আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সম্পর্কে
যারা খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন, পৃথিবীর কোন কোন
দেশে, যেখানে গণহত্যা হয়েছে, সেখানে
এ ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক কঙ্গোয় ২০০৪ সালে, কম্বোডিয়ায় ২০০১ সালে এ ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই
ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে যারা জড়িত, তাদের বিচার
করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই বিচারকার্য এখনও চলছে। আজ মিয়ানমারে যে জাতিগত
উচ্ছেদ অভিযান তথা গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তা খোদ
বাংলাদেশেই নয়, বরং জাতিসংঘও একে ‘গণহত্যা’ হিসেবে
অভিহিত করেছে হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে
বসনিয়া-হারজেগোভিনার ‘কসাই’ হিসেবে
পরিচিত সার্ক নেতা সেøাকোডান মিলোসেভিচের (যিনি ছিলেন
সর্বশেষ যুগোসøাভিয়ার প্রেসিডেন্ট) বিচারের কাহিনী সারা
বিশ্বে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল। মুসলমানদের ব্যাপক গণহত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত
ছিলেন। বহুল আলোচিত সেব্রেনিসা গণহত্যার কাহিনী (১১-১৩ জুলাই, ১৯৯৫) অনেকে স্মরণ করতে পারেন। ওই গণহত্যায় একটি কমিশন প্রমাণ পেয়েছিল
যে, ৮ হাজার ৩৭৩ জনকে (যাদের প্রায় সবাই ছিলেন মুসলমান)
হত্যা করা হয়েছে, যাদের মাঝে ছিল শিশু, মহিলা ও কিশোর। এ গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেøাকোডান মিলোসেভিচ। সাবেক যুগোসøাভিয়ায়
মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা গণহত্যার জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল ২০০২ সালের
ফেব্রুয়ারিতে। এ ট্রাইব্যুনালের অস্তিত্বকাল ছিল ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৬
সালের মার্চ পর্যন্ত। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মিলোসেভিচ জেলে মারা গেলে ওই
ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময় জাতিসংঘ কসোভো গণহত্যার জন্যও
মিলোসেভিচকে অভিযুক্ত করেছিল এবং উভয় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই তার বিচার শুরু
হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, গণহত্যা, জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানে হত্যা, বিনা অভিযোগে
বন্দি করে রাখা ও নিপীড়ন করার। ট্রাইব্যুনাল তার মৃত্যুতে কোনো রায় দেননি। কিন্তু
৬৬টি ঘটনা, হত্যাকা- ও জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানে তার
প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছিল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের
আরেকটি দৃষ্টান্ত আমরা দিতে পারি। রুয়ান্ডায় গণহত্যার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ
আদালত গঠিত হয়েছিল ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে। পাঠক নিশ্চয়ই স্মরণ করতে পারেন, ওই
সময়কার হতু-তুতসি দ্বন্দ্ব ও গণহত্যার খবর। নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত (৯৫৫)
অনুযায়ী, এ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল। রুয়ান্ডার গণহত্যার
সময়ও পশ্চিমা বিশ্ব এবং জাতিসংঘ প্রথমদিকে নির্লিপ্ত ছিল। এমনকি জাতিসংঘ প্রথমদিকে
সেখানে যে ‘গণহত্যা’ হয়েছে,
তা-ও স্বীকার করেনি (রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ গণহত্যার কথা
বলেছে)। কেননা ‘গণহত্যা’ স্বীকার
করলে সেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠাতে হয়। একমাত্র গণহত্যা বন্ধের পরই
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সেখানে একটি তথ্য অনুসন্ধান টিম পাঠাতে রাজি হয়। জাতিগত
