মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যা যখন তুঙ্গে, জাতিসংঘের তথ্যমতে ১
লাখ ২৭ হাজার রোহিঙ্গা মুসমান যখন সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে,
তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সফর করে গেলেন
গত ৫ সেপ্টেম্বর। এ সফরে তিনি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও স্টেট কাউন্সিলর অং
সান সু চির সঙ্গেও একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতও রোহিঙ্গা সমস্যায় আক্রান্ত। সেখানে প্রায় ৪০ হাজার
রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বসবাস করছে এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে ফেরত পাঠানো হবে। এই যখন
পরিস্থিতি তখন স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা হয়েছিল মোদি-সুচি আলোচনায় রোহিঙ্গা
ইস্যুটি প্রাধান্য পাবে। কিন্তু দেখা গেল এর বদলে আলোচনায় স্থান পেয়েছে নিরাপত্তা
ইস্যু। মোদি ও অং সান সু চি উভয়েই নিরাপত্তা ইস্যুটিকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি।
এখানেই এসে যায় মূল প্রশ্নটি। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লংঘনের চেয়ে মোদি ভারতের
জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। এটাই স্বাভাবিক। প্রতিটি রাষ্ট্রই তার
নিজস্ব জাতীয় স্বার্থের আলোকেই তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করে।
একটা
বিষয় সূক্ষ্মভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে, রোহিঙ্গা
সংকটে বিশ্ব সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। তুরস্কের ফার্স্ট লেডিও
এসেছিলেন। তারা সবাই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল। তারা রোহিঙ্গাদের সাহায্যের
কথা বলছেন; কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে ফেরত নেয়ার
ব্যাপারে তাদের কারও কোনো কর্মসূচি নেই। এমনকি কোনো পক্ষ থেকেই কেউ মিয়ানমার
সরকারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের কথাও বলছেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের ভূমিকাও এখানে লক্ষণীয়। চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে নির্লিপ্ত।
মিয়ানমারে তাদের জাতীয় স্বার্থ আছে। আরাকান উপসাগরীয় অঞ্চলে প্রচুর জ্বালানি সম্পদ
(তেল ও গ্যাস) আবিষ্কৃত হয়েছে। চীন এখানে বিনিয়োগ করেছে। সাবেক সেনাশাসক থান শোয়ের
নামে আরাকান গভীর সমুদ্রে একটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে, যা
২০০৪ সালে আবিষ্কৃত হয়। ২০১৩ সালে চীন এখানে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করেছে, যার মাধ্যমে ইউনান রাজ্যের কুনমিংয়ে গ্যাস নিচ্ছে চীন। উপরন্তু আরাকান
রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত কিয়াউকফিউয়ে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে চীন। এ ধরনের
একটি সমুদ্রবন্দর কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় নির্মাণ করতে চেয়েছিল চীন; কিন্তু ভারতের আপত্তির কারণে বাংলাদেশ রাজি হয়নি। এই সমুদ্রবন্দরটি
চীনের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এটি সড়কপথে চীনের কুনমিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
এতে করে ইউনান প্রদেশের পণ্য আমদানি-রফতানিতে অর্ধেক সময় কম লাগবে। ফলে পণ্যের
মূল্যও কম হবে। সুতরাং চীন রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়াবে না।
এমনকি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে
গেলে চীন তাতে ভেটো দেবে।
ভারতেরও স্বার্থ রয়েছে। আরাকানে ভারত সড়ক নির্মাণ করছে। ভারতের দুটি রাজ্যের সঙ্গে আরাকানের সীমান্ত রয়েছে। ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারতের অভ্যন্তরে হামলা করে আশ্রয় নেয় আরাকানের গভীর জঙ্গলে। এক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আরাকানে ওইসব বিচ্ছিন্নতাবাদীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছিল। সুতরাং ভারত মিয়ানমারের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইবে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন। ছিলেন দু’দিন। মোদি-অং সান সুচি বৈঠকে রোহিঙ্গা নিয়ে কোনো কথা হয়নি। যৌথ ইশতেহারে আরাকানে সশস্ত্র জঙ্গি হামলার নিন্দা করা হয়েছে। এর অর্থ পরিষ্কার, মোদি সরকার রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে মিয়ানমারের নিরাপত্তা তথা মিয়ানমারের অখণ্ডতার ওপরই গুরুত্ব দিয়েছে বেশি। এখানেই ভারতের জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নটি এসে যায়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আরাকান স্যালভেশন আর্মির সশস্ত্র বিদ্রোহীরা রাখাইনের বেশ কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ চালিয়ে ১২ জন পুলিশকে হত্যা করার পরপরই সেনাবাহিনী সেখানে গণহত্যা চালায় এবং রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। ফলে শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ তাদের নিজ বাসভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
