাম দিয়েছে সেনকাকু, যা চীনের কাছে পরিচিত দিয়াওইউ নামে। ঐতিহাসিকভাবে চীনের শিও হান রাজবংশের কর্তৃত্ব অনুযায়ী চীন এ অঞ্চলের মালিকানা দাবি করে এলেও আশপাশের দেশগুলো তা মানতে নারাজ। জাপানের নিজস্ব কোনো তেল ও গ্যাস নেই। মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর দেশটি পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল। জাপান দৈনিক ১০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল এ সামুদ্রিক পথটি ব্যবহার করে আমদানি করে থাকে। এ অঞ্চলের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব থাকায় চীনও এ অঞ্চলে নতুন করে একটি কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়েছে। সেখানে যুদ্ধবিমান মোতায়েনের জন্য বড় বড় রানওয়ে তৈরি করছে। মিসাইল ব্যাটারি স্থাপন করেছে। এমনকি আগামীতে এখানে পারমাণবিক সাবমেরিন যাতে ‘ডক’ করতে পারে, সে ব্যবস্থাও পাকাপাকি করেছে চীন। ফলে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে একটি আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র এ আতঙ্ককে ব্যবহার করছে তার স্বার্থে। এরই মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরের এ বিরোধটি জাতিসংঘের সামুদ্রিক বিবাদ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালে উত্থাপিত হয়েছে। ফিলিপাইন এর উদ্যোক্তা। তবে চীন এ শুনানিতে অংশ নেয়নি। চীন আদালতের কর্তৃত্ব মানতে চাইছে না। ফলে বিবাদ নিষ্পত্তি নিয়ে একটি প্রশ্ন থেকেই গেছে। দক্ষিণ চীন সাগরের এ বিরোধ যখন অনিষ্পন্ন, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভিয়েতনামের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলেন। এর ফলে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার অস্ত্র আমদানি শুরু করবে, যা কিনা এ অঞ্চলে এক ধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্ম দেবে। অতীতে চীন-ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমরা জানি, ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে সেই যুদ্ধের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩ সপ্তাহ। তখন চীনের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামকে সমর্থন করেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। আজ যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামকে ব্যবহার করছে চীনের বিরুদ্ধে। প্রেক্ষাপট এক। চীন এ অঞ্চলের তথা বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম একটি ফ্যাক্টর। অর্থনৈতিক তথা সামরিক দিক দিয়ে চীন অন্যতম একটি শক্তি। তাই ঘুরেফিরে আসছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ববর্তী ‘কনটেইনমেন্ট থিওরি’, অর্থাৎ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঘিরে ফেলা ও সমাজতন্ত্রের পতন ঘটানোর এ দীর্ঘ ৪৬ বছর লেগেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙে ফেলতে। আজ চীনকে নিয়ে শুরু হয়েছে ‘খেলা’। চীনের পতন ঘটিয়ে চীনকে ‘কয়েকটি চীনা রাষ্ট্রে’ পরিণত করার লক্ষ্যে নতুন করে ‘কনটেইনমেন্ট থিওরি’ ব্যবহৃত হচ্ছে! সে কারণেই একদিকে ভিয়েতনাম (সেই সঙ্গে ফিলিপাইন, তাইওয়ান, জাপান), অন্যদিকে ভারত আজ ‘মার্কিনি বন্ধু’, মার্কিনি স্ট্র্যাটেজির অংশ তারা। খুব সঙ্গত কারণেই এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল আগামী দিনে প্রত্যক্ষ করবে ‘নয়া স্নায়ুযুদ্ধ’র এক নয়া রূপ! আর এই নয়া স্ট্র্যাটেজিক অ্যালায়েন্সে ভারত পালন করতে যাচ্ছে একটি বড় ভূমিকা। যুক্তরাষ্ট্র সম্মতি দিয়েছে বিশ্বের পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তির। (৪৮ দেশ এর সদস্য। চীনের আপত্তি আছে ভারতের ব্যাপারে)। মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম বা এমটিসিতে ভারত ঢুকতে চায়। নীতিগতভাবে তাতে সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এতে অত্যাধুনিক মিসাইল টেকনোলজি পাবে ভারত। ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনতে চায় এফ-১৬, এফ-১৮ জঙ্গি বিমান। এটা স্পষ্ট যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক এখন অনেক উষ্ণ। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যে স্ট্র্যাটেজি তাতে ভারত পালন করতে যাচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। চীনের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর অ্যালায়েন্স গড়ে তুলতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। ওবামার ভিয়েতনাম সফর কিংবা মোদির ওয়াশিংটন সফর মূলত সবই একই সূত্রে গাঁথা। তাই আগামী দিনে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের রাজনীতির ব্যাপারে আগ্রহ থাকবে অনেকের। এ অঞ্চলের রাজনীতি, বহিঃশক্তির ইন্ধন নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করতে পারে। হ Daily Alokito Bangladesh 26.06.16

0 comments:

Post a Comment