সিয়ামেনে ব্রিকস সম্মেলন শেষ হলো গত মঙ্গলবার। এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো এমন এক সময়, যখন চীন ও ভারত ডোকলাম উপত্যকার কর্তৃত্ব নিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত ছিল। ডোকলামের পরিস্থিতি এ মুহূর্তে কিছুটা শান্ত রয়েছে বটে, কিন্তু ডোকলাম সমস্যার পূর্ণ সমাধান হয়েছে, তা বলা যাবে না। এমনই একটি পরিস্থিতিতে চীনের সিয়ামেনে যখন মোদি ও শি চিনপিং বৈঠকে মিলিত হন তখন এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে চীন ও ভারত ‘সব কিছু ভুলে’ ব্রিকসকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। পাঁচটি দেশ নিয়ে ব্রিকস গঠিত। চীন ও ভারতের পাশাপাশি ব্রিকসে রয়েছে রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল। ব্রিকস এখন বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক জোট। সুতরাং ব্রিকসভুক্ত দুটি বড় অর্থনীতির দেশ চীন ও ভারত যখন সম্ভাব্য একটি ‘যুদ্ধের’ মুখোমুখি হয় তখন সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠেছিল ব্রিকসের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কিন্তু দেখা গেল, চীন ও ভারত আপাতত নিজেদের মধ্যকার বিভেদ ভুলে ব্রিকসের বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে বেশি। শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে মোদি ও শি চিনপিং যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা-ও ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আদান-প্রদান আরো বাড়ানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
আর চীনা প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, চীন ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রকৌশলগত সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য ৫০ কোটি ইউয়ানের বিশেষ কর্মসূচি নিচ্ছে।
সম্মেলন শেষে গৃহীত প্রস্তাবে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে পরিচিত লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদের মতো সংগঠনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে; যদিও কোনো দেশের নাম এখানে উল্লেখ করা হয়নি। এই বিবৃতিতে কার্যত ভারতেরই লাভ হলো। কেননা ভারত বারবার বলে আসছিল, পাকিস্তানের মদদে এসব জঙ্গি সংগঠন ভারতের মাটিতে তাদের জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচিতে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ, খাসগর-গাওদার সড়ক ও রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির ব্যাপারে ভারতের মৃদু আপত্তি ছিল। ভারত মনে করে, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলে চীন তার প্রভাব ও প্রতিপত্তি বাড়াচ্ছে। ভারত মহাসাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে এরই মধ্যে চীন ও ভারত এক ধরনের ‘সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতায়’ লিপ্ত হয়েছে। ফলে ব্রিকস কতটুকু সফল হবে কিংবা চীন ও ভারত তাদের বৈরিতা কতটুকু কমিয়ে আনতে পারবে—এ প্রশ্ন ছিল বিশ্লেষকদের মাঝে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, বৈরিতা ভুলে মোদি ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিলেন। শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করলেন। এর মধ্য দিয়ে মোদি তাঁর দূরদর্শিতার পরিচয় দিলেন। ডোকলাম নিয়ে তিনি এখনো ভারতে কট্টরপন্থীদের চাপের মুখে আছেন। কট্টরপন্থীরা চীনের সঙ্গে এখনই একটি যুদ্ধ চাচ্ছেন! কিন্তু যুদ্ধের চেয়েও এ মুহূর্তে মোদির প্রয়োজন উন্নয়ন। প্রয়োজন তরুণ প্রজন্মের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা। এ জন্য তাঁর প্রয়োজন চীনের আর্থিক সহযোগিতা। সেই সহযোগিতা চীন নিশ্চিত করেছে।
এখানে বলা ভালো, প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ গোল্ডম্যান স্যাকসের (Goldman Sachs) ধারণা অনুযায়ী এই ব্রিকস গড়ে ওঠে। ২০০১ সালে সংস্থাটির জন্ম। এটি মূলত তিনটি পর্যায় পার করছে। প্রথম পর্যায়ে ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। তখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রিকসে যোগ দেয়নি। তখন এই চারটি দেশ শুধু বিনিয়োগ পর্যায়ে তাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখে। ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্রিকস একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক আসরে আত্মপ্রকাশ করে। ওই সময় দক্ষিণ আফ্রিকা (২০১১) এতে যোগ দেয়। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় তৃতীয় পর্যায়। ওই সময় ব্রিকস বিশ্বব্যাংক তথা আইএমএফের বিকল্প হিসেবে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। এই তৃতীয় পর্যায় থেকে, যা এখনো চলমান, ব্রিকসকে আন্তর্জাতিক আসরে যথেষ্ট পরিচিত করেছে এবং বিশ্ব মিডিয়া তথা বিশ্লেষকরা ব্রিকসকে মনে করছেন মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে। আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রশ্নে ব্রিকসে কোনো বিভক্তি নেই। তবে নেতৃত্বের প্রশ্নে এক ধরনের ‘সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতা’ আছে। বিশেষ করে ব্রিকসের নেতৃত্ব কার কাছে থাকবে—চীন, না রাশিয়া, এটা নিয়ে এক ধরনের স্নায়বিক প্রতিযোগিতা আছে। অন্যদিকে ভারত ও চীনের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের আস্থাহীনতার সম্পর্ক। চীনের অতিমাত্রায় পাকিস্তানপ্রীতি এই আস্থাহীনতার জন্ম দিয়েছে।
