প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শিক্ষা খাত ও প্রযুক্তি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। শুধু শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বরাদ্দের পরিমাণ ৫২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। বরাদ্দের হার বিবেচনায়ও গেল ১০ বছরের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ। শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ একসঙ্গে থাকলেও আগামী অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে ১১ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ২৬ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ২২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। মোট বরাদ্দ ৪৯ হাজার ৯ কোটি টাকা। অথচ চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে অর্থের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। এখন শিক্ষা খাতে এ ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। অর্থাৎ এ বিপুল ব্যয় বরাদ্দ আমাদের উচ্চশিক্ষার মানকে কতটুকু উন্নত করতে পারবে? আমি যদি লন্ডনের বিখ্যাত ইকোনমিস্ট পত্রিকার ‘ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ এর তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করি, তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের মাঝে ৪৭ ভাগ বেকার। একমাত্র আফগানিস্তান বাদে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার বেশি। শ্রীলঙ্কায় যেখানে এই হার মাত্র ৭ ভাগ, নেপালে ২০ ভাগ, পাকিস্তানে ২৮ আর ভারতে ৩৩ ভাগ, সেখানে বাংলাদেশে এ হার ৪৭ ভাগ। এটা নিঃসন্দেহে একটা উদ্বেগজনক বিষয়। যেখানে প্রতি বছর ১৩ থেকে ১৬ লাখ জনশক্তি চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে, সেখানে বিভিন্ন কারণে (রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অন্যতম) এদেশে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে বেকারত্ব। এ বেকারত্বের মাঝে আবার আছে কিছু ‘ছায়া বেকারত্ব’। এদের দেখা যায় না বটে কিংবা কোনো পরিসংখ্যানেও এরা আসে না। কিন্তু ছোটখাটো, অর্ধবেলা কাজ করে এরা জীবিকা নির্বাহ করছে।
আমরা দেশে এরই মধ্যে ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১০টির মতো। সব মিলিয়ে ১৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয় এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানসম্মত দক্ষ গ্রাজুয়েট আমরা তৈরি করেছি? এর জবাব অত্যন্ত হতাশাজনক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখন অনেকটা সার্টিফিকেটসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ ছাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় পড়াশোনা করে। কিন্তু এখানে কী আদৌ পড়াশোনা হয়? শত শত কলেজে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। ঢাকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা কিংবা ইউজিসির কর্তাব্যক্তিরা জানেন না, এ অনার্স কোর্স খুলে শত শত শিক্ষকের জন্য একটা ‘ব্যবসার’ সুযোগ করে দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়! আমি অনেক কলেজের খবর জানি, সেখানে আদৌ কোনো ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা কলেজে শিক্ষাদানের পরিবর্তে বাসায় ব্যাচের পর ব্যাচ ‘প্রাইভেট’ পড়ান। অথচ ওই শিক্ষকের কালেজে থাকার কথা। অনার্স পর্যায়ে কোনো ছাত্র প্রাইভেট পড়ে অথবা শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন, এটা আমাদের জমানায় আমরা না শুনলেও এটা হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সরকারি কলেজগুলোর একটি বাস্তব চিত্র। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আসেন, ভিসি যান; কিন্তু সংস্কার কেউ করেন না। এটা এখন মূলত একটি সার্টিফিকেট বিতরণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ভর্তি হয়ে চার বছর পর মেলে একখানা সার্টিফিকেট। ক্লাস না করে, সংসারধর্ম পালন করে; কোনো টেক্সট বই না পড়েও যে একখানা অনার্স সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর বড় উদাহরণ। এ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ই দেশে উচ্চ শিক্ষায় বড় অংশের বেকারত্ব সৃষ্টি করছে। দুঃখ লাগে, শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি এদিকে পড়েনি। তিনি আদৌ ভেবেছেন কিনা, তাতেও রয়েছে আমার সন্দেহ।