উচ্ছেদ অভিযানের নামে সেখানে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, তা
সমসাময়িক ইতিহাসে বিরল। রুয়ান্ডায় হতুরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ, আর তুতসি উপজাতির লোকরা ছিল সংখ্যালঘু। আর সংখ্যালঘু তুতসিরাই গণহত্যা,
ধর্ষণ, আর জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানের শিকার
হয়। ৫ লাখ থেকে ৯ লাখ মানুষ এ জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানে (১৯৯৪) মারা গিয়েছিল। বিচারে
৬১ জন গণহত্যাকারীর বিচার হয়েছিল, এদের মাঝে সরকারের
শীর্ষ কর্মকর্তারাও ছিলেন। প্রেসিডেন্ট পল কাগামের (যিনি একজন সাবেক সেনা
কর্মকর্তা) বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে ফ্রান্সের একটি আদালতে এখন বিচার অনুষ্ঠিত
হচ্ছে। সুদানের দারফুরে (পশ্চিম সুদান) গণহত্যার কথাও আমরা উল্লেখ করতে পারি। ২০০৩
সালে এ গণহত্যা সংঘটিত হয়। এ হত্যাকা-ে সরকারি কর্মকর্তারা ও ‘জানজাভেদ’ নামে
একটি মিলিশিয়া গ্রুপ জড়িত ছিল। এরা দারফুরে বসবাসকারীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল।
মানুষ হত্যা করেছিল। ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল এবং প্রায় ২৮ লাখ
মানুষ নিজ বাসভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছিল। দারফুরের হত্যাকা-ের তদন্ত করার জন্য একটি
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (হেগে) গঠিত হয়েছিল। ২০০৯ সালের ৪ মার্চ আদালত সুদানের
প্রেসিডেন্ট ওমর আল বসিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন; কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। এর মূল কারণ হচ্ছে, চীন
ও রাশিয়া সুদানের ওমর আল বসিরের সমর্থন করছে। সুদানে এ দেশ দুইটির যথেষ্ট স্বার্থ
রয়েছে। দারফুরে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৭ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ
সেখানে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২৬ হাজার শান্তিরক্ষী
(বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এখানে আছে) সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু গণহত্যার জন্য
কারও বিচার হয়েছে, তেমনটি শোনা যায় না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সম্পর্কে
যারা খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন, পৃথিবীর কোন কোন
দেশে, যেখানে গণহত্যা হয়েছে, সেখানে
এ ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক কঙ্গোয় ২০০৪ সালে এবং কম্বোডিয়ায়
২০০১ সালে এ ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ট্রাইব্যুনাল
মানবতাবিরোধী অপরাধে যারা জড়িত, তাদের বিচার করেছেন। কোনো
কোনো ক্ষেত্রে সেই বিচারকার্য এখনও চলছে। আজ মিয়ানমারে যে জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান
তথা গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তা খোদ বাংলাদেশেই নয়, বরং জাতিসংঘও একে ‘গণহত্যা’ হিসেবে
অভিহিত করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার শীর্ষক শীর্ষ কর্মকর্তা জেইদ রাদ আল হুসেইন
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে দেয়া ভাষণে রোহিঙ্গা হত্যাকা-কে ‘গণহত্যা’ হিসেবে
অভিহিত করে বলেছেন, “এই পাশবিকতার ঘটনা
পাঠ্যপুস্তকের জন্য ‘জাতিগত নির্মূলের’ একটি
উদাহরণ হয়ে থাকবে।” রয়টার্স হুসেইনের
বক্তব্য উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী থিঙ্ক
ট্যাঙ্ক ‘কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশন্স’-এর
এক প্রতিবেদনে (Myanmar, Combodia and the Opportunity for the U.S.