শুধু ডোকলাম নয়, বরং ভারতের অরুণাচল রাজ্য নিয়েও ভারত ও চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে সর্বশেষ নবম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন প্রমাণ করল, ব্রিকস নেতারা আঞ্চলিক দ্বন্দ্বকে পাশ কাটিয়ে তাকাতে চান সামনের দিকে। ব্রিকসের সার্থকতা এখানেই। ব্রিকস বড় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে এরই মধ্যে আবির্ভূত হয়েছে। জোটটি ভবিষ্যতে সম্প্রসারিত হবে কি না, তা এ মুুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে ব্রিকস যে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তিগুলোকে সংস্থাটির সঙ্গে রাখতে চায়, তা স্পষ্ট। এ কারণেই এবার শীর্ষ সম্মেলনে মিসর, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো, তাজিকিস্তান ও গায়ানার রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা যোগ দিয়েছিলেন। এসব দেশ একেকটি উঠতি অর্থনৈতিক শক্তি। এই দেশগুলো যদি যেকোনো প্রক্রিয়ায় (অনেকটা আসিয়ানের মতো) ব্রিকসে যোগ দেয়, তা ব্রিকসের শক্তিকে আরো শক্তিশালী করবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরাসরি সদস্য হিসেবে যোগ না দিয়ে সহযোগী সদস্য হিসেবে এই দেশগুলো ব্রিকসের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষ এই ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোতে বসবাস করে। বিশ্ব জিডিপির ২৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে ব্রিকস। ফলে ব্রিকস যে বিশ্বরাজনীতিতে আলোচনায় থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে সামনের দিনগুলো ব্রিকসের জন্য যে সহজ তা বলা যাবে না। এবারের শীর্ষ সম্মেলনের স্লোগান ছিল ‘ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী সমন্বিত উদ্যোগ’। মেসেজটি পরিষ্কার। পশ্চিমা আধিপত্য, পশ্চিমা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্ম দেওয়া। এ কারণেই ব্রিকস ২০১৪ সালে নতুন একটি বিনিয়োগ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা করেছে, যার নাম ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’। এই ব্যাংক এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রজেক্টে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। মূলত চীন, ভারত ও রাশিয়ায় এই অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি কিভাবে যৌথভাবে মোকাবেলা করা যায়, এটাও আলোচনা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার (কপ-২১) সিদ্ধান্ত সম্মেলনে আলোচিত হয়। এখানে একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো, বিশেষ করে চীন ও ভারত, প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তার প্রতি ‘কমিটমেন্ট’ করেছে। সবুজ এনার্জির কথাও তারা বলেছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে বলা হয়ে থাকে চীন ও ভারত হচ্ছে শীর্ষ পরিবেশ দূষণকারী দুটি দেশ। এই দুটি দেশে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এর ফলে পরিবেশদূষণ হয়। চীন এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। চীন সোলার এনার্জি সেক্টরে বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে এবং একটা পরিবর্তনও এনেছে। চীনের অনেক ছোট শহর অনেকটাই এখন সোলার এনার্জিনির্ভর। চীন এই ‘সবুজ এনার্জি’ ছড়িয়ে দিতে চায় বিশ্বের সর্বত্র। এখানেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের পার্থক্য। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর তাদের নির্ভরতা আরো বাড়িয়েছে, তেল ও গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি করেছে, সেখানে চীন ও ভারতের মতো বড় অর্থনীতির দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর (ফসিল ফুয়েল) তাদের নির্ভরতা কমানোর কথা বলছে।