একুশ শতকে একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরকে শক্তিশালী করতে হবে। সনাতন শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি জোর দিতে হবে প্রযুক্তিগত তথা আইটিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। এ আইটিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা একদিকে যেমন বেকার সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা রাখবে, ঠিক তেমনি বহির্বিশ্বে মানবসম্পদের একটা সুষ্ঠু ব্যবহারও হবে। আর তাই শিক্ষার মাধ্যমিক স্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে, সিলেবাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে এবং শিক্ষা কাঠামোতেও আনতে হবে পরিবর্তন। এজন্যই গ্রাম পর্যায়ে স্কুল বাড়িয়ে, সরকারি অনুদান বাড়িয়ে প্রতিটি স্কুলকে মানবসম্পদ গড়ার এক একটি ‘কারখানা’ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সিঙ্গাপুর এ কাজটি করেছিল বিধায়, ছোট এই দেশটি আজ উন্নয়নশীল বিশ্বে একটি আদর্শ। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে, আমরা এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছি কম। শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। তাতে উপকৃত হয়েছে কারা? বেতন খাতেই তো চলে যায় পুরো টাকা। সরকারি কলেজগুলোতে অবকাঠামো খাতে কিছু উন্নয়ন হয়। কিন্তু এখানে মানসম্মত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন না কেউ। আর শিক্ষকরা এখন গুরুত্ব দেন প্রাইভেট পড়ানোর ওপর। মানসম্মত শিক্ষা তাদের কাছে মুখ্য নয়। এসব দেখারও যেন কেউ নেই। অর্থমন্ত্রী যখন নতুন বাজেট উপস্থাপন করলেন, তখন এ কথাটাই আবার মনে হলো। নিয়ম রক্ষার্থে তিনি শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়েছেন। কিন্তু যে প্রশ্নটি ওঠে, তা হচ্ছে এ বিশাল ব্যয় দিয়ে আমরা উচ্চশিক্ষার কতটুকু মানোন্নয়ন করতে পারব? বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় গবেষণা, আইটি সেক্টরের উন্নয়নÑ এ বরাদ্দ দিয়ে আদৌ সম্ভব নয়। কেননা এ অর্থের মাঝে ২২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় হবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পেছনে। আর ২৬ হাজার ৮৪৭ কোটি (নির্দিষ্ট) টাকা ব্যয় হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পেছনে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য যে বরাদ্দ, তাতে আমাদের উৎফুল্লিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা এ টাকার খুব সামান্যই ব্যয় হয় উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের মাঝে একটা অংশ বরাদ্দ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য। ২০০১-০২ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৯৩.৫৭ কোটি টাকা, আর ২০১০-১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১১০২.২৪ কোটি টাকা। জাতীয় বাজেটের মাত্র ০.৭৫ ভাগ বরাদ্দ থাকে শিক্ষা খাতে (২০০১-০২)। এ পরিসংখ্যান বেড়েছে ০.৮৪ ভাগ ২০১০-১১ সালে। আবার যদি শুধু শিক্ষা খাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বরাদ্দের দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে, এ বরাদ্দ মাত্র ৭.৮৫ ভাগ (২০০১-০২) থেকে ৮.২২ ভাগ (২০১০-১১)। আগামী অর্থবছরে এ হার খুব বেড়েছে তা নয়। অর্থাৎ পরিসংখ্যানই বলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। সাম্প্রতিক শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে, বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। যদিও তুলনামূলক বিচারে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। তারপরও কথা থেকে যায়। রাষ্ট্রের পক্ষে এর চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নয়। এখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ভেবে দেখতে হবে, কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় বাড়ানো যায় এবং সরকারের ওপর পূর্ণ নির্ভরশীলতা কমানো যায়। এখানে আরও একটা বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন আর তা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে টাকা বরাদ্দ করা হয়, তার খুব কম অংশই ব্যয় হয় গবেষণার কাজে। বরাদ্দকৃত টাকার একটি সিংহভাগ চলে যায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, উপাচার্য মহোদয়রা উন্নয়ন খাতে কিংবা গবেষণায় যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, সে টাকা নতুন শিক্ষকদের বেতন দিতে ব্যয় করেছেন। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দলীয় কোটায়, স্থানীয় কোটায় অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। কিছু দিন আগে একটি জাতীয় দৈনিক ৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের ওপর একটি প্রতিবেদন ছেপেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পরিণত হয়েছে পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি নিজের মেয়ে, ভাই, আপন ভায়রা, শ্যালিকার মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়েকে শিক্ষক তথা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে একটা রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন। এ প্রবণতা প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে। অভিযোগ আছে, জাহাঙ্গীরনগর এরই মধ্যে একটি পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে! ফলে অতিরিক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। উন্নয়ন বাজেট থেকে টাকা এনে শিক্ষক তথা কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। একটা পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে। ২০১১-১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্জুরি কমিশন (বিমক) কর্তৃক বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২২.৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬৫.১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে শুধু শিক্ষকদের বেতন দিতে। বিমক যে টাকা বরাদ্দ করে, তা দিয়ে বেতন, পেনশন, সাধারণ খরচ, শিক্ষা খরচ, যানবাহন মেরামত ও মূলধনের চাহিদা মেটানো হয়। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বেতন পরিশোধের পর যা থাকে, তা দিয়ে অন্য কিছু করা আর সম্ভব হয় না। ছাত্রদের আবাসিক সমস্যার সমাধান হয় না। তাদের ন্যূনতম চাহিদাও মেটাতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরও খারাপ। তারা অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের পেনশন দিতে পারে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। একুশ শতকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুরোপুরিভাবে সরকারি অর্থে পরিচালিত হবে, এ বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বাংলাদেশ একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি কল্যাণকামী অর্থনীতিও নয়। অর্থাৎ পশ্চিম ইউরোপের কোনো কোনো রাষ্ট্রে (যেমন জার্মানি) কিংবা নরডিকভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে রাষ্ট্র সব নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি। ওইসব রাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা একদম ফ্রি। আমরা সেখানে পড়াশোনা করেছি কোনো রকম টিউশন ফি ছাড়াই (শুধু ছাত্র সংসদের জন্য কিছু অর্থ দিতে হয়)। স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরিভাবে ফ্রি না হলেও বেকার ভাতা সেখানে রয়েছে। জার্মানি বা সুইডেনের অর্থনীতির পক্ষে সম্ভব সাধারণ নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি সে পর্যায়ে নেই। তবে যে পর্যায়ে রাষ্ট্র শিক্ষা খাতকে প্রমোট করে, তা ঠিক আছে। রাষ্ট্র শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ দেবে। তবে এখানে উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে।
একুশ শতকে এসে একটা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর করে চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব আয় বাড়াতে হবে। ছাত্র বেতন না বাড়িয়েও আয় বাড়ানো যায়। এজন্য কতগুলো বিকল্প নীতিনির্ধারকরা ভেবে দেখতে পারেন। প্রয়োজন পিপিপি অথবা বেসরকারি খাতকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা। যেমন ব্যবসা প্রশাসন, অর্থনীতি, প্রযুক্তিবিদ্যা, ফার্মেসিতে বেসরকারি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। বেসরকারি পুঁজিতে ল্যাব হতে পারে, ছাত্রাবাস নির্মিত হতে পারে, ট্রেনিং প্রোগ্রাম হতে পারে। বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী রয়েছেন। প্রয়োজন একটি নীতি প্রণয়ন ও যোগাযোগ। একই সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেকেন্ড ক্যাম্পাস কিংবা সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম (শুধু ব্যবসা প্রশাসন কোর্সই নয়) চালু করে তাদের আয় বাড়াতে পারে। প্রতিটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় এ উদ্যোগ নিতে পারে। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা তেজগাঁওয়ে অবস্থিত টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ করতে পারেন। আর সে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে দক্ষ জনশক্তি পেতে পারেন বড় বড় গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। গার্মেন্টের পর আমাদের একটা সম্ভাবনার খাত হচ্ছে ওষুধ শিল্প। প্রতিটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়েই ফার্মেসি, বায়োটেকনোলজি বিভাগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানিগুলো বড় বিনিয়োগ করতে পারে। মোট কথা, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সরকারি অর্থেই বিশ্ববিদ্যালয় চলবে। কিন্তু এখানে বিনিয়োগে বেসরকারি খাতকে আমরা উৎসাহিত করতে পারি। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে বেশ ক’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ভালো শিক্ষকও রয়েছেন। উদ্যোক্তারা যদি সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন, তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগে করবেন না কেন? আসলে এ জন্য যা দরকার, তা হচ্ছে সুস্পষ্ট একটি নীতিমালা। বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা যায় না। দলবাজ উপাচার্যরা এটা ব্যবহার করবেন তাদের স্বার্থে। দলবাজ শিক্ষকের সংখ্যা বাড়বে; কিন্তু দক্ষ জনশক্তি বাড়বে না।
Daily Alokito Bangladesh
12,06.16
আমরা দেশে এরই মধ্যে ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১০টির মতো। সব মিলিয়ে ১৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয় এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানসম্মত দক্ষ গ্রাজুয়েট আমরা তৈরি করেছি? এর জবাব অত্যন্ত হতাশাজনক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখন অনেকটা সার্টিফিকেটসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ ছাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় পড়াশোনা করে। কিন্তু এখানে কী আদৌ পড়াশোনা হয়? শত শত কলেজে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। ঢাকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা কিংবা ইউজিসির কর্তাব্যক্তিরা জানেন না, এ অনার্স কোর্স খুলে শত শত শিক্ষকের জন্য একটা ‘ব্যবসার’ সুযোগ করে দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়! আমি অনেক কলেজের খবর জানি, সেখানে আদৌ কোনো ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা কলেজে শিক্ষাদানের পরিবর্তে বাসায় ব্যাচের পর ব্যাচ ‘প্রাইভেট’ পড়ান। অথচ ওই শিক্ষকের কালেজে থাকার কথা। অনার্স পর্যায়ে কোনো ছাত্র প্রাইভেট পড়ে অথবা শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন, এটা আমাদের জমানায় আমরা না শুনলেও এটা হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সরকারি কলেজগুলোর একটি বাস্তব চিত্র। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আসেন, ভিসি যান; কিন্তু সংস্কার কেউ করেন না। এটা এখন মূলত একটি সার্টিফিকেট বিতরণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ভর্তি হয়ে চার বছর পর মেলে একখানা সার্টিফিকেট। ক্লাস না করে, সংসারধর্ম পালন করে; কোনো টেক্সট বই না পড়েও যে একখানা অনার্স সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর বড় উদাহরণ। এ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ই দেশে উচ্চ শিক্ষায় বড় অংশের বেকারত্ব সৃষ্টি করছে। দুঃখ লাগে, শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি এদিকে পড়েনি। তিনি আদৌ ভেবেছেন কিনা, তাতেও রয়েছে আমার সন্দেহ।
একুশ শতকে একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরকে শক্তিশালী করতে হবে। সনাতন শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি জোর দিতে হবে প্রযুক্তিগত তথা আইটিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। এ আইটিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা একদিকে যেমন বেকার সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা রাখবে, ঠিক তেমনি বহির্বিশ্বে মানবসম্পদের একটা সুষ্ঠু ব্যবহারও হবে। আর তাই শিক্ষার মাধ্যমিক স্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে, সিলেবাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে এবং শিক্ষা কাঠামোতেও আনতে হবে পরিবর্তন। এজন্যই গ্রাম পর্যায়ে স্কুল বাড়িয়ে, সরকারি অনুদান বাড়িয়ে প্রতিটি স্কুলকে মানবসম্পদ গড়ার এক একটি ‘কারখানা’ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সিঙ্গাপুর এ কাজটি করেছিল বিধায়, ছোট এই দেশটি আজ উন্নয়নশীল বিশ্বে একটি আদর্শ। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে, আমরা এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছি কম। শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। তাতে উপকৃত হয়েছে কারা? বেতন খাতেই তো চলে যায় পুরো টাকা। সরকারি কলেজগুলোতে অবকাঠামো খাতে কিছু উন্নয়ন হয়। কিন্তু এখানে মানসম্মত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন না কেউ। আর শিক্ষকরা এখন গুরুত্ব দেন প্রাইভেট পড়ানোর ওপর। মানসম্মত শিক্ষা তাদের কাছে মুখ্য নয়। এসব দেখারও যেন কেউ নেই। অর্থমন্ত্রী যখন নতুন বাজেট উপস্থাপন করলেন, তখন এ কথাটাই আবার মনে হলো। নিয়ম রক্ষার্থে তিনি শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়েছেন। কিন্তু যে প্রশ্নটি ওঠে, তা হচ্ছে এ বিশাল ব্যয় দিয়ে আমরা উচ্চশিক্ষার কতটুকু মানোন্নয়ন করতে পারব? বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় গবেষণা, আইটি সেক্টরের উন্নয়নÑ এ বরাদ্দ দিয়ে আদৌ সম্ভব নয়। কেননা এ অর্থের মাঝে ২২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় হবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পেছনে। আর ২৬ হাজার ৮৪৭ কোটি (নির্দিষ্ট) টাকা ব্যয় হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পেছনে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য যে বরাদ্দ, তাতে আমাদের উৎফুল্লিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা এ টাকার খুব সামান্যই ব্যয় হয় উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের মাঝে একটা অংশ বরাদ্দ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য। ২০০১-০২ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৯৩.৫৭ কোটি টাকা, আর ২০১০-১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১১০২.২৪ কোটি টাকা। জাতীয় বাজেটের মাত্র ০.৭৫ ভাগ বরাদ্দ থাকে শিক্ষা খাতে (২০০১-০২)। এ পরিসংখ্যান বেড়েছে ০.৮৪ ভাগ ২০১০-১১ সালে। আবার যদি শুধু শিক্ষা খাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বরাদ্দের দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে, এ বরাদ্দ মাত্র ৭.৮৫ ভাগ (২০০১-০২) থেকে ৮.২২ ভাগ (২০১০-১১)। আগামী অর্থবছরে এ হার খুব বেড়েছে তা নয়। অর্থাৎ পরিসংখ্যানই বলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। সাম্প্রতিক শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে, বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। যদিও তুলনামূলক বিচারে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। তারপরও কথা থেকে যায়। রাষ্ট্রের পক্ষে এর চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নয়। এখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ভেবে দেখতে হবে, কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় বাড়ানো যায় এবং সরকারের ওপর পূর্ণ নির্ভরশীলতা কমানো যায়। এখানে আরও একটা বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন আর তা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে টাকা বরাদ্দ করা হয়, তার খুব কম অংশই ব্যয় হয় গবেষণার কাজে। বরাদ্দকৃত টাকার একটি সিংহভাগ চলে যায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, উপাচার্য মহোদয়রা উন্নয়ন খাতে কিংবা গবেষণায় যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, সে টাকা নতুন শিক্ষকদের বেতন দিতে ব্যয় করেছেন। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দলীয় কোটায়, স্থানীয় কোটায় অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। কিছু দিন আগে একটি জাতীয় দৈনিক ৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের ওপর একটি প্রতিবেদন ছেপেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পরিণত হয়েছে পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি নিজের মেয়ে, ভাই, আপন ভায়রা, শ্যালিকার মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়েকে শিক্ষক তথা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে একটা রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন। এ প্রবণতা প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে। অভিযোগ আছে, জাহাঙ্গীরনগর এরই মধ্যে একটি পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে! ফলে অতিরিক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। উন্নয়ন বাজেট থেকে টাকা এনে শিক্ষক তথা কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। একটা পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে। ২০১১-১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্জুরি কমিশন (বিমক) কর্তৃক বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২২.৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬৫.১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে শুধু শিক্ষকদের বেতন দিতে। বিমক যে টাকা বরাদ্দ করে, তা দিয়ে বেতন, পেনশন, সাধারণ খরচ, শিক্ষা খরচ, যানবাহন মেরামত ও মূলধনের চাহিদা মেটানো হয়। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বেতন পরিশোধের পর যা থাকে, তা দিয়ে অন্য কিছু করা আর সম্ভব হয় না। ছাত্রদের আবাসিক সমস্যার সমাধান হয় না। তাদের ন্যূনতম চাহিদাও মেটাতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরও খারাপ। তারা অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের পেনশন দিতে পারে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। একুশ শতকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুরোপুরিভাবে সরকারি অর্থে পরিচালিত হবে, এ বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বাংলাদেশ একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি কল্যাণকামী অর্থনীতিও নয়। অর্থাৎ পশ্চিম ইউরোপের কোনো কোনো রাষ্ট্রে (যেমন জার্মানি) কিংবা নরডিকভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে রাষ্ট্র সব নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি। ওইসব রাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা একদম ফ্রি। আমরা সেখানে পড়াশোনা করেছি কোনো রকম টিউশন ফি ছাড়াই (শুধু ছাত্র সংসদের জন্য কিছু অর্থ দিতে হয়)। স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরিভাবে ফ্রি না হলেও বেকার ভাতা সেখানে রয়েছে। জার্মানি বা সুইডেনের অর্থনীতির পক্ষে সম্ভব সাধারণ নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি সে পর্যায়ে নেই। তবে যে পর্যায়ে রাষ্ট্র শিক্ষা খাতকে প্রমোট করে, তা ঠিক আছে। রাষ্ট্র শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ দেবে। তবে এখানে উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে।
একুশ শতকে এসে একটা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর করে চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব আয় বাড়াতে হবে। ছাত্র বেতন না বাড়িয়েও আয় বাড়ানো যায়। এজন্য কতগুলো বিকল্প নীতিনির্ধারকরা ভেবে দেখতে পারেন। প্রয়োজন পিপিপি অথবা বেসরকারি খাতকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা। যেমন ব্যবসা প্রশাসন, অর্থনীতি, প্রযুক্তিবিদ্যা, ফার্মেসিতে বেসরকারি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। বেসরকারি পুঁজিতে ল্যাব হতে পারে, ছাত্রাবাস নির্মিত হতে পারে, ট্রেনিং প্রোগ্রাম হতে পারে। বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী রয়েছেন। প্রয়োজন একটি নীতি প্রণয়ন ও যোগাযোগ। একই সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেকেন্ড ক্যাম্পাস কিংবা সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম (শুধু ব্যবসা প্রশাসন কোর্সই নয়) চালু করে তাদের আয় বাড়াতে পারে। প্রতিটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় এ উদ্যোগ নিতে পারে। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা তেজগাঁওয়ে অবস্থিত টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ করতে পারেন। আর সে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে দক্ষ জনশক্তি পেতে পারেন বড় বড় গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। গার্মেন্টের পর আমাদের একটা সম্ভাবনার খাত হচ্ছে ওষুধ শিল্প। প্রতিটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়েই ফার্মেসি, বায়োটেকনোলজি বিভাগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানিগুলো বড় বিনিয়োগ করতে পারে। মোট কথা, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সরকারি অর্থেই বিশ্ববিদ্যালয় চলবে। কিন্তু এখানে বিনিয়োগে বেসরকারি খাতকে আমরা উৎসাহিত করতে পারি। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে বেশ ক’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ভালো শিক্ষকও রয়েছেন। উদ্যোক্তারা যদি সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন, তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগে করবেন না কেন? আসলে এ জন্য যা দরকার, তা হচ্ছে সুস্পষ্ট একটি নীতিমালা। বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা যায় না। দলবাজ উপাচার্যরা এটা ব্যবহার করবেন তাদের স্বার্থে। দলবাজ শিক্ষকের সংখ্যা বাড়বে; কিন্তু দক্ষ জনশক্তি বাড়বে না।
Daily Alokito Bangladesh
12,06.16
0 comments:
Post a Comment