Congress, September 07, 2017) বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির ব্যাপারে জাতিসংঘের সিরিয়াসলি কিছু
করা উচিত। প্রতিবেদনে সিনেটর ম্যাককেইন ও কংগ্রেসম্যান এডওয়ার্ড রয়েস অং সান সু
চিকে যে সহিংসতা বন্ধে চিঠি লিখেছেন, তা উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে মিয়ানমারে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ বন্ধ এবং একই সঙ্গে
কংগ্রেসে রোহিঙ্গা প্রশ্নে একটি শুনানি আয়োজন করার আহ্বান জানানো হয়। রোহিঙ্গাদের
যখন ঢল নামছে, তখন বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে রোহিঙ্গাদের
জন্য আরাকানে একটি ‘সেভ জোন’ প্রতিষ্ঠা
করার, যেখানে শান্তিরক্ষী বাহিনী (জাতিসংঘ) রোহিঙ্গাদের
নিরাপত্তা দেবে। প্রধানমন্ত্রী ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের
রাষ্ট্রদূত সোফি উর্বাটকে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিজ
বাসভূমে ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সৃষ্টি করা উচিত। আর বাংলাদেশের জাতীয়
সংসদে গৃহীত এক প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিকত্ব দিয়ে নিরাপদে নিজ
দেশে বসবাস করার সুযোগ করে দিতে মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ দেয়ার একটি প্রস্তাব
গৃহীত হয়েছে ১১ সেপ্টেম্বর। তবে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ
এইচ মাহমুদ আলী। তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতনকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে
চিহ্নিত করেছেন। সরকারের একজন শীর্ষ মন্ত্রী যখন ‘গণহত্যা’র
কথা বলেন, তখন ধরে নিতে হবে এটাই সরকারি
ব্যাখ্যা এবং সরকারি অবস্থান! তাহলে সরকার এখন এ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে
নিয়ে কী করবে? এটা সত্য, রোহিঙ্গা
প্রশ্নে আঞ্চলিক শক্তি চীন ও ভারত মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের জাতীয়
স্বার্থের আলোকেই তারা এ অবস্থান নিয়েছে। আগামী মাসে ভারত সফরে যাচ্ছেন মিয়ানমারের
সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন আউং হ্লে¬আইং। রোহিঙ্গা
প্রশ্নে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভূমিকা যেখানে সারা বিশ্বে সমালোচিত, সেখানে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারত পরোক্ষভাবে
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সমর্থন করল বৈকি! এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের
সেনাবাহিনীপ্রধানের ভারত সফর ‘স্থগিত’ রাখাটাই
ছিল কাম্য। বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের
নীতিনির্ধারকরা এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেননি।
মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারতের সমর্থন প্রকারান্তরে বাংলাদেশে ভারতের
ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
প্রতিটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া, গণমাধ্যমে
রোহিঙ্গা নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সামাজিক গণমাধ্যমে রোহিঙ্গা
গণহত্যার যেসব চিত্র প্রকাশ পেয়েছে, তা সিরিয়ায় ইসলামিক
স্টেটের জঙ্গিদের সহিংসতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। গলা কেটে হত্যা, শিশু ও মহিলাদের অঙ্গহানি, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর
পুড়িয়ে দেয়া, প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করাÑ এসব অপরাধ বসনিয়ার সার্বরাও করেনি। আইএস জঙ্গিদেরও এত সহিংস হতে দেখা
যায়নি।
কোনো কোনো বিশ্লেষক বলার চেষ্টা
করেছেন, ঐতিহাসিকভাবেই বর্মী নাগরিকরা (আমাদের দেশে একসময় যারা ‘মগ’ নামে
পরিচিত ছিল) পৈশাচিক ও বর্বর। ‘গলা
কেটে হত্যা করা’ তাদের পক্ষেই
সম্ভব। এখন মিয়ানমারের আরাকানে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা
‘জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান’, ‘গণহত্যা’, ‘নিরীহ
নাগরিকদের ওপর সশস্ত্র হামলা’, ‘নিপীড়ন’, ‘অত্যাচার’ এবং
যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির সঙ্গে তুল্য। ‘মানবতাবিরোধী
অপরাধের’ যে ব্যাখ্যা রোম
স্ট্যাটিউটে দেয়া হয়েছে (যাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠিত হয়েছে।
স্বাক্ষরিত ১৯৯৮, কার্যকর ২০০২), তার প্রতিটি রোহিঙ্গা গণহত্যায় খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ আরাকানে যে
গণহত্যা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের
সংজ্ঞানুযায়ী একেকটি গণহত্যা। এ ধরনের একাধিক গণহত্যার খবর আমরা বসনিয়া
হারজেগোভিনিয়ায় পাই এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে এ ‘অপরাধের’ বিচার
করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। আমরা শুধু সেøাকোডান
মিলোসেভিচের কথা বলেছি। বসনিয়ার আরেকজন সার্ব কসাই ছিলেন কারাদজিক। হেগে তারও
বিচার হয়েছিল। আরেকজন যুদ্ধবাজ নেতা লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস টেলরের
কথা মনে আছে আপনাদের? টেলর ছিলেন একজন যুদ্ধবাজ জেনারেল
এবং লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট (আগস্ট ১৯৯৭ থেকে আগস্ট ২০০৩)। মানবতাবিরোধী অপরাধ ও
গণহত্যার অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত হয়েছিলেন এবং ২০১২ সালে আন্তর্জান্তিক অপরাধ আদালত
তাকে ৫০ বছরের যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছিলেন। তিনি এখন জেলে।
রোম স্ট্যাটিউটে(Rome statute) যুদ্ধাপরাধ, যুদ্ধসংঘটিত করা, মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত
প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। যেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, সেখানেই এ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজ মিয়ানমারের ক্ষেত্রে এ আদালত
প্রতিষ্ঠা করার সময় এসে গেছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও
পরোক্ষভাবে নাম এসেছে সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনালের মিন আউং হ্লেআইং (Min Aung
Hlaing)), রাখাইন স্টেটে অবস্থিত পশ্চিম কমান্ডের প্রধান লে.
জেনারেল আউং কিয়া (Aung Kyaw zaw),, কট্টরপন্থী
বৌদ্ধভিক্ষু, যিনি ‘বার্মিজ
লাদেন’ হিসেবে পরিচিত
অর্সিম ভিরাথু, স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি, বৌদ্ধ সংগঠন ‘৯৬৯’ এর।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যদি চার্লস টেলর, ওমর বসির,
সেøকোডান মিলোসেভিচের মতো যুদ্ধবাজদের
বিচার করতে পারে, তাহলে জেনারেল হ্লেআইং কিংবা অং সান সু
চিকে কেন বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারবে না? সু চির
একটা অতীত আছে, যেখানে তিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম
করেছেন, শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন; কিন্তু তার সরকারের আমলে (তিনি কার্যত সরকারের মূল ব্যক্তি) রোহিঙ্গারা
যখন নির্যাতনের শিকার হন, জীবন বাঁচানোর জন্য দেশত্যাগ
করতে বাধ্য হন, তখন তিনি তার দায় এড়াতে পারেন না। সুতরাং
মিয়ানমারে যুদ্ধবাজদের হেগে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো উচিত। এজন্য বাংলাদেশকেই
উদ্যোগ নিতে হবে। তথ্যপ্রমাণসহ আন্তর্জাতিক আদালতে আমাদের যেতে হবে। এক্ষেত্রে
অনেক ‘ক্যু রাষ্ট্র’ আমরা
পাব, যারা আমাদের সহযোগিতা করবে। এখানে উদ্যোগটাই হলো বড়
কথা। চলতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রশ্নটি উত্থাপন
করবে বলে আমরা জানতে পেরেছি; কিন্তু সেখানে গণহত্যার
প্রশ্নটি থাকবে কিনা, আমি নিশ্চিত নই। মিয়ানমারে গণহত্যা
হয়েছে। শিশু-কিশোরদের প্রকাশ্যে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনই এক
পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে মানবতাবিরোধী এ অপরাধের জন্য সক্রিয় হতে হবেই।
0 comments:
Post a Comment