ব্রিকস নিয়ে সমস্যা আছে। চীন ও ভারত বাদে বাকি তিনটি দেশের অর্থনীতি দুর্বল। ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি ভালো নয়। ব্রাজিলের অর্থনীতি সাম্প্রতিককালে যথেষ্ট খারাপ হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে আছে। চীনের ওপর অনেকটাই নির্ভর ব্রাজিল। শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের মাঝে দুর্নীতি আছে। রাজনৈতিক কাঠামোতেও পার্থক্য আছে। ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু থাকলেও চীন ও রাশিয়ায় গণতন্ত্র নেই। এখানে কার্যত এক ধরনের ব্যক্তিশাসন ও দলীয় কর্তৃত্ব বজায় রয়েছে। পুতিন দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও চীনে শি চিনপিংয়ের উত্থান সাম্প্রতিক। তবে তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয়। বলা হয় মাও জেদং ও দেং শিয়াও পিংয়ের পর শি চিনপিং হচ্ছেন চীনের তৃতীয় নেতা, যিনি তাঁর ব্যক্তিত্ব ও তাঁর নিজস্ব রাজনীতির কারণে বিশ্ব আসরে চীনকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। শি আরো এক টার্ম ক্ষমতায় থাকবেন। অর্থাৎ ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবেন। চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচির জনক তিনি। এ কর্মসূচির আওতায় তিনি ৬১টি দেশকে সড়ক বা সমুদ্রপথে সংযুক্ত করতে চান। এ প্রকল্পে বিশাল বিনিয়োগ করছে চীন। এর মাধ্যমে চীনের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও ইউরো এশিয়ার দেশগুলো সংযুক্ত হবে। এতে চীনের স্বার্থ রয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু এর আওতাভুক্ত প্রতিটি দেশই লাভবান হবে। বাংলাদেশ ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচিতে যোগ দিলেও ভারত এ প্রকল্পে যোগ দেয়নি। নিঃসন্দেহে ব্রিকসের উন্নয়নের পথে এটা বড় অন্তরায়। ব্রিকস নিয়ে আরো একটি সমস্যা হচ্ছে, তিনটি দেশের (চীন, ভারত ও রাশিয়া) সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক বৈরিতা বাড়ছে। চীন-রাশিয়া দ্বন্দ্বের কথা সাম্প্রতিক সময়গুলোতে শোনা না গেলেও চীন-ভারত দ্বন্দ্ব বারবার আলোচিত হয়ে আসছে।
আরো একটি বিষয় আলোচনার দাবি রাখে, তা হচ্ছে ব্রিকস ও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ব্যাপারে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি কী? পশ্চিমা বিশ্ব ব্রিকসের উত্থানকে যে সহজভাবে নিয়েছে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। নতুন এক ‘স্নায়ুযুদ্ধের’ জন্ম হতে যাচ্ছে এশিয়ায়। ওবামা প্রশাসন ‘পাইভট টু এশিয়া’ (Pivot to Asia) শীর্ষক যে নীতি প্রণয়ন করেছিল, ট্রাম্প প্রশাসন তা একেবারে বাতিল করেনি। এর মূলকথা হচ্ছে, চীনকে ঘিরে ফেলার এক বৃহত্তর মহাপরিকল্পনা। অর্থাৎ চীনকে টুকরা টুকরা করা, যেমনটি তারা করেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে। এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ওবামা দুই-দুইবার ভারত ও মিয়ানমার সফর করেছিলেন। ভারত এ অঞ্চলের উঠতি অর্থনৈতিক তথা সামরিক শক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সামরিক চুক্তি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইবে। মিয়ানমারে অং সান সুচিকে সামনে রেখে তাঁকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইবে! কতটুকু এতে সফল হওয়া যাবে, তা ভবিষ্যতের ব্যাপার। সুতরাং ব্রিকস ও ভারতের ভূমিকার ব্যাপারে লক্ষ থাকবে অনেকের। আরো একটা কথা, ব্রিকসভুক্ত দুটি দেশ—চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বে কয়েকটি সংস্থার জন্ম হয়েছে, যা ব্রিকসের কাঠামোর বাইরে কাজ করছে। ইউরোএশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন (ইএইইউ), সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) মতো সংগঠন রাশিয়া ও চীনের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী ও পশ্চিমা স্বার্থবিরোধী। ইএইইউ ২০১৫ সালে তার যাত্রা শুরু করে। বলা হয় অধুনালুপ্ত সিআইএসের পরিবর্তিত নাম হচ্ছে এই ইউরোএশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, বেলারুশ, আর্মেনিয়া, কিরগিজস্তান ও কাজাখস্তান। জর্জিয়া ও ইউক্রেন এখন আর এ সংস্থার সঙ্গে জড়িত নয়। অন্যদিকে এসসিও হচ্ছে একটি সামরিক জোট। চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ২০০১ সালেই যোগ দেয়, যখন এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান এ সংস্থায় যোগ দিয়েছে। ইরান, তুরস্কসহ আরো কয়েকটি দেশকে সংস্থার অবজারভার স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে ইএইইউ কিংবা এসসিওর সঙ্গে ব্রিকসের স্বার্থ ও উদ্দেশ্য এক। অর্থাৎ পশ্চিমা স্বার্থ, বিশেষ করে মার্কিন স্বার্থকে আঘাত করা। মধ্য এশিয়ায় বিশাল গ্যাস ও তেল রিজার্ভ রয়েছে। আন্তর্জাতিক তেল উত্তোলনকারী সংস্থাগুলোর স্বার্থ এখানে রয়েছে। তথাকথিত জঙ্গিবাদকে উসকে দিয়ে এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা প্রবল। তাই আফগানিস্তানে আবারও চার হাজার সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সুতরাং নয়া বিশ্ব ব্যবস্থা বিকাশে ব্রিকসের একটি ভূমিকা থাকবেই।
0 comments:
Post a Comment