ভারতেরও স্বার্থ রয়েছে। আরাকানে ভারত সড়ক নির্মাণ করছে। ভারতের দুটি রাজ্যের সঙ্গে আরাকানের সীমান্ত রয়েছে। ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারতের অভ্যন্তরে হামলা করে আশ্রয় নেয় আরাকানের গভীর জঙ্গলে। এক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আরাকানে ওইসব বিচ্ছিন্নতাবাদীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছিল। সুতরাং ভারত মিয়ানমারের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইবে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন। ছিলেন দু’দিন। মোদি-অং সান সুচি বৈঠকে রোহিঙ্গা নিয়ে কোনো কথা হয়নি। যৌথ ইশতেহারে আরাকানে সশস্ত্র জঙ্গি হামলার নিন্দা করা হয়েছে। এর অর্থ পরিষ্কার, মোদি সরকার রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে মিয়ানমারের নিরাপত্তা তথা মিয়ানমারের অখণ্ডতার ওপরই গুরুত্ব দিয়েছে বেশি। এখানেই ভারতের জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নটি এসে যায়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আরাকান স্যালভেশন আর্মির সশস্ত্র বিদ্রোহীরা রাখাইনের বেশ কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ চালিয়ে ১২ জন পুলিশকে হত্যা করার পরপরই সেনাবাহিনী সেখানে গণহত্যা চালায় এবং রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। ফলে শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ তাদের নিজ বাসভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশ মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এ ব্যাপারে হয়তো সবাই বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকাকে সমর্থন করবে। যেভাবে নারী, বৃদ্ধ ও ছোট ছোট শিশুরা শুধু একটু আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে এসেছে, তাদের করুণ কাহিনী মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে, তাতে করে কোনো বিবেকবান মানুষ চুপ করে থাকতে পারে না। কিন্তু সদ্য আশ্রয় নেয়া ১ লাখ ২৭ হাজার রোহিঙ্গাসহ প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গার ভবিষ্যৎ কী? তাদের ক্যাম্পে রেখে তিন বেলা খাবার জোগাড় করে জীবন ধারণ করা হয়তো সম্ভব। কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ? ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা আজও তাদের রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায়নি। আজও অনেক পরিবার অন্য দেশে ক্যাম্পে জীবনযাপন করছেন। তাদের কয়েক প্রজন্ম ক্যাম্পেই কেটেছে। ইসরাইলের কারণে তারা নিজ ভূমিতে ফিরতে পারেনি। আমার আশংকা, রোহিঙ্গাদেরও এই শরণার্থীর জীবন যাপন করতে হতে পারে! মিয়ানমার তাদের ফেরত নেবে না, এটা বিবেচনায় নিয়েই আমাদের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে হবে। ইসরাইলের অত্যাচার আর নিপীড়নের কারণেই ফিলিস্তিনিদের ভেতর সশস্ত্র গ্রুপের জন্ম হয়েছিল। হামাস আজও ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চলেছে। রোহিঙ্গাদের মাঝে একাধিক সশস্ত্র গ্রুপের জন্ম হয়েছে। বাইরে থেকে এদের জন্য অস্ত্র ও অর্থ আসছে। আল কায়দা কিংবা আইএস রোহিঙ্গা ইস্যুকে ব্যবহার করে এ অঞ্চলে তাদের তৎপরতা বাড়াতে পারে। ফলে এ অঞ্চল ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে থাকতে পারে। সুতরাং শীর্ষ পর্যায়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন জরুরি, যারা রোহিঙ্গা প্রশ্নে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবেন। মনে রাখতে হবে, মানবিকতার নামে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আমরা আমাদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারি না।
এ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ১৭ বার সীমান্ত লংঘন করে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়লেও বাংলাদেশ এ ব্যাপারে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। এটা কি বাংলাদেশের কোনো দুর্বলতা? এটা ঠিক, বাংলাদেশের যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে মিয়ানমারে। দেশ দুটো বিসমটেক আঞ্চলিক জোটে আছে। এমনকি বিসিআইএম শীর্ষক অর্থনৈতিক করিডোরের সঙ্গেও দেশ দুটো জড়িত। বাংলাদেশের যে পূর্বমুখী কূটনীতি, তাতে মিয়ানমার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে- এ কথাটা বিভিন্ন বিশ্লেষক বারবার বলে আসছেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকাটা আসলে কী হওয়া উচিত? বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তুলতে পারে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে চলতি মাসেই যোগ দেবেন। তিনি তার বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের মানবিক পরিস্থিতির কথা তুলতে পারেন। কিংবা শরণার্থীদের গ্রহণ করার জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানাতে পারেন। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হবে বলে মনে হয় না। বিশ্বে শরণার্থীদের নিয়ে একটা সমস্যা রয়েছে। লাখ লাখ শরণার্থী (সিরীয় ও ইরাকি) পশ্চিম ইউরোপে আশ্রয় নেয়ায় সেখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। সেখানকার বড় বড় শহরে আইএসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে সেসব দেশে মুসলমানবিরোধী একটি সেন্টিমেন্টের জন্ম হয়েছে। সুতরাং কোনো দেশই রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রহণ করতে চাইবে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা যাবে না। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এটা চাইবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে মিয়ানমারে। মিয়ানমার এখন এক রকম ‘উন্মুক্ত’ হয়ে যাওয়ার কারণে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা দলে দলে মিয়ানমারে ভিড় করছেন। মার্কিন বিনিয়োগ সেখানে বাড়ছে। স্ট্রাটেজিক্যালি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ অঞ্চলের গুরুত্ব অনেক বেশি। মিয়ানমারের তথাকথিত ‘গণতান্ত্রিক সরকারকে’ আস্থায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ আদায় করে নিতে চায়। তাদের স্ট্রাটেজি পরিষ্কার- চীনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারকে ব্যবহার করা। এ অঞ্চলে বিদ্রোহীদের উসকে দিয়ে চীনে গ্যাস তথা তেল সরবরাহের পাইপলাইন বন্ধ করে দেয়া। এর ফলে চীনের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইসঙ্গে বৃহত্তর বঙ্গোসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মেরিন উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। এই মেরিন উপস্থিতি প্রয়োজনে চীনা গ্যাস ও তেল সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে। চীনের প্রচুর জ্বালানি শক্তির প্রয়োজন। চাহিদাও বেশি। এই জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতেই চীন এ অঞ্চলের সমুদ্রবন্দরগুলোকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় এনেছে, যাকে চীন বলছে ‘String of Pearls’ বা ‘মুক্তারমালা’ নীতি। এই নেটওয়ার্ক যদি ভেঙে ফেলা যায়(?) তাহলে চীনের জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে। এমনকি চীন যে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নামে এক মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তাও বাস্তবায়িত হবে না। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্রাটেজির সঙ্গে মিল আছে ভারতের। ভারত এই মহাপরিকল্পনায় যুক্ত হয়নি। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ হচ্ছে মিয়ানমারকে তাদের এই পরিকল্পনায় যুক্ত করা। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ফলে মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্ব কখনই চীনবিরোধী কোনো অ্যালায়েন্সে যোগ দেবে না। তাই সঙ্গত কারণেই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্ব পাবে কম।
তবে এখানে আরও একটা সম্ভাবনার কথা একেবারে ফেলে দেয়া যায় না। আর তা হচ্ছে, আরাকান মুসলিম নিধনকে সামনে রেখে এ অঞ্চলে আল কায়দা ও আইএসের জঙ্গি সংগঠনের উত্থান এবং তাদের সামরিক তৎপরতা। আরাকান সালভেশন আর্মির খবর সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সশস্ত্র তৎপরতা ও নেতাদের বক্তব্য প্রচারিত হচ্ছে। আইএস এভাবেই সিরিয়া ও ইরাকে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল। এখন তাদের সেই ‘খেলাফতের’ দিন শেষ। সিরিয়ার রাকা থেকে আইএস এখন পালাচ্ছে। ভুলে গেলে চলবে না, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় আইএস ও আল কায়দাসংশ্লিষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলো তৎপর। ফিলিপাইনে সলু দ্বীপপুঞ্জের একটি এলাকা নিয়ে তারা সেখানে তাদের প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। সেনাবাহিনী সেখানে দীর্ঘদিন ধরে অপারেশন পরিচালনা করছে। ফলে জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা এখন সিরিয়া-ইরাক থেকে হ্রাস পেয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কেন্দ্রভূত হয়েছে। সুতরাং জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাছে আরাকান এখন একটি মোক্ষম এলাকা। বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত আরাকান জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার জন্য উত্তম একটি জায়গা। ভয়টা হচ্ছে, আইএস যদি আরাকানে ঘাঁটি গাড়তে পারে(?) তাতে করে আক্রান্ত হবে বাংলাদেশও। বৃহত্তর কক্সবাজার অঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।
আরাকানের ভূ-কৌশলগত অবস্থান জঙ্গি সংগঠনগুলোকে আকৃষ্ট করতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। এটা নিশ্চিত আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সমর্থন আমরা পাব না। বৃহৎ শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তবে জাতিসংঘকে প্লাটফর্ম হিসেবে আমরা ব্যবহার করতে পারি। আমি অবাক হই এমন এক পরিস্থিতিতে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিষ্ক্রিয় দেখে। একজন পররাষ্ট্র উপদেষ্টাও আছেন। তার ভূমিকা কী, তাও আমার কাছে স্পষ্ট নয়। যেখানে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা ছুটে এসেছেন, সেখানে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘অদৃশ্য কারণে’ চুপ হয়ে আছেন! নিদেনপক্ষে তার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজধানীগুলো সফর করা উচিত ছিল। ওআইসির কাছেও আমাদের যাওয়া উচিত।
এক
লাখের ওপর রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর সমর্থন পেয়েছে।
বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। মিয়ানমারে গণহত্যার সঠিক চিত্র তুলে ধরার
উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশকে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গণহত্যার জন্য
মিয়ানমার সরকার তথা সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করা যায় কিনা, সে বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটের মাত্রা এত গভীরে যে খুব
সহসাই এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সুতরাং বাংলাদেশকে দীর্ঘ স্ট্রাটেজি নিয়ে এগোতে
হবে।
দৈনিক যুগান্তর ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
দৈনিক যুগান্তর ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
0 comments:
Post a Comment